বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
ভারতবর্ষের

অমীমাংসিত রহস্য

রণক ইকরাম

অমীমাংসিত রহস্য

রাজস্থানের ভুতুড়ে শহর

সমগ্র ভারতের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের কেন্দ্র ভাবা হয় রাজস্থানকে। সারাবিশ্বের অজস্র পর্যটকের আগ্রহের কেন্দ্র রাজস্থানের জয়সলমীরের ভুতুড়ে শহর বা গ্রাম কুলধারা। সোনার কেল্লার শহর  জয়সলমীর থেকে একটু দূরে পরিত্যক্ত ছোট্ট শহরটি থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারেনি কেউ! জয়সলমীর থেকে ১৫-১৭ কিলোমিটার এগোলেই হদিস মিলবে এই শহরের। পরিত্যক্ত শহরে এখন আর কেউ থাকে না। প্রচলিত বিশ্বাস হলো, এই গ্রাম ভৌতিক। তার নাকি জলজ্যান্ত প্রমাণও মিলেছে। অভিশপ্ত এ শহরে গেলে কেউই প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না। সারি সারি ঘরবাড়ি, অতলস্পর্শী পাতকুয়ো, মন্দির, পাথুরে পথ সবই আছে। নেই শুধু থাকার কেউ। প্রায় ২০০ বছর ধরে এভাবেই পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে কুলধারা।

থর মরুভূমির কোলে এই নগরের পত্তন হয়েছিল ১২৯১ সালে। যোধপুরের পালি সম্প্রদায়ের ব্রাহ্মণরা এখানে বসত গড়েছিলেন। কুলধারার সঙ্গে আশপাশের ৮৩টি গ্রামে গড়ে ওঠে বসতি। উন্নতির শীর্ষে থাকলেও ১৮২৫ সালে রাখী পূর্ণিমার রাতে ফাঁকা হয়ে যায় কুলধারা এবং তার লাগোয়া ৮৩টি গ্রাম। রাতারাতি ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যায় প্রায় ১৫০০ মানুষ।

স্থানীয় পরিষদের এক সদস্যের কারণে গ্রামবাসী একদিন বিপদে পড়ে। গ্রাম্যপ্রধানের মেয়েটির দিকে তার নজর পড়ে। সে গ্রামবাসীকে বলে, মেয়েটিকে তার হাতে তুলে দিতে, না হলে তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে হুমকি দেয়। গ্রামবাসী তখন একত্রিত হয়ে নিজেদের আত্মসম্মানকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ওই রাতেই গ্রাম ছেড়ে চলে যায় চিরকালের জন্য। তবে যাওয়ার আগে কুলধারা গ্রামের মাটিকে গ্রামবাসীর প্রত্যেকে অভিশাপ দিয়ে যায়। সেদিনের পর থেকে কুলধারাতে কেউই নতুন করে আবাসস্থল গড়ে তুলতে পারেনি। কেউ দখলও করতে পারেনি কোনো জায়গা। যারাই চেষ্টা করেছে, তাদেরই ভাগ্যে নেমে এসেছে নির্মম মৃত্যু।

প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা জনপদ কুলধারা রাতারাতি হয়ে পড়ে ভৌতিক। দিল্লির প্যারানরমাল সোসাইটি থেকে ৩০ জনের একটি দল রাত কাটাতে গিয়েছিল কুলধারা গ্রামে। তাদের দাবি, রাতজুড়ে নাকি অলৌকিক ঘটনা ঘটে ধ্বংসস্তূপে ভরা এই গ্রামে। আচমকা রাতের বুক চিরে শোনা যায় আর্তচিৎকার। হঠাৎ কমে যায় তাপমাত্রা। সকালে নাকি গাড়ির গায়ে দেখা যায় শিশুদের হাতের ছাপ। সে কারণে মনে করা হয় গ্রামবাসীর অভিশাপ এখনো কার্যকর এই পরিত্যক্ত রহস্যময় নগরীতে।

 

যেখানে সবাই যমজ

জায়গাটা কেরালা রাজ্যের কোধিনি। এই জায়গার বিশেষত্ব হলো এখানে সবাই যমজ। এটি সবার কাছে ‘টুইন গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামে যে দিকেই তাকান না কেন চোখে পড়বে জোড়ায় জোড়ায় একই রকম যমজ মানুষ। তাই এটি কেবল ভারত নয়, সারাবিশ্বের কাছেই হয়ে উঠেছে বিস্ময়কর গ্রাম। কারণ একমাত্র এখানেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি যমজের বাস।

২০১৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মুসলমান অধিবাসী এই গ্রামের মোট ২ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ২২০ জোড়া যমজের বাস। যেখানে সমগ্র বিশ্বে গড়ে এক হাজার মানুষের মধ্যে একজোড়া যমজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে কোধিনি গ্রামেই যমজের হার ৪২ শতাংশ।

কালিকট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রামে বসবাস করছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। তবে মজার ব্যাপার হলো, এসব পরিবারে ২২০ জোড়ারও বেশি যমজ রয়েছে। কোধিনি গ্রামে সব ধরনের যমজ দেখা যায়। সাধারণ যমজ বা নন-আইডেনটিক্যাল টুইন এবং হুবহু একই রকম দেখতে আইডেনটিক্যাল টুইন। আবার দুটি যমজ ভাইবোনের দেখাও মিলবে। কিন্তু এই গ্রামে যমজের সংখ্যা এত বেশি কেন? বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তাররা এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি। তা নিয়ে স্থানীয়দের ধারণা, ১৯৪৯ সালে এখানে প্রথম যমজ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এরপর থেকে প্রতি বছর এই সংখ্যা কেবল বেড়েই চলেছে। কারও কারও মতে, গ্রামের পরিবেশ এবং জিনগত কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। কেবল এই গ্রামেই নয়, গ্রামের যেসব মেয়ের বাইরে বিয়ে হয়েছে সেখানেও তারা যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

স্বভাবতই কোধিনি গ্রামের এই অদ্ভুত ঘটনায় বিভ্রান্তিতে পড়তে হয় সবাইকে। কারণ অনেক সময় একই চেহারার দুজন মানুষকে তারা নিজেরাই আলাদা করতে পারেন না। তবুও তারা এই একটি কারণে বেশ মজাও অনুভব করে থাকেন। এর যত ব্যাখ্যাই থাকুক না কেন, ভারতবর্ষের মানুষের কাছে এ এক অমীমাংসিত রহস্য।

 

নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য

ভারতবর্ষ তো বটেই গোটা বিশ্বের মানুষের কাছেই রহস্যেঘেরা একটি বিষয় হচ্ছে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান। ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান হওয়ার বিষয়টি আজও নিষ্পত্তি হয়নি। কদিন আগেই নেতাজিবিষয়ক কতগুলো সরকারি গোপন নথি অবমুক্ত করা হয়। সেখানে ভারতের স্বাধীনতার পরও নেতাজির জীবিত থাকার কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি কিছুই।

স্বাধীন ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখা এই বাঙালি আজীবন সংগ্রাম করেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। তার নেতৃত্বেই গঠিত হয় আজাদ হিন্দ ফৌজ। এখানেই থামেননি তিনি। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরিতে ছুটে বেরিয়েছেন জাপান, জার্মানি, রাশিয়াসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে। তার লড়াকু জীবনের গল্প হার মানায় কল্পকাহিনীকেও। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনার পর নেতাজির অন্তর্ধান নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।

বেশ কিছুদিন আগে নিজামুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, বিমান দুর্ঘটনার চার মাস পর নেতাজিকে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১০৭ বছর বয়সী ওই আজাদ ফৌজ সেনা বলেন, সিতাংপুর নদী তীরে বিদায়ের আগে আবারও স্বাধীন ভারতে ফেরার অঙ্গীকার করেছিলেন নেতাজি।

প্রচলিত আছে, বিমান দুর্ঘটনায় নয়, তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে বন্দী অবস্থায় সাইবেরিয়াতে মৃত্যু হয় নেতাজির। অনেকে মনে করেন, ফোইজাবাদের ভগবান জি ওরফে গুনমানি বাবাই হলেন নেতাজি। সম্প্রতি রেনকোজি মন্দিরে রাখা নেতাজির চিতাভষ্ম পরীক্ষা করে জানা গেছে-সেটি তার নয়। ফলে তার অন্তর্ধান এখনো একটি বড় রহস্য হয়েই রয়ে গেছে।

 

তাজমহল নাকি শিব মন্দির?

সবাই জানে মোগল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাজমহল নির্মাণ করেন। মোগল সম্রাট শাহজাহান ছিলেন ইতিহাস-খ্যাত মোগল সম্রাট আকবরের দৌহিত্র। মমতাজ মহল ছিলেন শাহজাহানের তৃতীয় স্ত্রী। মমতাজ মহল ১৬৩১ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে বুরহানপরে ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য নির্মাণ করেন ভালোবাসার এই অপরূপ নিদর্শন।

তাজমহলের নির্মাণ শুরু হয় ১৬৩২ সালে; মমতাজের মৃত্যুর এক বছর পর। ২০ হাজারের বেশি শ্রমিকের প্রচেষ্টায় ১৬৪৮ সালে, মমতাজের মৃত্যুর ১৭ বছর পর গম্বুজগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়; যদিও পুরো কাজ শেষ হয় ১৬৫৩ সালে। শুধু মানুষ নয়; এ মহান কীর্তির ভাগিদার ১০ হাজার হাতি, যারা নির্মাণের জন্য মার্বেল পাথর পরিবহনে নিয়োজিত ছিল।

তাজমহলকে সবাই জানি মোগল সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি। কিন্তু নয়াদিল্লির প্রফেসর পি এন ওকে এর মতে, তাজমহল আসলে শিবের মন্দির যা অতি প্রাচীন এবং এর নাম ছিল তাজমহালয়া। তার মতে, শাহজাহান এটি অন্য অনেক মোগল সম্রাটের মতো দখল করে নিজের স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশে তাজমহল নামে পুনর্নির্মাণ করেন। ওই সময়কার ভ্রমণকারী লোকের কোনো বইতে এটি নির্মাণের কোনো রেকর্ড নেই, কিন্তু তাজ নামে একটি প্রাসাদ বা স্থাপনার নাম পাওয়া যায়। এরপর অনেকেই দাবি ও প্রমাণের চেষ্টা করেন এই তাজমহল আসলে এক সময় শিব মন্দির ছিল। ভারতবর্ষে এমন কিছু মোগল স্থাপনা রয়েছে যেগুলো প্রাচীন হিন্দু স্থাপনার ওপর পুনর্নির্মাণ করা। অনেকের দাবির সঙ্গে সে যুক্তি থেকেই তাজমহল আর শিব মন্দিরের বিষয়টি অমীমাংসিত রহস্যে পরিণত হয়েছে।

 

খাদ্য ও পানি ছাড়া ৭০ বছর

প্রহ্লাদ ভাইজানি নাম হলেও মানুষ তাকে মাতাজি বলেই ডাকে। গেরুয়া পরিহিত দীর্ঘ সাদা চুল-দাড়িতে ৮২ বছর বয়স্ক এ ভারতীয়কে একজন সাধু-সন্ন্যাসী বলেই মনে হয়। মাতাজি পানাহার না করেই আর ১০ জন সাধারণ মানুষের মতো দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছর বেঁচে আছেন।

প্রহ্লাদ ভাইজানি আট বছর বয়স থেকে পানাহার ত্যাগ করেন এবং আজ পর্যন্ত মুখ দিয়ে কোনো খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করেননি। তার এই বেঁচে থাকাটা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জন্য বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে গবেষণা। এ জন্য গত ২২ এপ্রিল তাকে আহমেদাবাদের স্ট্যালিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ৭ মে পর্যন্ত চলবে তার ওপর গবেষণা। ৩২ জন চিকিৎসক তার ওপর গবেষণা করছেন। এদের মধ্যে স্ট্যালিন হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ড. সুধীর শাহের নেতৃত্বে রয়েছেন ২৫ জন বিশেষজ্ঞ। তার সঙ্গে রয়েছেন ডিফেন্স ইনস্টিটিউট অব ফিজিওলজি অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সের (ডিআইপিএএস) সাত বিজ্ঞানী। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন প্রহ্লাদ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। প্রহ্লাদ স্বয়ং বলেন, তার বয়স যখন আট বছর তখন তিনি মায়ের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হন এবং তখন থেকেই তিনি পানাহার না করে বেঁচে আছেন। তিনি আরও জানান, প্রকৃতির ডাকেও তাকে সাড়া দিতে হয় না। তিনি তার বেশির ভাগ সময় মেডিটেশনে কাটান। ড. সুধীর শাহ জানান, প্রহ্লাদ তার ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শরীরের ১৫০ মিলি. ইউরিনের মধ্যে ১০০ মিলি. শুকিয়ে ফেলেছেন।

 

বানর মানব রহস্য

এ ধরনের ঘটনার দেখা হরহামেশা মেলে না। ২০০১ সালের কথা। ঘটনাটি দিল্লির। সে বছর দিল্লিতে বানরের মতো দেখতে একটি জীবের রিপোর্ট দেখা যায়। এ নিয়ে তখন ব্যাপক হৈচৈ তৈরি হয়। অনেকে বলেন, জীব বা ব্যক্তিটি লম্বায় ৪ মিটার। লোকটি কালো পশমের একটি ধাতুর হেলমেট  আর ধাতুর থাবা ব্যবহার করতেন। অনেকটা রোবটের মতো। ১৩ মে ২০০১ সালে এটি প্রায় ১৫ জনকে আহত করে এবং প্রচুর আতঙ্ক তৈরি করতে সমর্থ হয়। আশপাশের অনেকেই জন্তুসম এই জীবের মুখোমুখি হয়েছিল বলে দাবি করে। প্রত্যেকেই তাদের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে। তবে কেউই এর ছবি তুলতে পারেনি। যেমন করে এসেছিল, ঠিক তেমন করেই হারিয়ে যায় এই অদ্ভুত জীবটি। এর রহস্য আজও উন্মোচন করা যায়নি।

 

উড়োজাহাজ আবিষ্কার রহস্য

আয়ুষ্মান খুরানা অভিনীত বলিউডের হাওয়াইজাদা সিনেমাটি যারা দেখেছেন তারা বুঝতে পারবেন এই রহস্যটি সম্পর্কে। কোটি টাকার প্রশ্ন উড়োজাহাজের আবিষ্কার করেন একজন ভারতীয়?

বলা হয়ে থাকে শিবকুমার বাপুজি তাল্পাডে ১৮৯৫ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো  বিমানের নকশা করেন এবং তা তৈরি করেন। কিন্তু জ্বালানি ও অর্থ স্বল্পতায় তিনি সেটা আর চালাতে সক্ষম হননি প্রথমবারের পর।

তার বিমান তৈরির মূল সহায়িকা ছিল সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পুস্তক এবং শাস্ত্র। পরবর্তীতে শিবকুমারের সেই নকশা ব্রিটিশদের হাতে পড়ে যায়। শিবকুমার প্রতারিত হন। এর প্রায় ৮ বছর পর আমেরিকার রাইট ভাইরা বিমান আবিষ্কার করেন। এ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে। কিন্তু এই রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি।

 

সম্রাট অশোকের ৯ সঙ্গী

মৌর্য সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩-২৩২ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। দক্ষিণ ভারতকে কেন্দ্র করে পূর্বে আসাম, বাংলাদেশ, পশ্চিমে ইরান ও আফগানিস্তান, উত্তরে পামির মালভূমি পর্যন্ত তিনি শাসন করতেন। কলিঙ্গ রাজ্য দখল করার জন্য (আনুমানিক ২৬১ খ্রিস্টপূর্বে) অশোক কলিঙ্গ আক্রমণ করেন। সে যুদ্ধে কলিঙ্গ বাহিনীর প্রায় এক লাখ ও মৌর্য বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সৈন্য মারা যায়। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্রাট অশোককে গভীরভাবে স্পর্শ করে। এর পর থেকে তিনি যুদ্ধের নীতি ত্যাগ করে অহিংস বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। অহিংসার বাণী প্রচার করার উদ্দেশে সম্রাট অশোক বিভিন্ন সময় তার সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শিলালিপিতে নানা ফরমান জারি করেন। সম্রাট অশোক যিনি পরে একজন সাধু হয়ে যান। তার প্রাসাদে ৯ জন রহস্যময় লোক ছিলেন যারা মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ৯টি বিষয়ে অনেক জ্ঞানী ছিলেন। বলা হয়ে থাকে আধুনিক বিজ্ঞানের এত আবিষ্কার সেই রহস্যময় ৯টি বইয়ের কিছু অংশমাত্র যা দুর্ঘটনা চক্রে প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেই রহস্যময় ৯ জ্ঞানী ব্যক্তির পরিচয়, তাদের বই ও জ্ঞানের ভাণ্ডারের কেবল গল্পই শোনা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ প্রমাণও দেখা গেছে, কিন্তু রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি।

 

দিল্লির রহস্যময় পিলার

ভারতের দিল্লিতে প্রায় ১৬০০ বছরের পুরনো লোহার একটি পিলার রয়েছে। ২৩ ফুট উঁচু এই পিলারটির ওজন প্রায় ৬ টনেরও বেশি। ঠিক কী কারণে এ পিলার সে আমলে তৈরি করা হয়েছিল সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য কেউ এখনো বলতে পারে না। আর সে জন্য হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে গোটা উপমহাদেশ এবং বিশ্ববাসীর কাছে এক অপার রহস্যের আধার হিসেবে এ পিলারটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে। প্রতি বছর লাখ লাখ দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী ও ধর্মভীরু মানুষ এ পিলারটি দেখার জন্য সেখানে ভিড় জমাচ্ছে।

প্রত্নতত্ত্ববিদদের কারও কারও ধারণা, হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর পতাকা খোদিত এ পিলারটি খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে তৈরি হয়েছে। আর এটি তৈরি করেন গুপ্তবংশীয় রাজা দ্বি^তীয় চন্দ্রগুপ্ত। কোনো মন্দির নির্মাণে বা মন্দির চত্বরে স্থাপনের জন্যই পিলারটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এটি কেমন করে বর্তমান স্থানে এলো তার কোনো সঠিক ইতিহাস নেই। এই পিলারটি সবার কাছে বিশাল রহস্য হয়েই আছে।

 

চুম্বকের পাহাড়

প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাদাখে আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। শুটিং স্পট এবং পর্যটন স্পট হিসেবেই লাদাখ সবার কাছে বেশি পরিচিত। কিন্তু লাদাখে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাইরেও কিন্তু রহস্য আছে। লাদাখের লেহ অঞ্চল থেকে কারগিলের দিকে যেতে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বেই আছে সেই রহস্যময় চুম্বক পাহাড়। ওই সড়কে গেলেই সাক্ষী হওয়া যাবে এক রহস্যময় ঘটনার। আপনি যদি আপনার গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখেন, তাহলে কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পাবেন যে আপনার সাধের গাড়িটি ক্রমশ সামনের দিকে যাচ্ছে। ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে আপনার গাড়িটিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেন অদৃশ্য কেউ।

শুধু গাড়িই নয়, লাদাখের এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে কোনো বিমান যাওয়ার সময় খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। বিমানের গতিপথ যাতে পাল্টে না যায় সেদিকে তীক্ষè নজর রাখতে হয় পাইলটকে। এই চুম্বক পাহাড় নিয়ে স্থানীয়দের ভিতর নানা গল্প চালু আছে। তবে সবগুলো গল্পই সেই ঐশ্বরিক বা অতিপ্রাকৃত শক্তির বর্ণনায় শেষ হয়। লাদাখের এই চুম্বক পাহাড় স্থানীয় জনতার বাইরে ভিন্নাঞ্চলের মানুষের কাছে আবিষ্কৃত হয় অনেক পরে।  বর্তমানে লাদাখ কর্তৃপক্ষ ওই সড়কটির দুই প্রান্তেই সাইনবোর্ড বসিয়ে দিয়েছে, যাতে কেউ দুর্ঘটনায় পতিত না হয়।

 

যোধপুর সনিক বুম্ব ২০১২

তালিকায় এবারের ঘটনা কিংবা বিষয়টিও ভারতের রাজস্থানকেন্দ্রিক। তবে এবারকার পটভূমি রাজস্থানের যোধপুর। সেখানে ২০১২ সালে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। হঠাৎ একটি বিমানের সনিক বুম্ব শব্দ ঘটানো হয়।

এটা হচ্ছে খুব সাধারণ ঘটনা কিন্তু ওই রকম বিমান আবাসিক এলাকার ওপরে অনুরূপ উঁচু গতিতে উড়ে না। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১২, একটি গগনবিদারী ধ্বনিতরঙ্গ ওই নগরীকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দেয়। অনেকের বিশ্বাস, এটা কোনো এয়ারফোর্স অনুশীলনেরই অংশ। কিন্তু ভারতীয় আর্মি সেটা অস্বীকার করে। তাহলে এই শব্দ কিংবা ঝাঁকির উৎস কী? সে রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি কেউই।

 

সর্বশেষ খবর