বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

নারী প্রার্থীদের ভোট ব্যাংক নারী ভোটার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

নারী প্রার্থীদের ভোট ব্যাংক নারী ভোটার

নারী প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে নারীদের টার্গেট করে এগোচ্ছেন। মেয়েদের হলগুলোতে প্রচারে বেশি সময় ব্যয় করছেন তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগ, একাডেমিক ভবনগুলোতেও প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী প্রার্থীরা।

নারী প্রার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছাত্রলীগের প্যানেলে। হল সংসদ এবং কেন্দ্রীয় সংসদ মিলে ছাত্রলীগের প্যানেলে নারী প্রার্থীর সংখ্যা সর্বমোট ২৫ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদের মধ্যে ছয়টি পদে নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিমা অর্ণি এবং সদস্য পদে রয়েছেন সাবরিনা ইতি, ফরিদা পারভিন, নিপু ইসলাম তন্বী, তিলোত্তমা শিকদার।

এর বাইরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল সংসদের সহ-সভাপতি পদে কোহিনুর আক্তার রাখি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সারা বিনতে জাহান, রোকেয়া হল সংসদের সহ-সভাপতি পদে ইশরাত জাহান তন্নী ও সাধারণ সম্পাদক পদে সায়মা প্রমি, শামসুন নাহার হল সংসদের সহ-সভাপতি পদে জেসমিন শান্তা ও সাধারণ সম্পাদক পদে উম্মে আরাফাত জাহান লাকি, সুফিয়া কামাল হল সংসদের সহ-সভাপতি পদে ইসরাত জাহান ইভা ও সাধারণ সম্পাদক পদে শাহরিয়ার সুলতানা নদী, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল সংসদের সহ-সভাপতি পদে রাজিয়া সুলতানা কথা ও সাধারণ সম্পাদক পদে শাওলীন জাহান সেঁজুতি ছাত্রলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।

কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে মনোনয়ন প্রাপ্ত বিএম লিপি আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়ায় উন্নত পরিবেশ তৈরি, ছাত্রী হলগুলোতে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলে ডাকসু কেন্দ্রীয় সংসদের কমনরুম এবং ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ছেন কানেতা ইয়ালামলাম। তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদে একমাত্র নারী প্রার্থী। এর বাইরে ছাত্রদল প্যানেল শুধু শামসুন নাহার হলে দিয়েছে। এ হলে ভিপি পদে লড়ছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মানসুরা আলম। জনসংযোগ ও প্রচারের বিষয়ে কানেতা ইয়ালামলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সময়োপযোগী ক্যাফেটেরিয়া ও কমনরুম নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা এখন সময়ের দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন প্যানেলে কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা হলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোটের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর, ছাত্র মৈত্রী প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী সনম সিদ্দিকী শিতি, স্বতন্ত্র জোট থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে অরণি সেমন্তি খান, জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক শিরিন আক্তার। হাসানুল হক ইনু সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে শাফিকা রহমান শৈলী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মনিরা ইসমাইল মীম, সাহিত্য সম্পাদক ইশরাত জাহান। প্রগতিশীল ছাত্রজোট থেকে সদস্য পদে আফনান আক্তার ও মনীষা আখতার। বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী থেকে সাহিত্য সম্পাদক পদে সানজীদা বারী রয়েছেন। কোটা আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে দুজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন শেখ এমিলি জামাল ও উম্মে কুলসুম বন্যা। ছাত্র মুক্তিজোটের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে তিনজন নারী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক সুমাইয়া ইয়াসমিন স্মৃতি, সমাজসেবা সম্পাদক নওরিন আক্তার নিশাত, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে জাকিয়া সুলতানা এবং সদস্য পদে দুজন রয়েছেন। তারা হলেন মোছা. রহিমা খাতুন সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা।

ডাকসু নির্বাচনে নিজের অবস্থানের বিষয়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোটের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী উম্মে হাবিবা বেনজীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের দাবি আন্দোলনে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের লড়ায়ে কাক্সিক্ষত একটি প্লাটফর্ম। শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ বজায় রেখে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। নারী হলে নিয়মিত প্রচারের পাশাপাশি একাডেমিক ভবনেও জনসংযোগ চালাচ্ছি। সুষ্ঠু ভোট হলে জেতার প্রত্যাশা রাখি।

ছাত্র মৈত্রী প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সনম সিদ্দিকী শিতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পারিবারিকভাবে আমি রাজনীতি শিখে এসেছি। হলে মেয়েদের যে কোনো সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ডাকসু হতে পারে আরেকটি প্লাটফর্ম।

নারী প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার ব্যাপারে বেশ ইতিবাচক নারী ভোটারাও। নারী প্রার্থীদের নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে মেয়েদের আবাসিক হলগুলোতেও। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও পরিচ্ছন্ন ইমেজকে প্রাধান্য দিচ্ছেন ভোটাররা। রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রিফাত সুরাইয়া বলেন, নারী হিসেবে অবশ্যই চাই ডাকসুতে নারী নেতৃত্ব আসুক। একই পদে বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীও রয়েছেন। তাই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেব।

সর্বশেষ খবর