রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিশ্ব সেরা ফুটবল ক্লাব

রাশেদুর রহমান

ফুটবলের জনপ্রিয়তা নিয়ে খুব বেশি বলার প্রয়োজন নেই। কেবল এতটুকু বললেই হবে, বিশ্বের ২১১টা দেশ ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার সদস্য। ফুটবলের এই জনপ্রিয়তা অর্জনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্লাবগুলোর। ১৮৫৭ সালের ২৪ অক্টোবর। ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে শেফিল্ড এফসি। ফিফার স্বীকৃত সবচেয়ে পুরনো ক্লাব এটা। এরপর উনিশ শতক শেষ হওয়ার আগেই শত শত ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে অনেকেই এখন বিশ্ব সেরার তকমাধারী। ফুটবলের এ পথপরিক্রমায় বর্তমানে হাজারো ক্লাব রয়েছে বিশ্বে। তবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট কেবল বাছাইকৃতরাই ধারণ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সেরা ক্লাবগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন

 

গ্যালাকটিকো ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ

ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ এই ক্লাবের জন্ম ১৯০২ সালের ৬ মার্চ। এরপর থেকে গত ১১৫ বছরের ইতিহাসে এমন সব রেকর্ড করেছে তারা, সর্বকালের সেরার মুকুটটা রিয়ালকেই মানায়। ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে কঠিন প্রতিযোগিতা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দলটা। একটা সময় ছিল, ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার এ টুর্নামেন্টটি রিয়ালের জন্যই যেন বরাদ্দ থাকত। ১৯৫৬-৬০ পর্যন্ত টানা পাঁচবার এ টুর্নামেন্টটি নিজেদের করে নিয়েছিলেন ফেরেনচ পুসকাস আর আলফ্রেডো ডি স্টেফানোরা। রিয়াল মাদ্রিদ স্প্যানিশ লা লিগা জিতেছে ৩২ বার। কোপা দেল রে কাপ জিতেছে ১৯ বার। এ ছাড়াও উয়েফা সুপারকাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, স্প্যানিশ সুপারকাপসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অসংখ্য শিরোপা জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল দুনিয়ার প্রায় সব বড় তারকাকেই দলে ভিড়িয়ে নেয়। ব্রাজিলের রোনাল্ডো ও রবার্তো কার্লোস, ফ্রান্সের জিনেদিন জিদান, পর্তুগালের লুইস ফিগো, ইংল্যান্ডের ডেভিড বেকহ্যাম, স্পেনের রাউল গঞ্জালেস এবং ইতালির ফ্যাবিও ক্যানাভারো। বলতে গেলে সে সময়কার সেরা দল গড়ে তুলেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তাদের বলা হতো গ্যালাকটিকো ক্লাব। রিয়াল মাদ্রিদে খেলেছেন আর্জেন্টিনার আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, হাঙ্গেরির ফেরেনচ পুসকাস এবং মেক্সিকোর হুগো সানচেজরা ছিলেন তাদের সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের প্রাণভোমরা। তবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে।

 

টিকি-টাকার বার্সেলোনা

টোটাল ফুটবলের জনক ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ বার্সেলোনায় ফুটবল দর্শনের দারুণ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন। পরবর্তীতে সেই দর্শনেই সামান্য রদবদল করেন গার্ডিওলারা। নাম দেওয়া হয় টিকি-টাকা। ফুটবল পায়ে ধরে রেখে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এক দারুণ মন্ত্র আবিষ্কার করেছিল বার্সেলোনা। সেই মন্ত্রে ফুটবলের কত পরাশক্তি যে ঘায়েল হয়েছে। নতুন শতাব্দীতে বার্সেলোনাই একমাত্র ক্লাব যারা সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে ছিনিয়ে এনেছে সাফল্যের সিংহভাগ। ১৮৯৯ সালের ২৯ নভেম্বর। কাতালুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় এফসি বার্সেলোনা। এরপর থেকে গত ১১৭ বছরে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে ফুটবল দুনিয়ায় সগর্বে বিচরণ করছে কাতলানরা। স্প্যানিশ লা লিগায় ২৪টি শিরোপা জিতেছে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছে ৫ বার। নতুন শতাব্দীতেই জয় করেছে চারবার! এ ছাড়াও কোপা দেল রে কাপ জিতেছে সর্বোচ্চ ২৮ বার। স্প্যানিশ সুপারকাপ, উয়েফা সুপারকাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ছাড়াও আরও অসংখ্য শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা। কেবল শিরোপা জয়ের দিক দিয়েই নয়, সময়ের সেরা তারকাদেরও ধরে রেখেছে বার্সেলোনা। আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো তারকারাও খেলেছেন বার্সেলোনায়। এ ছাড়াও ব্রাজিলের রোনাল্ডো, পর্তুগালের লুইস ফিগো, নেদারল্যান্ডসের রোনাল্ড কোয়েম্যান, আর্জেন্টিনার স্যাভিওলারা বার্সেলোনার জার্সিতে মাঠ মাতিয়েছেন। আর হাল আমলে কেবল বার্সেলোনাই নয়, বিশ্ব মাতাচ্ছেন আর্জেন্টাইন লিওনেল মেসি।

 

নিউটন হিথ থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

ইংলিশ ফুটবলে সবচেয়ে পুরাতন ক্লাবগুলোর মধ্যে একটা নিউটন হিথ এফসি। ১৮৭৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ার এবং ইয়র্কশায়ার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্লাবটি গড়ে তুলে। প্রথমদিকে অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে খেলাই ছিল এই ক্লাবের প্রধান কাজ। পরবর্তীতে ইংলিশ ফুটবলে প্রথম বিভাগ প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে। এর চার মৌসুম পর প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পায় তারা। সেবার ১৬ দলের মধ্যে ষোলোতম হয়ে লিগ থেকে বাদ পড়েছিল দলটা। নিউটন এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে থাকে। বিশ শতকের শুরুর দিকে ক্লাব ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে অধিনায়ক হ্যারি স্ট্যানফোর্ড ধার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এই ঋণ পরিশোধ করেন। ১৯০২ সালে ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড করা হয়। তবে একটি সফল ক্লাব হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় তাদের। ১৯০৭-০৮ ও ১৯১০-১১ মৌসুমে প্রথম বিভাগ ইংলিশ লিগ জিতলেও পরের চল্লিশটা বছর তারা শিরোপাশূন্য থাকে। এই অবস্থা থেকে দলকে বের করে আনতে ম্যাট বুসবির কাঁধে দায়িত্ব দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ। এটা ১৯৪৫ সালের কথা। পরের ২৪ বছরে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে বিশ্ব সেরা ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে ম্যানইউর বর্তমান যে সুনাম, মান-মর্যাদা এর পুরোটাই স্যার আলেক্স ফার্গুসনের অবদান। তিনিই ম্যানইউকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দেন।  এই ক্লাবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছাড়াও বেকহ্যাম, রায়ান গিগস আর রুড ফন নিস্তলরয়দের মতো তারাকারা খেলেছেন।

 

এভারটন ভেঙে লিভারপুল

এভারটনের প্রথম নাম ছিল সেন্ট ডমিঙ্গো ক্লাব। ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্লাবটি। এক বছর পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় এভারটন। ক্লাবের মূল মাঠ ছিল এনফিল্ড। কিন্তু ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং এনফিল্ডের মালিক জন হোল্ডিংয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় ক্লাব কমিটির। মতের মিল না হওয়ায় এভারটন এনফিল্ড ছেড়ে চলে যায় গুডিসন পার্কে। এটা ১৮৯২ সালের কথা। হোল্ডিং এভারটন অ্যাথলেটিক নামে নতুন ক্লাব গঠন করেন। তবে তিন মাস পর ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে লিভারপুল রাখা হয়। ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এভারটন নামে অনুমোদন না দেওয়ায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সেই থেকেই লিভারপুল ইংলিশ ফুটবলে অন্যতম দল হিসেবে নিজেদের নাম ঘোষণা করে। প্রথম মৌসুমে ল্যাঙ্কাশায়ার লিগ জিতে (১৮৯২-৯৩)। পরের মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল জয় করে। প্রথম বিভাগ ফুটবল জিতে ১৯০০-০১ মৌসুমে। তখন লিভারপুলের কোচ টম ওয়াটসন। শিরোপা জয়ের পথে লিভারপুল চলতে শুরু করলেও বিশ্ব সেরা ক্লাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৬০-৯০, এই ত্রিশ বছর লিভারপুলের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। এই সময়ের মধ্যে তারা ৪টি (মোট ৫টি) উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ২টি (মোট ৩টি) উয়েফা ইউরোপা লিগ, ১৩টি (মোট ১৮টি) ইংলিশ লিগ, ৪টি এফএ কাপ (মোট ৭টি), ১৩টি (মোট ১৫টি) কমিউনিটি শিল্ড ছাড়াও আরও বেশ কিছু শিরোপা জয় করে। অবশ্য ১৯৯০ সালের পর থেকে লিভারপুলের ভাগ্য অনেকটাই বদলে যায়।

 

জার্মানির ছায়া বায়ার্ন মিউনিখ

জার্মানরা রীতিমতো ফুটবল নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণা খেলাটাকে সুন্দর করা নিয়ে নয়, বরং সফলতার জন্য। এ কারণেই দেখা যায়, ব্রাজিলের শিল্প এবং স্পেনের টিকি-টাকা জার্মানির মেশিনের মতো ফুটবলের কাছে বারবার মার খায়। জার্মান জাতীয় দলের ছায়া যেন বায়ার্ন মিউনিখ। দলটা ১৯০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যালাইঞ্জ অ্যারিনাকে কেন্দ্র করে। তবে শুরুতেই সফল হতে পারেনি ক্লাবটি। জার্মান লিগ শুরু হয় ১৯০৩ সাল থেকে। তখন লিপজিগ, বার্লিন, নুরেমবার্গের মতো দলের দাপট ছিল। বায়ার্ন মিউনিখ প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা জিতে ১৯৩২ সালে। বায়ার্ন মিউনিখের সত্যিকারের সফলতা শুরু হয় বিশ শতকের ষাটের দশকে। তখন জার্মান লিগ বুন্দেসলিগা নাম নিয়ে নতুন করে যাত্রা করেছে। বায়ার্ন মিউনিখের সফলতার শুরুও হয় তখন থেকেই। গার্ড মুলারের যুগটা ক্লাব ইতিহাসে স্বর্ণযুগ হয়েই দেখা দেয়। মাত্র পনের বছরে বায়ার্ন মিউনিখকে ১৪টা শিরোপা উপহার দেন গার্ড মুলার। সবমিলিয়ে বায়ার্ন মিউনিখ জার্মান লিগে ২৬টা শিরোপা জিতেছে। ইউরোপেও তারা অন্যতম সফল ক্লাব। মোট ৫টা শিরোপা জিতেছে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। এ ছাড়াও জার্মান কাপ, উয়েফা সুপারকাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপসহ আরও অসংখ্য শিরোপা জিতেছে দলটা। জার্মান কিংবদন্তি গার্ড মুলার ছাড়াও এই দলে খেলেছেন জার্মানির ফ্র্যাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে, লোথার ম্যাথিউস এবং অলিভার কান, মাইকেল বালাক, ফিলিপ লাম, শোয়েইনস্ট্রাইগার, থমাস মুলাররা।

 

ম্যারাডোনার প্রিয় ক্লাব বোকা জুনিয়রস

ইতালির জেনোয়া শহরের অনেক তরুণ আর্জেন্টিনায় বসবাস করত। ১৯০৫ সালের এপ্রিলে জেনোয়ার এই তরুণরা ইস্তেবানের বাড়িতে এক সভায় মিলিত হয়। তাদের উদ্দেশ্য একটা ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা। পরবর্তীতে আরও অনেকেই এই তরুণদের সঙ্গে যোগ হয়। গঠিত হয় আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল বোকা জুনিয়র্স। অবশ্য নাম কুড়াতে দীর্ঘ সময় লাগে দলটার। ১৯২৫ সালে বোকা জুনিয়র্স প্রথমবারের মতো ইউরোপ ভ্রমণে বের হয়। সেবার তারা ১৯টি ম্যাচ খেলে ১৫টাতেই জিতেছিল। এই অর্জনের জন্য আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন চ্যাম্পিয়ন অব অনার দেয় বোকা জুনিয়র্সকে। সেই সফরে রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ আর বায়ার্ন মিউনিখের মতো বিখ্যাত ক্লাবগুলোর মুখোমুখি হয়েছিল তারা। সারা বিশ্বেই বোকা জুনিয়র্সের প্রশংসা ছড়িয়ে পরেছিল সে সময়। আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগ ফুটবলে রিভার প্লেটের পরই সবচেয়ে সফল দল বোকা জুনিয়র্স। তারা ৩১টি শিরোপা জিতেছে। এ ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য শিরোপা জিতেছে তারা। কোপা লিবারতেদরসেও সবচেয়ে সফল ক্লাবগুলোর মধ্যে বোকা জুনিয়র্সের নাম রয়েছে। ১৯২০-এর দশক থেকে প্রতিটা দশকেই সফল ক্লাব হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে তারা। এই ক্লাবে এক সময় খেলেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। খেলেছেন রোমান রিকুয়েলমে। বোকা জুনিয়র্সে খেলেছেন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ে, মেক্সিকো ও পেরুর অনেক বিখ্যাত ফুটবলাররা।

 

ডি স্টেফানোর রিভার প্লেট

১৯০১ সালের মে মাসে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্জেন্টাইন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম দল হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করেছে রিভার প্লেট। কেবল ল্যাটিন আমেরিকাতেই নয়, নাম কুড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। ১৯২০ সালে প্রথম কোনো বড় শিরোপা জিতে তারা। ষাটের দশক ছাড়া প্রতিটা দশকেই আর্জেন্টিনার সেরা দল ছিল রিভার প্লেট। প্রথম বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৬টি শিরোপা জিতেছে দলটি। এ ছাড়াও ন্যাশনাল কাপ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ, কোপা লিবারতেদরস, কোপা সাউদামেরিকানাসহ আরও অসংখ্য শিরোপা জিতে নিজেদের মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করেছে তারা। রিভার প্লেটে আর্জেন্টাইন অনেক বিখ্যাত ফুটবলাররা খেলেছেন। ফুটবলের প্রথম রাজা আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর শুরুটা হয়েছিল রিভার প্লেট থেকেই। এ ছাড়াও কার্লোস, বার্নাবি, অ্যাঞ্জেল, ওয়ালটার গোমেজদের মতো তারকারা তো আছেনই। কোচ হিসেবে রিভার প্লেটে সবচেয়ে সফল ছিলেন র‌্যামন ডিয়াজ। এ ছাড়াও মার্সেলো গ্যালার্ডো আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছিলেন রিভার প্লেটকে। জয় করেছেন কোপা লিবারতেদরস ও কোপা সাউদামেরিকানা।

 

পেলের ক্লাব সান্তোস

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয় ক্লাবটির। সেই সান্তোস কাল পরিক্রমায় ধারণ করে ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে। ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলেই সান্তোসকে এনে দেন বিশ্ব সেরা ক্লাবের মর্যাদা। ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ছাড়াও সান্তোসকে উপহার দেন আরও অসংখ্য শিরোপা। পেলে ১৯৫৬-৭৪ মোট ১৮ বছর সান্তোসে খেলেছেন। ব্রাজিলিয়ান লিগ জিতেছেন ৬টি, কোপা লিবারতেদরস জিতেছেন ২টি, ক্যাম্পেনাতো পলিস্তা শিরোপা জিতেছেন ১০টি। এ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটা শিরোপা উপহার দিয়েছেন সান্তোসকে। পেলে যুগে মোট ২৫টা শিরোপা জিতে ব্রাজিলিয়ান এই ক্লাবটি। পেলে যুগের পর দীর্ঘ খরা দেখা দেয় সান্তোসে। তবে এই খরা শেষ করতেই যেন আগমন ঘটে নেইমারের। ২০০৯-১৩ এই চার বছরে নেইমার ৬টি শিরোপা জিতেন সান্তোসের হয়ে। কেবল পেলে আর নেইমারই নন, সান্তোসে সময়ে সময়ে খেলেছেন আরও অনেক নামি-দামি ফুটবলার। জিতু, রবিনহো, রিকার্ডো অলিভিয়েরা, রিল্ডো, ডুঙ্গা, ইদোদের মতো বিখ্যাত ফুটবলাররা খেলেছেন সান্তোসে।

 

স্কুল বালকদের হাতে গড়া জুভেন্টাস

তুরিনের ম্যাসিমো ডিয়াজেগলিও লাইসিয়াম স্কুলের কয়েকজন ছাত্র মিলে স্পোর্টস ক্লাব জুভেন্টাস গঠন করে ১৮৯৭ সালের শেষের দিকে। কাল ক্রমে নাম হয়ে উঠে জুভেন্টাস এফসি। ভেচিমো সিনোরা (দি ওল্ড লেডি) নামে খ্যাত জুভেন্টাস বদলে যায় স্থানীয় ব্যবসায়ী আজমোনে ম্যারস্যানের স্পর্শে। ১৯০৪ সালে তিনি ক্লাবকে স্পন্সর করেন। এর পরের বছরই ইতালিয়ান লিগ জয় করে জুভেন্টাস। ১৯৩০-এর দশক থেকে জুভেন্টাসের সফলতা আসতে থাকে স্রোতের মতো। ইতালিয়ান লিগ ও ইতালিয়ান কাপে একক আধিপত্য বিস্তার করে তারা। ৩২ বার লিগ শিরোপা জিতেছে জুভেন্টাস। ইতালিয়ান কাপ জিতেছে ১১ বার। দুটোতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক শিরোপা তাদের। কার্লো কারকানাই (১৯৩০-৩৫) জুভেন্টাসকে আমুল বদলে দিয়েছিলেন। তিনি মোট পাঁচটা লিগ শিরোপা উপহার দিয়েছিলেন জুভেন্টাসকে। এরপর আরও অনেকেই সফলতা এনে দিয়েছেন জুভেন্টাসকে। ডিনো জফ, মিশেল প্লাতিনি, জিনেদিন জিদান, আলেসান্দ্রো ডেল পিয়েরো আর জিয়ানলুইগি বুফনের মতো তারকাদের মধ্য দিয়ে জুভেন্টাসের খ্যাতি পৌঁছে দিয়েছেন সারা বিশ্বে।

 

রাজকীয় সমর্থনপুষ্ট আল হিলাল

আবদুর রহমান বিন সাদ বিন সাইদ ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে অলিম্পিক ক্লাব নামে সৌদি আরবে একটি ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। তবে রাজা সৌদ বিন আবদুল আজিজের এক ফরমানে এক বছর পরই ক্লাবের নাম পরিবর্তন করে আল হিলাল রাখা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্লাবটি স্থানীয় জনগণ এবং রাজকীয় পরিবারের সমর্থন পায়। ১৯৬১ সালে আল বিহদাকে হারিয়ে কিংস কাপ জয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবের ফুটবলে এক অদম্য শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ক্লাবটি। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো সৌদি লিগ জিতে আল হিলাল। এরপর থেকে যেন লিগ জয়ের নেশায় পেয়ে বসে তাদেরকে। একের পর এক জয় করতে থাকে শিরোপা। সৌদি লিগে সর্বোচ্চ ১৩টি শিরোপা জিতেছে আল হিলাল। ক্রাউন প্রিন্স কাপেও সর্বোচ্চ ১৩টি শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে তাদের। বেশ কয়েকবার ফাইনাল খেলে ব্যর্থ হলেও এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৯৯১ সালে ইরানিয়ান ক্লাব ইস্তেগলালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এই শিরোপা জিতে আল হিলাল। এরপর ২০০০ সালেও এই শিরোপা জিতে তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর