শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর মানুষখেকো

তানভীর আহমেদ

ভয়ঙ্কর মানুষখেকো

এনজম্বের সিংহ : ১৯৩২ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ার এনজম্বে শহরের কাছে একদল সিংহ কুখ্যাত হয়ে ওঠে তাদের মানুষ মারার নেশার কারণে। সরকারি হিসাবে প্রায় দেড় হাজার মানুষ এই সিংহদের কবলে প্রাণ হারান, যদিও কেউ কেউ সংখ্যাটা দুই হাজার বলে ধারণা করেন। অবশেষে জর্জ রুশবি নামের এক বিখ্যাত শিকারি প্রাইডের প্রায় ১৫টি সিংহ শিকার করলে বাকি সিংহ ওই অঞ্চল ছেড়ে চলে যায়।

পানারের মানুষখেকো : চিতাবাঘ সচরাচর মানুষ মারে না, কিন্তু একবার মানুষখেকো হয়ে গেলে এদের সামলানো খুবই কঠিন। এ রকম একটি উদাহরণ হলো পানারের মানুষখেকো চিতাবাঘ। ভারতের কুমায়ুন জেলার পানার গ্রামের কাছাকাছি এই চিতাবাঘ মানুষ মারা শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে।

কমবেশি ৪০০ মানুষ এর পেটে যায়। পরবর্তীকালে বিখ্যাত শিকারি জিম করবেটের গুলিতে ১৯১০ সালে পানারের ত্রাস প্রাণ হারায়।

চম্পাবতের বাঘিনী : চম্পাবতের বাঘিনীর পেটে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ৪৩৬। যদিও আসল সংখ্যা আরও বেশি বলে ধরা হয়। তার মানুষখেকো জীবনের শুরু হয় নেপালে। দুই শতাধিক মানুষ মারার পর নেপালি সেনাবাহিনীর জওয়ানদের তাড়া খেয়ে সে ভারতে আসে। এখানে এসেও দিন-রাতে সব সময় বেমক্কা হামলা চালিয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষদের একরকম গৃহবন্দি করে ফেলে সে। অবশেষে জিম করবেটের গুলিতে ১৯১১ সালে প্রাণ হারায় এই বাঘিনী। স্থানীয় মানুষ এই ঘটনায় এতই খুশি হয়েছিল যে তারা করবেটকে রীতিমতো সাধু বলে সম্মান দেখানো শুরু করে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সিরিয়াস কিলারও চম্পাবতের বাঘিনীর মতো এত মানুষ হত্যা করেনি।

গুস্তাভ : ৩০০ মানুষের প্রাণ হরণকারী ‘গুস্তাভ’ নামের এই কুমিরের প্রথম দেখা মেলে আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডিতে। গুস্তাভের আকৃতি প্রকাণ্ড, প্রায় ২৫ ফুট লম্বা আর ওজন এক টন। প্যাট্রিস ফে নামের এক ফরাসি প্রকৃতিবিদ এ নামকরণ করেন। ফে গুস্তাভকে অনেক শিকারিই জীবন্ত ধরার চেষ্টা চালান। কিন্তু তাকে কখনোই ধরা যায়নি। গুস্তাভ খুব সম্ভবত একমাত্র মানুষখেকো যার জীবন্ত ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। ধারণা করা হয়, কুমিরটির বয়স প্রায় ৬০ বছর। গুস্তাভের খাদ্যতালিকায় আছে মোষ, গরু, মানুষ এমনকি জলহস্তী পর্যন্ত।

করোয়াই আদিবাসী : এক আদিবাসী গোষ্ঠীর নাম করোয়াই। নিউ গিনি দ্বীপের ইন্দোনেশিয়া অংশের পাপুয়া রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্বের গভীর জঙ্গলে এদের বসতি। বর্তমানে সব মিলিয়ে এদের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই করোয়াইরা জানতই না যে পৃথিবীতে তারা ছাড়াও অন্য কোনো মানুষ আছে। করোয়াইরাই পৃথিবীর সর্বশেষ জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে নরমাংস ভক্ষণের প্রথা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে তাদের মধ্যে এ প্রথা একেবারে নেই- এমনটা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও তা যে বহুলাংশে কমে এসেছে তা নিশ্চিত।

গাছ : বাস্তবে বিজ্ঞানীরা মানুষখেকো উদ্ভিদ বলে কোনো কিছুর সন্ধান পাননি। তবে বাস্তবে সত্যিই পৃথিবীতে রয়েছে মাংসখেকো গাছ যারা ছোট ছোট পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। মাংসখেকো উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদ্ভিদ হলো কলস উদ্ভিদ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে আলোচিত কলস উদ্ভিদ। এই কলসের উপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লাল রঙের চমৎকার একটি অংশ থাকে। এই অংশে মধুর মতো রস নিংসৃত হয় যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের ওপরে বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই পিচ্ছিল কলসের ওপর বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। ভিতরের এক ধরনের রস এসে পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।

গুহা : গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবো দুই হাজার বছর আগে এমন এক গুহার কথা লিখেছিলেন যেটিতে মানুষ গেলে আর ফিরে আসত না। বর্তমান বিজ্ঞানেও এদের কোনো বাস্তবতা নেই। স্ট্রাবোর পুঁথির সূত্র ধরে ধারণা করা হয় ওই গুহার নিচ থেকে প্রাকৃতিকভাবে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতো। ফলে কোনো মানুষ বা জীবজন্তু গুহার ভিতরে প্রবেশ করলে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে মারা যেত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর