বুধবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মূল রচনা

শীতে ত্বক

শীতে ত্বক

মডেল : মৌমি ♦ ছবি : আর্কাইভ

শীত এসে গেল। হেমন্ত দিনে হঠাৎ হঠাৎ ঠান্ডা হাওয়া জানান দিয়ে যাচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতকাল সবার প্রিয় হলেও ত্বকের জন্য তা মোটেও সুখকর নয়। আবহাওয়ার কারণে এ সময় ত্বকে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়...

 

এসে গেল শীত। শীতের হিমহিম ছোঁয়া শরীরের জন্য আরামদায়ক হলেও ত্বকের জন্য নয়। আবহাওয়ার কারণে এ সময় ত্বকে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। শীতের দিনগুলোয় কমবেশি সবারই ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে, ত্বক ফেটে যায়। শীত যত বাড়তে থাকে, ত্বকের সমস্যা ততই বেশি হতে শুরু করে। ত্বকে সমস্যা তৈরি হওয়ার পর আর কিছু করার থাকে না। শীতের শুরু থেকে নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা করলে আপনি থাকবেন সতেজ, তরতাজা।

আমাদের ত্বক সাধারণত তিন ধরনের হয়- তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা শীত ঋতুতে অতিরিক্ত তেল থেকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেও মুখ ধোয়ার পরপরই ত্বকে দেখা যায় শুষ্ক টান টান ভাব। আর যাদের ত্বক এমনিতেই একটু শুষ্ক, তাদের কাছে শীত যেন এক দুঃস্বপ্ন।

 

শীতে ত্বকের যত সমস্যা

- ত্বক শুকনো ও মলিন দেখায়।

- গোসলের পর বা মুখ ধোয়ার পর ত্বক টান টান ভাব দেখা দেয়।

- চুলকানি ভাব থাকতে পারে।

- ত্বকের রেখাগুলো আরও স্পষ্ট হয় এবং বলিরেখাও পড়ে যেতে পারে।

- লালচে ভাব থাকতে পারে।

- চামড়া সাদাটে হয়ে উঠে যেতে পারে। অর্থাৎ মৃত কোষ বেড়ে যায়।

 

এসব সমস্যার সমাধানে নিতে পারেন নিয়মিত যত্ন। যার মাধ্যমেই ত্বককে করে তুলতে পারেন মসৃণ এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। তবে এর প্রথম শর্ত হলো- পরিচ্ছন্নতা। তবেই ত্বক থাকবে সুন্দর ও সতেজ। শীতের শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে বেড়ে যায় রাস্তার ধুলোবালি। ফলত শীতের মৌসুমে বাইরে থেকে ঘরে ফিরলে পরিলক্ষিত হয় ত্বক। বাইরের ধুলোবালি ও বৈরী আবহাওয়া রুক্ষ ত্বককে করে তোলে শুষ্ক। ফলে ত্বকে কোনো প্রাণ থাকে না। তখন ত্বক প্রাণহীন দেখায়। এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন। শীতে ত্বকের স্নিগ্ধতায় নিয়ম মেনে গোসল করুন। এ সময় গোসলে অতিরিক্ত গরম পানির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করা উচিত। কারণ, ত্বকের সতেজতার মূল রহস্য হলো- পানি এবং ভিটামিন-ই-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ।

 

ঘুম থেকে ওঠার পর

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের ত্বকের ধরন বুঝে ফেসওয়াশ বা কোমল ময়েশ্চারযুক্ত সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে ফলতে হবে। এ ছাড়া এক দিন অন্তর স্ক্রাব করতে পারেন। ত্বক পরিষ্কার করতে ও মৃত কোষ সরিয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে তুলতে এর বিকল্পও নেই। মাঝেমধ্যে গাজরের রস মুখে মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলবেন। এভাবে ত্বক ঠিকমতো ধোয়াও হবে, কালো ছোপও কমবে।

 

গোসলের সময় ও পরে

শীতকালে গোসলে আর্দ্রতাযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। এতে ত্বকে খসখসে ভাব কমে আসবে। শীতে শরীরের যত্নে সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল বা অন্য অনেক তেলও শরীরে ব্যবহার যেতে পারে। তবে ব্যবহারের আগে দেখে নিতে হবে সেটি আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত কি না। উপযুক্ত হলে তেল হালকা গরম করে পুরো শরীরে ম্যাসাজ করতে পারেন। গোসলের পর এটি করলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। শীতে অনেকের গরম পানি দিয়ে গোসল করার প্রবণতা আছে। গোসল করলেও গরম পানি দিয়ে মাথা ও মুখ ধোয়া যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট হয়। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোঁটা জোজোবা বা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র ও মসৃণ করতে সহায়তা করে। গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ত্বক ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

 

বাইরে যাওয়ার আগে

হিমহিম আবহাওয়ায় রোদ আরাম দিলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না। বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০-সম্পন্ন সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। বেশি ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন, প্রয়োজনে পানি মিশিয়ে নিন।

 

রাতে ঘুমানোর আগে

রাতে ঘুমানোর আগে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং লোশন ব্যবহার করলে ত্বকের খসখসে ভাব দূর হবে। ত্বকের আর্দ্রতা ও ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে যাদের বয়স কম, তারা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। বয়স ত্রিশের কোঠা ছাড়ালে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা ভালো।

ত্বকের যত্নের পাশাপাশি হাত, পা, গলা, ঘাড়সহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও যত্ন নেওয়া উচিত। ধুলাবালি থেকে চুল রক্ষা করতে মাথায় এই মৌসুমে স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন নারিকেল তেল ও জলপাইয়ের তেল একসঙ্গে গরম করে চুলে ম্যাসাজ করে  শ্যাম্পু করলে চুল হবে ঝরঝরে। এ ছাড়া চুলের বাড়তি যত্নে টক দই, কলা, পেঁপে দিয়ে ঘরে তৈরি প্যাক ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকে।

এ ছাড়া শীত মৌসুমে অতিরিক্ত শুষ্ক ও রুক্ষতার কারণে অনেকের ত্বক থেকে রক্তপাত শুরু হয়। অনেকেই এই সময়ে দাদ, খুজলি, পাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগে ভোগেন। এমন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর