শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কারাগারে কেমন ছিলেন নজরুল

কারাগারে কেমন ছিলেন নজরুল

কাজী নজরুলের লেখা ‘যুগবাণী’, ‘বিষের বাঁশী’, ‘ভাঙার গান’, ‘প্রলয় শিখা’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’সহ মোট পাঁচটি বই ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। বাংলা সাহিত্যে সমকালীন অন্য কোনো কবি বা সাহিত্যিকের এত গ্রন্থ একত্রে কখনো বাজেয়াপ্ত হয়নি। নজরুলের প্রতিবাদ আর তার লেখনীর অন্যতম দিক হলো নজরুলই ভারতবর্ষে প্রথমবারের মতো পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন। নানা সৃষ্টিতে বৈচিত্র্যমন্ডিত নজরুলের কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় পত্রিকা সম্পাদনাও। ১৯২২ সালে নজরুল ‘ধূমকেতু’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। পত্রিকাটি সপ্তাহে দুইবার প্রকাশ পেত। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ধূমকেতুর দ্বাদশ সংখ্যায় ‘আনন্দময়ীর আগমন’ নামক একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। কবিতাটি ব্রিটিশ শাসকদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ফলে এই কবিতায় নজরুলের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম রাজদ্রোহের মামলা হয়। একই বছরের ৮ নভেম্বর রাজদ্রোহের অপরাধে নজরুলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত নজরুলের বিচার হয়েছিল কলকাতার আলিপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। পরবর্তীতে এই মামলার রায়ে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি নজরুল এক বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হন। রায় ঘোষণার পরদিন তাকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আগে থেকেই নজরুলের কাব্য চেতনা আর সৃষ্টিশীল দ্রোহের সঙ্গে পরিচিত ছিল সাধারণ মানুষ। এবার কারাবরণ করে নজরুল সমগ্র দেশবাসীর কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন। এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তার ‘বসন্ত’ নাটকটি কবির নামে উৎসর্গ করেন। তাকে হুগলি জেলে স্থানান্তর করা হয়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল হুগলি জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন। শরীরের ওজন প্রায় ১৩ কেজি কমে যায়। এভাবে নজরুল একটানা অনশন করে যান ৩৯ দিন।

ওই সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং নজরুলকে চিঠি লিখে অনশন ভঙ্গ করার অনুরোধ জানান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিলং থেকে এ বিষয়ে তাকে টেলিগ্রাম পাঠান। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- give up hunger strike. Our Literature claims you . কিন্তু টেলিগ্রামটি নজরুলের হাতে পৌঁছয়নি। জেল কর্তৃপক্ষ  Address is not found লিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে টেলিগ্রামটি ফেরত পাঠায়। জেল কর্তৃপক্ষ প্রকৃত ঠিকানা জানলেও ইচ্ছা করেই টেলিগ্রামটি নজরুলের কাছে না পাঠিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে ফেরত পাঠায়। রবীন্দ্রনাথ এ ঘটনায় দারুণ মর্মাহত হন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও নজরুলের অনশনে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ৩৯ দিন পর কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে তারই হাতে লেবুর রস পান করে নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন।

সর্বশেষ খবর