শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিলাসিতা কারে কয়

তানভীর আহমেদ

বিলাসিতা কারে কয়

দেড় কোটি টাকার ডিনার

প্রশ্নটা যদি হয়, তিন বেলার খাবার খেতে কত টাকা খরচ হয়? তবে দায়সারা একটা উত্তর দেওয়ার আগে ভেবে নিন। আপনি একা নন, বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিলাসী ধনীদের কথাও একটু মাথায় রাখবেন। ফাইভস্টার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ব্যক্তিগত জাহাজ বা দ্বীপে বসবাসকারীদের কথাও বিবেচনায় রাখবেন। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে স্পেনের সাবলিমোশন রেস্টুরেন্টের ডিনারের কথা চলে আসে। সমুদ্রের তলদেশে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা ও বিশ্বের সেরা শেফ (রাঁধুনি)-এর রান্নায় সেখানে একজনের খাবার বিল আসত প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। এ পর্যন্ত ভেবেই চোখ কপালে তোলার দরকার নেই। সে বছরের জুনেই ভিরমি খাওয়ার মতো তথ্য প্রকাশ পেল কিছু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। বিখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন খুঁজে বের করল, বিলাসী ধনকুবেরদের টাকা উড়ানোর নতুন উদ্ভাবন। সবচেয়ে বেশি টাকার খাবার বিল জোগাড় করতে গিয়ে জানা গেল পরিমাণটা দেড় কোটি টাকা। এত টাকার কি এমন খাবার খাওয়া যায়, প্রশ্ন জাগতে পারে। আসলে এই টাকাটা একটি প্যাকেজ আকারে নেওয়া হয় যার মূলে রয়েছে চমকপ্রদ ডিনার মানে রাতের খাবার। মোট আট ঘণ্টার ভ্রমণ, বিনোদন, উপহার ও খাবার বাবদ আপনার খরচ হবে এক কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা। বিলাসী ধনকুবেররা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজার রেখে এ ধরনের ডিনারের আয়োজন করে থাকে। নিরাপত্তার কারণে পুরো আয়োজনের তথ্য জানা না গেলেও কী কী থাকে সেই ডিনারে সেটুকু বেরিয়ে এসেছে। এই ডিনার মূলত দম্পতি বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য বরাদ্দ। আপনার প্রেমিকা বা স্ত্রীকে চমকে দেওয়ার জন্য আট ঘণ্টার গোটা আয়োজনে ব্যবহার করা হয় দশ হাজার লাল গোলাপ। টাটকা গোলাপগুলো নিজেদের বাগানেই চাষ করা হয়। মোট আঠারো পদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। মিলবে ৫৫ বছরের পুরনো ওয়াইন যা রাজকীয় গোপন রেসিপিতে তৈরি। ২.০৮ ক্যারেটের দুর্লভ নীল হীরার আংটি থাকছে উপহার হিসেবে। আপনার যাত্রা শুরু হবে সিঙ্গাপুর থেকে। প্রিয়জনকে সঙ্গী করে ৪৫ মিনিটের হেলিকপ্টার ভ্রমণে সিঙ্গাপুর শহর ঘুরিয়ে দেখানো হয়। হেলিকপ্টার নামিয়ে দেবে মেরিন বে হোটেলের ছাদে। পুরো ছাদ লাল গোলাপে মোড়ানো হবে। সেখানে তারকা কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে আড্ডায় বসার সুযোগ থাকবে। সূর্যাস্তটা সেখানেই কাটানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলে গানের আসর বসবে। ছাদের ওপর পুরোটা রেস্টুরেন্ট থাকবে আপনার অপেক্ষায়। প্রেসিডেন্টদের জন্য যে ধরনের ‘জেড ফোর্স নিরাপত্তা’ ব্যবস্থা থাকে সে ধরনের নিরাপত্তা মিলবে আপনারও। এবার ঘড়ির কাঁটা ৯টায় পৌঁছলে হাজির হবে রাতের খাবার। সামুদ্রিক মাছ, সালাদ, ওয়াইন ছাড়াও ১৮ ধরনের স্পেনিশ, মেক্সিকান খাবার পরিবেশন করা হবে। খাবারের এক পর্যায়ে সোনার পাতে, মখমলে জড়ানো উপহার এসে পৌঁছাবে। নীল হীরার আংটির ঝলকানি চোখকে বিশ্বাস করানো কঠিন!

 

৪০ কোটি টাকার গাড়ি

টাকা উড়ানোর জন্য গাড়ির জুড়ি নেই। বিলাসী ধনকুবেরদের অদ্ভুত দুর্বলতা রয়েছে গাড়ির প্রতি। নিত্যনতুন মডেলের গাড়ি তাদের চাই-ই চাই। বিলাসী গাড়ির কথা বললে রোলস রয়েস, হ্যামার, বিএসডব্লিউ, স্পোর্টস কারের কথা উঠে আসে। তবে বিলাসিতার সীমা নেই অনেকের। তারা সোনায় মোড়ানো, হীরা বসানো গাড়ি অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নেন। অবশ্য এ মুহূর্তে সবচেয়ে দামি গাড়ির তালিকায় রয়েছে কোয়েনিংসএগ সিসিএক্স ট্রেভিটা মডেলের একটি গাড়ি। সুইডিস কোম্পানির তৈরি গাড়িটির মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা।

 

সাড়ে চার হাজার রুবি বসানো জুতা

আপনার পায়ের জুতার দাম কত? পাঁচশ, দুই হাজার, পাঁচ হাজার, পঁচিশ হাজার, পঞ্চাশ হাজার? এর চেয়েও বেশি? কত বেশি? দুই-তিন কোটি টাকা তো নয়! হ্যারি উইনসটনের র‌্যাবি স্লিপার খ্যাত এক জোড়া জুতার দাম দুই কোটি চল্লিশ টাকা। অবিশ্বাস্য শোনালেও, লাল টুকটুকে এই জুতা মন কেড়েছে ধনকুবেরদের। বিলাসিতার চূড়ান্ত মানা হয় একে। প্রেমিকা ও স্ত্রীকে চমকে দেওয়ার জন্য এই মডেলের জুতা ক্রয় করে থাকেন বিলাসী ধনীরা। এই জুতা তৈরি করতে দুই মাস সময় লাগে। পঞ্চাশ ক্যারেটের হীরা ও সাড়ে চার হাজার রুবি বসানো রয়েছে এই জুতায়।

 

রঙিন হীরার ঘড়ি

বিলাসী মানুষের হাতে দামি ঘড়ি চোখে পড়ে। এ ধরনের ঘড়ি তাদের আভিজাত্য প্রকাশ করে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ঘড়ি বানাতে পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। যে কেউ চাইলেই এ ঘড়ি কিনতে পারবেন না। যে ঘড়িটির কথা বলা হচ্ছে, একে ঘড়ি না বলে গোটা এক রত্নভাণ্ডার বললে ভুল হবে না। ২০১ ক্যারেটের রঙিন হীরার একটি ব্রেসলেটে বসানো ঘড়ির মূল্য ২০৮ কোটি টাকা। হ্যাঁ, ভুল পড়ছেন না, ২০৮ কোটি টাকা। ঘড়িটি দামি ফেরারি গাড়ি বা গোটা ডুপ্লেক্স বাড়ির চেয়েও দামি। ঘড়িটি ফুলের আদলে তৈরি। মনে হবে, হীরার ফুলে বসানো ঘড়ি।

 

বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বিলাসবহুল বাড়িটি রয়েছে ভারতে। বাড়িটির নাম আন্তিলা। এর মূল্য ১৬০০ কোটি টাকারও বেশি। বাড়িটির মালিক ভারতের ধনকুবের মুকেশ আম্বানি। মুম্বাই শহরের ২৭ তলা বাড়িটিতে পার্ক করা যাবে ১৬০টি গাড়ি। পরিচর্যার জন্য আছে ৬০০ সদস্যের বিশাল কর্মী বাহিনী। এ ছাড়াও রয়েছে বলরুম, সিনেমা হল, সুইমিংপুল ও ৫০ পিসের সোনার ডিনার  সেট। আন্তিলার উচ্চতা ৫৭০ ফুট। স্বাভাবিক পরিমাপে এ উচ্চতায় ৬০ তলা ভবনর তৈরি করা যাবে। তবে আম্বানি  তৈরি করেছেন মাত্র ২৭ তলা। বাড়িটির টপ ফ্লোরে তিনটি হেলিপ্যাড আছে। আছে চারতলার ঝুলন্ত বাগান।

 

ব্ল্যাক ডায়মন্ড মোবাইল

কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বিলাসবহুল মোবাইল ফোন হিসেবে নাম লেখাচ্ছে আইফোন ফাইভ ব্ল্যাক ডায়মন্ড। ব্রিটিশ ডিজাইনার স্টুয়ার্ট হিউজেসের এই মোবাইলে ২৬ ক্যারেটের সোনা ছাড়াও ৬০০টি হীরা বসানো আছে। ৫৩টি হীরা দিয়ে অ্যাপল লোগো তৈরি করা হয়। এটি তৈরিতে ৯ সপ্তাহ সময় লেগেছে। দাম ১২০ কোটি টাকা। নিত্যনতুন মডেল ও প্রযুক্তি সুবিধার মোবাইল বাজারে আসায় বিলাসী মোবাইল তৈরিতে ভাটা পড়েছে। তবু বিলাসীদের চাহিদা কমেনি। পকেটে তাদের ব্ল্যাক ডায়মন্ড মোবাইল মিলছে ঠিকই।

 

৯০ কোটি টাকার গাউন

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বিলাসী পোশাক একটি গাউন। গোলাপি রঙের গাউনটি বিয়ের পোশাক। ২০০৬ সালে এই ওয়েডিং গাউনটি রিজ-কার্লটন ম্যারিনায় প্রদর্শিত হয়। পুরো গাউনে বসানো হয়েছে হাজারেরও বেশি হীরা। এই হীরাগুলো আলোর তারতম্য বুঝতে পারে বলে সব ধরনের আলোতেই ঝলমল করে ওঠে। বিশেষভাবে সেলাই করার কারণে গাউনটিতে কখনই ভাঁজ পড়বে না, ময়লা আটকাবে না। প্রতিটি হীরা গাউনের নকশার সঙ্গে চমৎকারভাবে বসানো হয়েছে। এই বিয়ের পোশাকটির দাম ৯০ কোটি টাকারও বেশি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর