বুধবার, ১৫ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ঋতুবদলে ত্বক

এরই মধ্যে গ্রীষ্ম ঋতু বিদায় নিতে শুরু করেছে। ঋতু পরিবর্তন ও ত্বকের ধরনভেদে রূপচর্চার নিয়মনীতি বদলে যায়। ত্বকের সতেজতা ধরে রাখতে প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। সেসব বিষয়েই পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞরা।

ঋতুবদলে ত্বক

♦ মডেল : অপু বিশ্বাস ♦ ছবি : নেওয়া রাহল

দিন যত যাচ্ছে, প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া ততই দুরূহ হয়ে উঠছে। কখন গ্রীষ্ম আর কখন যে বর্ষা, তাই তো ঠাহর করা যাচ্ছে না। গ্রীষ্মের বিদায় আর বর্ষার আগমনে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে নানা প্রদাহ। ত্বকের অবস্থা তো আরও শোচনীয়।

 

গরম, আর্দ্রতা ও ভ্যাপসা আবহাওয়ার এই সময়ে নানা ধরনের ছত্রাকের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ ছাড়া আছে অতিরিক্ত ঘামাচি ও নানা ধরনের সংক্রমণের ভয়। বর্ষাকাল তাই ত্বকের জন্য খুব সুবিধার নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা ত্বকের খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাস দেখা দেয়। দীর্ঘদিন রোদ না থাকায় স্যাঁতসেঁতে ঘর ইত্যাদি কারণে সমস্যা হয়।

 

এই সময় চর্মরোগ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কারণ, এই সময়ে হঠাৎ গরম ও ঠাণ্ডার তারতম্যে শরীর ভেজা থাকে। দেহের ভাঁজে ভাঁজে ও যেসব জায়গা বেশি ঘামে বা বেশি তপ্ত হয়, যেমন- উরু বা বগলের ভাঁজে, স্তনের নিচে ছত্রাকের আক্রমণ বেশি হয়। এতে চুলকানির সঙ্গে লালচে দাগ দেখা যাবে। খালি পায়ে কাদা পানি বা নোংরা পানিতে হাঁটলে পায়ের তলায় বা আঙুলের ফাঁকে ছত্রাক জন্মাতে পারে। এসব থেকে ত্বককে বাঁচাতে কিছু নিয়ম মেনে চলুন।

 

আর্দ্রতা মোকাবিলায়

গ্রীষ্মের পর বর্ষার আগমনে খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না। কারণ- বর্ষার সময়টাই এমন যে, হঠাৎ বৃষ্টি বা দিনভর বৃষ্টি, রোদের অদল-বদল, ভ্যাপসা গরমের এই মৌসুমেও ত্বকের যতেœ আনতে হবে পরিবর্তন। এতে ত্বক মানিয়ে নেবে ঋতু পরিবর্তন। খাপ খাইয়ে নেবে আর্দ্রতা।

সারা বছরই সানস্ক্রিন

মেঘলা আকাশ দেখলেই সানস্ক্রিনের প্রয়োজনীয়তার কথা বেমালুম ভুলে যান বেশির ভাগ মানুষই। কিন্তু সমস্যাটা তো শুধু রোদ নিয়ে নয়। আসল সমস্যা সূর্যের আলো নিয়ে। দিনের বেলা আকাশ যতই মেঘলা থাকুক, অন্ধকার না নামা অবধি কিন্তু আপনার ত্বকে সূর্যরশ্মির প্রবেশ ঘটে। ক্ষতি আটকাতে চাইলে দিনের আলো থাকাকালীন গোটা সময়টাই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। আর শুধু তাই নয়, এখনকার উন্নতমানের সানস্ক্রিন বিভিন্ন ধরনের তাপ থেকে হওয়া ক্ষতি প্রতিরোধ করার ক্ষমতাও রাখে। ফলে যারা বাড়িতে রান্নাঘরে দিনের অনেকটা সময় ব্যয় করেন, বা কোনো ধরনের আগুনের সামনে থাকেন, প্রত্যেকের জন্যই সানস্ক্রিন সমান প্রয়োজন। তবে একটি বিষয়ে সবার খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো সঠিক সানস্ক্রিন ব্যবহার।

 

♦  তৈলাক্ত ত্বক : অবশ্যই পানির মাত্রা বেশি অর্থাৎ ওয়াটারবেজড সানস্ক্রিন বাছাই করা উচিত। সানস্ক্রিনের এসপিএফ অবশ্যই ৩০ মাত্রার অধিক ব্যবহার করবেন।

♦  শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক : রুক্ষ ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ সানস্ক্রিন বাছাই করতে হবে।  এসপিএফ ৩০ মাত্রার অধিক সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

♦  সাধারণ ত্বক : ৩০ থেকে ৫০ এসপিএফ মাত্রার সানস্ক্রিন ভালোভাবেই কাজ করে। এতে করে ত্বক ঘেমে গেলেও সানস্ক্রিন ত্বকে থাকবে।

 

জীবাণুর সংক্রমণ রুখতে

শুধু বর্ষাকালেই যে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে, কথাটি মোটেও ঠিক নয়। তবে বর্ষায় বেশি সতর্ক থাকা উচিত। বছরের অন্যান্য সময়ও বৃষ্টিপাত হলে, তখনো ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। টানা কয়েক দিন আকাশ মেঘলা বা বৃষ্টিপাত হলে, নিমপাতা, কর্পূর, তুলসী, পুদিনা গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিতে পারেন। সংক্রমণ রোধ হবে।

 

এ ছাড়া এই মৌসুমে ব্যবহৃত প্রসাধনী পণ্যগুলোর পরিবর্তে ঘরোয়া বিভিন্ন সামগ্রী ত্বকের প্রতিকারের উপাদান হিসাবে বেছে নিন। ঘরেই স্ক্রাবার, ক্লিনজার এবং টোনার তৈরি করতে পারেন। এমনকি মুলতানি মাটি দিয়েও অনেকেই মাস্ক তৈরি করে ফেলতে পারেন।

 

ন্যূনতম মেকআপ

যেহেতু বর্ষা মেকআপ ধুয়ে ফেলতে পারে, তাই মেকআপ ছাড়াই বাইরে বেরোনো ঠিক হবে। তবে চাইলে ওয়ারটারপ্রুফ মেকআপ ব্যবহার করতেই পারেন। কিন্তু মেকআপ করলেও তা যতটা সম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করুন।

 

স্কিনকেয়ার মাস্ট

বছরের বিভিন্ন সময় ত্বকের চাহিদা অনুযায়ী যেমন রুপরুটিন পাল্টাবেন, তেমনি এমন কিছু কিছু সামগ্রী রয়েছে, যাদের প্রয়োজন সারা বছরই থাকে। ত্বক ভালো রাখতে নিয়মিত এই প্রডাক্টগুলো ব্যবহার করুন।

 

♦  সানস্ক্রিন

♦  ফেসিয়াল ক্রিম

♦  ময়েশ্চারাইজার

♦  লিপবাম

 

চাই সচেতনতা

♦  এ সময় ভারী জামা-কাপড় না পরে হালকা রঙের সুতি পাতলা জামা পরুন। ঘামে ভিজে গেলে দ্রুত পাল্টে নিন। ভেজা কাপড় পরে থাকলে ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।

♦  নিয়মিত প্রয়োজনে দিনে দুবার গোসল করুন। জীবাণুনাশক সাবান ব্যবহার করতে পারেন। ঘামে বা বৃষ্টিতে ভিজলে ত্বক ধুয়ে শুকিয়ে নিন।

♦  এই সময় সারা দিন জুতা-মোজা না পরে বরং হালকা চপ্পল বা খোলা স্যান্ডেল পরা ভালো। তবে খালি পায়ে হাঁটবেন না। রাস্তায় এখন যত্রতত্র নোংরা পানি জমে আছে। পায়ের ত্বককে এই নোংরা পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। কেননা এই পানিতে রয়েছে হাজার রকমের জীবাণু।

♦  ভেজা চুল ভালো করে শুকিয়ে নিয়ে তারপর বাঁধবেন, নইলে মাথার ত্বকে সমস্যা হতে পারে।

 

খাবারেও সতর্কতা

বর্ষায় বেশি ভাজা খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ, আর্দ্র আবহাওয়ায় আমাদের হজম ক্ষমতা কমে যায়। বেশি মাছ, মাংস না খেয়ে হালকা, সহজপাচ্য খাবার খান। স্বাস্থ্যকর, সুষম ডায়েট মেনে চলা ভালো। কাঁচা শাকসবজি থেকে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে রান্না করে তবেই খান। করলার মতো তেতো সবজি খেতে হবে।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর