রবিবার, ৭ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

পিসি সরকার সিনিয়র

পিসি সরকার সিনিয়র

জাদুশিল্পী পিসি সরকারের পুরো নাম প্রতুল চন্দ্র সরকার। আধুনিক বাঙালিদের মধ্যে যে কয়জন ক্ষণজন্মা মানুষ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন, ঐন্দ্রিজালিক পিসি সরকার তাদের মধ্যে অন্যতম। জাদু শিল্পকে তিনি সব রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলা ও বাঙালিকে গৌরবোজ্জ্বল জাতি হিসেবে নতুনভাবে পরিচিত করেছেন। ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আর শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় শিবনাথ হাইস্কুলে। তার বাবার নাম ছিল ভগবান চন্দ্র সরকার। মা কুসুম কামিনী দেবী। পিসি সরকাররা ছিলেন দুই ভাই। পিসি সরকার বড়, ছোট ভাই অতুল চন্দ্র সরকার বা এসি সরকার। ছোটবেলা থেকেই জাদুবিদ্যার প্রতি কৌতূহল এবং কিছুটা বংশগত ঐতিহ্যও তাকে এ পেশায় আগ্রহী করে তোলে। সে সময়ের বিখ্যাত জাদুকর গণপতি চক্রবর্তী ছিলেন তার জাদুবিদ্যার গুরু। ষষ্ট শ্রেণীতে শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তিনি জাদু দেখানো শুরু করেন। পরবর্তীকালে টাঙ্গাইলের করটিয়া সা'দত কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় সহপাঠীদের জাদু দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। তবে লেখাপড়া এতে বাধাগ্রস্ত হয়নি। ১৯২৯ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৩৩ সালে গণিত শাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাস করে জাদুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। জাদুর জগতে ব্যাপক প্রচার লাভের উদ্দেশ্যে তিনি এক সময় নিজের পদবি সরকার বাদ দিয়ে ইংরেজি 'সোরকার' শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করেন। কারণ এ শব্দটির অর্থ 'জাদুকর'। তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আরোহণ করার পর পুনরায় নিজের সরকার পদবিই গ্রহণ করেন। পিসি সরকার শুধু জাদুশিল্পীই ছিলেন না, একজন লেখকও ছিলেন বটে। জাদু শিল্পে পিসি সরকারের কৃতিত্ব হলো- তিনি বহু প্রাচীন জাদু খেলার মূল সূত্র আবিষ্কার করেন। 'এঙ্-রে আই'_ করাত দিয়ে মানুষ দিখণ্ডিত করা। তার এই খেলাটি দেখে দর্শকরা অভিভূত হয়ে পড়েন। তার অপূর্ব প্রকাশভঙ্গির অসাধারণ বাস্তবতার গুণে অনেকে অজ্ঞান হয়ে যান। কেউ কেউ ভয়ে অাঁতকে উঠতেন। সেই সময় দ্বিখণ্ডিত তরুণীর কুশল বার্তা জানতে বিবিসি অফিসে এত টেলিফোন আসতে থাকে যে, দু'ঘণ্টা পর্যন্ত অফিসের সব টেলিফোন লাইন জ্যাম হয়ে যায়। নিউইয়র্কের টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ এই খেলাটি দেখাবার জন্য তাকে বিশেষ বিমানে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা ও সম্মান লাভ করেন। 'ওয়াটার অব ইন্ডিয়া' পিসি সরকারের আরেকটি জনপ্রিয় খেলা। ১৯৩৪ সালে তিনি সর্বপ্রথম বিদেশে গমন করেন এবং ৭০টির মতো দেশে জাদু প্রদর্শন করে ব্যাপক খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এ সময় তিনি পর্যাপ্ত অর্থও উপার্জন করেন। ফোর্স রাইটিং খেলাটি দেখিয়ে ভারতের সংবাদপত্র মহলে মহাআলোড়ন ফেলে দেন। ঠিক তার পরই বিদেশে একটি বিশেষ দ্রুতগামী রেলগাড়ি আসার মাত্র ৩৮ সেকেন্ড আগে তিনি হাতকড়া বন্ধ অবস্থায় ট্রেন লাইন থেকে মুক্ত হয়ে আসেন। এই হাতকড়াটি খুলতে ১৭টি চাবি ব্যবহার করা হতো। সে জন্য ইংল্যান্ডের জাদুকর ফোরামের তৎকালীন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উইল গোল্ড স্টোন তাকে বলেছিলেন, তুমি জন্মসিদ্ধ জাদুকর। তার জাদু অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন, বিবিসি, শিকাগোর ডারলিউ জিএনটিভি এবং নিউইয়র্কের এনবিসি ও সিবিএস টেলিভিশনে বহুবার প্রদর্শিত হয়েছে। সংসার জীবনেও পিসি সরকার খুব সুখী ছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালের ১৩ জানুয়ারি জাপানের জিগেৎসু শহরে জাদু প্রদর্শন করতে গিয়ে অকস্মাৎ মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৭ বছর। পিসি সরকার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তার ছেলে পিসি সরকার জুনিয়রও একজন বিশ্ববিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান। যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হিসেবেই তিনি বর্তমানে দেশ-বিদেশে চোখ ধাঁধানো ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন।

 

 

সর্বশেষ খবর