বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্বের যত দামি সুগন্ধি

তানভীর আহমেদ

বিশ্বের যত দামি সুগন্ধি

ডিকেএনওয়াই মিলিয়ন

প্রতি আউন্স পারফিউমের দাম যদি ৮০ লাখ টাকারও বেশি হয় তবে চোখ কপালে উঠবে— সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও আকাঙ্ক্ষিত পারফিউমটিকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ডিকেএনওয়াই মিলিয়ন। ২০১১ সালে বাজারে এসে পারফিউমটি বিলাসী, অভিজাত ধনকুবেরদের মন কেড়ে নেয়। বিখ্যাত অলঙ্কার ডিজাইনার মার্টিন কার্টজ এই পারফিউমটি নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি করেন। বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় পারফিউমের সংমিশ্রণে এটি তৈরি। এ ছাড়া আপেলাকৃতির পারফিউমের বোতলটি যে কারও চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। ১৪ ক্যারেট সোনালি ও সাদা সোনায় মোড়ানো ১৮৩টি নীলকান্তমণি, ২ হাজার ৭০০ সাদা হীরা, ১.৬ ক্যারেটের ব্রাজিলিয়ান ফিরোজা, ৭.১৪ ক্যারেটের শ্রীলঙ্কান নীলকান্তমণি, ১৫টি গোলাপি অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করা হীরা, ৪টি গোলাপ কাটা হীরা, ৩.০৭ ক্যারেটের গোলাকার রুবি, ৪.০৩ পিয়ার সাইজের হীরা, মাথায় ২.৪৩ ক্যারেটের হলদে হীরা বসানো হয়েছে এই পারফিউমের বোতলে। সবমিলিয়ে বোতলের গায়ে মোট ২ হাজার ৯০৯টি দামি পাথর বসানো আছে।

 

এরপরই বলতে হয় ক্লিভ ক্রিশ্চিয়ান নাম্বার ওয়ানের কথা। এই পারফিউমের প্রতি আউন্স কিনতে মালিককে খরচ করতে হবে ১০ লাখ টাকারও বেশি। অভিজাত পারফিউম হিসেবে এটি রাজ পরিবারে ব্যবহূত হয়ে আসছে। এখনো এর আবেদন কমেনি। বিশ্বের সবচেয়ে দামি পারফিউমের কথা উঠলে এটিকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ২০০৫ সালে মাত্র ১০টি বোতলে বিরল এই পারফিউম ছাড়া হয় বিখ্যাত হ্যারডস স্টোর লন্ডন, যুক্তরাজ্যে ও বার্গডফ গুডম্যান স্টোর নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রে। তখন বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। এই পারফিউমটি যে বোতলে বাজারে ছাড়া হয় তাতে রয়েছে ৫ ক্যারেটের সাদা হীরার প্রলেপ ও ১৮ ক্যারেট খাঁটি সোনার প্রলেপ।

বিলাসবহুল ক্রিস্টাল গ্লাস প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ব্যাকরেট বাজারে আনে সেকরিস দে থেবস। মিসরীয় যুগে অন্যতম অভিজাত পারফিউম ফর্মুলায় তৈরি হয় লেস লার্মস সেকরিস দে থেবস। এর প্রতি আউন্সের দাম পড়ে প্রায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

এই পারফিউমটি মনকাড়া সুরভীর জন্য বিখ্যাত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পারফিউমটি মিসরীয় কায়দায় তৈরি পিরামিড সদৃশ বোতলে বাজারে ছাড়া হয়। এটি তৈরিতে অম্বর, জুঁই, গোলাপ ব্যবহূত হয়। এ ছাড়া আরবীয় ধাঁচের গন্ধরস ও লোবান ব্যবহারের কথাও বলা হয়েছে।

চ্যানেল গ্র্যান্ড এক্সট্রেইট ঐতিহ্যগতভাবেই মানুষের কৌতূহল জাগানিয়া পারফিউম। এর প্রস্তুতকারক বিখ্যাত সুগন্ধিবিদ আরনেস্ট বেওয়াক্সকে কে না চেনে? ১৯২১ সালে তিনি বাজারে আনেন এই পারফিউমটি। পারফিউম ব্যবহারকারীদের কাছে অল্প সময়ের ব্যবধানেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি। কিন্তু আকাশছোঁয়া দামের কারণে এর নাগাল পেয়েছে কেবল বিলাসী ধনকুবেররাই। প্রতি আউন্স পারফিউমের দাম প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই পারফিউম তৈরির ফর্মুলা গোপন রাখা হয়। এই পারফিউমটি খুব যত্নসহকারে তৈরি করা হয়। ফ্রান্সে নিজেদের বাগানের জুঁই ও গোলাপ থেকে এই পারফিউম প্রস্তুত করা হয়।

 

টোয়েন্টিফোর ফোবার্গ নামে সুপরিচিত পারফিউমটি মহিলাদের ব্যবহার উপযোগী সবচেয়ে জনপ্রিয় পারফিউম। এর প্রতি আউন্সের দাম প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ফ্রেঞ্চ কোম্পানি ফোবার্গ তাদের দোকানের নামানুসারে এই পারফিউমটি বাজারে ছাড়ে ১৯৯৫ সালে। মাত্র ১ হাজার বোতল পারফিউম ছেড়েই খ্যাতি পায় বিশ্বজুড়ে। মোহনীয় সুঘ্রাণ মানুষকে মুগ্ধ করে। ক্রিস্টালের তৈরি বাঁকানো সুদৃশ্য  বোতলে এটি মানুষের হাতে পৌঁছায়। কমলা ফুল, জুঁই, টিয়ার ফুল, পাচোলি, মাদাগাস্কার ওয়াইল্যাং ওয়াইল্যাং, আইরিস, ভ্যানিলা, অম্বর, এবং চন্দনের নির্যাস থেকে এই পারফিউমটি তৈরি করা হয়।

ক্যারন পোভ্রে বিলাসীদের পছন্দ। এই পারফিউমটি বাজারে আসে ১৯০৪ সালের দিকে। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে এর দামও বাড়তে শুরু করে। প্রায় ৫০ বছর পর এটি বিশ্বের অন্যতম দামি পারফিউম হিসেবে নাম লেখায়। এটির প্রতি আউন্সের দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা। সোনায় মোড়ানো ক্যাপসহ ক্রিস্টাল বোতলে এটি বিক্রি হয়। এই পারফিউম তৈরিতে লাল, কালো মরিচ ছাড়াও লবঙ্গ ও বিভিন্ন মসলা ব্যবহার করা হয়।

 

পারফিউম কেন এত দামি?

পারফিউম তৈরিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিরল ফুল, গাছের শিকড় ব্যবহার করা হয়। এসব ফুল ও শিকড় সংগ্রহ করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া ফুল ও শিকড় থেকে যেভাবে তেল বা নির্যাস সংগ্রহ করা হয় সেই প্রক্রিয়ায় সামান্য ত্রুটি থাকলেই সুগন্ধি তৈরি সম্ভব হয় না। এ ছাড়া দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর ফুল ও শিকড় থেকে খুব সামান্যই নির্যাস বের করা যায়। পারফিউম তৈরিতে যে অম্বর ব্যবহার হয় তার প্রতি কেজির দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি অম্বর থেকে মাত্র কয়েক ফোঁটা খাঁটি সুগন্ধি বের করা সম্ভব হয়।

সর্বশেষ খবর