বুধবার, ৮ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

রোদেলা দিনে রোদচশমা

রোদচশমা পরার জন্য দিন ও তিথি লাগে না। সব ঋতুতে সব সময়ই ব্যবহার করা যায় এটি। কেননা এটি কেবল প্রয়োজনই নয়, ফ্যাশনের অনুষঙ্গও বটে। রৌদ্রোজ্জ্বল তাপ আর বাইরের ধুলোবালি থেকে চোখ সুরক্ষিত রাখে রোদচশমা। তাই ফ্যাশন এবং প্রয়োজন, দুইয়ে মিলেই সবার ব্যবহার করা উচিত রোদচশমা।

রোদেলা দিনে রোদচশমা

ছবি : আর্কাইভ

গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রোদের তাপ। অনেক সময় টের না পেলেও সময়-অসময়ে আমাদের চোখ জ্বলে এবং লাল হয়ে যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলা ও নানা ধরনের ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের শিকার হয় চোখ। তাই সবার উচিত রোদচশমার ব্যবহার। আর এই রোদচশমার ব্যবহারের চর্চাও বেশ পুরনো। তথ্য বলছে, রোমান সম্রাট নিরো প্রথম রোদচশমাকে নিয়ে আসেন সাধারণ মানুষের সামনে। এরও আগে প্রচলিত ছিল গগলস নামের এক বিশেষ চশমা। নিরোর কাছাকাছি সময়ে চীনের মানুষও রোদচশমার ব্যবহার করত বলে জানা যায়। বিশেষ করে খনিতে কাজ করা লোকজন। এরপর সময়ের অদলবদলে তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে।

রোদচশমা শুধু তীব্র সূর্যালোক থেকেই চোখের সুরক্ষা দেয় না। সেই সঙ্গে ধুলা থেকেও চোখকে বাঁচায়। যাদের ধুলায় অ্যালার্জি, তাদের জন্য রোদচশমা শুধু ফ্যাশন নয়, অত্যাবশ্যকীয়ও বটে। চোখের সংক্রমণ এড়াতেও পরতে পারেন চশমা। এ ছাড়া যারা বাইকে ঘোরেন তাদের জন্য এই রোদচশমা অতি জরুরি। তীব্র গতিতে বাইকে ছুটে চলার সময়, বাতাসে ভেসে বেড়ানো ধুলা এসে চোখে আঘাত করে। এই অনাবশ্যক ক্ষতি এড়াতে পরে নিন রোদচশমা। আর যারা সাইকেল কিংবা স্কেটিং করেন, তারাও পরতে পারেন রোদচশমা।

আমরা অনেকেই জানি না রোদচশমা ব্যবহারেরও নির্দিষ্ট কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। কেনার আগে এমন রোদচশমাটি কিনুন যা অন্তত ৯৯% থেকে ১০০% সূর্যের ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচাতে সক্ষম। উইভি ৪০০-এর লেবেলযুক্ত রোদচশশা মানব চোখকে সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং কেনার আগে এসব দেখেশুনে কেনা উচিত। এ ছাড়া পোলারাইজড লেন্সযুক্ত রোদচশমা সূর্যের কড়া আলো থেকে শুধু বাঁচায় না, চারপাশকে অনেক বেশি পরিষ্কার দেখায়। তবে কেনার আগে নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝে কেনা উচিত। এই যেমন আপনি কতক্ষণ বাইরে কাটাবেন, সেই অনুযায়ী বেছে নিন আপনার রোদচশমা। পোলারাইজড লেন্স ওয়াটার, বরফ ও কাচ থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মি কমাতে সাহায্য করে। আর এসব রোদচশমা বেড়ানো এবং ড্রাইভিংয়ের জন্য সর্বাধিক উপযোগী।

 

মুখের ধরন ও গায়ের রং অনুযায়ী  রোদচশমা বেছে নিতে হবে। এখন চড়া রংগুলো খুব ট্রেন্ডি হলেও যা তা রং বেছে নিলে হবে না। উজ্জ্বল গায়ের রঙের সঙ্গে স্বচ্ছ, নীল, সবুজ, বাদামি, গোলাপি ফ্রেম সবচেয়ে ভালো মানায়। কালো ত্বকে মেটালিক ফ্রেম, কালো, কফি, গাঢ় বা হালকা বাদামি রঙের রোদচশমা মানিয়ে যায়। হার্ট শেপ চেহারায় কপাল চওড়া ও চোয়াল সরু থাকে। ক্যাট আই, স্পোর্কি টাইপের রোদচশমা বেশ মানিয়ে যায় এই চেহারায়। ডিম্বাকৃতি চেহারায় সব ধরনের রোদচশমাই মানায়। ক্যাটস আই কিংবা অ্যাভিয়েটর ফ্রেমের সানগ্লাস গোল চেহারাকে কিছুটা হলেও লম্বাটে দেখাবে। আয়তাকার, কোণযুক্ত ফ্রেমের রোদচশমাও তাদের জন্য ভালো। বর্গাকৃতির চেহারায় মেটালিক ফ্রেম অথবা গ্লাসের নিচের অংশ রিম লেস রোদচশমা মানিয়ে যায়। লম্বা মুখের সঙ্গে গোলাকৃতির রোদচশমা ভালো যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, রোদচশমার ফ্রেম যেন খুব ছোট না হয়। চতুর্ভুজাকৃতি চেহারায় ক্যাটস আই স্টাইল ভালো যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে রোদচশমায় যেন চোখের খোল ঢেকে যায়; তাই সানগ্লাস একটু বড় হওয়াই ভালো।

 

এখন রোদচশমায় গাঢ় রং খুব ট্রেন্ডি। নীল, সবুজ, লাল, কমলার মতো রঙের প্রাধান্য দেখা যায়। চাইলে কয়েকটা শেডেরও রোদচশমা মিলবে। অনুষ্ঠানভেদে রোদচশমায় বৈচিত্র্য আনতে পারেন। ক্লাব মাস্টার ফ্রেম ফরমাল কিংবা ঘরোয়া দুই ধরনের অনুষ্ঠানেই মানিয়ে যায়। আর এভিয়েটর ফ্রেম ফরমাল পোশাকেই বেশি মানানসই। মুখের গড়ন ও চুলের স্টাইলের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিন আপনার পছন্দের রোদচশমাটি।

 

দাম দিয়ে ডিজাইনের রোদচশমা কেনা মানেই চোখের পক্ষে তা দারুণ ভালো, ধারণাটি ভুল। নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে বাজেট বুঝে কিনে ফেলুন পছন্দের রোদচশমা। মূলত চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও কোরিয়া থেকে রোদচশমাগুলো আসে। মানসম্মত রোদচশমা থাকে শোরুমে, বাকি সব যায় ফুটপাথে। চোখে সমস্যা থাকলে সাধারণ সানগ্লাস তেমন উপযোগী নয়। পাওয়ার চশমা ব্যবহারকারীদের জন্য রোদচশমা কিছুটা দুর্লভ। সে ক্ষেত্রে চোখের পাওয়ার দিয়ে সানগ্লাস বানিয়ে নিতে হবে। প্রায় চশমার দোকানেই সানগ্লাসে পাওয়ার বসানোর ব্যবস্থা থাকে। তাই পাওয়ার দিয়ে সানগ্লাস বানাতে গেলে ফ্যাশন সচেতনতার সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে চোখের সুরক্ষার কথাও।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর