বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সত্যিকারের সুপার হিরো যারা

সাইফ ইমন

সত্যিকারের সুপার হিরো যারা
সুপার হিরোদের প্রতি দুর্বলতা আমাদের কমবেশি সবারই আছে। চলচ্চিত্র এবং বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল কিংবা কমিকস বইয়ের সুপার হিরো চরিত্রগুলো আমাদের অনেক বেশি প্রিয়। ছোটবেলায় অনেকেই নিজেকে সুপার হিরো ভাবতে ভালোবাসতেন। কিন্তু টিভি পর্দায়, চলচ্চিত্রে আমরা যেরকম সুপার হিরোদের দেখি তার পুরোটাই কাল্পনিক চরিত্র মাত্র। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মেছেন যারা সত্যিই অতিমানবীয় ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছেন। যা সত্যিই রোমাঞ্চকর। এদের মধ্যে কেউ কেউ স্পাইডারম্যানের মতো বিশাল অট্টালিকা বেয়ে উঠে যেতে পারেন কিংবা বহুদূরের জিনিস দেখতে পান স্পষ্ট। এই সুপার হিরোদের নিয়ে আজকের রকমারি-

 

যে কোনো ভবন বেয়ে উঠতে পারেন

ফ্রেঞ্চ স্পাইডারম্যান

স্পাইডারম্যান মুভি বা টিভি সিরিজের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। গোটা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয় এই চরিত্রটি। যার বিশেষত্বই হলো যে কোনো দেয়াল বেয়ে উঠে যেতে পারেন স্পাইডারম্যান। কিন্তু বাস্তবে এমনটা কখনো সম্ভব নয়। তবে ব্যতিক্রম ফ্রেঞ্চ স্পাইডারম্যান। তার আসল নাম অ্যালেন রবার্ট। তিনি কোনোরকম যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই বিশ্বের যে কোনো ভবন বেয়ে উঠে যেতে পারেন। তার অসামান্য এই প্রতিভা দেখার জন্য লোকজনের ভিড় জমে যায় রাস্তায়। অ্যালেন রবার্ট বিশ্বের সুউচ্চ ভবনগুলো জনসম্মুখে বেয়ে উঠেছেন কোনোরকম সেফটি ইকুয়েপম্যান্ট ছাড়াই। তিনি এ সময় সঙ্গে শুধু একটিমাত্র ব্যাগ বহন করে থাকেন। যদিও তার ওপর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সবরকম ভবনে বেয়ে উঠা নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। দুবাইয়ের বুর্জখলিফা থেকে শুরু করে লন্ডনের সেলসফোর্স টাওয়ার- সবকটিতেই বেয়ে উঠেছেন তিনি।  

 

রিয়েল লাইফ ব্যাটম্যান

ড্যানিয়েল কিশ

তার পরিচয় তিনি রিয়েল লাইফ ব্যাটম্যান। পুরো নাম ড্যানিয়েল কিশ। ব্যাটম্যান চরিত্রটির সঙ্গে আমরা অনেক আগে থেকেই পরিচিত হলেও এই রিয়েল লাইফ ব্যাটম্যানকে খুব বেশি মানুষ এখনো জানে না। খুব ছোটবেলায় এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন ড্যানিয়েল কিশ। যার ফলে তিনি তার দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলতে থাকেন। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় তিনি চলাফেরা করার জন্য সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। বিষয়টা এমন নয় যে, চলচ্চিত্রের ব্যাটম্যানের মতো তিনি মানুষের বিপদে ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হন। আসলে বাদুড় যেমন রাতের অন্ধকারে পথ চলে ঠিক তেমনি ড্যানিয়েল নিজের ভিতরে এমন একটি প্রক্রিয়া চালু করতে সমর্থ হন। যার ফলে কোনো বস্তু তার থেকে ঠিক কতটুকু দূরত্বে আছে তা তিনি অনুমান করতে পারেন এবং পথ চলতে পারেন। এমনকি তিনি এই প্রক্রিয়ায় দিব্যি সাইকেল চালাতেও পারেন। 

 

যিনি দৌড়াতে পারেন আজীবন

ডিন কর্নজেস

সত্যিকারের সুপার হিরোদের মধ্যে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক একটি নাম হলো ডিন কর্নজেস। এই লোক না থেমে অনবরত দৌড়াতে পারেন। ক্লান্তি যেন তাকে স্পর্শই করে না। একবার তিনি টানা তিন দিন দৌড়েছিলেন কোনো প্রকার বিশ্রাম এবং খাওয়া-দাওয়া ছাড়াই। এ সময় তিনি ৫৬৩ কিলোমিটার (৩৫০ মাইল) অতিক্রম করেছিলেন। এটা কি আসলেই সম্ভব! সাধারণ কোনো মানুষের পক্ষে হয়তো সম্ভব নয়। এমনকি বিশ্বের গতিমানব বলে খ্যাত উসাইন বোল্টের বেলায়ও এটি প্রযোজ্য নয়। কিন্তু ডিন কর্নজেসের কাছে অনবরত দৌড়ানো যেন ডালভাতের মতো। আরও অবাক করার মতো বিষয় হলো তিনি সমতল, উঁচু-নিচু, মরুভূমি- প্রায় সবরকম জায়গায়ই একইভাবে দৌড়াতে পারেন। ডেথ ভ্যালি থেকে সাথপুল- তিনি সব জায়গায়ই সমানভাবে দৌড়ে রেকর্ড করেছেন। সত্যিই ডিন কর্নজেস এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম।

 

স্পষ্ট দেখেন অনেক দূরের বস্তু

ভেরোনিকা সাইডার

মানুষের দৃষ্টিসীমা অসীম। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শত শত আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রও আমরা দেখতে পাই। কিন্তু কতটুকু স্পষ্ট করে দেখতে পাই সেটাই হলো বিষয়। যেমন এক মাইল দূরের কোনো বিলবোর্ড আমাদের চোখে পড়বে ঠিকই কিন্তু আমরা কি আসলে খালি চোখে সাধারণ আকৃতির কোনো বিলবোর্ডের লেখা পড়তে পারব? কিংবা বিলবোর্ডটি শনাক্ত করতে পারব? সাধারণ মানুষের পক্ষে খালি চোখে এটা পড়া অসম্ভব। কিন্তু ১৯৭২ সালে ভেরোনিকা সাইডার নামের এক নারী দাবি করে বসেন তিনি ১.৬ কিমি অর্থাৎ এক মাইল দূরের যে কোনো কিছু স্পষ্ট দেখতে পারেন। রং আলাদাভাবে শনাক্ত করতে পারেন। এমনকি দূরত্বও পরিমাপ করতে পারেন। অতি সূক্ষ্ম বস্তুও তার চোখ এড়িয়ে যায় না। প্রথমে কেউ বিশ্বাস না করলেও প্রকাশ্যেই সবাইকে প্রমাণ দেন ভেরোনিকা সাইডার। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেন ২০ গুণ বেশি দৃষ্টিসীমার কারণে।

 

দ্য রিয়েল লাইফ ডেডপুল

উরবাচ উইথে

মানুষের সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় তার মস্তিষ্কের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ওপর। এই মস্তিষ্ক যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তখনই দেখা দেয় বিপত্তি। আর এই মস্তিষ্কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে উরবাচ উইথে নামে এক মহিলা পরিণত হন সুপার উইমেনে। কারণ তিনি কোনো প্রকার ভয় পান না। জাগতিক পৃথিবীর কোনো কিছুতেই তার মধ্যে ভয়ের লেশমাত্র নেই। বিষাক্ত মাকড়সা থেকে বিষধর সাপ- হাতে নিয়ে তিনি ছেলেখেলা করেন। একবার এমন হয়েছিল যে, এক দুর্বৃত্ত তাকে ছুরি দিয়ে আক্রমণ করতে গেলে আক্রমণকারী নিজেই হতভম্ব হয়ে যান। কারণ এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতেও বিন্দুমাত্র ভাবান্তর ঘটেনি তার মধ্যে। অন্য সুপার হিরোদের মতো তারও একটা দুর্বলতা আছে। আর তা হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড। শুধু এই গ্যাসের সামনেই তাকে বিচলিত হতে দেখা যায়। স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের কাছে উরবাচ উইথে আজও বিস্ময়ই রয়ে গেছেন।

 

দ্য ইলাস্টিকম্যান জ্যাভিয়ার

জ্যাভিয়ার বোট

জ্যাভিয়ার বোটের সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত। কারণ এখন তিনি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা। ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার প্রায় ১৫টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। যেগুলো ব্যবসাসফলও হয়েছে। জ্যাভিয়ার বোট এক বিরল প্রতিভার অধিকারী। তিনি তার শরীরকে যে কোনোভাবে মুচড়াতে পারেন। আর তার এই সুপার ফ্লেক্সিবেলিটির কারণ এক দুরারোগ্য ব্যাধি মারফান সিনড্রোম। কিন্তু এতে তার লাভই হয়েছে। এর ফলে তিনি হলিউডে তার ক্যারিয়ার তৈরি করতে পেরেছেন। বিভিন্ন হরর কিংবা এলিয়েন কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের পরিচালকরা তার এই সুপার ফ্লেক্সিবেলিটিকে চরিত্রের কাজে লাগিয়েছেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মারফান সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকে লোপেজ নামে পরিচিত হলেও এখন তিনি জনপ্রিয় জ্যাভিয়ার বোট। ২০০৭ সালে মুক্তি পায় তার কাজ করা প্রথম চলচ্চিত্র ‘আরইসি’।

 

দ্য রিয়েল লাইফ প্রফেসর এক্স

থর চলচ্চিত্রে আমরা দেখেছি সুপার হিরোরা অতিপ্রাকৃত মানসিক ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু বাস্তবে কি এটা সম্ভব! হ্যাঁ, এটাই বাস্তব হয়েছে মারিলু হেনারের ক্ষেত্রে। তিনি অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত সবার কাছে। বাস্তব জীবনে এই নারীর রয়েছে অতিপ্রাকৃত মানসিক শক্তি। তার রয়েছে হাইলি সুপিরিয়র অটোবায়োগ্রাফিকেল মেমোরি। এর মানে হচ্ছে তিনি সেই মানুষ, যিনি তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সমানভাবে মনে করতে পারেন। বাদ যায় না কোনো কিছুই। এরকম মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই বিরল। তিনি তার এই অতি বিরল ক্ষমতার সঙ্গে পরিচিত হন ছয় বছর বয়সে। তখন থেকেই তিনি তার জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছু মনে করতে পারেন অবিকল। এমনকি প্রতিটি দিনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি সেকেন্ড তার চোখের সামনে ভাসে চলচ্চিত্রের মতো করেই। এরকম প্রতিভা সত্যিই খুব বিস্ময়কর।     

 

অদৃশ্য মানবী চেরিল ম্যানার্ড

চেরিল ম্যানার্ডকে বলা হয় অদৃশ্য মানবী। তবে তিনি অদৃশ্য হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন এমন কিছু ভাবার অবকাশ নেই। তার এই নামকরণের পেছনে রয়েছে অ™ভুত এক কারণ। আর তা হলো চেরিল ম্যানার্ডের কোনো আঙ্গুলে কোনো প্রকার ছাপ নেই। যেখানে মানবশিশুর জন্মের সময় থেকেই পূর্ণাঙ্গ হাতের ছাপ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়। পৃথিবীর প্রতিটি ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ আলাদা। এমনকি যমজ শিশু জন্মগ্রহণ করলেও তাদের আঙ্গুলের ছাপ আলাদা হয়ে থাকে। সেখানে চেরিল ম্যানার্ডের আঙ্গুলে কোনো ছাপই নেই। গোটা বিশ্বে এমন ঘটনার নজির আছে মাত্র চারটা পরিবারে। যাদের বংশগতভাবেই আঙ্গুলে কোনো প্রকার ছাপ পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ঘটনার পেছনে কাজ করছে জেনেটিক মিউটেশন। একবার ভাবুন তো চেরিল ম্যানার্ড যদি অপরাধী হতেন তা হলে কি অবস্থা হতো!

 

যাদের হাড় কখনো ভাঙে না

যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটে একটি পরিবার। তাদের জীবনযাপন খুব স্বাভাবিক। অন্য আর দশজনের মতোই। কিন্তু তারপরও তারা সবার চেয়ে একটি বিশেষ দিক থেকে আলাদা। আর তা হলো এই পরিবারের সদস্যদের হাড়ের গঠন। এদের হাড়ের ঘনত্ব সাধারণ মানুষের হাড়ের ঘনত্বের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে হাড়ের গঠনও হয়েছে খুব মজবুত। বিশ্বের আর কোথাও এমন আর একটিও উদাহরণ নেই। এই পরিবারের সদস্যদের হাড় কখনো ভাঙেনি। পরিবারের কোনো সদস্যের হাড়ে কখনো বিন্দু পরিমাণ চিড়ও ধরেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ঘটনার  পেছনে কাজ করছে জেনেটিক মিউটেশন। পরিবারের কোনো সদস্যের কখনো হাড়ের ক্ষয় কিংবা হাড় সংশ্লিষ্ট কোনো রোগের সম্ভাবনা নেই। এরকম হাড়ের গঠন নিয়ে তারা এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

তীব্র শীতকে জয় করেছেন

উইম হোফ নিজেও জানতেন না তার এই অতিমানবীয় ক্ষমতা প্রসঙ্গে। ঘটনাক্রমে তিনি উপলব্ধি করেন যে, তার শরীরে তীব্র শীত প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি ১৭ বছর বয়সে তার বাড়ির সমনে আমস্টারডাম শহরে শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে হাঁটছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে উইম হোফ কিছুটা অবাক হয়ে যান। লক্ষ্য করলেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শীতের প্রকোপ বাড়লেও দিব্যি এর মধ্যেই হাঁটাচলা করতে পারছেন তিনি। নিজের এই অতিমানবীয় ক্ষমতার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উল্টো উইম হোফ সবার আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। আর এখন উইম হোম ২৬টি বিশ্বরেকর্ডের মালিক। সবার মনে একটাই বিস্ময় প্রচণ্ড শীতে মানুষের দেহে যে সব জৈবিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা তার কোনোটাই হচ্ছে না উইম হোফের ক্ষেত্রে।

সর্বশেষ খবর