বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪ ০০:০০ টা

জাদুবিদ্যার নানান প্রকার

জাদুবিদ্যার নানান প্রকার

জাদুবিদ্যার প্রচলন সব সময়ই কৌতূহলোদ্দীপক। সে জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমাজবিদ-নৃতাত্তি্বকরা প্রচলিত জাদু বিধানাবলি পর্যালোচনা করে এর শ্রেণিবিন্যাস করার চেষ্টা করেছেন। যেমন স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজারের মতে, জাদুবিদ্যার বিধানগুলো প্রধানত দুই রকমের হোমিওপ্যাথিক এবং কনটেজিয়াস ম্যাজিক।

হোমিওপ্যাথিক ম্যাজিক

সব সময়ই শত্রু ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত। এ ক্ষেত্রে শত্রুর প্রতিমূর্তি [মোম, মাটি, কাঠ, কাপড়] বা ছবি ইত্যাদি তৈরি করে পুড়িয়ে বা ছুরি দিয়ে কেটে ধ্বংস করা হয়। ধারণা, মূর্তিটা যে যন্ত্রণা পাচ্ছে, শত্রুও তেমন যন্ত্রণা বা আঘাত পাচ্ছে। একে ব্ল্যাক ম্যাজিক বলে। আবার অনেক সময় মানুষের উপকার বা ভালোর জন্যও জাদু ব্যবহার করা হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে এমন এক জাদুর বিধান আছে, কোনো নারীর সন্তান হচ্ছে না, তখন একটা কাঠের ছোট শিশু বানিয়ে নিঃসন্তান রমণীটি কোলে বসিয়ে আদর করে। ফলে তার সন্তান হবে এমন ভাবা হয়। কখনো কখনো চিকিৎসায়ও এ ধরনের জাদুর প্রয়োগ দেখা যায়।

অন্যদিকে কনটেজিয়াস ম্যাজিক হচ্ছে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ যেমন চুল, নখ, থুথু বা পরিধেয় বস্ত্রের মাধ্যমে জাদু করে মানুষের ক্ষতি বা উপকার করা। এ ক্ষেত্রে শত্রুর আঙ্গুলের নখ, চুল, ভ্রু, থুথু- এসব সংগ্রহ করে মোমের সাহায্যে শত্রুর একটা অবিকল প্রতিরূপ তৈরি করা হয়। প্রতিমূর্তিটি ছয় দিন ধরে মোমের তাপে ঝলসাতে হবে এবং সাত দিনের দিন মূর্তিটি পুড়িয়ে ফেললে শত্রুর মৃত্যু হবে!

জাদুবিদ্যার ধরন আর প্রকারভেদ নিয়ে অনেকে অনেক মত দিয়েছেন। তাদের সব মতবাদ একসঙ্গে করলে বলা যায়, জাদুবিদ্যা প্রধানত তিন ধরনের।

প্রথমত, সৃজনধর্মী জাদু বা হোয়াইট ম্যাজিক। ফসলের ভালো উৎপাদন, বৃষ্টি নামানো, গাছে ভালো ফল হওয়া, প্রেম বা বিয়ে ইত্যাদির উদ্দেশ্যে এ জাদু ব্যবহৃত হয়।

দ্বিতীয়ত, প্রতিরোধক জাদু। এই জাদুকেও হোয়াইট ম্যাজিকের মধ্যেই ফেলা যায়। এটা বিপদ-আপদ এড়ানো, রোগব্যাধি দূর করা আর কালো জাদুর প্রভাব এড়াবার কাজে ব্যবহার করা হয়। সর্বশেষ প্রকারটিই হচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা ধ্বংসাত্দক ম্যাজিক। এটি রোগব্যাধি সৃষ্টি, সম্পত্তি ধ্বংস, প্রাণনাশের কাজে ব্যবহার করা হয়। ডাইনিবিদ্যায় এর প্রয়োগ বেশি দেখা যায়। সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে আজো এর প্রভাব দেখা যায়। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ওপর।

জাদুবিদ্যার প্রাচীন ইতিহাস যদি আমরা খুঁজে দেখতে চাই, তাহলে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে সেই প্যালিওলিথিক যুগের গুহামানবদের গুহাচিত্রের দিকে। অরিগেনেসিয়া নামক গুহায় বেশ কিছু মুখোশ পরা মানুষ আর জন্তু-জানোয়ারের ছবি দেখা যায়, যেখানে মানুষগুলোর হাতের আঙ্গুলের প্রথম গিঁট পর্যন্ত কাটা! যদিও নৃতাত্তি্বকরা এদের কুষ্ঠরোগাক্রান্ত মানুষ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে জাদুবিদ্যা বিশারদদের মতে, মৃত্যুকে জয় করার জন্যই হাতের আঙ্গুল কেটে তা নিবেদন করার রীতি সে আমলে প্রচলিত ছিল। দেহের অংশ বিশেষ দিয়ে গুণ [ব্লাক ম্যাজিক] করার রীতি এ দেশেও দেখা যায়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলোতেও নানা আঙ্গিকের জাদুবিদ্যা চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়। সমসাময়িক ধর্মগুরু আর জনগণের মধ্যে। জাদুবিদ্যার এই চর্চা কখনো থেমে থাকেনি। গোপনে একদল ব্ল্যাক ম্যাজিকের চর্চা করে যাচ্ছে।

 

 

সর্বশেষ খবর