বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
সুস্বাস্থ্য

করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি

করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি

দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হলো দেশের স্কুল-কলেজ। যদিও করোনা সংক্রমণের কারণে সংশয়, দ্বিধায় আছে কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তাই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

সংক্রমণের তীব্রতা কমে আসায় বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদফতর, স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ, অভিভাবক সবাই মিলে একযোগে নিয়েছেন স্কুল-কলেজ খোলার সব প্রস্তুতি। তবে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তমন্ত্রণালয় ১০টি বিষয় বাধ্যতামূলক করেছে।

♦ চেকলিস্টের মাধ্যমে দৈনিক তদারকি করা হবে প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিবেদন পাঠাতে হবে ঢাকায়।

♦  শিক্ষার্থীদের দৈনিক সচেতন করা হবে; বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, দৈনিক প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা যাচাই, প্রয়োজনে পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা; লক্ষণ থাকলে শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত হিসেবে বিবেচনা না করা, স্বাস্থ্য বিধি মেনে ক্লাস, স্কুলে সমাবেশ না করা ইত্যাদি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতর ১১টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে-

১.  ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে।

২. প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন প্রতিষ্ঠানে আসবে।

৩. সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুটিন প্রণয়ন করবে।

৪. রুটিনের সঙ্গে ব্যবহারিক ক্লাসসমূহ নির্ধারণ করা যেতে পারে।

৫. যেসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর সংযুক্ত সেব প্রতিষ্ঠান ওই সব স্তরের জন্য নির্ধারিত ক্লাসসমূহ সমন্বয় করে রুটিন প্রণয়ন করবে।

৬. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহ চলমান ডিগ্রি, সমমান ও মাস্টার্স পরীক্ষার সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে ২০২১ ও ২০২২ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য রুটিন প্রণয়ন করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

৭. রুটিন প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ/প্রস্থান/অবস্থানের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন যেন না ঘটে।

৮. রুটিন এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়।

৯. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপাতত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।

১০. প্রতিদিন নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী তথ্য প্রেরণ করতে হবে।

১১. পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ক্লাস রুটিন তৈরির ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বিষয় অনুসরণ করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইতালিতে একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যদিও স্কুলে কভিড ১৯ সংক্রমণ ঘটতে পারে, তবে স্কুলের কাঠামোর মধ্যে সংক্রমণ কমিউনিটি সংক্রমণের হারের চেয়ে কম বা একই। বিশেষ করে যখন স্কুলে প্রতিরোধের কৌশলগুলো মেনে চলা হয়।

সিডিসির মতে, নিরাপদে স্কুলগুলো পুনরায় চালু করতে ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দুটি কৌশলকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত- মাস্কের সর্বজনীন ও সঠিক ব্যবহার এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি জোর দিতে হবে-

১। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিফিন খাওয়ার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা; কেননা মাস্ক খুলে খাওয়ার সময় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাহিরে স্ট্রিট ফুডের দোকান বন্ধ রাখা।

২। আন্তকক্ষ খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন না করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেলামেশা সীমিত করা

৩। শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখা।

৪। পুষ্টিকর ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের বিষয়ে ও হাত ধোয়া; হাঁচি কাশি বা থুথুু ফেলার শিষ্টাচারগুলো মেনে চলার বিষয়ে শিশুদের উৎসাহিত করা।

৫। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখে অভিভাবকদের জটলা না করা

৬। ডেস্ক, দরজার হাতল, কম্পিউটারের কিবোর্ড হাত দিয়ে ধরতে হয় এমন উপকরণ প্রতিনিয়ত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা। শিক্ষার্থীদের বই খাতা, কলম, পেনসিল ধরার পর, হাঁচি কাশি দেওয়ার পর হাত স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কারে গুরুত্ব দেওয়া।

৭। প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতার দিকে নজর দেওয়া।

সচেতনতাই হোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখার মূল শক্তি। একটি সচেতন শিশু একটি সচেতন পরিবার। সঠিক সচেতনতা, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি এবং কৌশল মেনে স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আন্তরিকতা, সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ রাখতে।

 

তথ্যসূত্র : সিডিসি, ইউনিসেফ।

 

ডা. আরিফ মাহমুদ

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডেপুটি ডিরেক্টর, মেডিকেল সার্ভিসেস, এভারকেয়ার হসপিটাল।

সর্বশেষ খবর