রবিবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিমানবন্দরই তাদের ঠিকানা

ভাগ্যের ফেরে বিমানবন্দরে কাটাতে হয়েছে দিনের পর দিন, এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ‘দ্য টার্মিনাল’ মুভিটি নিশ্চয়ই অনেকেই দেখেছেন, যেখানে কেন্দ্রীয় চরিত্র ভিক্টর নভোরস্কির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন টম হ্যাঙ্কস। সংকটে পড়ে দীর্ঘ ১৮ বছর ভিক্টর নভোরস্কিকে বিমানবন্দরে কাটাতে হয়েছে। সেলুলয়েডের পর্দায় আটকে যাওয়া এই কাহিনী আসলে মেহরান করিমি নাসেরি নামক এক ভাগ্যাহত ইরানি ব্যক্তির জীবন থেকে অনুপ্রাণিত। সম্প্রতি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাইল্যান্ডের একটি বিমানবন্দরে এসে আলোচিত হন এক সৌদি তরুণী। এরকম বিমানবন্দরে আটকে যাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে লিখেছেন আবদুুল কাদের সাইফ ইমন

 

বাড়ি পালানো সৌদি তরুণীর কাণ্ড

‘আমি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে আমার কথা ও ছবি পোস্ট করেছি। এতে আমার বাবা অনেক রেগে গিয়েছিলেন। নিজের দেশে আমি পড়তে পারি না, কাজ করতে পারি না। আমি মুক্তভাবে চলতে চাই, পড়তে চাই এবং আমার ইচ্ছেমতো কাজ করতে চাই।’

বাড়ি থেকে পালিয়ে বিপাকে পড়েন সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুন। তার বয়স ১৮ বছর। তিনি কুয়েত থেকে থাইল্যান্ড হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে এসে বিপাকে পড়ে যান ওই তরুণী। তিনি নিজের হোটেলে নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন; যাতে থাই কর্তৃপক্ষ তাকে ফেরত পাঠাতে না পারে। তরুণীর দাবি, দেশে ফেরত গেলে তাকে হত্যা করা হবে। এ ঘটনা থেকে আরেক সৌদি তরুণী দিনা আলী লাসলুমের কথা হয়তো মনে আসছে অনেকের। ২০১৭ সালের এপ্রিলে ২৪ বছর বয়সী দিনাকেও এভাবে ফিলিপাইনের ম্যানিলা বিমানবন্দরে আটক করা হয় এবং ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে। তিনি কানাডার পর্যটক ফোন ব্যবহার করে টুইটারে বিভিন্ন বার্তা ও ভিডিও প্রকাশ করতেন। পরিবার তাকে মেরে ফেলবে বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিলেন দিনা। সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার পর তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা আর জানা যায়নি।

এদিকে সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুন হোটেল কক্ষে নিজেকে আটকে রাখার ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয় গোটাবিশ্বে। অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে থাইল্যান্ড ত্যাগ করেন ওই সৌদি তরুণী। এর আগে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে পৌঁছে দেশটির সরকারের কাছে জোরালোভাবে আশ্রয় চেয়েছিলেন রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুন নামের ওই তরুণী। থাই অভিবাসন বিভাগের প্রধান সুরাচাতে হাকপার্ন জানান, ‘সৌদি তরুণীকে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন তিনি ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তিনি ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে বিমানবন্দর ছেড়ে গেছেন।’

থাইল্যান্ডে আসার আগে রাহাফ মোহাম্মেদ আল-কুন তার পরিবারের সঙ্গে কুয়েতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে ব্যাংকক হয়ে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যাংককে নামার পরই নাকি সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে একজন সৌদি কূটনীতিক এসে তার পাসপোর্ট জব্দ করেন। রাহাফ দাবি করেছেন, তার পাসপোর্টে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা রয়েছে এবং তিনি কখনোই থাইল্যান্ডে থাকতে চাননি। অন্যদিকে ব্যাংককের সৌদি দূতাবাস দাবি করে, রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনের কোনো রিটার্ন টিকিট নেই। সে জন্যই তাকে আটকে রাখা হয়। এরপরই সৌদি এ তরুণী সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনার ব্যাপারে পোস্ট দিয়ে সবার নজর কাড়েন। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার এ ঘটনা এবং ছবি শেয়ার করি। এ কারণে আমার বাবা আমার ওপর খুবই ক্ষিপ্ত। আমি আমার নিজের দেশে পড়াাশোনা এবং কাজ করতে পারি না। আমি স্বাধীনতা চাই, আমি আমার মতো করে পড়াশোনা করতে চাই, কাজ করতে চাই।’ এই তরুণী আরও জানান, তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছেন। তাই আশঙ্কা করছেন, তার পরিবার তাকে হত্যা করতে পারে। তবে থাই পুলিশের মেজর জেনারেল সুরাচাতে হাকপার্ন সংবাদমাধ্যমে বলেন, মিস মোহাম্মদ আল-কুনকে আসলে বিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা চলছিল, তাই সেখান থেকে পালিয়েছেন। তিনি এটিকে একটি ‘পারিবারিক ব্যাপার’ বলে বর্ণনা করেন। অবশেষে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ তরুণীর পাশে এসে দাঁড়ালে ইউএনএইচসিআর তার দায়িত্ব নেয়।

 

বিমানবন্দরেই খাওয়া-ঘুম-গোসল

যতদিন না তিনি দেশে ফিরতে পারছেন ততদিন বিমানবন্দরের টার্মিনালেই আটকা থাকতে হবে! এরকম পরিস্থিতিতে পড়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। এমনকি এই সময়টাতে টার্মিনালের বাইরে এক পা’ও রাখা যাবে না। জীবনের এমন দুঃসহ সময়ের মধ্যদিয়ে যারা যান তারা জানেন বাস্তবতা কত ভয়ংকর হতে পারে। কেউ হয়তো সঙ্গে থাকা অল্প কিছু জিনিস নিয়ে বিমানবন্দরের টার্মিনালকেই নিজের ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেন। এমনকি বিমানবন্দরেই ছোটখাটো চাকরি জোগাড় করে ফেলার নজিরও আছে। এয়ারপোর্টে থাকাকালীন  অনেকে সময় কাটিয়েছেন বই কিংবা সংবাদপত্র পড়ে, বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করে, ডায়েরি লিখে, এয়ারপোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে। এই বন্ধুরাই খাদ্য সরবরাহ করতে কাজে লাগে অনেক সময়। অনেকের পরিবারের লোকজনকেও খাবার ও পোশাক দিয়ে যেতে দেখা গেছে। বিমানবন্দরে থাকা মানুষদের গোসল করতে হয় রেস্টরুমের ওয়াশরুমে।

 

১৮ বছর টার্মিনালে

প্যারিসের চার্লস ডি গল বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে টানা ১৭ বছর কাটিয়ে দেন স্যার আলফ্রেড মেহরান করিমি। তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘দ্য টার্মিনাল ম্যান’ প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি উঠে আসেন আলোচনায়। ২০০৪ সালে টম হ্যাঙ্কসের ‘দ্য টার্মিনাল’ ছবির গল্পটি তাকে নিয়ে নির্মিত। তিনি ১৯৭০ সালে ইরানে নির্বাসিত হন। দেশহীন ইরানি শরণার্থী মেহরান ইংল্যান্ডে বসবাসের জন্য বিমানে ওঠেন। তিনি ইংল্যান্ড পৌঁছালেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠায়। কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র ছাড়া তাকে ফ্রান্সে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানায়। তবে কর্তৃপক্ষ মেহরানকে বিমানবন্দর লাউঞ্জে অপেক্ষা করতে বলে। এখানেই ১৮ বছর কেটে যায়। ২০০৬ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ সময় মেহরানের সঙ্গে রেডক্রসের সদস্যরা দেখা করেন। সেই থেকে তাকে আর বিমানবন্দরে থাকতে হয়নি।

 

পর্যটক হিরোশি নোহারা

বিমানবন্দর থেকে মুক্তির জন্য কোনোরকম অবৈধ উপায় অবলম্বন করতে চাননি হিরোশি নোহারা

২০০৮ সালে এনবিসি নিউজ এক ব্যক্তিকে নিয়ে ফিচার করে। রোগা চেহারা, গালে এক গোছা দাড়ি। মেক্সিকো সিটির বেনিতো জুয়ারেজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকছেন, খাচ্ছেন, ঘুমোচ্ছেন এমনকি গোসলটাও সেরে নিচ্ছেন বিমানবন্দরের ১নং টার্মিনালেই। ব্যক্তিটি জাপানের পর্যটক হিরোশি নোহারা। ২০০৮ সালের মেক্সিকো ভ্রমণের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইটে চেপে বসেন। তাকে বহনকারী বিমানটি বিরতির উদ্দেশ্যে মেক্সিকো শহরের বেনিতো জুয়ারেজ  বিমানবন্দরে থামে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হিরোশি সেই ফ্লাইটটি ধরতে ব্যর্থ হন। হিরোশির কাছে সে সময় খুব বেশি টাকাকড়ি ছিল না। তাই তিনি শুধু বিমানবন্দরেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে স্থান ত্যাগের অনুরোধ করলে তিনি টার্মিনাল ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তাই কর্মকর্তারা তাকে স্থান ত্যাগের জন্য আর জোড়াজুড়ি করেননি। তিন মাস পর ওয়াকি টুক নামের এক মহিলা তাকে তার সঙ্গে চলে আসার প্রস্তাব করেন। হিরোশি সেই মহিলার সঙ্গে বেনিতো জুয়ারেজ বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

 

আহমাদ পরিবার

২০১৫ সালে দেশান্তরী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আহমাদ পরিবার। তাই মস্কোর শেরমেটিয়েভো বিমানবন্দরের ওয়েটিং লাউঞ্জে পরিবারটিকে কাটাতে হয়েছিল মানবেতর জীবন। চার সন্তানের জনক-জননী হাসান আহমাদ ও গুলিস্তান আহমাদ সিরিয়ায় বসবাস করতেন। তাদের বসবাসরত শহরে একাধিক আত্মঘাতী বোমা হামলায় গোটা শহর আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। পরিবারটির রাশিয়ায় যেতে চায়। কিন্তু বিমানটি রাশিয়ায় অবতরণের পরই বাধে বিপত্তি। রাশিয়ান কর্মকর্তারা পরিবারের সবার ভিসা জাল বলে জানায়। রাশিয়ার মস্কো বিমানবন্দরেই বিপাকে পড়ে আহমাদ পরিবার। পরিবারটিরকে কাছাকাছি হোটেলে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন একজন। এদিকে সিরিয়া থেকে আহমাদ পারিবারের পাসপোর্ট বৈধ বলে জানায়। পরবর্তী সময়ে রাশিয়া পরিবারটিকে শরণার্থী হিসেবে থাকার অনুমতি দেয়।

 

সিরিয়ান ফাদি মানসুর

জাল পাসপোর্ট জটিলতায় বিমানবন্দরে আটকে থাকতে হয় এক বছরের বেশি সময়ের জন্য

ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরের বন্দী অবস্থায় এক বছরেরও বেশি সময় কাটানোর পর মুক্তি পান সিরিয়ান ফাদি মানসুর। ২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে মানসুর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সিরিয়ায় তাকে বাধ্যতামূলক সামরিক দাসত্ব করার জন্য বন্দী করেছিল। সেখান থেকে পালিয়ে মানসুর তুরস্ক চলে যান। তুর্কি এসে তিনি জানতে পারেন, সিরীয়দের সব ধরনের কাজে আইনি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই তিনি জাল পাসপোর্ট ক্রয় করে জার্মানি চলে আসেন। পথিমধ্যে জার্মান ফ্লাইটটি বিরতির উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়ায় থামে। আর এখানেই মানসুর জাল পাসপোর্টসহ আটক হন। মালয়েশিয়ান কর্মকর্তারা তাকে তুর্কি ফেরত পাঠায়। তুর্কি যাওয়ার পর আতাতুর্ক বিমানবন্দর কর্মকর্তারা তাকে আবার মালয়েশিয়া পাঠানোর চেষ্টা করেন। এবার মালয়েশিয়া তাকে সরাসরি গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তাই বাধ্য হয়ে আবারও আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ফেরত আসতে হয়। সবশেষে অস্ট্রেলিয়ান সরকার মানসুরকে মানবিক ভিসা দিয়ে আশ্রয় দেয়।

 

হাসান আল কন্তার

প্রায় সাত মাস মালয়েশিয়ার একটি বিমানবন্দরে দিনযাপন করতে হয় ৩৭ বছর বয়সী হাসান আল-কন্তারকে। অবশেষে তিনি কানাডায় আশ্রয় পান। বিমানবন্দর থেকে সামাজিক মাধ্যমে নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করা শুরু করলে হাসান আল-কন্তারের ঘটনাটি বিশ্বের নানা প্রান্তরের মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

৩৭ বছর বয়সী হাসান আল-কন্তার শেষ দুই মাস ছিলেন মালয়েশিয়ার একটি বন্দিশালায়। ২০১১ সালে সিরিয়ায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত ছিলেন কন্তার। সিরিয়ায় থাকতে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক সেবাদান সম্পূর্ণ করেননি বলে পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি কান্তার।

মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে মাসের পর মাস অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করেন কন্তার। বিমানবন্দরের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মীদের দান করা খাবার খেয়ে দিন পার করতেন তিনি।

 

বিমানবন্দরেই আশ্রয়

লাগেজ চুরির অপরাধে আদালত তাকে সংশোধনের সুযোগ হিসেবে এক বছরের সময় দেন

৪৩ বছর বয়সী অ্যান্থনি ডিলানে ২০০৪ সালে চাকুরি এবং ঘর দুটোই হারান। সরকারিবাবে তখন তাকে মাত্র ২৩৬ ইউরো ভাতা দেয়া হতো। এই স্বল্প অর্থে তার হতো না। ডিলানে রাস্তায় দিন কাটাতে চাননি। তাই স্থানীয় গ্যাটইউক বিমানবন্দরে আশ্রয় নেন। খাওয়াদাওয়া ও ঘুম সবই চলত সেখানেই। সারা দিন চাকুরির খোঁজ করে দিনশেষে টার্মিনালে আশ্রয় নিতেন। এক জাপানি যাত্রীর লাগেজ চুরির অপরাধে তাকে আটক করা হয়। ডিলানে চুরির অপরাধ স্বীকারও করে নেন। এই অপরাধে তাকে কয়েক মাস জেলও খাটতে হয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ডিলানে আবারও এয়ারপোর্টে চলে আসেন। ঘরহারা ডিলানে ৩ বছরেরও বেশি সময় গেটইউক বিমানবন্দরেই কাটিয়ে দেন। এই সময়ের মধ্যে তাকে পাঁচবার গ্রেফতারও করা হয়েছিল। আদালত তাকে সংশোধনের সুযোগ হিসেবে এক বছরের সময় দেন। অ্যান্থনি চুরি ছেড়ে একসময় ভালো হয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে যান।

 

সন্তান নিয়ে দেশান্তরী

২০০৪ সালে ইরানের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করায় জাহরা কামালফার ও তার স্বামী গ্রেফতার হন। ইরানি সরকার জাহরার স্বামীকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এই সংবাদে জাহরা দুই সন্তান নিয়ে দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। জাল পাসপোর্ট নিয়ে কানাডা রওনা  করেন। মাঝে ফ্লাইট গন্তব্যে পৌছানোর জন্য রাশিয়া ও জার্মানিতে বিমান পরিবর্তন করে। জাহরা জাল পাসপোর্ট দিয়ে রাশিয়া বিমানবন্দর পার হলেও জার্মানিতে তারা পার হতে পারেননি। পাসপোর্টগুলো জাল হওয়ার কারণে জার্মানিতেই তাদের আটকে দেওয়া হয়। জাহরা ও তার দুই সন্তানকে রাশিয়া ফেরত পাঠায় জার্মান বিমানবন্দর। রাশিয়ান কর্মকর্তারা জাহরা ও তার দুই সন্তাকে বিমানবন্দরের টার্মিনালে থাকার অনুমতি দেয়। দীর্ঘ ১০ মাস রাশিয়ার বিমানবন্দরে মানবেতর জীবযাপনের পর জাহরা কামালফার এবং তার দুই সন্তান জাতিসংঘের শরণার্থী স্বীকৃতি পাওয়ার পরই কানাডা প্রবেশের অনুমতি পান।

 

জোরপূর্বক আটক

আদালতের আদেশও অমান্য করে জোরপূর্বক আটক রাখা হয় নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত জ্যাকসকে

বিমানবন্দরে মানবেতর জীবনের আরেক উদাহরণ কোকোভা ডি জ্যাকস। জ্যাকস আইভরি কোস্ট থেকে নির্বাসিত হন। ২০১২ সালে মরোক্কোর শরণার্থী শিবিরে তালিকাভুক্ত হন। পরবর্তীকালে জ্যাকস দেশটিতে থাকার অনুমতি পান। অনুমতি পেয়ে মরোক্কো বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। বছর দুই পেরোতে না পেরোতেই তিনি মরোক্কো সরকারের কাছে দেশ ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করেন। মরোক্কোও তার আবেদন মঞ্জুর করে। মরোক্কো ছেড়ে জ্যাকস শরণার্থী হিসেবে ৪ দিন মরিতানিয়ায় ছিলেন। এ সময় জ্যাকস বিমানবন্দরে আটকে যান। এমনকি তার লাগেজও আটকে রাখা হয়। সেই মুহূর্তে জ্যাকসের হাতে ছিল মাত্র ১০০ ওগুইয়া (টাকা)। কর্মকর্তারা বন্দী জ্যাকসকে দিয়ে খাবার আনা-নেওয়ার কাজ করাতেন। তার আত্মীয়রা আইনজীবী ঠিক করেন। আাদালত জ্যাকসকে অবমুক্ত করার ঘোষণা দিলেও কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে। ৪৩ দিন বন্দী থাকার পর অবশেষে জ্যাকস মুক্তি পান।

সর্বশেষ খবর