বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা সংক্রমণ : জানলেই হবে না মানতেও হবে

নতুন করে পৃথিবীব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে পুনরায় সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। বিশ্বের দেশে দেশে যখন করোনা নিয়ে দিশাহারা, আমাদের দেশে মানুষের মাঝে তখন ঢিলেঢালা ভাব! স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অনীহা, রাস্তাঘাটসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ভিড়, বাড়িতে বাড়িতে উৎসব বা গণজমায়েত ইত্যাদি বিষয়গুলো করোনার সংক্রমণের গতিকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সময় নষ্ট না করে এখনই সবার ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

 

সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণ :

* যে কোনো পরিস্থিতিতেই স্বাস্থ্যবিধি মানা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের পূর্বশর্ত, কিন্তু আমাদের মধ্যে এর ব্যাপক অনীহা। অনেকেই মাস্ক ছাড়া বের হন, মাস্ক থাকলেও তা যথাযথভাবে ব্যবহার করার লক্ষণ নেই।

* গবেষণা সাময়িকী ‘এলসেভিয়ার’- এ প্রকাশিত করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স পরিবর্তন নিয়ে বাংলাদেশি একদল গবেষক ৩৪টি পরিবর্তিত রূপ খুঁজে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। দেশে করোনাভাইরাসের যে রূপগুলো পাওয়া গেছে তার সঙ্গে ইউরোপের এবং আমেরিকান ধরনগুলোর মিলই বেশি। বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের নতু রূপটি আগের চেয়ে অধিক সংক্রামক।

* যারা ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তারা অনেকেই মনে করছেন যে, তাদের আর আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যদি শরীরে যথাযথ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় তাহলে তিন থেকে ছয় মাস সুরক্ষা পাওয়া যায়। সুতরাং এ সময়ের পর যে কেউ আবারও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। আশঙ্কার বিষয় হলো- যারা দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জটিলতার মাত্রা বা তীব্রতা কিন্তু প্রথমবারের চেয়ে অনেক বেশি। তাই প্রাণহানির ঝুঁকিও বেশি।

* আমাদের দেশে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান করা শুরু হয়েছে। যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের অনেকেরই মনে কাজ করছে যে, ‘আমি নিরাপদ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না।’  ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল।  কারণ, প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে অন্তত ১৪ থেকে ২১ দিন সময় লাগে। তাছাড়া দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অর্থাৎ পরিপূর্ণ ভ্যাকসিন গ্রহণ করার পরও তা কিন্তু করোনা প্রতিরোধের শতভাগ নিশ্চয়তা দেয় না। তাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।

 

আমাদের করণীয় কী :

* ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মুখে সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। বারবার হাত ধোয়া ও হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন।

* অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না, কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসুন। বাইরে গেলে যথাসম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। যে কোনো রকম জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলুন।

* শিশুদের নিয়ে অকারণে বাইরে যাবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই। শিশুরাও নীরব বাহক হিসেবে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

* নিজে টিকা নিন এবং অন্যকে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন। বর্তমানে দেশে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেটির প্রথম ডোজ নেওয়ার ন্যূনতম ১৪-২১ দিন পর থেকে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি শুরু হয়। সুতরাং স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

* অসুস্থবোধ করলে, জ্বর, কাশি বা গলাব্যথা, স্বাদহীনতাসহ করোনার নতুন লক্ষণ যেমন- ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দ্যা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, মানসিক বিভ্রান্তি, গলাব্যথা, পেশিব্যথা, ত্বকে র‌্যাশ, হাত ও পায়ের আঙুলের রং বিবর্ণ হওয়া ইত্যাদি দেখা দিলে উপসর্গ যত মৃদুই হোক, নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলুন। পরীক্ষা না করা বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়া পর্যন্ত বের হবেন না।

* বিদেশ থেকে আসলে নিজ দায়িত্বে কোয়ারেন্টাইন পালন করুন। যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা সবাই পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক অথবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুই সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে, যেন দেশে নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়াতে না পারে।

 

লেখক : ডা. অভিষেক ভদ্র

প্রভাষক, পপুলার মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর