বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

গাড়ি-বাড়ি কিছু নেই যে প্রেসিডেন্টের

গাড়ি-বাড়ি কিছু নেই যে প্রেসিডেন্টের

ল্যাটিন আমেরিকার ধনী দেশ মেক্সিকো। ডিসেম্বরে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদার। দায়িত্ব নেওয়ার পরই সরকারের খরচ কমানোর দিকে চোখ তার। সবার আগে কমালেন নিজের বেতন। তারপর বললেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের জন্য বিলাসী বিমানের দরকার নেই। মেক্সিকোর ৬০টি বিমান নিলামে তোলারও ঘোষণা দিলেন। চমকের শেষ এখানেই নয়। সংবাদ সম্মেলনে এসে জানালেন, পকেটে নেই কানাকড়িও! সত্যিই তাই। মানিব্যাগ থেকে বেরোলো মাত্র ১০ ডলার। নিজের বাড়ি-গাড়ি কিছুই নেই। স্ত্রীর নামে রয়েছে, একটি গাড়ি। সেটাই ভরসা তার। এই যুগে এমন প্রেসিডেন্টের কথা জানাচ্ছেন- তানিয়া তুষ্টি

 

শূন্য পকেটে সামলান রাজ্যভার

ভোগবাদী এই বিশ্বের যে কোনো একটি দেশের প্রেসিডেন্টের কথা ভাবুন তো। তারপর ধরুন, তিনি ব্যাপক জনসমর্থনে মসনদে বসেছেন। ক্ষমতার পাশাপাশি সেই মানুষটির অর্থনৈতিক সক্ষমতাও নিশ্চয় থাকবে অনেক। কিন্তু আপনি দেখলেন তিনি নিজের শূন্য পকেট নিয়ে রাজ্যভার সামলাচ্ছেন। বিষয়টি বেখাপ্পা লাগবে তাই না? এখন মনে হবে, এসব শুধু গল্পতেই সম্ভব। এই যুগে কে এমন আছেন যিনি উদার নীতির শাসনকর্তা হওয়ার? অথচ বর্তমান ভোগবাদী বাস্তবতাকে তোয়াক্কা না করেই মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর সৃষ্টি করলেন নতুন নজির। গরিবকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মেক্সিকোর এই প্রেসিডেন্টের গাড়ি, বাড়ি, ক্রেডিট কার্ড কিছুই নেই। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রেসিডেন্ট সবাইকে দেখিয়েও দিলেন নিজের শূন্যপ্রায় মানিব্যাগটি। তাতে ছিল কেবল ২০০ পেসো (প্রায় ১০ মার্কিন ডলার)। আরেকটি ছিল ২ ডলারের বিল, যেটি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক মেক্সিকান তাকে দিয়েছিলেন ‘সৌভাগ্য কবচ’ হিসেবে।

সম্পদের প্রতি নির্মোহ এই মানুষটির হিসাবের খাতা খতিয়ে দেখলে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু মিলবে না। ঘোষণায় কেবল তার দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য আছে। দুই অ্যাকাউন্টে জমাকৃত মোট অর্থ আছে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮ পেসো অথবা ২৩ হাজার মার্কিন ডলার। স্ত্রীর নামে থাকা একটি গাড়ি আছে যা ব্যবহার হয় পারিবারিক কাজে। সরকারি দায়িত্ব পালন বাবদ এই মানুষটি মাসিক মোট আয় করেন ১ লাখ ৮ হাজার ৭৪৪ পেসো (৫ হাজার ৬০০ মার্কিন ডলার)।

ওব্রাদর জানান, সম্পদ বলতে মেক্সিকোর দণিাঞ্চলে একটি মাঝারি আকারের খামার আছে তার নিজের। সেগুলোও এখন পুরোপুরি তার বলা যায় না। কারণ দলিল করে তিনি সেগুলো নিজের ছেলেদের দিয়ে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ‘দৈন্যদশা’ পূর্ণ জীবন যাপন বোঝাতে নিজের শূন্য মানিব্যাগ দেখাতেও তার বাধেনি। 

২০১৮ সালের ১ জুলাই ৫৩ শতাংশ জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন বামপন্থি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। ওব্রাদরের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই বিজয় দেশটির মূলধারার রাজনীতি পাল্টে দেওয়ার পাশাপাশি তাকে নতুন করে দেশ গড়ে তোলার একচেটিয়া অধিকার দিয়েছে। লোপেজ ওব্রাদরের জয় কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ল্যাটিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি পরিচালনার ভার একজন বামপন্থির হাতে তুলে দিল। তার এমন বিজয় দীর্ঘদিন ধরে মেক্সিকোয় চলে আসা মধ্যপন্থি রাজনৈতিক চিন্তা ও বিশ্বায়নের দর্শন দ্বারা পরিচালিত ধারাকে সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যান নির্দেশ করে। বহু মেক্সিকানেরই ধারণা, পুরনো আদর্শ তাদের জন্য সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হয়নি।

এমন সংকটকালীন সময়ে যেন দেশের হাল ধরতে এগিয়ে এলেন ওব্রাদর। নিরলসভাবে খেটে যাওয়া ওব্রাদর ভোটারদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করেন। আর হবেই বা না কেন? অর্থসম্পদের প্রতি নির্লোভ লোপেজ ওব্রাদরের মূল নির্বাচনী ওয়াদা ছিল দুর্নীতির অবসান, সহিংসতা হ্রাস, ব্যয় কমানো ও মেক্সিকোর দেশব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ। ডিসেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন থাকা সব উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার নিলামে তোলা হবে জানিয়ে দেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এই ব্যক্তি জনমনে নিজের প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিজয় লাখো মেক্সিকানের মনে আশার সঞ্চার করেছে এবং ধনীদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি ২০০০-২০০৫ মেয়াদে মেক্সিকো সিটির মেয়র ছিলেন। আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর বলেন, ‘অর্থ কখনই আমাকে টানেনি। আমি আদর্শ ও মূল্যবোধের জন্য লড়ে গেছি। কেউ যাতে মনে কষ্ট না পায়, সে জন্য আমি এও বলতে চাই যে সব ধনী লোক বদমাশ নন।’

আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর আমলো নামেও পরিচিত। তার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৩ নভেম্বর। মেক্সিকোর টেপেটিটানে তিনি জন্মান। তার বাবা আন্দ্রেস লোপেজ র‌্যামন একজন দোকানি। মা ম্যানুয়েলা ওব্রাদর গঞ্জালেজও একটি দোকানের মালিক। আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর বিয়ে করেন ১৯৭৯ সালে। এক সন্তানের মা প্রথম স্ত্রী রসিও বেলট্রান মেডিনা ২০০৩ সালে মারা যান। এরপর ২০০৬ সালে বিয়াত্রিজ গুতিয়ারেস মুলারকে বিয়ে করেন ওব্রাদর। দ্বিতীয় পক্ষে আরও তিন সন্তানের জন্ম হয়। ১৯৭৬ সালে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে ইউনি ভার্সিডাড ন্যাশনাল অটোনোমা ডি মেক্সিকো থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তিনি ১৫টির বেশি বই লিখেছেন।

 

ক্ষমতায় এসে প্রথমে কমালেন নিজের বেতন

সবাই নিজের বেতনভাতা বাড়ানোর চেষ্টায় থাকেন। অথচ মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট হাঁটলেন উল্টো পথে। তিনি ক্ষমতায় এসে প্রথমেই কমালেন নিজের বেতন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি ছয় বছরের জন্য লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির  দেশ  মেক্সিকো পরিচালনার দায়িত্ব  নেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর নিজের বেতনভাতা বাবদ মাত্র ৪০ শতাংশ পরিমাণ অর্থ  নেবেন বলে জানান। সেদেশের নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের মাসিক বেতন-ভাতা ২ লাখ ৭০ হাজার পেসো। বেতন ৬০ শতাংশ কমিয়ে বর্তমানে সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৪৪ পেসোতে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাজেটের সবকিছু সাধারণ মানুষের কাছে  পৌঁছে যাক।’ 

সাংবাদিকদের আন্দ্রেস ম্যানুয়েল  লোপেজ ওব্রাদর বলেন, মাসে এক লাখ ৮ হাজার  পেসো (পাঁচ হাজার ৭০৭ মার্কিন ডলার)  বেতন হিসেবে  নেবেন। তার ছয় বছরের  মেয়াদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের  বেতন  প্রেসিডেন্টের  বেতনের  চেয়ে  বেশি হবে না।’ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সুবিধা  যেমন, গাড়ির চালক, দেহরক্ষী ও ব্যক্তিগত চিকিৎসা বীমা-সংক্রান্ত খরচগুলো কমানোর পরিকল্পনাও তার রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

বিলাসবহুল ৬০ বিমান বিক্রির ঘোষণা

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বামপন্থি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর ক্ষমতায় এসেই জানান দেন, সাবেক প্রেসিডেন্টদের ব্যবহৃত বিলাসবহুল ৬০টি উড়োজাহাজ ও ৭০টি হেলিকপ্টার নিলামে তোলা হবে। এমনকি প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দ বিলাসবহুল বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজও থাকবে নিলামে ওঠা বিমানের তালিকায়। ২০১২ সালে প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজটি কেনা হয়। ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটি ছিল বিলাসবহুল। এতে শৌচাগার, বসার ও শোয়ার জন্য বিলাসবহুল কক্ষ রয়েছে। ব্যয় কমানোর নীতি অনুসরণ করতে গিয়েই এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘জনগণের অর্থে এত দিন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদেরা যেসব উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছেন, সেগুলো সব বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ লোপেজ ওব্রাদর সরকারি অর্থ ব্যয়ে বিলাসিতার বিপক্ষে। তিনি বলেন, নিজের চলাচলের জন্য বিলাসবহুল উড়োজাহাজের দরকার নেই। বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তিনি টিকিট কেটেই যেতে পারেন। তার মতে, এগুলো করতে গিয়ে অর্থের শ্রাদ্ধ করা হয়েছে।

 

ট্রাম্পের সঙ্গে পাল্লা!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো প্রেসিডেন্টের প্রতি বৈপরীত্যের প্রদর্শন করে থাকেন। মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর নিজেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি একই বৈপরীত্য মনোভাব বজায় রেখেছেন।

ওব্রাদর বলেই বসেছেন, তিনি মেক্সিকোকে কখনই ট্রামের ‘বর্বর ছেলে’ হতে অনুমতি দেবেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি ‘বন্ধুত্ব’ এবং ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা’ চান। ওব্রাদর ট্রাম্পের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য যুদ্ধ চান না। এ ছাড়াও ট্রাম্পের অভিবাসী নীতিগুলোকে ‘দায়িত্বহীন’ এবং ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে বিস্ফোরক আখ্যা দিয়েছেন। এদিকে ট্রাম্প তার টুইট বার্তায় মেক্সিকোকে পুরোপুরি দুর্নীতিগ্রস্ত ও অধিক সমস্যাপীড়িত দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আর এই কারণেই মার্কিন নীতি অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান ট্রাম্প। কিন্তু এই বিষয়টিই মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ভালোভাবে দেখছেন না। তারা জনসম্মুখে একে অপরের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে প্রশংসাও করেন। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু উভয়ের মধ্যে বিরাজ করে একটি স্পষ্ট বৈপরীত্য।

 

মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজছেন!

বামপন্থি নেতা আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই জনগণের সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ‘শান্তি অর্জন করবেন এবং যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন’। তার এই ঘোষণা এমন একটি সময়ে আসল যখন মেক্সিকোতে খুনের হার আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মাদক। যদিও বলেছেন যে তিনি সামরিক নেতৃত্বাধীন ‘ড্রাগ ওয়্যার’ চালিয়ে যাবেন না। মাদকের বিরুদ্ধে এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তিনি নিজের পরিকল্পনামতে যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করতে তিনি ঠিক কী নীতি অবলম্বন করবেন তা স্পষ্ট বলেননি। মাদক নিয়ে দেশের মধ্যে দুষ্কৃতি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে তার এমন অবস্থান কিছু মহলে সমালোচনার ঝড় তুললেও নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট অনড়। 

মাফিয়া শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ

প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর মাফিয়া শাক্তির বিরুদ্ধে নিজের শক্ত অবস্থানের জানান দেন নির্বাচনের আগেই। নির্বাচনের আগে প্রচারণায় তিনি বলেন, দশক ধরে মাফিয়া শক্তিতে মেক্সিকো পরিচালিত হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করার আশা জানান সবাইকে। তার পরিকল্পনায় দেশের যুবক সমাজের জন্য বৃত্তির সুবিধা বাড়ানো হবে যাতে তারা নিজেদের সৃষ্টিশীল কাজে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। সমাজের যারা ঊর্ধ্বতন আছেন, তাদের সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে যুক্ত করার ব্যবস্থা করবেন। এ ছাড়াও ব্যবসায়ী মহল যারা নিজেদের দেশের অংশীদার ভাবেন তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবেন। বিশেষ করে দেশের ব্যক্তিমালিকানা খাতের ব্যবসাকেন্দ্রের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক স্থাপনের ব্যবস্থা করবেন। এর মাধ্যমেই দেশকে অভ্যন্তরীণ ক্ষমতায় শক্তিশালী করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন।  

অর্থনীতি ঢেলে সাজানো

তিন পক্ষের জোটের অধীনে ২০১৪ সালে তিনি ন্যাশনাল রিজেনারেশন মুভমেন্ট পার্টি গঠন করেন প্রেসিডেন্ট ওব্রাদর। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে লড়াই করতে গিয়ে ওব্রাদরের কাছে অনেক  সতর্কবাণী আসতে থাকে। তাকে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেনট হুগো শ্যাভেজের অস্থিরতার জন্য কর্তৃত্ববাদী পদক্ষেপ এবং পরিচালনা কর্তৃত্বের ভাগ হয়। তাদের মতো করে একইভাবে মেক্সিকোতেও অর্থনীতির ধ্বংস আসবে। কিন্তু তিনি নিজের ওপর বিশ্বাস হারাননি। ওব্রাদর ঘোষণা দেন দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবেন। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে অন্যতম একটি ইস্যু হলো মেক্সিকোর দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনীরিত পুনর্গঠন। তিনি নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেন অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর।

 

স্ত্রীর চেয়ে সম্পদ কম তার

ওব্রাদরের স্ত্রী বিয়াত্রিজ গুতিয়ারেস মুলার। তিনি একজন  লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক। তাই তার সম্পদ অর্জনের সক্ষমতাও নেহাতই কম নয়। কিন্তু শুনে অবাক লাগবে হয়তো, প্রেসিডেন্ট স্বামী আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের চেয়ে তার সম্পদের পরিমাণ বেশি। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে স্ত্রীর সম্পদ ঘোষণায় বিয়াত্রিজ গুতিয়ারেস মুলারের নামে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দাখিল করা হয়েছে। ওই তিন অ্যাকাউন্টে মোট ১৪ লাখ পেসো (প্রায় ৭২ হাজার মার্কিন ডলার) রয়েছে। এ ছাড়া তিনটি গাড়ি, একটি বাড়ি, একটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং দুটি বিশালাকৃতির জমি রয়েছে বিয়াত্রিজ গুতিয়ারেসের নামে। অপরদিকে প্রায় শূন্য পকেটে রাজ্যভার সামলাচ্ছেন এই প্রেসিডেন্ট। স্ত্রীর গাড়িই তার যাতায়াতের অবলম্বন হয়েছে। সম্পদ গড়ার নীতির বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া এই প্রেসিডেন্ট সরকারি সুবিধা প্রাপ্তিকেও সংকুচিত করেছেন দেশের স্বার্থে।

 

একনজরে ওব্রাদর

১৯৭৭- ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল ইন্ডিজিনিয়াস ইনস্টিটিউট অব তাবাস্কোর পরিচালক ছিলেন।

১৯৮৩ সালে ইনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশনারি পার্টি (পিআরআই) এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন।

১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল কনজুমার ইনস্টিটিউটের সোশ্যাল প্রমোশন ডিপার্টমেন্টের পরিচালক হন।

১৯৮৮ সালে গভর্নর পদে নির্বাচন করেন। এর আগে তিনি ইনস্টিটিউশনাল রেভল্যুশন পার্টি ত্যাগ করে পার্টি অব ডেমোক্র্যাটিক রেভল্যুশনে যোগদান করেন।

১৯৯৪ সালে আবারও একই পদের জন্য নির্বাচন করেন। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হন।

১৯৯৬-৯৯ সাল পর্যন্ত পার্টি অব দ্য ডেমোক্র্যাটিক রিভল্যুশনের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০-০৫ সাল পর্যন্ত তিনি মেক্সিকো সিটির মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৪ সালের মে মাসে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তিনি আদালত অমান্য করেছেন। কিন্তু সে বছরই আগস্টের ২৯ তারিখে তার পক্ষে দেশের হাজার হাজার মানুষ আদালতের স্মরণাপন্ন হন।

২০০৫ সালের ৪ মে তিনি এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।

২০০৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াই করতে গিয়ে আবার ব্যর্থ হন।

২০১২ সালের ৩ জুলাই তিনি আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে গিয়ে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন এবং ভোট পুনরায় গণনার জন্য আবেদন করেন।

২০১৩ সালে ৩ ডিসেম্বর তিনি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন।

২০১৪ সালে তিনি ন্যাশনাল রিজেনারেশন মুভমেন্ট পার্টি গঠন করেন।

২০১৮ সালের ১ জুলাই ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট পদের জন্য দাফতরিক শপথ নেন ১ ডিসেম্বর।

সর্বশেষ খবর