বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

হলিউড কাহিনি

তানিয়া তুষ্টি

হলিউড কাহিনি

বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি হলিউড। দীর্ঘদিন ধরে এর খ্যাতি রয়েছে আকাশচুম্বী। জন্মলগ্ন থেকেই কি হলিউড এমন ছিল? উত্তর হবে- না। প্রায় একশ বছর আগের হলিউডের অবস্থা ছিল একপ্রকার শোচনীয়। পুরো হলিউডজুড়ে ছিল মাত্র দুটি মার্কেট। নির্মাণাধীন একটি পোস্ট অফিস আর একটি হোটেল ছিল বাড়তি সুবিধার মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়া, যা আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় তিন গুণ। যথাযথ ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে বর্তমানে এই রাজ্যটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নর্দান এবং সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া। লস অ্যাঞ্জেলেস সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বৃহত্তম শহর এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। দৃষ্টিনন্দন রাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে মন ভোলানো শহর হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেস কিছুটা বিশেষ অবস্থান নিয়েই আছে। এ শহরেই গড়ে ওঠে চলচ্চিত্র শিল্পের স্বর্গ হলিউড। আর হবেই বা না কেন? লস অ্যাঞ্জেলেসকে বলা হয় বিশ্বের সৃজনশীল রাজধানী। এখানকার অধিবাসীদের প্রতি ছয়জনের একজন কোনো না কোনো সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত।

এই জায়গাটি প্রাথমিক পর্যায়ে মুভি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ছিল না। সেই সময়ে হলিউডের কাছাকাছি আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল লস অ্যাঞ্জেলেসে। সাত মাইলের একটি রাস্তা এবং বিশালাকার কমলার বাগান এই দুটি স্থানকে আলাদা করে রেখেছিল। কিন্তু মাত্র দুই দশকের মধ্যেই হলিউড ও লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো হয়ে ওঠে।

১৯০২ সালে এখানে কাঠের প্রাসাদের মতো একটি হোটেল চালু হয়। এর ঠিক দুই বছর পর যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ১৯০৪ সালে যোগাযোগের সুবিধার্থে তৈরি করা হয় প্রস্পেক্ট এভিনিউ। বর্তমানে সেটি হলিউডে বুলভার্ড নামে পরিচিত।

১৯১০ সালে ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ তার মুভি ‘ইন ওল্ড ক্যালিফোর্নিয়া’র সেট ঠিক করেন হলিউডে। এটিই হলিউডে বানানো সর্বপ্রথম সিনেমা। ডি ডব্লিউ গ্রিফিথ ছিলেন সেই সময় মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পের স্তম্ভ স্বরূপ। দর্শকদের মধ্যে নাটকীয় উত্তেজনা সঞ্চারে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। ১৯১৫ সালে নির্মিত তার সবচেয়ে বিখ্যাত সিনেমা হচ্ছে ‘দ্য বার্থ অফ অ্যা নেশন’। বিতর্কিত এই সিনেমা করার পরপরই ১৯১৬ সালে ইনটলারেন্স নামে আরেকটি বিখ্যাত সিনেমা করেছিলেন। ১৯১৪ সালের দিকে সেসিল বি ডেমাইল তার মুভি তৈরির যাত্রা শুরু করেন হলিউডেই; দ্য স্কোয়াও ম্যান মুভি দিয়ে। কিন্তু একে একে চলচ্চিত্র নির্মাতারা কেন হলিউডে প্রবেশ করলেন? এমন প্রশ্নের পেছনে ইতিহাস হলোÑ আগে সিনেমা তৈরির প্রধান স্থান ছিল নিউ জার্সি। কিন্তু সেখানে থমাস এডিসন মোশন পিকচার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিংহভাগ চলচ্চিত্রকে জিম্মি করে নিজের ব্যবসা চালাত। প্রযোজনা সংস্থার এমন কড়াকড়ি থেকে রেহাই পেতে পরিচালকরা নতুন কোনো জায়গা খুঁজছিলেন। পেয়েও গেলেন মনের মতো একটি জায়গা, ধীরে ধীরে পাড়ি জমান হলিউডে। আর এভাবেই গড়ে ওঠে আধুনিক আমেরিকান সিনেমা তৈরির আঁতুড়ঘর হলিউডের।

হলিউড হয়ে ওঠে অভিনয়ের স্বপ্নে বিভোর মানুষদের আরাধ্য জায়গা। পাশাপাশি ছোট ছোট মুভি প্রযোজনা সংস্থার পছন্দের জায়গা। প্রথমে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলেও ধীরে ধীরে এই ছোট স্টুডিওগুলোও বিখ্যাত হয়ে যায়। হলিউডের প্রথম স্টুডিও ছিলো নেস্টর স্টুডিও। এটি তৈরি করা হয় ১৯১২ সালে। তবে সর্বপ্রথম মোশন পিকচার স্টুডিও পেতে হলিউডের অপেক্ষা করতে হয় ১৯১৯ সাল পর্যন্ত। চলচ্চিত্র নির্মাতা ডেভিড হর্সলি সর্বপ্রথম মোশন পিকচার স্টুডিও তৈরি করেন এডিনডেলে। এটি হলিউডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। স্টুডিওটি তৈরি করতে সাহায্য করে সেলিগ পলিস্কোপ কোম্পানি। বিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনও ১৯১৭ সালে হলিউডে একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে চলচ্চিত্র উৎপাদনে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০০ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হত। গোটাবিশ্বে নির্মিত চলচ্চিত্রের ৮২ শতাংশই এখানে তেরি হত।

উনবিংশ শতাব্দির শেষদিকেও হারর্ভে এবং ডেইডা উইলকক্স এর মালিকানায় এই স্থানটি ছিল গবাদি পশুচারণশালা। ১৮৮৬ সালে এসে এই জায়গাটির নামকরণ করা হয় হলিউড। নামটি রাখেন এক রিয়েল স্টেট ডেভলপার হবার্ট জনস্টোন হোয়াইটলি। তিনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ত্বরান্বিত করার জন্য জায়গাটিকে অ্যাডভারটাইজিং স্পট হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন। ডেভলপার এস.এইচ উডরাফ এবং ট্রেসি ই.সোল্টস এই জায়গাতে একটি নতুন নেইবারহুড ডেভেলপ করে যাকে বলা হত হলিউডল্যান্ড। পরবর্তীকালে এই হলিউডল্যান্ড থেকে হলিউড নামের বিশ্বখ্যাত সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হয়।

 

হলিউড সাইনের পেছনের কথা

গোটা লস অ্যাঞ্জেলেসে যেসব দর্শনীয় নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চিত্তাকর্ষক হচ্ছে হলিউড সাইন। হলিউড সাইনবোর্ডকে সংক্ষেপে হলিউড সাইন বলা হয়। তবে নজরকাড়া এই সাইনবোর্ডের পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস, হাজারো মানুষের পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ। ১৯২৩ সালে তৈরি করা সাইনটির নির্মাণকালীন নাম ছিল হলিউডল্যান্ড। গ্রিফিথ পার্কের মাউন্ট লি নামের পাহাড়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত এ সাইনবোর্ডটির প্রতিটি অক্ষরের উচ্চতা ৪৫ ফুট। অর্থাৎ ছয়তলা উঁচু দালানের সমান এবং প্রস্থ ৩১ থেকে ৩৯ ফুট পর্যন্ত। দৈত্যাকৃতির এই সাইনবোর্ডটি পাহাড়ের শীর্ষে স্থাপিত হওয়ায় বহুদূর থেকে দেখা যায়। রাতের বেলায় স্পষ্ট দেখার জন্য ৪ হাজার বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো আছে! ১৯২০ সালের গোড়ার দিকে ‘দি লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’ পত্রিকার মালিক হ্যারি চ্যান্ডলার কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে নিয়ে ডেভেলপার ব্যবসায় নেমেছিলেন। ব্যবসায়ী গ্রুপটি মাউন্ট লির পাদদেশে বিপুল পরিমাণে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রকল্পের নামকরণ করা হয় দহলিউড ল্যান্ডদ। নিজেদের কোম্পানির নামকে আকর্ষণীয় করা ও ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়তে বেশ জমকালো একটি সাইনবোর্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটি। ওই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ১৯২৩ সালে বিখ্যাত ডিজাইনার থমাস ফিস্কের ডিজাইনকৃত হলিউড ল্যান্ড লেখা ১৩ অক্ষরের সাইনবোর্ড তৈরি করা হয় পাহাড়ের শীর্ষে। মাত্র বছর দুয়েকের জন্য স্থাপন করা হলেও সাইনবোর্ডটি আর সরানো হয়নি।

১৯৩২ সালে হলিউড অভিনেত্রী দপেগ এন্টউইসটলদ হলিউডের এইচ অক্ষরের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। এরপর ১৯৪০ সালে ওই সাইনের কেয়ারটেকার আলবার্ট কোথ পাহাড়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওই এইচ অক্ষরের ওপর পড়েছিলেন। ওই দুর্ঘটনায় মি. কোথ বেঁচে গেলেও এইচ অক্ষরটি দুমড়ে মুচড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল অনেক দিন। আর তাই সাইনটিকে অপয়া হিসেবে অভিহিত করতেন সেখানকার লোকেরা।

সাইনের দুর্নাম ঘোচাতে ১৯৪৯ সালে হলিউড চেম্বার অব কমার্স শব্দটি বাদ দিয়ে এটিকে হলিউড সাইন হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। কাঠ এবং টিনের শিট দিয়ে তৈরি করা হয় সাইনটি। তবে অল্প দিনেই হলির আই অক্ষরটি ভেঙে ইউ আকার ধারণ করে এবং ডিডব্লিউয়ের একটা আই গায়েব হয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে হলিউড চেম্বার মোটা অঙ্কের ডলার খরচ করে অস্ট্রেলিয়া থেকে স্টিল শিট এনে সাইনটি নতুন করে স্থাপনের কাজ শুরু করে। আর ওই বছর ১৪ নভেম্বর হলিউডের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হলিউড সাইন উদ্বোধন করা হয়। এত কিছু করার পরও বিপদ যেন পিছু ছাড়ে না। নতুন সাইন উদ্বোধনের কয়েকদিন পরেই একজন স্কুলছাত্রী এর ওপর থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর থেকে সাইনটির কাছে যাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর এক ডেভেলপার কোম্পানি ঘরবাড়ি নির্মাণসহ এলাকা উন্নয়নের নামে বিশ্বখ্যাত হলিউড সাইন সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিত্ব করা হলিউড সাইনটি রক্ষার জন্য স্থানীয়রা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। জায়গাটি কিনে নেওয়ার জন্য ‘দ্য ট্রাস্ট ফর পাবলিক ল্যান্ড’ নামে একটি ফান্ড গঠন করা হয়। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অনুদান নিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ (১২.৫ মিলিয়ন) ডলারের সংস্থান করে ১৩৮ একর ভূমি রক্ষা করা হয়। একই সঙ্গে আগামী পৃথিবীর জন্যই রক্ষা করা হয় হলিউড সাইন। বর্তমানে হলিউড সাইন হলিউডের নিজস্ব সম্পত্তি।

 

বিশ্বখ্যাত স্টুডিওর যাত্রাও এখানে

হলিউডের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বখ্যাত স্টুডিও সিস্টেমও যাত্রা শুরু করে এখানে। স্টুডিওগুলোর সর্বোত্তম প্রচার পদ্ধতি ছিল স্টার সিস্টেম, যা অন্য দেশগুলোর কাছে আদর্শস্বরূপ হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতিটি পর্যায়ে স্টুডিওর আপাদমস্তক নিয়ন্ত্রণ থাকত। যার ফলে প্রায়োগিক সূক্ষ্মতা ও উচ্চমান অর্জন করা সম্ভব হতো। সিস্টেম চলত সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক নিয়মে। ১৯১১ সালে সানসেট বুলিভার্ডের একটি অংশে হলিউডের প্রথম স্টুডিও নির্মিত হয় আর তার পরপরই সেখানে প্রায় ২০ টি কোম্পানি সিনেমা প্রযোজনার কাজ শুরু করে। ১৯১৩ সালে সিসিল বি ডে মিল, জেস ল্যাস্কি, আর্থার ফ্রিড এবং স্যামুয়েল গোল্ডউইন মিলে জেস ল্যাস্কি ফিচার প্লে কোম্পানি (পরে প্যারামাউন্ট পিকচারস) গঠন করেন। ১৯১৫ সালের মধ্যে আমেরিকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় হলিউড। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ডি. ডব্লিউ. গ্রিফিথ, গোল্ডউইন, অ্যাডল্ফ জুকর, উইলিয়াম ফক্স, লুইস বি. মেয়ার, ডেরিল এফ. জেনাক এবং হ্যারি কোন এর মতো ব্যক্তিরা টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি-ফক্স, মেট্রো-গোল্ডউইন-মেয়ার, প্যারামাউন্ট পিকচারস এবং অন্যান্য বড় বড় ফিল্ম স্টুডিওর হর্তা-কর্তা ছিলেন। ওহিয়ো রাজ্যের সাবান ব্যবসায়ী চার ভাই ১৯১৮ সালে হলিউডে একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করে। তাদের সেই সম্মিলিত উদ্যোগটিই আজকের বিশ্বখ্যাত বিনোদন কোম্পানি ওয়ার্নার ব্রাদার্র্স। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হলিউডের বাইরে ফিল্ম স্টুডিওগুলো কাজ করতে শুরু করে এবং ‘লোকেশনে’ ফিল্মিংয়ের চল শুরু হয়। টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রির উত্থানের পর ১৯৬০ সালের মধ্যে হলিউড হয়ে ওঠে আমেরিকান নেটওয়ার্ক টেলিভিশন এন্টারটেইনমেন্টের রাজত্ব।

 

তারা সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা

হলিউডে নির্মাণ হয় লক্ষ কোটি ডলার লগ্নির চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পীরাও হাঁকান আকাশচুম্বী পারিশ্রমিক। তবে একজনের সঙ্গে অপরজনের পার্থক্য তো থাকেই। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্তির তালিকায় নাম আছে ‘টাইটানিক’-খ্যাত লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, সেমি-রিটায়ার্ড রেসলার ও অভিনেতা-প্রযোজক ডোয়াইন জনসন (দ্য রক), বন্ড খ্যাত ড্যানিয়েল ক্রেইগ, ফাস্ট অ্যান্ট ফিউরিয়াস তারকা ভিন ডিজেলদের নাম। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও সেই টাইটানিক আমল থেকে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। তাই পারিশ্রমিকের পরিমাণটাও বেশি। সায়েন্স ফিকশন ‘ইনসেপশন’-এর জন্য তিনি নিয়েছিলেন ২০ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৭০ কোটি টাকা)। তবে তার সাম্প্রতিক ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন হলিউড’-এর জন্য তিনি পে কাট বাদে পান ১০ মিলিয়ন ডলার (৮৫ কোটি টাকা)।

সুপারস্টার রবার্ট ডউনে জুনিয়র তার অ্যাভেঞ্জার্স ছবির জন্য নেন ২০ মিলিয়নের বেশি। আর স্পাইডারম্যান ছবিতে মাত্র ১৫ মিনিট পারফর্ম করার জন্য তার পারিশ্রমিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এসব অভিনেতারা নিজেদের স্টারডমকে পারিশ্রমিক প্রাপ্তির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। হলিউডের অভিনেত্রীরাও এদিক থেকে পিছিয়ে নেই। জেনিফার লরেন্স আর অ্যানি হ্যাথওয়ে সাম্প্রতিক ছবিতে অভিনয় করে পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ১৫ মিলিয়ন ডলার করে। তবে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শীর্ষ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত হলিউড অভিনয়শিল্পীদের নাম, চলচ্চিত্রের নাম ও পারিশ্রমিকের অঙ্ক।

ড্যানিয়েল ক্রেইগ (বন্ড ২৫) : ২৫ মিলিয়ন ডলার

ডোয়াইন জনসন (রেড নোটিস) : ২২ মিলিয়ন ডলার

ভিন ডিজেল (দ্য ফেট অব দ্য ফিউরিয়াস) : ২০ মিলিয়ন ডলার

অ্যানি হ্যাথওয়ে (বার্বি) : ১৫ মিলিয়ন ডলার

জেনিফার লরেন্স (দ্য স্প্যারো) : ১৫ মিলিয়ন ডলার

সেথ রজেন (ফ্লারস্কি) : ১৫ মিলিয়ন ডলার

টম ক্রুজ (দ্য মামি) : ১১-১৩ মিলিয়ন ডলার

হ্যারিসন ফোর্ড (ইন্ডিয়ানা জোনস ৫) : ১০-১২ মিলিয়ন ডলার

সান্ড্রা বুলক (দ্য মিলিয়নস) : ১০ মিলিয়ন ডলার

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (ওয়ানস আপন অ্যা টাইম ইন হলিউড) : ১০ মিলিয়ন ডলার।

 

হলিউডের বিলাসী বাসিন্দা

চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রাণকেন্দ্র হলিউডে শুধু নামজাদা স্টুডিও নয়, আরও আছে ডিজনিল্যান্ড, অস্কার আয়োজনকারী কোডাক থিয়েটার, ইউনিভার্সাল স্টুডিওসহ অনন্য সৌন্দর্যের আধার প্রশান্ত মহাসাগর। আর তাই এখানে বিলাসী জীবন যাপনে ইচ্ছুক নাগরিকের ভিড় বেড়ে চলেছে দিনকে দিন। হলিউডের আশপাশে বড় পর্দা এবং ছোট পর্দার বহু তারকার বাস। তারকা ছাড়াও হলিউডে সাধারণ জনগণের বাস করে। ২০০০ সালের জরিপ অনুযায়ী, হলিউডের ৩.৫১ বর্গমাইল এলাকায় মোট ৭৭ হাজার ৮১৮ জন মানুষ বাস করে। প্রতি বর্গমাইলে বাস করে ২২ হাজার ১৯৩ জন মানুষ। ২০০৮ সালের জরিপ অনুযায়ী জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৮৯ জন। জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরগুলোর মধ্যে ৭ম স্থান দখল করে আছে হলিউড। হলিউডে বিভিন্ন জাতির বসবাস। ২০০০ সালের জরিপ অনুযায়ী, হলিউডে ৪২.২ শতাংশ ল্যাটিনো, ৪১ শতাংশ নন-হিস্প্যানিক হোয়াইট, ৭.১ শতাংশ এশিয়ান, ৫.২ শতাংশ ব্ল্যাক এবং ৪.৫ শতাংশ অন্যান্য জাতির বাস।

 

এক নজরে মজার তথ্য

- হলিউড এলাকায় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি শুরুর আগে ছিল গবাদি পশুচারণশালা।

- এলাকাটির নামকরণ করা হয় ১৮৮৬ সালে।

- এখানে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় ১৯১০ সালে। মাত্র ১৭ মিনিটের এই চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘ইন ওল্ড ক্যালিফোর্নিয়া’।

- ১৯১১ সালে প্রথম স্টুডিও নেস্টর স্টুডিও হলিউড নির্মাণ করা হয়।

- ১৯১৮ সালে সাবান ব্যবসায়ী চার ভাই সম্মিলিত উদ্যোগে একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করে ওয়ার্নার ব্রাদার্স নামে।

- হলিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘দ্য জাজ সিঙ্গার’। ৮৯ মিনিটের দীর্ঘ এই চলচ্চিত্রটি ১৯২৭ সালে অ্যালেন ক্রসল্যান্ড নির্মাণ করেন।

- হলিউড রুজভেল্ট হোটেলে ১৯২৯ সালে প্রথমবারের মতো অস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

- হলিউড স্টুডিওতে নির্মিত প্রথম মুভি সেসিলি বি ডেমিলির নির্মিত ‘দ্য স্কোয়া ম্যান’। এটি নির্মাণ করা হয় ১৯১৪ সালে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর