বুধবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

এলো রে বৈশাখ

এলো রে বৈশাখ

♦ মডেল : বৃষ্টি ও তানহা ♦ মেকওভার : নবাব ♦ ছবি : মুনতাকিম ♦ পোশাক : রঙ বাংলাদেশ

সব বাঙালির কাছেই ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিনটি। বাঙালির কাছে দিনটি বরাবরই রঙিন এবং থাকে উৎসবের আমেজ। সাজপোশাক, খাবার-দাবার, বাঙালি ঐতিহ্যের অবতারণা- সবই থাকে সে পরিকল্পনায়।  রইল তার আদ্যোপ্রান্ত...

 

দিনপঞ্জিতে উঁকি দিচ্ছে বাংলা নববর্ষ।  ঠিক এমন সময় মাসব্যাপী চলছে পবিত্র মাহে রমজান। আর মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে কদিন বাদেই হাজির হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এক কথায় উৎসব আর প্রাণের বৈশাখে রাঙাল সব বাঙালির মন। তবে করোনা মহামারির কারণে বিগত দুই বছর বাঙালি সেভাবে পালন করতে পারেনি পয়লা বৈশাখ।

 

বাঙালির কাছে বৈশাখের দিনটি রঙিন। এই দিনকে ঘিরে গোটা বছরই চলে নানা পরিকল্পনা। সাজপোশাক, খাবার-দাবার, বাঙালি ঐতিহ্যের অবতারণা- সবই থাকে সে পরিকল্পনায়। প্রতিবছর এই বৈশাখ আসে নতুনের আহ্বান নিয়ে। দোকানে দোকানে চলে হালখাতা, পরিপাটি করা হয় ঘরদোর, শাড়ি-পাঞ্জাবিতে উচ্ছল থাকে তারুণ্য আর ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট সোনামণির মাঝে থাকে সে এক অনন্য উৎসব। যেহেতু চলছে সিয়াম সাধনার মাস, আর দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। তাই বলে বাঙালির প্রাণের উৎসবে ভাটা পড়বে! এমনটাও নয়। এবার বেশ ঘটা করেই পালিত হবে বর্ষবরণ। করোনা মহামারি পেরিয়ে আবারও কল্যাণের শানাই বাজবে বৈশাখের আয়োজনে। আবারও মুখরিত হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। উৎসবে রাঙাবে ঢাবির চারুকলা, টিএসসি, কলাভবন, স্বোপার্জিত স্বাধীনতাসহ পুরো শিক্ষাঙ্গন। আর মঙ্গলের আহ্বানে সাড়া দিতে বাঁধভাঙা জোয়ারে মানুষ আছড়ে পড়ে শহর-বন্দরসহ প্রতিটি জনপদে। পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া, গান-বাদ্য সবকিছুতেই বাঙালিয়ানা।

 

বর্ষবরণে অনেকেই এখন একেক বেলায় ভিন্ন ভিন্ন সাজপোশাকে নিজেকে সাজাতে চান। বেশির ভাগই সকালবেলার সাজে শাড়ি বরাদ্দ রাখেন। সারা বছর পশ্চিমা পোশাকে সাবলীল বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েটিও বৈশাখের সকালের জন্য পাটভাঙা শাড়ি কেনে। আবার বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা বা পারিবারিক দাওয়াতে সে হয়তো টপস বা স্কার্ট পরতে চাইবে। পোশাক যা-ই হোক, বৈশাখের সাজের মূলকথা হলো, সাজে বাঙালিয়ানার ছাপ থাকবেই। একটু টানা চোখ, কপালে টিপ, ঠোঁটে রাঙা লিপস্টিক বৈশাখ সাজের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এই সাজ যে কোনো শাড়ির সঙ্গেই মানিয়ে যায়। ওয়েস্টার্ন সাজে কাজলের বদলে শ্যাডো দিয়েই চোখে টানা লুক আনা যেতে পারে। এখন টিপেও অনেক বৈচিত্র্য। পোশাকের সঙ্গে থিম মিলিয়ে হ্যান্ড পেইন্টের টিপ পরতে পারেন। রঙিন নকশাদার স্টোনের টিপও বেমানান লাগবে না। রোদে গরমে স্থায়িত্ব পেতে ম্যাট লিপস্টিক বেছে নিন। এখন শিমারি বেইজের চল। তবে বেইজ খুব পুরু হবে না। হালকা বেইজে দিনের বেলায়ও সাজের শেষে একটু শিমারি বুলিয়ে নিতে ভুলবেন না।

 

পয়লা বৈশাখের শাড়িটা সাদামাটা হোক কিংবা জমকালো, এখন ব্লাউজটা হওয়া চাই ভিন্ন ধাঁচের। ফ্যাশন-সচেতন সব নারীই এখন মনোযোগ দিচ্ছেন বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর ব্লাউজের দিকে। এখনকার ট্রেন্ডটা হলো শাড়ির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট ব্লাউজ পরার। সুতি বা তাঁতের শাড়িগুলোর সঙ্গে কাঁথাস্টিচ, টাইডাই, প্যাঁচওয়ার্কের কাজ করা ব্লাউজ পরা যেতে পারে। গামছা কাপড়ের ব্লাউজও ভালো লাগবে। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পাইপিন লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া সুতি কাপড়ের শাড়ির ওপর স্ক্রিন ও অ্যাম্ব্র্রয়ডারির কাজের শাড়িগুলোও আপনি বেছে নিতে পারেন। হালকা গোলাপি, কমলা, মেরুন কিংবা নীল রঙের সুতি শাড়ির মধ্য দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন এই দিনে।

 

সুতির পোশাকই গরমের জন্য আরামদায়ক হবে। তবে রাতে বের হলে অ্যান্ডি, সিল্ক কিংবা মসলিনের পোশাক পরতে পারেন। তবে যে পোশাকই পরেন না কেন, মাথায় রাখতে হবে স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টি। এ তো গেল রমণীদের সাজ-পোশাকের কথা- দিনটিকে ঘিরে তরুণদের চাহিদার মধ্যে আছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, গামছাসহ অনেক কিছু। পোশাকে ঐতিহ্যবাহী ঢোল, একতারার ডিজাইনগুলো এবার কিছুটা ব্যতিক্রম ও নজরকাড়া। আর সেদিকেই ঝুঁকছে অধিকাংশ ফ্যাশনসচেতন পুরুষ। পাঞ্জাবির চাহিদা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এ সময়টায় থাকে একটু বেশি। পোশাকে থাকতে হবে বাঙালির ঐতিহ্য। আর তাই পয়লা বৈশাখে হাতে ও গলায় হালকা লাল রঙের কাজ আর বর্ণিল পাঞ্জাবিগুলোর চাহিদা অনেক বেশি।

 

পয়লা বৈশাখের পোশাকে রঙের পাশাপাশি উঠে আসে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মোটিফ আর কারুকার্য। এসব পোশাকে বাঘের মুখাবয়ব, মাটির পুতুল, পেঁচা, পালকি, নাকে নথ পরা ঘোমটা পরা বউয়ের মুখ, আলপনার ডিজাইন ইত্যাদি উঠে আসে। এখন আবার ফ্যাশন ডিজাইনাররা দেশ ঘুরে ঘুরে ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা খুঁজে বের করে তাঁর নকশাও তুলে ধরছেন বৈশাখের পোশাকে। এমনকি এখন শুধু লাল-সাদা নয় বরং বিভিন্ন রং যেমন- কমলা, মেরুন, সাদা, অফ হোয়াইট, সবুজসহ বিভিন্ন রঙের পোশাক বেছে নেন সবাই। তবে যে পোশাকই পরুন না কেন তা যেন হয় স্বস্তিদায়ক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর