বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার

সাইফ ইমন

ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস প্রায় বারশ বছরের পুরনো। রানী ভিক্টোরিয়ার সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করলেও একসময় তা কমতে কমতে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে গিয়েই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তারপরও লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার শহরের ‘বাকিংহাম প্যালেস’ ব্রিটেনের রাজতন্ত্র ও রাজকীয় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে সর্বদাই বর্তমান। ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে আজকের রকমারি—

 

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস প্রায় বারশ বছরের পুরনো। ইংলিশ স্যাক্সন বংশের প্রথম রাজা আলফ্রেড দ্য গ্রেট থেকে যার সূত্রপাত হয়। তার শাসনামল ছিল ৮৭১-৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ। তারপর ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে অনেক রাজা-রানীর, অনেক রাজবংশের আবির্ভাব হয়েছে যারা প্রায় সবাই ইংলিশ স্যাক্সন বংশের তথা প্রথম রাজা আলফ্রেড দ্য গ্রেটের স্যাক্সন বংশের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন। রাজা আলফ্রেড দ্য গ্রেটের পরে বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ পর্যন্ত ৩২ জন রাজা-রানী ব্রিটিশ রাজসিংহাসন অলঙ্কৃত করেছেন। রানী ভিক্টোরিয়ার সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং তার মেয়ে দ্বিতীয় এলিজাবেথের সময় তা কমতে থাকে। তখন অবশ্য প্রায় পুরো পৃথিবীতেই সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা হয়েছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য কমতে কমতে একসময় ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জেই সীমাবদ্ধ হয়। লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার শহরের ‘বাকিংহাম প্যালেস’ ব্রিটেনের রাজতন্ত্র ও রাজকীয় আভিজাত্যের প্রতীক। আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবার তথা রাজার বাসভবন বাকিংহাম প্যালেস, বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত, অন্যতম বিলাসবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ভবন। ব্রিটেনের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ রাষ্ট্রীয় এবং রাজকীয় অনুষ্ঠানগুলো এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। স্টেট রুমগুলো রাজকীয় ও জাতীয় কাজকর্মের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাজ্যের যে কোনো জাতীয় আনন্দ-উৎসব এবং বিপরীতক্রমে সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের সমাবেশস্থলে পরিণত হয় এই বাকিংহাম প্যালেস। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপ ও রাজবংশের আভিজাত্যের প্রতীক এই প্রাসাদের বর্তমান রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়। সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা  গেলে কী ঘটতে পারে অথবা কীভাবেইবা সারা হবে আনুষ্ঠানিকতাগুলো? পরবর্তী উত্তরাধিকারইবা কীভাবে নির্বাচন করা হবে। রানীর মৃত্যুর পর প্রথমেই খবরটা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। আর তা করা হবে বিশেষ কোড ওয়ার্ড অর্থাৎ সংকেতের মাধ্যমে। রানীর কোড ‘লন্ডন ব্রিজ’। সাধারণত রানী অসুস্থ হলে তার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অধ্যাপক হিউ টমাস পাশে থাকেন। রানীর মৃত্যু হলে লন্ডনে পররাষ্ট্র দফতরের গ্লোবাল রেসপন্স সেন্টার থেকে এ খবর যুক্তরাজ্যের বাইরে ১৫টি দেশের সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যুক্তরাজ্যের রানীই এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এ ছাড়া রানীর প্রভাব রয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত এমন ৩৬টি দেশেও খবরটি পাঠানো হবে। এসব  দেশের প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূতরা শোক প্রকাশ করতে হাতের বাহুতে কালো ব্যাজ পরবেন। বাকিংহাম প্যালেসের ফটকে কালো নোটিস টাঙানো হবে। আর গণমাধ্যমের মধ্যে সর্বপ্রথম রানীর মৃত্যু সংবাদ জানতে পারবে বিবিসি। পরবর্তীতে অন্যান্য মাধ্যম। পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের অধিবেশন ডাকা হবে, সাধারণ মানুষকে কাজ থেকে দ্রুত ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে। আকাশপথে উড়োজাহাজের পাইলটরা যাত্রীদের সংবাদটি জানাবেন। এসব অনুষ্ঠানিকতা যখন চলতে থাকবে তখন দরজার পেছনে লোকচক্ষুর অন্তরালে সেন্ট জেমস প্যালেসে গঠিত হবে একটি উত্তরাধিকার কাউন্সিলের, যারা ঠিক করবে এরপর রাজমুকুটটি কে পরতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে, রানী এলিজাবেথের পুত্র প্রিন্স চার্লস হতে যাচ্ছেন পরবর্তী রাজশাসক। এটা মোটামুটি সবারই জানা। এই কাউন্সিলে থাকবেন প্রিভি কাউন্সিলরগণ, লর্ডস, লন্ডন সিটির লর্ড মেয়র, কয়েকটি কমনওয়েলথ দেশের হাইকমিশনারগণ প্রমুখ। এই কাউন্সিলের যে এই নতুন সম্রাটের অভিষেক আনুষ্ঠানিকভাবে সবাইকে জানাতে হবে তা কিন্তু নয়। রানীর মৃত্যুর পর মুহূর্ত থেকেই প্রিন্স চার্লস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সম্রাট। এ সময় প্রিন্স চার্লসের উপাধি পরিবর্তন হবে। রাজমুকুট চার্লসকে না দিয়ে প্রিন্স উইলিয়ামকে দেওয়া হবে বলে একটা গুজব উঠেছিল। কিন্তু প্রিন্স উইলিয়াম নিজের মুখেই সেটা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন এরকম কিছু হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। বরং রানীর তিরোধানের পর উইলিয়াম হবে প্রিন্স অব ওয়েলস। চার্লসের বর্তমান উপাধি। প্রিন্স চার্লসের বর্তমান বয়স ৬৮ হওয়ার আগে তিনি পাচ্ছেন না সিংহাসন। কাউন্সিলে নতুন সম্রাট পার্লামেন্ট এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডের কাছে তার আনুগত্য প্রকাশ করবেন। এরপর তিনিই হবেন চার্চের নতুন সুপ্রিম গভর্নর। তিনি চাইলেই তখন তার খ্রিস্টান নাম থেকে একটা নাম পছন্দ করতে পারবেন। তার পুরো নাম প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। তবে অভিষেকের পর তার নাম হতে পারে তার পছন্দ অনুযায়ী- কিং ফিলিপ অথবা কিং আর্থার অথবা কিং জর্জ। প্রিন্স চার্লসের পর পরবর্তী উত্তরাধিকার হবেন প্রিন্স উইলিয়াম। তিনিও একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবেন। তারপর ব্রিটেন সাম্রাজ্যের সম্ভাব্য সম্রাট হতে পারেন প্রিন্স জর্জ। যে প্রিন্স উইলিয়ামের প্রথম ছেলে। তার অবর্তমানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আবারও একজন রানী পেতে পারে প্রিন্সেস শার্লটের মাধ্যমে।

আর এই দুইজনের অবর্তমানে সাম্রাজ্যের মুকুট যেতে পারে সদ্য জন্ম নেওয়া প্রিন্স লুইয়ের কাছে।

 

নতুন উত্তরসূরি প্রিন্স লুই

প্রিন্স উইলিয়াম ও তার স্ত্রী কেট মিডলটন তাদের নতুন সন্তানের নাম রেখেছেন লুই আর্থার চার্লস। প্রিন্সেস কারলেটের পরবর্তী উত্তরাধিকার এই নতুন উত্তরসূরি প্রিন্স লুই।

২৩ এপ্রিল স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় লন্ডনের সেন্ট  মেরি হাসপাতালের লিন্ডো উইংয়ে উইলিয়াম-কেট দম্পতির দ্বিতীয় পুত্র প্রিন্স লুইয়ের জন্ম হয়। সে সময় রাজপরিবারের এ নতুন উত্তরসূরির ওজন ছিল ৮.১ পাউন্ডের সামান্য বেশি। ব্রিটিশ সিংহাসনের পঞ্চম এ দাবিদার এখন থেকে প্রিন্স লুই অব কেমব্রিজ নামে পরিচিত হবেন বলে টুইটে জানিয়েছে কেনসিংটন প্রাসাদ। প্রিন্স উইলিয়াম ও তার বড় ছেলে জর্জের নামের মধ্যেও লুই আছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার স্বামী ফিলিপের দূরসম্পর্কের ভাই লর্ড মাউন্টব্যাটেনের নামের প্রথম অংশেও লুই আছে। রানী ভিক্টোরিয়ার নাতি মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের ভাইসরয় হন, তার পরিকল্পনায়ই ভারত ভাগ হয়ে ধর্মের ভিত্তিতে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসও বলেছিলেন, তার মধ্যে বার্মার প্রথম আর্ল মাউন্টব্যাটেনের চিন্তা-চেতনার বেশ প্রভাব আছে। ১৯৭৯ সালে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাপন্থি গোষ্ঠী আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির হামলায় মাউন্টব্যাটেন নিহত হন। নতুন রাজপুত্রের নামে থাকা আর্থারও বেশ পরিচিত রাজপরিবারে। রানী এলিজাবেথের বাবা কিং জর্জের নামের মধ্যেও এটি আছে। বাজির দরে অবশ্য এ নামটিই সবার ওপরে ছিল, এরপর ছিল জেমস ও ফিলিপ। ইতিহাসবিদ জুডিথ রোবোথাম বলছেন, উইন্ডসর প্রাসাদে লুই নামটি খুব একটা দেখা না যাওয়ায় তিনি খানিকটা বিস্মিতই হয়েছেন।

সর্বশেষ খবর