রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

কলম জাদুকরের জন্মদিন

তানভীর আহমেদ

কলম জাদুকরের জন্মদিন

হুমায়ূনের ঘরসংসার

কলম জাদুকর হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত জীবন, সংসার নিয়েও আগ্রহের অন্ত নেই তার পাঠক ও ভক্তদের। এই কৌতূহল লেখকের জন্য অবিরাম ভালোবাসা থেকেই এসেছে...

হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রীর নাম গুলতেকিন আহমেদ। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তিন  মেয়ের নাম বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের জীবনের প্রায় অর্ধেক সময়ে তার অস্তিত্বজুড়ে ছিলেন গুলতেকিন। ৩০ বছরের সংসার ছিল এই দম্পতির। তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৩ সালে। বিয়ে-বিচ্ছেদের পর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে অনেকটা অন্তরালে চলে যান গুলতেকিন। বিয়ে বিচ্ছেদের দুই বছর পর তিনি বিয়ে করেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে। এ সংসারে তাদের দুই  সন্তান রয়েছে। নিষাদ হুমায়ূূন ও নিনিত হুমায়ূন। হুমায়ূন আহমেদের জীবনে গুলতেকিন এবং শাওন এই দুই নারীরই অবদান অপরিসীম।

 

হিমু

বাংলা সাহিত্যে কুবের আছে, দেবদাস আছে, আছে কবি নিতাই। বহু কবি-সাহিত্যিক এমনকি নাট্যকারের সৃষ্টি করা এসব চরিত্র আমাদের মনে স্থান দখল করে আছে। অসংখ্য চরিত্র আজও আমাদের টানে। সে সব চরিত্রের ভেতরে থেকে হিমু ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদের কাল্পনিক সৃষ্টি। আর সেই কাল্পনিক হিমুতেই মজে আছে এই বাংলার অসংখ্য তরুণ। হিমুর আদলে হলুদ পাঞ্জাবিতে নিজেকে সাজিয়ে ঘুরে-বেড়ায় শহর-বন্দরে। হিমুর প্রকাশকাল থেকে আজ পর্যন্ত হিমু চরিত্রকে লালন করে আছে অসংখ্য তরুণ। কাল্পনিক হিমু তরুণদের মনে এতোটাই দাগ কেটেছে যে হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে থাকাকালীন দেখে গেছেন বিখ্যাত এই চরিত্র্যের প্রতি তরুণদের ভালোবাসা। তার মৃত্যুর খবর শুনে একদল হিমুর দল যাত্রা করেছিল নুহাশ পল্লীর দিকে। বিস্ময়কর হুমায়ূন আহমেদ আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার সৃষ্টি আছে সবখানেই। হিমু বাংলা সাহিত্যে প্রথাভাঙা চরিত্র। তার বয়সের তরুণ যখন নিজ ভবিষ্যৎ আর করপোরেট স্বপ্নে বিভোর, হিমু তখন পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে, খালি পায়ে হাঁটা এক পথিক। হিমু কোনো বড় করপোরেট অফিস কিংবা কোম্পানিতে চাকরির স্বপ্ন দেখে না, হিমু বিয়ে কিংবা প্রেমের হিসাবও কষে না, এমনকি হিমু ফ্যাশন নিয়ে কখনো ভাবেনি। ‘হিমু’ উপন্যাসে সে নিজেকে একজন নিতান্তই পথিক হিসেবে পরিচয় দেয়।

 

সাড়া জাগানো যত চরিত্র...

হুমায়ূন আহমেদের চরিত্র রূপায়ণ সবসময়ই সাড়া জাগিয়েছে। তার চরিত্রগুলো পাঠক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। তেমন কয়েকটি চরিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, হিমু, মিসির আলী, রূপা, শুভ্র ও বাকের ভাই। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা চরিত্রের একটি হচ্ছে হিমু। খালি পায়ে পকেটবিহীন হলুদ পাঞ্জাবি পরে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরে বেড়ান হিমু। উদ্ভট সব কাজই তার মূল কর্মকাণ্ড। যুক্তির ধার-ধারেন না। অন্যদিকে রয়েছে মিসির আলী। তিনি মোটা ফ্রেমের ভারী চশমা পরিহিত লোকটি কিছুতেই বিশ্বাস করেন না অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা। যত রহস্যময় ঘটনাই ঘটুক যুক্তি দিয়ে তার সমাধান খুঁজে নেন। এই যুক্তিবাদী মানুষটির নাম ‘মিসির আলী’। হিমুর ঠিক বিপরীত। হিমু যেমন যুক্তি মানে না, মিসির আলী আবার যুক্তির বাইরে হাঁটেন না। হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘মিসির আলী’ই তার সবচেয়ে প্রিয়। ‘হিমু’কে যদি অগোছালো আর যুক্তিতর্ক বিরোধী চরিত্রের প্রতীক বলা হয়; মিসির আলী হচ্ছে সম্পূর্ণ তার বিপরীত। মানুষের মন, আচরণ, স্বপ্ন এবং সংকট যুক্তির আলোকে ব্যাখ্যা করাই হলো মিসির আলীর একমাত্র কাজ। ‘শুভ্র’ চরিত্রটি তার নামের অর্থের মতোই শুদ্ধতম এক মানবের প্রতিচ্ছবি হয়ে ফুটেছে। হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলোর মধ্যে শুভ্র অন্যতম। নিজেকে পৃথিবীর যাবতীয় জটিলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভাবতে চান না শুভ্র। নাটকের চরিত্র হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাকের ভাই। কোনো গল্প, উপন্যাস কিংবা নাটকের চরিত্র যে বাস্তবজীবনে এভাবে দৃশ্যমান হয় তা বোধ হয় আগে কেউ দেখেনি। হুমায়ূন আহমেদই সেই বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয় নাটক। এ নাটকে ‘বাকের ভাই’র চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সৃষ্টি ‘রূপা’। হিমু’র মতো এক বাউন্ডেলেকে ভালোবাসে এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি।

 

যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে হুমায়ূনের কথাই সত্যি হলো

‘‘মে ফ্লাওয়ার-এ হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, আমেরিকানরা ১০০ বছরেও নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে না। আমরা আমাদের দেশে একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের কথা চিন্তা করতে পারি। ভাবতে পারি। ওরা তা পারে না...

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হিলারি বন্দনায় মজে ছিল গোটা বিশ্ব। নির্বাচনে জিতলেই তিনি হবেন আমেরিকান ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তা আর হলো না। সেই বন্দনা পুরোটাই বৃথা গেল। জনমত জরিপ, আর বিখ্যাতের ভবিষ্যদ্বাণী সব মিথ্যা বনে গেল। এসব আলোচনায় যখন গোটা বিশ্ব সরগরম। তখন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনপ্রিয় লেখক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের করা উক্তিটি নজরে আসে সবার। দুই যুগ আগের প্রকাশিত মে ফ্লাওয়ার-এ পরিষ্কার লিখেছিলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের কথা চিন্তা করতে পারি। ভাবতে পারি। ওরা তা পারে না। আসছে ১০০ বছরেও আমেরিকায় কোনো মহিলা প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট হবে না। অতি সুসভ্য এই দেশ তা হতে দিবে না।’ দুই যুগ আগের করা এই লেখাটিই বরাবরের মতো সত্য প্রমাণিত হলো। বইটিতে হুমায়ূন আহমেদ তার যুক্তরাষ্ট্রে লেখকদের একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। তিনি বইটিতে আরও লিখেন, আমেরিকানরা খুব জরিপের ভক্ত। সব কিছুরই জরিপ চায়। জরিপ চালায় অসংখ্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান। টাকার বিনিময়ে তারা জরিপ করে দেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর