বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৫ ০০:০০ টা

চায়ের কাপে ঝড়

সময়টা ১৭০৬ সালের ১৭ জানুয়ারি। ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে মিল্ক স্ট্রিটে বসবাসরত জোসায়েহ ফ্রাঙ্কলিনের ঘরে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। বাবার ১৭ সন্তানের একজন আর মায়ের ১০ সন্তানের একজন হয়ে বেশ হাসি-আনন্দের মাঝেই দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল ছেলেটির। পরবর্তীতে ছেলেটিকে ওল্ড সাউথ মিটিং হাউসে ব্যাপটাইজড করা হয় আর নাম রাখা হয় বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। সংক্ষেপে বেন। বেনের ছোটবেলার বেশিরভাগ সময়ই কেটেছিল বড় ভাই জেমস আর ছোট বোন জেনের সাহচর্যে। তবে বাবা জোসায়েহের চাওয়া ছিল ছেলে পড়াশোনা করুক। চার্চের একজন হিসেবে নিজেকে তৈরি করুক। কিন্তু বেনের সেদিকে মন ছিল না। এদিকে বাবারও অত টাকা ছিল না। ফলে বোস্টন ল্যাটিন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও দুই বছরের বেশি পড়া হয়নি বেনের সেখানে। তবে পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলে কি হবে, নিজের চেষ্টায়ই বেন পড়তে শুরু করল। সে একেবারে এলোমেলো অবস্থা। যা পাচ্ছে তাই একেবারে কেড়ে নিচ্ছে ছেলেটা নিজের ভিতরে। পড়ছে একমনে। যেন কতদিনের ক্ষুধার্ত। ১০ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পর বড় ভাই জেমসের কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করা শুরু করে বেন। ভাই ছবি অাঁকত। তার কাছে চিত্রব্যবসাটা বেশ রপ্ত করে নেয় সে। পরবর্তীতে ১৫ বছর বয়সে জেমসের সদ্যপ্রকাশিত খবরের কাগজ দ্য নিউ ইংল্যান্ড কোরান্টে কাজ শুরু করে বেন। চেষ্টা করে পত্রিকায় লেখার। কিন্তু তার লেখা মনোনীত হয় না। বেশ ভেঙে পড়ে বেন। পরে অনেক চিন্তা-ভাবনার পর শুরু করে ছদ্মনামে লেখা। মিসেস সাইলেন্স ডগউড নামের এক মাঝবয়সী বিধবা মহিলার আড়ালে লেখা তার চিঠিগুলো খুব সহজেই প্রকাশিত হয় পত্রিকায়। শহরের চায়ের কাপে ঝড় তোলে সেগুলো। তবে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও একদিন ছোট ভাই বেনের এই চালাকির কথা ফাঁস হয়ে যায় বড় ভাইয়ের কাছে। বেশ রেগে যায় জেমস। তবে বড় ভাইয়ের এটুকু রোষের জন্য থেমে যায়নি বেন। নিজের লেখা চালিয়ে যায় সে। এভাবেই শুরু হয় বেনের লেখক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার কাজ। তবে সেটা খুব বেশিদিন আর হয়ে ওঠে না তার। ১৭২২ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার জন্য জেলে যেতে হয় জেমসকে। পত্রিকার দায়-দায়িত্ব পরে বেনের কাঁধে। সে সময়ই শেষ কিছুদিন নিজের লেখালেখি চালিয়ে যান বেন। ডগউড হিসেবে ভাইয়ের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন তিনি। লেখেন- জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট। ভাষা যেখানে অবরুদ্ধ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। তবে কিছুদিন বাদেই সবটাকে অনেক বেশি একঘেয়ে লাগতে থাকে বেনের। খুব দ্রুতই পালিয়ে যান তিনি।

সর্বশেষ খবর