শিরোনাম
বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল

সাইফ ইমন

বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনাঞ্চল

সবচেয়ে বড় আমাজন

লাখ লাখ মাইলজুড়ে বিস্তৃত আমাজন বনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই রেইন ফরেস্ট নিয়ে যতই দিন যাচ্ছে, না জানার বিষয়গুলো যেন ততই বেরিয়ে আসছে। এই বনের উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য পৃথিবীর দ্বিতীয় কোথাও নেই। তা বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করে নিয়েছেন। আমাজন এতই বিশাল যে, এর বুকের ভিতরের বহু জায়গা দেখা হয়নি আজো। শুধু ভূখন্ডের কথা চিন্তা করেই এটা বলা যায়, নদীপথের দিকে তাকালে সে পরিমাণ এতই কম হবে যেন মনে হবে আমাজনের প্রায় কিছুই আমরা জানি না। প্রতি বছর বহু পর্যটক সেখানে যান। তবে আমাজনের রহস্য বের করে নিতে যেসব প্রাণীবিজ্ঞানী, উদ্ভিদ-বিজ্ঞানী সেখানে যান তারা একেবারেই নতুন নতুন সব প্রজাতির সন্ধান নিয়ে আসেন। এমন সব জায়গায় অ্যাডভেঞ্জার করা হয় যেখানে এর আগে কেউ কোনো দিন যায়নি। এ জন্যই আমাজনকে বলা যায় চেনা এবং জানার মধ্যে অচেনা ও অজানার সম্ভার। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীবিধৌত অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল বনভূমি এ আমাজন ছেয়ে আছে ৭০ লাখ বর্গকিলোমিটার। ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকাটি মূলত আর্দ্র জলবায়ু বেষ্টিত। আমাজন অরণ্যের ৬০ ভাগ রয়েছে ব্রাজিলে, ১৩ ভাগ  রয়েছে পেরুতে এবং বাকি অংশ রয়েছে কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা সুরিনাম এবং ফরাসি গায়ানায়। পৃথিবীজুড়ে যে রেইন ফরেস্ট তার অর্ধেকটাই এই অরণ্য নিজেই। নানা রকম প্রজাতির বাসস্থান হিসেবে সমাদৃত এ আমাজন। বিশাল আমাজন বনের ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জলাশয়সহ বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী আমাজনে কমপক্ষে ৩ হাজার প্রজাতির মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বাস করে। আমাজন বন অজগর জাতীয় বিশাল সাপ অ্যানাকোন্ডাসহ শ্লথ, জাগুয়ার প্রভৃতির জন্য বিখ্যাত। সম্প্রতি বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যে নির্বাচনে প্রথম স্থান পাওয়া আমাজন বন প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে কার্বনডাই অক্সাইডকে অক্সিজেন রূপান্তর করে বলে এর পরিবেশগত গুরুত্বও কম নয়। আমাজনের গহিনে এমন জায়গাও রয়েছে যেখানে আজ পর্যন্ত মানুষের পা পড়েনি একটিবারের জন্যও। ফ্রান্সিস দে ওরেলানা নামের স্প্যানিশ পর্যটকই প্রথম মানুষ যিনি আমাজন নদী ধরে পৌঁছে যান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এই রেইন ফরেস্টে। যার আয়তন ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার। এই বনের বুক চিরে বয়ে গেছে আমাজন নদী। যে নদী প্রতি সেকেন্ডে ৪.২ মিলিয়ন ঘন ফুট পানি ফেলে সাগরে। গোটা পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে আমাজন। যে কারণে আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। ছোট পোকা-মাকড় আর রং-বেরঙের পাখিতে সমৃদ্ধ এ বনের প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য গবেষকদেরও বিস্মিত করে। প্রায় ৪০০-এর বেশি আদিবাসীর বসবাস এ বনে। যাদের বেশির ভাগেরই আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এখনো আমাজনের বহু গহিন স্থানে মানুষের পা পড়েনি। সোনার শহরের খোঁজে শত শত বছর ধরে এ বনেই ছুটে এসেছেন অভিযাত্রীরা। নানা রহস্য আর রোমাঞ্চ আমাজনের আসল সৌন্দর্য।

 

ভয়ঙ্কর কঙ্গো রেইন ফরেস্ট

পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট ‘কঙ্গো রেইন ফরেস্ট’।

এ বনাঞ্চল সেন্ট্রাল আফ্রিকার ক্যামেরুন, নিরক্ষীয় গিনি, গ্যাবন, কেন্দ্রীয় আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রজুড়ে বিস্তৃত। আফ্রিকার লাখ লাখ মানুষের জীবিকার জোগান দিচ্ছে এ কঙ্গো রেইন ফরেস্ট। বিশেষত গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এ রেইন ফরেস্টের ওপর নির্ভর করে তাদের খাবার, আশ্রয় এবং ওষুধের জন্য।

১.৫ মিলিয়ন বর্গমাইলজুড়ে অবস্থিত এ রেইন ফরেস্টটি পৃথিবীর সব রেইন ফরেস্টের সম্মিলিত আয়তনের ১৮ ভাগ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী কঙ্গো এ রেইন ফরেস্টের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে এ অরণ্যের  গরিলা ও বনোবোর মতো অনেক প্রাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বৃক্ষ নিধনের হার এখানে অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও কঙ্গো রেইন ফরেস্টের ইকোসিস্টেম অনেক দুর্বল। এর প্রধান কারণ হতে পারে বাণিজ্যিকভাবে কাঠ সংগ্রহ, কৃষিকাজের জন্য বন উজাড়, গাছ কেটে রাস্তা তৈরি ইত্যাদি। আতঙ্কের বিষয় এ রেইন ফরেস্টের ৫০ মিলিয়ন হেক্টর অঞ্চলকে কাঠ সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। যার ফলে অনুমান করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ কঙ্গো রেইন ফরেস্টের ৩০ ভাগ বিলীন হয়ে যাবে যদি না বৃক্ষ নিধনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় বা বাণিজ্যিক কাঠ সংগ্রহ কমানো হয়। জীববৈচিত্র্যে অনন্য এ রেইন ফরেস্ট। এখানে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ ৪০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৭০০ প্রজাতির মাছ, এক হাজার প্রজাতির পাখি। এখানে যেসব বন্যপ্রাণী আছে তার মধ্যে পিগমি শিম্পাঞ্জি, বন্যহাতি, গরিলা, কঙ্গো ময়ূর, সাদা গ-ার, ওকাপি ও স্থল প্যাঙ্গোলিন অন্যতম। তবে এসব প্রজাতির মধ্যে অদ্বিতীয় প্রজাতি হচ্ছে ওকাপি। এটি দেখতে কিছুটা জেব্রার মতো। এ অরণ্যে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ হাজার ওকাপি রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

পৃথিবীর আর কোথাও এই বিরল প্রাণী নেই। এই প্রাণীর আকার জিরাফের মতো হলেও এরা অনেক ছোট আকৃতির। এর গায়ের রং বাদামি। এর লেজের কাছে ও পেছনের পায়ে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ আছে। দেহের তুলনায় গলাটা এদের বেশ লম্বা, যদিও জিরাফের মতো অতটা লম্বা নয়। এর মাথার গড়নও অনেকটা জিরাফের মতো। শুধু তাই নয়, পুরুষ ওকাপির মাথার ওপরে জিরাফের তথাকথিত দুটো শিঙের মতো ১.৫ সে.মি উপবৃদ্ধি দেখা যায়। মাথায় দুটো বড় বড় কান, এ জন্য এর শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। ওকাপি সাধারণত জোড় বেঁধে নতুবা একাকী বনের মধ্যে বিচরণ করে এবং গাছের মগডালের কচি পাতা খেয়ে জীবনধারণ করে। ওকাপির বিষ্ঠা পরীক্ষা করে দেখা যায়, এরা বজ্রপাতে পুড়ে যাওয়া গাছের কয়লাও ভক্ষণ করে থাকে।

এ ছাড়াও এই অরণ্যের অনেক বড় একটা অংশজুড়ে বিচরণ করছে মাংসাশী আফ্রিকান চিতাবাঘ। নির্জনবাসী, শক্তিশালী ও ক্ষিপ্রগতির এ চিতাবাঘ টিকটিকি থেকে শুরু করে পাখি, কৃষ্ণসার, মহিষের বাছুর পর্যন্ত সব কিছু শিকার করে। চিতাবাঘের চেয়ে আকারে ছোট কিন্তু অনেক ভয়ানক আরেকটি মাংসাশী প্রাণী হলো আফ্রিকান সোনালি বিড়াল। এরা আফ্রিকার অন্যতম সংকটাপন্ন বানর প্রজাতি। আফ্রিকান হাতির দাঁতের মূল্য সাভানা অঞ্চলের হাতির দাঁতের তুলনায় অনেক বেশি। অতুলনীয় জীববৈচিত্র্য আর হাজার হাজার প্রজাতির আবাসস্থল কঙ্গো অরণ্যের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি; বিশেষ করে কেন্দ্রীয় আফ্রিকার জনগণ ও প্রাণীকুল যারা খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য এ অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল।

 

কিনাবালু ন্যাশনাল পার্ক

মালয়েশিয়ার প্রথম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হলো কিনাবালু ন্যাশনাল পার্ক। এই এশিয়ান ফরেস্ট হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম একটি প্রাকৃতিক অরণ্য। এখানে সারা বছর তাপমাত্রার খুব একটা তারতম্য হয় না। দুর্ভাগ্যবশত এ বনাঞ্চলগুলো অতীতে যে রকম ঘন ছিল বর্তমানে সে রূপ আর দেখা যায় না। যা সংরক্ষণ বিভাগের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয়। বিভিন্ন প্রজাতির পক্ষীকুল, স্তন্যপায়ী প্রাণী, অ্যামফিবিয়ান এবং সরীসৃপদের বাসস্থান এ বনভূমি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ইকো-সিস্টেমের অংশ হলো এশিয়ার এ বনভূমি। এ রেইন ফরেস্টের জলবায়ু মোটামুটি স্থির থাকে এবং সারা বছরের গড় তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলোর পূর্ব উপকূলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে এ অঞ্চলগুলোতে শীতকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

 

ভালদিবিয়ান রেইন ফরেস্ট

রেইন ফরেস্ট বা অতিবৃষ্টি অরণ্য হচ্ছে সেই সব অরণ্য যেখানে সারা বছর প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেস্টগুলোতে বছরে গড়ে ২৫০ থেকে ৪৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ‘পৃথিবীর রত্ন’ বা ‘পৃথিবীর বৃহত্তম ঔষধালয়’ বলা হয়ে থাকে এই গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইন ফরেস্টগুলোকে। কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার মাঝখানে নিরক্ষীয় অঞ্চলে মূলত বেশিরভাগ রেইন ফরেস্ট অবস্থিত। এ রেইন ফরেস্টগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, সাবসাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, কেন্দ্রীয় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপে অবস্থিত। এমনই একটি পৃথিবীর বৃহত্তম রেইন ফরেস্ট ‘ভালদিবিয়ান রেইন ফরেস্ট’। এটা দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত।

চিলি এবং আর্জেন্টিনার বড় একটা অঞ্চলজুড়ে এর বিস্তৃতি। এটা নিউট্রপিক্যাল ইকোজোনের অন্তর্ভুক্ত। এ গহিন অরণ্যের নামকরণ করা হয়েছে ভালদিবিয়া শহরের নামানুসারে। বাঁশ, ফ্রেন্স ও চিরহরিৎ গাছের প্রাধান্য দেখা যায় এ বনাঞ্চলজুড়ে। এ বনভূমির পশ্চিমে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর আর পূর্ব দিকে রয়েছে আন্দিজ পর্বতমালা। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বনাঞ্চল।

 

 

ব্রাজিলের পান্তানাল

ব্রাজিলে বন বলতেই আমাজনের কথা অনেকে বলে ওঠেন। কিন্তু ব্রাজিলের পান্তানালের কথা কয়জন জানেন! পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম বন হচ্ছে পান্তানাল। সাধারণ পর্যটকদের কাছে ‘আন্ডাররেটেড’ এ জায়গাটি কিন্তু রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের কাছে অসম্ভব শিহরণ জাগানিয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ নিরক্ষীয় আর্দ্র বনভূমি পান্তানাল আয়তনে ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যের দ্বিগুণ! এ বিশাল বনটিতে বাস করে জাগুয়ার, পিউমার সঙ্গে জলের সব থেকে বড় শিকারি ‘অ্যালিগেটর’ কুমির। শুধু তা-ই নয়, গোটা দক্ষিণ আমেরিকার সব থেকে বড় বন্যপ্রাণীর সমাবেশ ঘটেছে এই পান্তানালের বনভূমিতেই! পিঁপড়াভুক দানবাকার এন্টিচার, আর্মাডিল্লোর সঙ্গে রয়েছে ‘মানুষখেকো’ পিরানহা মাছ, আছে যমদূতের সর্পকূলীয় প্রতিনিধি অ্যানাকোন্ডা। এখানে রয়েছে কাপুচিন বানর আর দুর্লভ লাখ টাকার হায়াসিন্থ ম্যাকাও পাখিরাও।

 

সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবনকে নিয়ে বাঙালির অহঙ্কার আকাশছোঁয়া। সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনাজুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- বনভূমি। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে। সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।

 

শ্রীলঙ্কায় সিংহরাজ

সিংহরাজ সংরক্ষিত বন হলো শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ স্থান। এই বন আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানরূপে স্বীকৃত। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) অনুযায়ী, সিংহরাজ দেশের প্রাথমিক গ্রীষ্মকালীন রেইন ফরেস্টের মধ্যে শেষ টেকসই বন। এই বনের ৬০%-এর বেশি বৃক্ষ সম্পূর্ণ স্থানীয় এবং বেশিরভাগই দুর্লভ বলে বিবেচনা করা হয়। এই পার্বত্য ও অদূষিত রেইন ফরেস্টটির দুর্লভ জীববৈচিত্র্যকে ব্যবসা-বাণিজ্যের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, একে ১৯৭৮ সালে বিশ্ব জীবমন্ডল সংরক্ষণ স্বীকৃতি ও ১৯৮৮ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সংরক্ষিত বনটির নামের অর্থ লায়ন কিংডম (সিংহের রাজ্য)। বনটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে মাত্র ২১ কি.মি (১৩ মাইল) এবং উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে মাত্র ৭ কি.মি (৪.৩ মাইল) লম্বা। কিন্তু জায়গাটি স্থানিকতা প্রজাতির উদ্ভিদ, উভচর প্রাণী, কীটপতঙ্গ, সরীসৃপ, পাখির জন্য স্বর্গস্বরূপ। ঘন সবুজ উদ্ভিদের কারণে, বন্যপ্রাণীকে শুকনো-স্থানের ইয়ালা জাতীয় উদ্যানের মতো এত সহজে দেখা যায় না। এখানে হাতি এবং চিতাবাঘও আছে।

সর্বশেষ খবর