বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের বৃহত্তম ডুবোজাহাজ

সাইফ ইমন

বিশ্বের বৃহত্তম ডুবোজাহাজ

দৈত্যাকার শরীর নিয়ে পানির নিচে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে পারে কে আর,  সে তো নীল তিমিই। কিন্তু না, তার চেয়ে কোনো অংশে কম যায় না পানির নিচের দৈত্য-খ্যাত সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ। নিজের পেটের ভিতর অনেক কিছু নিয়ে সাগর সাঁতরে বেড়ায় সে। বিশেষ পদ্ধতির এই জাহাজ তৈরির কৌশল কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। কয়েকশ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পর আজকের আধুনিক সাবমেরিন যুগে আসছে। বর্তমানে সাবমেরিন দিয়ে শত্রু বাহিনীর জাহাজ কিংবা ডুবোজাহাজ আক্রমণ মোকাবিলা, বিমানবাহী জাহাজ বহর রক্ষা, অবরোধ দূরীকরণ, প্রচলিত স্থল আক্রমণ ও বিশেষ বাহিনীকে গুপ্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তাই প্রতিটি সাবমেরিনের আর্থিক মূল্যও অনেক বেশি। কিন্তু তাতে কী, প্রমোদবিহারেও ব্যবহার হয় এই বিলাসবহুল যানটি। এমনই একটি বৃহৎ আকার সাবমেরিন হচ্ছে অ্যাস্টার ক্লাস। এর ৭,৪০০ টনের একটি ডুবো স্থানচ্যুতি রয়েছে। পারমাণবিক শক্তি চালিত এই সাবমেরিন গোত্রটি  ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর কাজে যুক্ত রয়েছে। এই গোত্রের মোট তিনটি সাবমেরিন রয়েছে, যার সবগুলোই বর্তমানে কার্যকর। রাশিয়ার টাইফুন ক্লাস নামের সাবমেরিন ৪৮,০০০ টনেরও বেশি ডুবো স্থানচ্যুতিসম্পন্ন। এই সাবমেরিনটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন বলে গণ্য করা হয়। পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এই সাবমেরিনটি ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত। এই গোত্রের ছয়টি সাবমেরিনের প্রথমটি, ডিমট্রি ডন্সকই ১৯৮১ সালে অনুমোদিত হয় এবং এখনো পর্যন্ত এটি রাশিয়ার নৌবাহিনীর সেবায় নিযুক্ত রয়েছে।

এর দৈর্ঘ্য ১৭৫ মিটার, আলোকচ্ছটা ২৩ মিটার এবং খসড়া ১২ মিটার। রাশিয়ার আরও একটি বৃহত্তম সারমেরিন হলো ডেল্টা ক্লাস। সাবমেরিনটি বিশাল পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রসম্পন্ন। যা রাশিয়ার উত্তর দিকের একটি শহর সেভেরোদভিন্সে নির্মাণ করা হয়েছে। ডেল্টা গোত্রের মোট চারটি সাবমেরিন রয়েছে। ১৯৭৬ সালে ডেল্টা গোত্রের প্রথম সাবমেরিনটি অনুমোদন পায়। এই গোত্রের তৃতীয় এবং চতুর্থ সাবমেরিন বর্তমানে রাশিয়ার নৌবাহিনীতে কার্যকর রয়েছে। এটি ঘণ্টায় ৪৪.৪৫ কিলোমিটার গতিবেগে চলে। যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও ক্লাস সাবমেরিনও আকারে বিশাল।

এই গোত্রের সাবমেরিন পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ১৮টি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ওহিও গোত্রের সাবমেরিন রয়েছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতকৃত সর্বকালের বৃহত্তম সাবমেরিনগুলোর মধ্যে একটি। প্রতিটি সাবমেরিনের ১৮,৭৫০ টন ডুবো স্থানচ্যুতিসম্পন্ন ক্ষমতা রয়েছে। এই গোত্রের প্রথম সাবমেরিন ইউএসএস ওহিও প্রস্তুত করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের শহর গ্রটনের ইলেকট্রিক বোট ডিভিশন অব জেনারেল ডাইনামিকস করপোরেশন।

যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি বৃহত্তম সাবমেরিন হলো সি উলফ ক্লাস। মার্কিন নৌবাহিনী দ্বারা পরিচালিত পারমাণবিক শক্তিচালিত দ্রুতগতিসম্পন্ন এই সি উলফ। ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে এই গোত্রের সাবমেরিন তৈরি করা হয়েছিল সোভিয়েতের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র সাবমেরিনের হুমকির মোকাবিলা করার জন্য।

সিয়েরা ক্লাস হলো রাশিয়ার আরও একটি বৃহত্তম সাবমেরিন। ১০,৪০০ টনের ডুবো স্থানচ্যুতিসম্পন্ন এই সাবমেরিনটি। রাশিয়ার নৌবাহিনীতে সিয়েরার চারটি সাবমেরিন কার্যকর অবস্থায় রয়েছে। সিয়েরা গোত্রের সাবমেরিনগুলো হালকা এবং ভারী টাইটানিয়ামের চাপে তৈরি যার কারণে সাবমেরিন পানির বেশ গভীর পর্যন্ত যেতে পারে এবং বিকিরণের শব্দের মাত্রাও কমিয়ে দেয়। এ ছাড়াও এটি টর্পেডো হামলার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রাশিয়ার আরও একটি বিখ্যাত সাবমেরিন হলো আকুলা ক্লাস। ১৩,৮০০ টনের ডুবো স্থানচ্যুতিসম্পন্ন এই গোত্রের সাবমেরিনটি পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন। এই গোত্রের মোট দশটি সাবমেরিনের নয়টি রাশিয়ার এবং একটি ভারতীয় নৌবাহিনীতে কার্যরত আছে। আকুলা গোত্রের সর্বপ্রথম সাবমেরিনটি ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত নৌবাহিনীতে অনুমোদিত হয়। পৃথিবীর আরেকটি বৃহৎ সাবমেরিন ট্রায়োম্ফ্যান্ট ক্লাস। ফ্রান্সের এই সাবমেরিনটি ১৪,৩৩৫ টন ডুবো স্থানচ্যুতিসম্পন্ন। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র সংবলিত এই সাবমেরিনটি ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে সেবা পরিবেশন করে এবং ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে পরমাণু প্রতিরোধকারী সামরিক শক্তিরও একটি অংশ।

পৃথিবীর বৃহত্তম সাবমেরিন টাইফুন ক্লাস

সর্বশেষ খবর