বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বসন্ত দিনে সাজ

বসন্ত দিনে সাজ

♦ মডেল : কণ্ঠশিল্পী আয়েশা মৌসুমী ♦ পোশাক : মোনালিসা মণীষা ♦ ছবি : ওমর ফারুক টিটু

হলুদ, কমলা, সবুজ- ফাল্গুন দিনে শুধু প্রকৃতি নয়, পোশাকেও থাকে উজ্জ্বল রঙের মেলা। না গরম, না ঠান্ডার দিনগুলোয় সাজ-পোশাকে আরামটাই মুখ্য। তাই তো ফাল্গুনের দিনগুলোয় পোশাকের মতো মেকআপও হওয়া চাই সাবলীল।

 

ফাল্গুন তারুণ্যের উৎসব। এমন দিনে ফুলে ফুলে ওড়ে প্রজাপতি, গাছে গাছে কোকিলের কুহু কলতান জানান দেয় বসন্তের উপস্থিতি। শহুরে প্রকৃতির বেলায় হয়তো এমনটা দেখা যায় না। তবে নাগরিক বসনে ঠিকই টের পাওয়া যায়। পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ায় আগুন লাগা প্রকৃতি। ফাল্গুনের হলুদ, কমলা, সবুজ রং মিশেছে পোশাকে, ফ্যাশনে, তারুণ্যে। সঙ্গে মানানসই সাজ এবং অনুষঙ্গ।

 

শীতের জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতিতে বইছে বসন্তের হাওয়া। নাগরিক জীবনও রঙিন হয়ে উঠেছে বাসন্তী রঙে। না গরম, না ঠান্ডা আবহাওয়ায় মেতেছে প্রকৃতি। সম্ভবত এজন্যই প্রকৃতিতে বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। তবে কয়েক দশক আগেও ফাল্গুনের চিত্র ছিল অন্যরকম। কালেভদ্রে সে বসন্তে লাগে রঙের ছটা। এখনকার দিনে প্রকৃতির মতো তারুণ্যের সাজ-পোশাকেও থাকে প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য।

 

সারা বছর ওয়েস্টার্ন পোশাকে আগ্রহ থাকলেও ফাল্গুনের দিনগুলোয় পরিধেয় পোশাকের ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন ষোলোআনা দেশীয় পোশাক। আর এসব আয়োজনে থাকে বাহারি রঙের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, স্কার্ট-টপস, কুর্তা-শর্ট কামিজ। হালকা হলুদ আর জলপাই রঙের প্রাধান্যই বেশি। এ ছাড়াও কমলা, লাল, সাদা, লাইম গ্রিনসহ উজ্জ্বল সব রঙের ছোঁয়াও রয়েছে। যেহেতু শীতের শেষে প্রকৃতিতে ফাল্গুনের হাওয়ার সঙ্গে হালকা গরমেরও ছোঁয়া থাকে। তাই এ সময় সুতি কাপড় আদর্শ। পাশাপাশি কটন, লিলেন, খাদি, ভয়েল এবং তাঁতের তৈরি পোশাকগুলো নিয়ে আসে বৈচিত্র্য। আর সাধারণত বসন্তের পোশাকের ডিজাইনে ফুলকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং প্রকৃতির বিভিন্ন মোটিফও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্লক প্রিন্টের শাড়িতে করা হয়েছে কাঁথা, চুমকি ও গ্লাসের কাজ। পোশাকে বৈচিত্র্য আনার জন্য করা হয়েছে ব্লক, অ্যামব্রয়ডারি, স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ।

 

এ তো গেল বসন্ত দিনের পোশাকে বৃত্তান্ত; এখন আসা যাক সাজ-মেকআপে। বসন্তের দিনগুলোয় হালকা মেকআপে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সবাই। কারণ, রোদ ও গরমে ভারী মেকআপে ত্বক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অফিস, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি বাড়ির বাইরে কোথাও বেড়াতে গেলেও ভারী সাজ এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তবে মেকআপের শুরুতে মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। পরিষ্কার করার পর স্ক্রাবিং করুন। এরপর সানস্ক্রিন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এরপর প্রাইমার লাগান। ফাউন্ডেশনের আগে প্রাইমার অবশ্যই লাগাতে হবে। ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে ফাউন্ডেশন বেছে নিন। খেয়াল রাখবেন ফাউন্ডেশন বেশি না হয়। হালকা মেকআপের জন্য অল্প ফাউন্ডেশনই যথেষ্ট। কনসিলারটি চোখের নিচে, কপালে, নাকের ওপর, থুঁতনিতে লাগিয়ে নিন এবং ব্লেন্ড করে ফেলুন। কনসিলারটি অবশ্যই পাউডার দিয়ে সেট করে নিন। এবার পুরো মুখ ফেসপাউডার দিয়ে ব্লাশার করুন। চোখের সাজে খেয়াল রাখুন যেন চোখের মেকআপেও স্নিগ্ধভাব ফুটে ওঠে। সেটা হিসাব করেই আইশ্যাডো লাগাবেন।

 

ফাল্গুনের দিনগুলোয় মেকআপে চড়া রং ব্যবহার না করাই ভালো। কোরাল, পিচ, কমলা, হলুদ, গোল্ডেন, কপার, লাইট ব্রাউন, লাইট পিংক, লাইট পার্পল, প্যারট গ্রিন রংগুলো মানিয়ে যাবে। আইশ্যাডো দেওয়া হয়ে গেলে অবশ্যই টানা করে আইলাইনার লাগাবেন। আপনি চাইলে ব্ল্যাক বা ভিন্ন কালারের কাজল এবং লাইনার ব্যবহার করতে পারেন। এটা আই মেকআপে নতুন রূপ নিয়ে আসবে। ফাল্গুনের দিনে লিপস্টিক হিসেবে হালকা রংগুলো বেছে নিতে পারেন। লাইট পিংক, ব্রাউন বা পিংক, অরেঞ্জ, পিচ, কোরাল রংগুলো বেশ ভালো লাগবে দেখতে। সবচেয়ে ভালো আইশ্যাডো যে কালারে দিয়েছেন সেই কালারের লিপস্টিক দিন। কপালে ছোট গোল টিপ পরতে পারেন। যেখানেই থাকুন না কেন, খোলা চুলেই রমণীদের বেশ মানায়। তবে আয়োজন বুঝে চুলে সাজে আনতে পারেন ভিন্নতা। গলা ও কানে পাথরের টপ জাতীয় ছোট দুল পরতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কাঠ বা কাচের চুড়ি পরতে পারেন।

 

শীতের শেষে ফাল্গুনে ত্বকের রুক্ষতা দেখা দেয় বেশি। এ ছাড়াও ঋতুবদলের এই সময়ে ধুলাবালি একটু বেশিই ওড়ে বাতাসে। ধুলাবালিতে ত্বক আক্রান্ত হয়ে সমস্যাগুলো দেখা দেয়। আর রোদে ত্বক পুড়ে যাওয়া, ত্বকে লাল লাল ছোপ পড়া, ব্রণ, একজিমা, চুলকানি, রুক্ষ ত্বক এই সময়ে বেশি দেখা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন দিনের জন্য প্রয়োজন সতর্কতা। ধুলাবালি এড়াতে বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো। আর এ সময়ে ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এতে ত্বক নরম থাকবে, রুক্ষও হবে না। ফাল্গুনের দিনগুলোয় ত্বকের পরিচর্যায় আসে পরিবর্তন। গরম বাড়তে থাকে, তাই এ কটা দিন ভালোভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে। যেহেতু মুখের ত্বক সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর, তাই ত্বকের যত্নে অবহেলা করা মোটেও উচিত হবে না। ত্বকে ব্রণ, কালো ছোপ বা ত্বক পুড়ে গেলে কয়েক ধাপে ভিন্ন ও উপযুক্ত কসমোলজিস্ট সেবা- সুবিধা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর