রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা

শিরশ্ছেদের শিকার জগৎ শেঠ

শিরশ্ছেদের শিকার জগৎ শেঠ

ঐতিহাসিকদের মতে, পলাশীর যুদ্ধে একদিকে যেমন ইংরেজদের কূটকৌশল এবং অস্ত্রশস্ত্র কাজ করেছিল, অন্যদিকে ঠিক তেমনিভাবে কাজ করেছিল জগৎ শেঠের টাকা। যাকে নিয়ে এই আলোচনা, তার প্রকৃত নাম মহাতাপ চাঁদ। আর তার টাইটেল ছিল জগৎ শেঠ, যার অর্থ পৃথিবীর ব্যাংকার। মূলত এই টাইটেলটি প্রথম লাভ করেন তার দাদা ফাতেহ চাঁদ। মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের এই পরিবার মূলত সুদের কারবার তথা ব্যাংকিংয়ে জড়িত ছিল। পলাশীর যুদ্ধের আগেই বংশ পরম্পরায় পিতামহের টাইটেল জগৎ শেঠ তার নামের আগে সংযুক্ত হয়। এ সময় জমিদাররা জগৎ শেঠের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই খাজনা পরিশোধ করতেন। আবার নবাবরাও দিলি্লতে খাজনা পাঠাতেন। জগৎ শেঠের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ইংরেজরা এদেশে আসতে থাকলে ইংল্যান্ডের মুদ্রার সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রা বিনিময় করার প্রয়োজন দেখা দেয়। আর এ সুযোগটি গ্রহণ করেন জগৎ শেঠ। বিশেষত ইংরেজরা ঘুষ এবং দুর্নীতি বাবদ ভারতীয় মুদ্রায় যে অর্থ পেত তা ইংল্যান্ডের মুদ্রায় বা সোনা ও রত্নে বিনিময় করে দিত জগৎ শেঠ। তাই ইংরেজদের কাছে তার কদর ছিল। ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলকে পলাশীর যুদ্ধে হারানোর ষড়যন্ত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন জগৎ শেঠ। পলাশীর যুদ্ধের পর মীর জাফরের আমলে ভালোই ছিলেন জগৎ শেঠ মহাতাপ চাঁদ এবং তার সম্ভবত চাচাত ভাই (কাজিন) মহারাজ স্বরূপ চাঁদ। কিন্তু পরবর্তীতে নবাব মীর কাশেমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে ইংরেজদের নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন জগৎ শেঠ। পলাশীর যুদ্ধের ছয় বছরের মাথায় ইংরেজদের কাছে লেখা ষড়যন্ত্রমূলক একটি চিঠি লেখেন জৎ শেঠ। কিন্তু চিঠিটি একপর্যায়ে নবাব মীর কাশেমের হস্তগত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন নবাব মীর কাশেম এবং তাকে মুর্শিদাবাদ থেকে বিতাড়িত করেন। এদিকে ১৭৬৩ সালে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যান নবাব মীর কাশেম এবং একপর্যায়ে হেরে যান। ক্রুদ্ধ নবাব মীর কাশেম এই পরাজয় মানতে পারেননি। তিনি ছুটে যান জগৎ শেঠের নতুন আস্তানা মাংঘরের উদ্দেশ্যে। মাংঘরের সামনে একটি টাওয়ারে আশ্রয় নিয়েও প্রাণ বাঁচতে পারেননি জগৎ শেঠ। নবাব মীর কাশেম এবং তার সৈন্যরা জগৎ শেঠ মহাতাপ চাঁদ, তার কাজিন স্বরূপ চাঁদসহ তাদের পরিবারের সবার শিরশ্ছেদ করেন। অনেকের মতে, টাওয়ারের উপর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দৌযা হয় এই দুই ভাইকে। আর এভাবেই জগৎ শেঠের যাবতীয় জাগতিক লীলার অবসান ঘটে।

 

 

সর্বশেষ খবর