ব্রণের সমস্যা নেই, এমন মানুষ বোধহয় বিরল। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে এ সমস্যা অনেক বেশি। বিশেষত কিশোর বয়সে। আর ব্রণ নিরাময়ে ‘কাঁচা রসুনের ভূমিকা’ নিয়ে টিকটকে এমন শত শত ভিডিও পাওয়া যাবে, যেখানে কেউ হয়তো রসুনের কোয়া চিবোচ্ছে, আবার কেউ ব্রণের ওপর সরাসরি আলতোভাবে রসুন ছোঁয়াচ্ছে।
কিন্তু খাবারে স্বাদ বৃদ্ধির উপাদানটি ব্রণ ও ব্রণের দাগ সারাতে আসলে কতটা কার্যকর! তিনজন ব্রিটিশ চিকিৎসক- ডা. কেতকি ভাট, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ; ডা. শেরীন ইদ্রিস, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এবং পুষ্টিবিদ ও এপিটম-এর প্রতিষ্ঠাতা এমিলি ইংলিশ এ ব্যাপারে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছেন।
যদিও তারা তিনজন ত্বকের সমস্যায় ঘরোয়া সমাধান বেছে নেওয়ার ব্যাপারে অবগত। পাশাপাশি তারা সবাই ত্বকে সরাসরি রসুনের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কেননা, ত্বকে সরাসরি রসুন ব্যবহারের ধারণা নয়। ডা. ভাটের মতে, ‘এতে জ্বালাপোড়া হতে পারে। রাসায়নিকভাবে ত্বক পুড়ে যেতে পারে, যার দাগও থেকে যায়। ডা. ইদ্রিস দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘এই উপাদানটি স্থায়ীভাবে আপনার ত্বকের ব্রণ সারাতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে যারা রসুনের মাধ্যমে ব্রণ সারানোর ভিডিও দিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই হরমোনাল একনে রয়েছে। এর জন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন নেই। দীর্ঘমেয়াদে দাগছোপ পড়তে পারে, এমন অপ্রত্যাশিত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া এড়াতে ব্রণ হওয়ার পেছনের কারণ আগে খুঁজে বের করতে হবে।’
তাহলে কী ব্যবহার করা উচিত?
প্রত্যেকের ত্বক আলাদা। তাই একজনের ত্বকে যা কাজ করবে, অন্যজনের ক্ষেত্রে তা উপযোগী নাও হতে পারে। তা ছাড়া একসঙ্গে অনেকগুলো পণ্যের ব্যবহার কেবল ত্বকের জ্বালাপোড়া বাড়াবে। তাই ত্বকচর্চায় নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন। এটা সর্বোত্তম পন্থা। পাশাপাশি ব্রণ-বান্ধব (নন-কমেডোজেনিক) পণ্য ব্যবহার করলে ত্বক প্রশমিত হয়ে আসবে। যেসব প্রসাধন সামগ্রী আমাদের ত্বকে থাকা লোমকূপের ছিদ্রগুলোর মুখ বন্ধ করে দেয় না এবং যেসব কারণে ব্রণ হতে পারে সেই সমস্যা থেকে ত্বককে রক্ষা করে সেগুলোই নন কমেডোজেনিক পণ্য। ব্রণের ক্ষেত্রে ডা. ইদ্রিসের পরামর্শ- আজকাল একনে, পিম্পল প্যাচ নামক ব্রণনিরোধী এক ধরনের পাতলা প্যাচ পাওয়া যায়। পাকা আর ফুলে থাকা ব্রণের ওপর এটি তাৎক্ষণিকভাবে খুব ভালো কাজ করে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই হাইড্রকলোয়েড প্যাচ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে না। এর চেয়ে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পারঅক্সাইড, রেটিনল ইত্যাদি উপাদানসমৃদ্ধ পণ্য ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে ভূমিকা রাখে।
মুখের ত্বকে প্রয়োগের পক্ষে না থাকলেও রসুন সেবনের ব্যাপারে দ্বিমত নেই চিকিৎসকদের। ভিটামিন সি, বি ৬, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়ামের চমৎকার উৎস রসুন। পাশাপাশি রসুনে থাকা সালফার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এমিলি ইংলিশ জানান, যাদের মুখে প্রচুর ব্রণের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাদের খাবার লো গ্লাইসেমিক, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিশেষ করে ওমেগা-৩ এবং প্রোবায়োটিকসে ভরপুর থাকবে। খেতে হবে প্রচুর মাছ, আখরোট, টক দই, গোটা শস্য, মিষ্টি কুমড়ার বীজ।
তথ্যসূত্র : ভোগ ম্যাগাজিন