শিরোনাম
বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অন্যরকম শহর!

অন্যরকম শহর!

পৃথিবীতে রয়েছে প্রায় ১৯৫টি দেশ আর এই সার্বভৌম ১৯৫টি দেশের ভিতরে রয়েছে হাজার হাজার শহর। গ্রামের চেয়ে বড় আর দেশের চেয়ে ছোট এই শহরগুলোর নাম শুনলেই ঠিক কী মনে ভেসে ওঠে আপনার? কিছু ঘর, রাস্তাঘাট, বাজার, থানা, ডাকঘর, প্রয়োজনীয় সব সুবিধা আর এ সবকিছুর কেন্দ্রস্থল অনেকগুলো মানুষ। এই তো? কিন্তু জেনে আশ্চর্য হবেন যে প্রায় সব শহরের ক্ষেত্রে আপনার এ ধারণা মিলে গেলেও কিছু শহর নিজেদের ব্যতিক্রম দিয়ে থেকে যায় তালিকার বাইরে। জানতে চান সেই শহরগুলোকে? চলুন দেখে আসি এক নজর! লিখেছেন-  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

   

 

বুড়োদের শহরে শিশুরা নিষিদ্ধ

বুড়োদের শহর? এমনটাও আবার হয় নাকি? হয়! সত্যিই এমন শহর আছে পৃথিবীতে যেখানে কিনা সবাই বৃদ্ধ। আসলে বৃদ্ধ না হলে এ শহরে বসবাস করার অনুমতিই পাওয়া যায় না। আর এই শহরটির নাম হচ্ছে দ্য ভিলেজেস। ফ্লোরিডার বৃদ্ধদের এ শহরে বসবাস করেন অবসরপ্রাপ্ত সব মানুষ। ভাবছেন শহরের অধিবাসী কজন? সে সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। এক লাখের বেশি মানুষ বাস করে এ বৃদ্ধদের শহরে। শুনতে অবাক লাগলেও শহরে থাকার অনুমতি নেই কোনো শিশুর। শিশুদের এ শহরে একরকম নিষিদ্ধই বলা চলে। দ্য ভিলেজেসের পরিচিতি অবশ্য কেবল এর অধিবাসীদের কারণেই নয়, এখানকার ভায়াগ্রার কালোবাজারির জন্যও। প্রতি পুরুষ মাথাপিছু এখানে দশজন নারীর সঙ্গ পেয়ে থাকেন এখানে। ফলে বয়স্কদের একরকম ডিজনি ওয়ার্ল্ড বলা চলে শহরটিকে। অন্যান্য অনেক স্থানের চেয়ে এ শহরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গলফ খেলার মাঠও! থাকতেই হবে। বয়স্কদের শহর বলে কথা! দিনের বেশির ভাগ সময় এখানকার অধিবাসীদের কেটে যায় গলফ খেলেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গলফ খেলার মাঠটিও আছে এ শহরে।  তবে কেবল গলফ খেলেই নয়, এর সঙ্গে অবৈধ নানারকম কাজ আর বার ফাইট এবং বিভিন্ন নিষিদ্ধ ও ভয়াবহ খেলা খেলেও নিজেদের সময় কাটান এখানকার বয়স্করা।

 

যেখানে সবাই মৃত

ক্যালিফোর্নিয়ার নীরবতার শহর হিসেবে পরিচিত কোলমা নামের এই শহরটির বাসিন্দারা যথেষ্টই ছিল একসময়। সময়টি ১৮৪৯ সাল। সে সময় প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ ছিল এখানে। কিন্তু হঠাৎ করেই গোল্ড রাশ শুরু হলো। সোনার খোঁজে সানফ্রান্সিসকোয় পাড়ি জমালো সেই সালে এই শহরের হাজার হাজার মানুষ। ফিরেও এলো একসময় তারা। তবে সঙ্গে করে বাড়তি হিসেবে নিয়ে এলো রোগের বীজ। ব্যস! একের পর এক মারা পড়তে লাগল মানুষ। ১৮৮০ সালের ভিতরে শহরটির ২৬টি সমাধিস্থলের সবকটাই প্রায় ভর্তি হয়ে গেল। কিছু দিন পর মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকলে শহরবাসী আর সমাধিস্থলের মালিকরা শুরু করেন শহরের দক্ষিণে নতুন সমাধিস্থল তৈরির। কারণ সে সময় এটাই সহজপ্রাপ্য ছিল বেশি। ১৯০০ সালে সানফ্রান্সিসকো সরকার এ শহরে আর কোনো নতুন কবরস্থান তৈরি নিষিদ্ধ করে দেয়। কারণ  সমাধি হিসেবে ব্যবহারকে জমির অপচয় বলে চিহ্নিত করে তারা। এ ছাড়াও এই সমাধিগুলো রোগ ছড়াচ্ছে বলেও দাবি অনেকের।

ফলে সানফ্রান্সিসকোতে কবর দেওয়া মানুষগুলোকে তুলে আনতে বাধ্য হয় শহরের মানুষ। বর্তমানে এখানে জীবিত মানুষের সংখ্যা মাত্র ১,২০০ হলেও মৃতদের সংখ্যা মোট ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি।  প্রচুর সমাধি রয়েছে এখানে। কোলমার ৭৩ শতাংশই সমাধিতে পূর্ণ। যাদের ভিতরে বাদ নেই ইহুদি, চীনা কিংবা অন্য ধর্মের লোকেরাও।

 

চীনের নকল শহর

শহর আবার নকল কী করে হয়? না না! সেটা শহরই। তবে অন্য একটি শহরের নকল কেবল। নাম টেমস টাউন। এবার বলুন তো এটি কোন শহরের নকল করে তৈরি করা? কোনটি আবার! টেমস নদীর শহর লন্ডনকে অনুকরণ করে তৈরি হয়েছে এই শহর। তাও আবার চীনের ভিতরে। যেখানে কিনা খোদ চীনের অনুকরণে পৃথিবীর সব স্থানেই রয়েছে ছোট-বড় নানা রকমের চায়না টাউন। কী নেই এখানে ব্রিটেনের অনুকরণে? ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ স্থাপত্য, রাস্তা, লাল রঙের টেলিফোন বুথ থেকে শুরু করে ব্রিটেনের স্থানীয় সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় এই নকল শহরে! এত গেল কেবল একটি শহরের কথা। চীনারা কিন্তু থেমে থাকেনি কেবল এই একটি শহরের নকল করে। লন্ডনের সঙ্গে সঙ্গে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া হলস্ট্যাটের অনুকরণের আরেকটি হলস্ট্যাট তৈরি করেছে তারা নিজেদের দেশে।

চীনের গোয়াংডং প্রদেশে তৈরি এই শহর নির্মাণ করতে চীনের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯৪০ মিলিয়ন ডলার। হলস্ট্যাটের অনুসরণে চার্চ, রাস্তা, কাঠের ঘর সবকিছুই ছবির মতো সাঁজানো আছে এ শহরে। অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত আসল হলস্ট্যাটের বাসিন্দা আর মেয়র প্রথমটায় এ ব্যাপারে অবগত না থাকলেও পরবর্তীতে তারা পরিদর্শনে আসেন তাদের শহরের নকল স্থাপনাটিতে। সবটা দেখে যথেষ্ট গর্বিত আর খুশি হন অস্ট্রিয়ার হলস্ট্যাট থেকে আসা মানুষ। তবে কিছু ব্যাপারে কথা তোলেন তারা। অনুমতির ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন।  বর্তমানে এসব ব্যাপারে কাজ করছে চীনা প্রতিষ্ঠান আর নকল হলস্ট্যাটের নির্মাণকারী মিনমেটালস।

 

দুই দেশের একটাই!

শহর আবার সুবিধাবাদী হয় কী করে এমনটাই তো ভাবছেন? সুবিধা মানুষ শহরের কাছ থেকে পায়। নিজেদের সুবিধার জন্যই তৈরি করে শহর। কিন্তু এ শহরটির কথা একটু আলাদাই! সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত বাসিংগান এম হকরহেইন নামের এ শহরটি সুইসদের হলেও জার্মানি থেকে সূক্ষè একটা রেখার দ্বারা আলাদা হওয়ায় কেবল নিজেদেরটাই নয়, জার্মান সুবিধাও ভোগ করেন তারা। মোটকথা, একটা শহর হয়েও এটি সুবিধা নেয় দুই রাষ্ট্র থেকেই! এভাবে দুটো দেশের সুবিধা পাওয়ায় সুবিধাভোগী শহর হিসেবেই পরিচিত এ শহরটি। মানচিত্রে বাসিংগান এম হকরহেইন শহরের মূল ভূমিটি জার্মানি থেকে পৃথক হয়েছে একটি সরু ভূমির কারণে। যেটা কিনা অনেক ক্ষেত্রে ৭০০ মিটারেরও কম চওড়া। আর সুইজারল্যান্ডে তো এর অবস্থান পাকাপাকিভাবে রয়েছেই। অবাক করা ব্যাপার হলেও সত্যি, কেবল সুযোগ-সুবিধাই নয়, জার্মান ও সুইস দুটো দেশেরই আলাদা পোস্টাল কোড আছে এ শহরটির।

একই ব্যাপার ঘটেছে টেলিফোন কোডের ক্ষেত্রেও। যে কোনো সমস্যায় পড়লে এখানকার মানুষ ডাকতে পারে দুটো দেশের পুলিশকেই। যদিও সুইস পুলিশরাই স্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি চলে আসে। এই পুরো ব্যাপারটির শুরু ১৪ শতক থেকে। সুইজারল্যান্ডের কাছে শহরকে না দিয়ে জার্মানদের কাছে সমর্পণ করে অস্ট্রিয়া বাসিংগানের লর্ড মারা যাওয়ার পর।  পরবর্তীতে শহরের অধিবাসীরা কী চায় সেটা নিয়ে নির্বাচন হলেও কোনো শেষ সিদ্ধান্তে আসা যায়নি এখনো।

 

বাসিন্দা একজন!

ভাবুন তো একটি শহরের কথা, যেটার মালিক কেবল একজন। কেবল মালিকই নন, বাসিন্দাও একজন। একজন এর নিরাপত্তাকারীও! মালিক, বাসিন্দা আর নিরাপত্তাকর্মীই নন, পৃথিবীতে এমন একটি শহর রয়েছে যার সবকিছুই শুধু একজন। চেক দেশান্তরীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই শহরটি উত্তর-পশ্চিম নেব্রাস্কাতে অবস্থিত। নাম মনোওয়ি। ১৯৩০ সালে এ শহরটির জনসংখ্যা ছিল মোট ১৫০ জন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে একটা সময় সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় মাত্র দুজনে। এলসি এলার আর তার স্বামী। শত ঝামেলার মুখেও টিকে থাকেন তারা প্রিয় শহরটিকে নিয়েই। তবে ২০০৪ সালে এলসির স্বামী রুডিও মারা যান। আর এলসি হয়ে পড়েন এই বিশাল শহরের একমাত্র বাসিন্দা! অনেক বছর আগে মাত্র একজন বাসিন্দাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল গোটা শহরের কার্যক্রম। অনেকদিন পর এখনো ৭৭ বছর বয়সী এলসি এলারই এখানকার একমাত্র মানুষ হয়ে বেঁচে আছেন শহরটিতে। ভাবছেন একা একা কী করে সময় পার করেন এলসি তার শহরটিতে? একটুও চিন্তা করবেন না। একটা শহরের কি কম কাজ? কষ্ট করে হলেও শহরের পাঠাগার থেকে শুরু করে সবকিছুরই দেখভাল করেন এই বয়স্ক নারী।  কারণ খানিকটা ভেঙে পড়া, খানিকটা ঘাস-পাতায় ঢাকা পড়ে যাওয়া এই অতি পরিচিত শহরটির মেয়রও যে তনি!

 

একলা এবং ভুতুড়ে

শহর তো অনেক দেখেছেন। শুনেছেন তাদের অনেকের নাম আর মজার সব ব্যাপার। কিন্তু এমন কোনো শহরের কথা কি শুনেছেন যেখানে কোনো মানুষ নেই? আর সেরকমই এক শহরের কথা শোনাব এখন আপনাদের। বেশি দূরে কোথাও নয়, চীনের মঙ্গোলিয়ায় অবস্থিত এই মানুষহীন শহরটির নাম ওরডস। যাকে মানুষ ভুতুড়ে শহর বলতেই স্বস্তি বোধ করেন বেশি। নির্মাণের সময় অবশ্য এরকম কিছু হওয়ার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করেননি এর নির্মাতারা। সে সময় প্রায় এক মিলিয়ন মানুষের বসবাসের জন্যই তৈরি হচ্ছিল ওরডস। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলোর মাত্র দুই শতাংশ স্থানই মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে। ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে। সে সময় কয়লা রাশ শুরু হয় মঙ্গোলিয়ায় আর ভবিষ্যতের কথা ভেবে কোটি কোটি টাকা এখানে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা। তৈরি হয় বিশাল বিশাল সব দালান।

হাজার হাজার ফ্ল্যাট। কিন্তু এর সবটাই থেমে যায় যখন কিছু দিন পরই মানুষের আকর্ষণ কমে যায় এই স্থানের প্রতি। চলে যেতে থাকে তারা এখান থেকে। আর ফেলে রেখে যায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা দালানগুলোকে। কিছু করার না থাকায় অর্ধনির্মিত অবস্থাতেই অনেক দালানকে ছেড়ে চলে যায় বিনিয়োগকারীরাও। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে এখানকার প্রতি বর্গফুটের দাম নেমে আসে ১,১০০ থেকে ৪৭০ ডলারে।  তবে কোনো কিছুতেই কোনো লাভ হয়নি। ভুতুড়ে শহর রয়ে গেছে ভুতুড়েই।

 

ময়লা যেখানে শিল্প

ভাবুন তো একবার, রোজ সকালে উঠে যদি দেখেন আপনার বাড়ির সামনে কেউ ময়লা ফেলে রেখে গেছে তাহলে কেমন লাগবে আপনার? আর এ ঘটনাটা টানা ৭০ বছর ধরে চলে এসেছে মিসরের মানশিয়াত নাসেরের তৈরি এ ময়লার শহরে। এ শহরে একবার তাকালেই যে কেউ বুঝতে পারবে কতটা ময়লা ফেলা হয়েছে এখানে বছরের পর বছর ধরে। যদি প্রশ্ন ওঠে স্থানীয়দের নিয়ে, তাহলে আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে একদমই ফাঁকা নেই এই ময়লার শহরটি। এখানে রয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। যাদের প্রতিদিনের কাজ এ ময়লাগুলোকে ঠিকঠাক করে রাখা। নিজেদের এই কাজ নিয়ে এতটুকু অখুশি নয় তারা। আর তা হবেই বা কী করে? এই পুরো শহরটির অর্থনীতি তো এই ময়লাকে ঘিরেই ঘোরাফেরা করে। আর তাই ৭০ বছর ধরে এখানে কায়রোর সব ময়লা ফেলা হতো। এখানকার অধিবাসী জাব্বালিনরা খুশিমনেই পরিষ্কার করত সেগুলো। পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করত। তবে ২০০৩ সালে কায়রো সরকার বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানকে এই ময়লার ভার দেয়। মেরে ফেলে জাব্বালিনদের শূকরদের। যাদের একটা বড়সড় ভূমিকা ছিল পুরো ময়লা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায়। ফলে থেমে যায় পুরো শহরটির মানুষের রুটি-রুজির চালিকাশক্তি।  ধ্বংস হয়ে যায় ময়লার এই শহরের প্রধান শিল্প!

 

এক ভবনেই পুরো সিটি

একটি শহরে ঠিক কতগুলো দালান থাকা উচিত? ভাবছেন এটাও আবার কোনো প্রশ্ন হলো নাকি? শহর যখন, তাতে অন্তত কয়েকশ দালান তো থাকবেই! তাতে থাকবে ঘর, ডাকঘর, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, দোকান কতকিছু! কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে, আলাস্কার এ শহরটিতে আর ১০টি শহরের মতো এসব উপাদান থাকলেও নেই কেবল থাকার স্থান। আর তাই পুরো একটি শহরই এখানে তৈরি হয়েছে একটিমাত্র দালানকে ঘিরে। ভাবতে পারছেন একটি বিল্ডিংয়ের ভিতরেই আটকে থাকা কোনো শহরের কথা? আলাস্কার হোয়াইটার নামক এ শহরটির কেন্দ্রস্থল একটিমাত্র দালান। ১৪ তলার এ দালানে বর্তমানে প্রায় ২২০ জন মানুষ বাস করে। বেইজিক টাওয়ার নামে পরিচিত দালানটি সাবেক আর্মি ব্যারাক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এটিই শহরবাসীর একমাত্র আশ্রয়স্থল। শহরের সব মানুষ যে একটি দালানে আটকে যায় তা নয়। বাইরে গাড়ি, মাছ ধরার নৌকা কিংবা অন্য কোনো যানবাহনেও জায়গা খুঁজে নিতে হয় অনেককে। তবে তা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে। বাদবাকি বেশির ভাগ মানুষই ঠিকঠাক এঁটে যায় অদ্ভুত এই শহরটির দালানে। থাকার ঘর ছাড়াও দরকারি কী নেই এই দালানে? ডাকঘর, পুলিশ স্টেশন, বিদ্যালয়, চার্চ, হাসপাতাল থেকে শুরু করে ছোটখাটো বাজারও রয়েছে এখানে। রয়েছে শরীরচর্চার জন্য জিম আর ভূগর্ভস্থ টানেল। এ ১৪ তলার ভিতরেই! তবে বাদবাকি সব কিছু অনেক বেশি ব্যবহৃত হলেও এখানকার দোকানটিতে কখনোই খুব বেশি ভিড় দেখা যায় না। দালানের প্রতিটি মানুষের হাতেই দেখতে পাওয়া যায় বাইনোকুলার।  নানারকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বরফ আর প্রিয়জনের খোঁজখবর রাখতেই এটি ব্যবহার করেন তারা।

 

যেখানে দাবাই সব

খেলতে ভালোবাসে না কে? ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, গলফ থেকে শুরু করে লুডু কিংবা দাবা- কোনো না কোনো খেলার প্রতি একজন মানুষের আকর্ষণ থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে সেই আকর্ষণের জের ধরে পুরো একটা শহর তৈরি করে ফেলা? শুনতে নিশ্চয়ই পাগলের প্রলাপের মতো ঠেকছে। কিন্তু বাস্তবেই এমন খেলাবান্ধব শহর রয়েছে পৃথিবীতে। যেটা কেবল ভিতরে ভিতরেই খেলাবান্ধব নয়, দৃশ্যতও তাই! আর সেই শহরটির নাম হচ্ছে এলিস্তা। রাশিয়ার কালমাইকিয়ার রাজধানী এলিস্তাতে প্রবেশ করলে প্রথমেই যে কথাটি আপনার মনে আসবে সেটা হচ্ছে, আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! বিশেষ করে যদি দাবার প্রতি কোনোরকম আকর্ষণ থাকে আপনার। কারণ পৃথিবীতে এটিই একমাত্র শহর যেটার শুরু থেকে শেষ অবধি পুরোটাতেই রয়েছে দাবার ছাপ। রাজা, রানী, বড়ে, নৌকা- এ শহরের সব দালান আর স্থাপত্যেই রয়েছে এগুলোর ছাপ। শহরটির টাউন স্কয়ারে রয়েছে বিশাল এক দাবার খেলার বোর্ড। তৈরির সময় এখানকার মানুষ এতটাই দাবার প্রতি মোহান্বিত ছিল যে কেবল দাবার অনুকরণই নয়, ১৯৯৮ সালে দাবার অলিম্পিয়াডও অনুষ্ঠিত হয় এখানে। দাবার শহর নামে পরিচিত এ শহরে এখন পর্যন্ত ঘুরে গেছেন বিখ্যাত অনেক দাবাড়ু। তবে এ ছাড়াও অন্য একটা পরিচিতি রয়েছে এলিস্তার।  ইউরোপের একমাত্র বুড্ডিস্ট শহর হচ্ছে এলিস্তা, যেখানটায় গেলে আপনি দেখতে পাবেন পৃথিবী বিখ্যাত বুড্ডিস্ট জাদুঘরও!

 

যেখানে সূর্য ডোবে না

পৃথিবীর একটা পাশে যখন সূর্য ওঠে, অন্যপাশে তখন নেমে আসে রাত। এই তো শুনেছেন সবসময়? সত্যিটা এটাই। কিন্তু হিসাবটা একটু গোলমেলে হয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তরের শহর নরওয়ের স্পিটসবার্গেনের লংইয়ারবিন শহরের বেলায়। এখানে অফিস-আদালত, ডাকঘর, মানুষ, বিমানবন্দর সবকিছু রয়েছে। তবে বছরের কিছু মাসে নেই কোনো সূর্যাস্ত! শুনতে অবাক করা মনে হলেও কথাটি পুরোপুরি সত্যি। আমাদের এখানে প্রতিদিন একবার সূর্য ওঠে। সকাল হয়। দুপুর আসে, বিকাল হয়, সন্ধ্যা নামে। সূর্য ডুবে গিয়ে জন্ম দেয় রাতের। চাঁদ ওঠে আকাশজুড়ে। রাত শেষে চাঁদ চলে গিয়ে সূর্য উঁকি মারে আবার ওই আকাশটাতে। কিন্তু নরওয়ের এই স্থানটিতে অদ্ভুতভাবে সূর্য ওঠে না কখনোই। উঠবে কী করে? সূর্য চলে গেলে তবে তো উঠবে! ২০ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সবসময় দিনের আলো থাকে এই স্থানটিতে। রাত নামেই না! ভাবুন তো একবার, মাঝরাতেও যদি জানালা খুলে দেখেন যে আকাশে একটা বড়সড় সূর্য ঝুলছে তাহলে কেমনটা লাগবে? আর এমনই সমস্যায় পড়তে হয় লংইয়ারবিনের মানুষকে। দুই-তিন দিন চলার পর শরীর তো শরীর, মানুষ নিজেও ঝামেলায় পড়ে যায় কখন দিন আর কখন রাত সেটার হিসাব রাখতে। তবে কেবল দিন-রাতের হিসাবটাই নয়, লংইয়ারবিন আর ১০টি শহরের চেয়ে অনেকটা আলাদা এর প্রচলিত একটি নিয়মের কারণেও। আর সেটি হচ্ছে কোনো অসুস্থ অথবা মৃত মানুষকে রাখা হয় না এ শহরে। কেউ অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে রেখে আসা হয় শহরের বাইরে। কারণ খানিকটা সময় সারাক্ষণ আকাশে সূর্য উঠলেও বাকিটা সময় মাটির নিচে এতটাই ঠাণ্ডা থাকে যে লাশ রাখলে তা একেবারেই মিশতে চায় না।  বরং কাঠ হয়ে জমাট বেঁধে থাকে! আর এ সমস্যা দূর করতেই এখানকার মানুষরা নিয়েছে এ অভিনব ব্যবস্থা।

 

 

সর্বশেষ খবর