রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বকাপে কেলেঙ্কারি

রকমারি ডেস্ক

বিশ্বকাপে কেলেঙ্কারি

চিলি-ইতালির ফুটবল ম্যাচ, নাকি যুদ্ধ

বলা হয়ে থাকে, বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা। ঘটেছিল সান্তিয়াগোতে ১৯৬২ বিশ্বকাপে স্বাগতিক চিলি ও ইতালির ম্যাচে। ম্যাচটিতে সংঘর্ষের ঘটনা এত বেশি ছিল যে, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের খেতাব লাভ করে। তবে সূত্রপাত মাঠের ভিতরে নয়, বাইরে। দুই ইতালিয়ান সাংবাদিক তাদের সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন, ‘চিলিকে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে দেওয়াটা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়।’ এমন খবর দেখে চিলির জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ক্ষোভ এতটাই চরমে পৌঁছে যে, ইতালির সাংবাদিক ভেবে আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিককে তারা পিটিয়ে আহত করেন। ঘটনা ইতালিয়ান শিবিরে পৌঁছালে খেলা শুরুর ১২ সেকেন্ডের মধ্যেই ইতালির জর্জিও ফেরেনি ফাউল করেন। ১২ মিনিটে ফেরেনি আবার ফাউল করলে রেফারি অ্যাস্টন তাকে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু তিনি রেফারিকে পাত্তা না দিয়ে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। পরে পুলিশ ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। সমস্যার শেষ এখানে হলেই পারত। হয়নি, বরং ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে আরও কুৎসিত আকার ধারণ করে খেলাটি। চলেছে শেষ পর্যন্ত। কী না হয়েছে? লাথি, কিল, ঘুষি, যাচ্ছেতাই রকমের ফাউল, রেফারিকে হুমকি। শেষ পর্যন্ত চিলি ম্যাচটি ২-০ গোলে জিতলেও তাদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে ম্যাচ শেষে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

 

পশ্চিম জার্মানির ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ

১৯৮২ বিশ্বকাপে মাঠের খেলায় বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের শিকার হয় আলজেরিয়া। গ্রুপ-পর্বের খেলায় দলটির প্রতিপক্ষ ছিল পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া। গ্রুপ-পর্বের একেবারে শেষ ম্যাচটি ছিল পশ্চিম জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যকার। কিন্তু গ্রুপের সবার হাড্ডাহাড্ডি পারফরম্যান্সের ফলে তিন দলের সমীকরণই জটিল হয়ে ওঠে। সমীকরণটি এমন- অস্ট্রিয়া যদি জার্মানির বিপক্ষে ড্র করে বা জয় পায় তাহলে পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে যাবে। আর জার্মানি যদি ৩ বা তার বেশি গোলের ব্যবধানে জিতে যায় তাহলে অস্ট্রিয়া বাদ। কিন্তু যদি জার্মানি ১ বা ২ গোলের ব্যবধানে জেতে তাহলে আলজেরিয়া বাদ পড়ে যাবে। মজার ব্যাপার হলো- ম্যাচের ১০ মিনিটেই জার্মানি ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় দুই দলের এলোমেলো বল ছোড়ার প্রতিযোগিতা। জার্মানি এগিয়ে যাওয়ার পর দুই দলই ম্যাচজুড়ে এদিক-সেদিক বল ছোড়াছুড়ি করতে থাকে। কোনো দলের মধ্যেই গোল করার প্রবণতা দেখা যায়নি। যেটা ছিল আলজেরিয়ার বিপক্ষে এক প্রকার ষড়যন্ত্র।  সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেবার বিশ্বকাপ থেকে আলজেরিয়া বাদ পড়ে।

 

ফ্রান্স-কুয়েতের ম্যাচ ছিল বিতর্কিত

১৯৮২ সাল। স্পেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফ্রান্স এবং কুয়েতের মধ্যকার ম্যাচ। ২১ জুন ১৯৮২ প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুই দল। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্স মিডফিল্ডার অ্যালান গ্রিসের গোলকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। কুয়েতি খেলোয়াড়দের দাবি, তারা বাঁশির আওয়াজ শুনে খেলা থামিয়ে দেন। আর সেই সময় অ্যালান গ্রিসে গোলটি করেন। তারা গোল বাতিলের দাবি জানান রেফারিকে। গ্যালারিতে বসে থাকা তৎকালীন কুয়েত ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট শেখ ফাহাদ আল আহমাদ আল সাবাহ কুয়েতের খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেন। পরে নিজেই গ্যালারি ছেড়ে মাঠে প্রবেশ করেন এবং রেফারির সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন। রেফারি মিরোস্লাভ সুতুপার দীর্ঘ সময় আলোচনার পর গোলটি বাতিল করেন। এ ঘটনার জন্য রেফারি মিরোস্লাভ সুতুপার আন্তর্জাতিক রেফারি সনদ হারান এবং শেখ ফাহাদ আল আহমাদ আল সাবাহকে মাত্র ১০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর