বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

পোশাকে ভাষার ছাপ

পোশাকে ভাষার ছাপ

পোশাক ও ছবি : রঙ বাংলাদেশ

বাংলা আমার মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। বায়ান্নতে রক্ত দিয়ে কিনতে হয়েছে বাংলা ভাষাকে। যার আবেগ মিশে আছে আমাদের চেতনা ও সংস্কৃতিতে। সেই বাংলা বর্ণ ও শব্দমালার প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে পোশাকে; নানা রঙে নানা ঢঙে।

 

ফাল্গুন তারুণ্যের উৎসব, ফাল্গুন তারুণ্যের অনুপ্রেরণা। এই ফাল্গুনের আগুনঝরা রোদে বাংলার দামাল ছেলেরা ইতিহাস রচিত করেছিল মাতৃভাষার নামে। মায়ের ভাষার জন্য রাজপথে রক্ত ঝরিয়ে ছিল বীর বাঙালি জাতি। সেই অমর একুশে চেতনা আজ কেবল মায়ের ভাষাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ছড়িয়ে আছে বাঙালির সংস্কৃতিতেও। রক্তের দামে কেনা বাংলা ভাষার বর্ণমালার প্রতি বাঙালির চিরঞ্জীব ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে নানা রঙে, নানা ঢঙে। কখনো পোশাকে, কখনো উপহারে, কখনো একুশের সংকলনে।

 

একুশে ফেব্রুয়ারির দিন পোশাকে  রং-ঢঙে থাকে শোক ও প্রতিবাদের ভাষা। পোশাকের জমিনে ফুটে ওঠে মাতৃভাষার বর্ণমালা অ আ ক খ। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস ও বুটিকগুলো একুশের চেতনা নিয়ে তৈরি করছে নতুন নতুন ডিজাইনের বর্ণমালার পোশাক। রং, কাপড় এবং ডিজাইন সবকিছুতেই রয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর অকৃতিম ভালোবাসা। ফলে পোশাকে বর্ণমালার ব্যবহার যেন বাঙালির চেতনারই অংশ। পোশাকের ক্যানভাসে রচিত নানা রং ও ডিজাইনের মোটিভে সেজেছে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো।

পোশাকে ইতিহাস ঐতিহ্য

শোক, শ্রদ্ধা ও গৌরবের দিনটির নানা আয়োজনের সঙ্গে একুশের দৃঢ় চেতনা অনেক আগের। দিনটিকে ঘিরেই থাকে নানা আয়োজন। ভাষার প্রতি বাঙালির ভালোবাসা, একুশের মাধ্যমে উঠে আসে লেখায়, রেখায় এবং দৈনন্দিন জীবন যাপনে; পোশাক-আশাকে। ১৯৮২ বা ৮৩ সালে বর্ণমালার নকশা দিয়ে পোশাক ডিজাইন করেছিলেন ডিজাইনার ও গবেষক চন্দ্র শেখর সাহা। শাড়ি, শার্ট ও পাঞ্জাবিতে ব্যবহার করেছিলেন বাংলা বর্ণমালা। ধীরে ধীরে পোশাকের জমিন ভরে উঠছে বর্ণমালায়। জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ফ্যাশন ডিজাইনাররা বাংলা কবিতা, গান বা একুশের স্লোগান দিয়ে করেছেন পোশাকের নকশা। শহীদ মিনার, মানচিত্র, পতাকাসহ একুশের নানা চিত্রের প্রকাশ ঘটে পোশাকে। এখনো চলছে সেই ধারা।

 

রঙের বৈচিত্র্য

রং দিয়েও প্রকাশ করা যায় অনুভূতি। তাই তো একুশের পোশাকের রঙের ব্যবহারেও আছে নানা ফিউশন। পবিত্রতা আর পরিপূর্ণতা- সাদা রঙের পাশাপাশি আছে শোক ও প্রতিবাদের রং কালোর ব্যবহার। তবে এখন আর দুটি রঙে আবদ্ধ নেই একুশের পোশাক। এখন একুশের পোশাকে রয়েছে সর্বজনীন রঙের ব্যবহার। সাদা ও কালো রঙের আধিক্যতার পাশাপাশি আছে লাল, সবুজ, হলুদ, নীল তামাটেসহ সব রঙের সমাহার।

পোশাকের নকশা

একুশে পোশাকের জমিনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গর্বিত বর্ণমালার মালার সাজ। একুশের আয়োজনে মেয়েদের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, আনস্টিচ, সিঙ্গেল ওড়না, ব্লাউজ তো আছেই! পাওয়া যাচ্ছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, ফুলহাতা ও হাফহাতা শাট, টি-শার্ট, পোলো-শার্ট এবং উত্তরীয়। শিশুদের জন্য আছে একুশের পোশাক। নকশিকাঁথা ফোঁড়, ব্লক প্রিন্ট, স্ক্রিন প্রিন্ট, মেশিন ও হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারিতে করা হয়েছে জমিন অলংকরণ। এই মাধ্যমগুলোতে ভ্যালু এডিশনের পর প্রতিটি পোশাকের ডিজাইনকে মাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে নানা অনুষঙ্গে সাজিয়ে। প্যাটার্ন ভেরিয়েশনে রয়েছে দেশীয় ঐতিহ্যের ছাপ। সাদাকালোর সমন্বয়ের পোশাকের কাপড়ে সুতির প্রাধান্য থাকলেও তাঁত, মসলিন, সিল্কের ব্যবহারও অনেক।

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর