শনিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিল গেটসকে হটিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী বার্নার্ড আরনল্ট

তানিয়া তুষ্টি

বিল গেটসকে হটিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী বার্নার্ড আরনল্ট
বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকা থেকে বিগত বছরগুলোতে কখনো মার্কিন সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে তৃতীয় স্থানে নামানো যায়নি। বরাবরই তিনি প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থানে থাকতেন। তবে এবার চিত্র ভিন্ন। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী বিল গেটসকে হটিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন ফ্রান্সের বিলাসবহুল পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বার্নার্ড আরনল্ট। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিলাস পণ্য কোম্পানি এটি।

 

পেশা জীবন

স্নাতক সম্পন্ন করার পর বার্নার্ড আরনল্ট ১৯৭১ সালে বাবার নির্মাণ কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে বাবাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, নির্মাণ কাজের চেয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বেশি লাভজনক। ফলে আগের কোম্পানি বিক্রি করে ফেরিনেল নামে নতুন কোম্পানি গড়ে তোলা হয়। কোম্পানিটি হলিডে অ্যাকোমোডেশনের কাজ করত। কর্মগুণে বার্নার্ড ১৯৭৭ সালে কেম্পানির সিইও হন। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৭৯ সালে দায়িত্ব নেন প্রেসিডেন্ট পদের। ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ১৯৮৭ সালে তিনি এলভিএমএইচ গড়ে বিলাস পণ্যের বাজারে প্রবেশ করেন। এর বদৌলতে ফ্যাশন শিল্পের সবচেয়ে বড় ধনীতে পরিণত হন তিনি। ২০১৮ সালে এলভিএমএইচের রাজস্ব আসে রেকর্ড ৫৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ৭০টি কোম্পানি নিয়ে এ শিল্প গ্রুপে রয়েছে ক্রিস্টিয়ান ডায়র, লুই ভুইট, ডম পেরিগনন চ্যাম্পেগন, টিএজি হিউয়ার এবং রিমওয়ার মতো নামিদামি ব্র্যান্ড।

ব্যক্তিগত জীবন

আরনল্ট দুইবার বিয়ে করেছেন। তার এক মেয়ে ও চার ছেলে রয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি অ্যানা ডিওয়াভ্রিনের সঙ্গে সংসার করেন। এই দম্পতির এক মেয়ে ডেলফাইন এবং এক ছেলে অ্যান্টোইন রয়েছে। আরনল্ট ১৯৯১ সালে কুইবেকের কানাডিয়ান পিয়ানোবাদক হেলেন মারসিয়াকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন ছেলে আলেকজান্দ্রি, ফ্রেডরিক এবং জিন রয়েছে। ডেলফাইন, আন্টোইন, আলেকজান্দেও এবং ফ্রেদারিকÑ সবাই তার ভাগ্নি স্টেফানি ওয়াটিন আরনল্টের সঙ্গে আরনল্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ব্র্যান্ডগুলোতে অফিশিয়াল ভূমিকা রয়েছে। 

নানাবিধ ব্যবসা

১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বার্নার্ড আরনল্ট বিভিন্ন রকম ব্যবসায় নিজের বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছিলেন। যেমন বো.কম, লিবার্টিশার্ফ এবং ইউরোপাথওয়েবের মাধ্যমে জিব্যাঙ্ক। এমনকি ১৯৯৯ সালে তিনি নেটফ্লিক্সেও বিনিয়োগ করেন। ২০০৭ সালে ব্লু ক্যাপিটাল ঘোষণা করেছিল যে, আরনল্ট ক্যালিফোর্নিয়ার সম্পত্তি ফার্মের সঙ্গে যৌথভাবে মালিকানাধীন কলোনি ক্যাপিটাল ফ্রান্সের বৃহত্তম সুপার মার্কেট খুচরা বিক্রেতা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাদ্য বিতরণকারী কেরেফোরের ১০.৬৯% অর্জন করেছে। ২০০৮ সালে তিনি ইয়ট ব্যবসায় প্রবেশ করেছিলেন এবং প্রিন্সেস ইয়ট ২৫৩ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে কিনেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রায় অভিন্ন পরিমাণের জন্য রয়েল ভ্যান লেন্টের নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন।

চ্যারিটি

তিনি সমাজের নানা কাজে নিজের উদারতার হাত প্রশস্ত করেছেন। সম্প্রতি নটর ডেম ক্যাথেড্রাল পুড়ে গেলে তার পরিবার ২০০ মিলিয়ন ইউরো দান করে।

চিত্র সংগ্রাহক

আরনল্টের সংগ্রহে পিকাসো, ইয়েভস ক্লিন, হেনরি মুর এবং অ্যান্ডি ওয়ারহোলের কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ফ্রান্সে শিল্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এলভিএমএইচ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। এলভিএমএইচ ইয়ং ফ্যাশন ডিজাইনারকে চারুকলা স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। প্রতি বছর বিজয়ীকে ডিজাইনারের নিজস্ব লেবেল তৈরি করতে এবং এক বছরের পরামর্শদাতাসহ একটি অনুদান দেওয়া হয়। ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি ফিলিপস দে পুরি অ্যান্ড কোম্পানির একটি শিল্প নিলামের মালিকানাধীন এবং প্রথম ফরাসি নিলামকার তাজানকে কিনেছিলেন। ২০০৬ সালে আরনল্ট লুই ভিটন ফাউন্ডেশনের বিল্ডিং প্রকল্প শুরু করেছিলেন। সৃষ্টি এবং সমসাময়িক শিল্পকে উৎসর্গীকৃত, বিল্ডিংটি স্থপতি ফ্রাঙ্ক গেরি ডিজাইন করেছিলেন। জার্ডিন ডি’অ্যাক্লিমেটেশন প্যারিসে ফাউন্ডেশনের জমকালো উদ্বোধনটি ২০ অক্টোবর-২০১৪-এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

খেতাব প্রাপ্তি

লজিয়ন ডি’হনিউরের কমান্ডার হন ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৭।

লজিয়ন ডি’হনিউর গ্র্যান্ড অফিসার হন ১৪ জুলাই-২০১১। গ্লে­াবাল করপোরেট নাগরিকত্বের জন্য উড্রো উইলসন পুরস্কার পান ২০১১ সালে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বাধিক চমৎকার আদেশের অনারারি নাইট কমান্ডার হন ২০১২ সালে। আধুনিক আর্টের সংগ্রহশালা ডেভিড রকফেলার পুরস্কার জেতেন ২০১৪ সালের মার্চে।

 

কে এই বার্নার্ড আরনল্ট

পৃথিবীর সব থেকে বড় লাক্সারি পণ্যের গ্রুপ অব কোম্পানি এলভিএমএইচ (লুই ভিটন মুয়েত হেনেসি)-র চেয়ারম্যান এবং সিইও হলেন এই বার্নার্ড আরনল্ট। এ সময়ের ফ্রান্সের সবচেয়ে ধনশালী ব্যক্তি। ওমেন’স ওয়্যারের মতে তাকে বলা হয়, ‘পোপ অব ফ্যাশন’। ফোর্বস পত্রিকা অনুযায়ী আরনল্ট ১৯৮৪ সালে এই লাক্সারি গুডস কোম্পানিতে পা রেখেছিলেন। তারপর তিনি টেক্সাইল গ্রুপে পা রাখেন। ব্লুমবার্গ বিলিওনিয়ার ইনডেস্কের তথ্য অনুযায়ী আরনল্টের সম্পত্তির পরিমাণ ১০৮ বিলিয়ন ডলার। এই সম্পত্তি নিয়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে বিল গেটসকে সরিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী হিসেবে নিজের জায়গা করে নেন। কনজুমার খাতের এই ফরাসির নিট সম্পত্তির পরিমাণ ছয় হাজার কোটি ৬০১ লাখ ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি টপ থ্রি-এর ক্লাবে যুক্ত হয়েছেন। তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। ৭০টির বেশি নামিদামি বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্য বেচাকেনা করেই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে আরনল্ট পরিবার। বার্নার্ড ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন ৫ মার্চ ১৯৪৯ সালে। তার বাবা জেন লিওন আরনল্ট ছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মালিক। ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০১৯ সালের বার্ষিক তালিকা অনুযায়ী বার্নার্ড আরনল্টের নেট সম্পদ ৭৬ বিলিয়ন ডলার। তার পাঁচ সন্তানের চারজনই এলভিএমএইচ সাম্রাজ্যের অংশ। তার মেয়ে ডেলফিন লুই ভুইটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এলভিএমএইচের নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাকেই এলভিএমএইচ সাম্রাজ্যের পরবর্তী উত্তরসূরি মনে করা হয়। বিশ্ব জয়ের উচ্চকাক্সক্ষা  থেকেই ১৯৮৭ সালে তিনি এলভিএমএইচ গড়ে বিলাস পণ্যের বাজারে প্রবেশ করেন। এ কোম্পানিটিকে গড়ে তোলার পাশাপাশি তিনি আরও অনেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন।

 

এলভিএমএইচ

লুই ভিটন মুয়েট হেনেসি- সংক্ষেপে এলভিএমএইচ ফ্রান্সের বহুজাতিক বিলাসবহুল পণ্য কংগ্লোমারেট। ১৯৭১ সালে শ্যাম্পেন (মদ) উৎপাদনকারী ফরাসি কোম্পনি মুয়েট অ্যান্ড চন্দন কনিয়াক মদ (ফরাসি ব্র্যান্ডি) উৎপাদনকারী হেনেসি একীভূত হয়ে মুয়েট হেনেসি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে আবার মুয়েট হেনেসি ফ্যাশন হাউস লুই ভিটনের সঙ্গে একীভূত হয়ে এলভিএমএইচ গঠিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পোশাক, কসমেটিক্স, ফ্যাশন একসেসরিস, অলঙ্কার, পারফিউম, স্পিরিট, ওয়াইনসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করে থাকে। এলভিএমএইচের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার ‘ক্রিটিয়ান জিয়ো’। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ারের স্বত্বাধিকারী। এছাড়া কোম্পানিটির ভোটিং রাইট ৫৯ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। এলভিএমএইচ একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। এটি ইউরোনেট ও সিএসি ৪০ কম্পোনেন্টে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। ২০১৫ সালে এলভিএমএইচের মোট রাজস্ব আয় ছিল ৩৫ দশমিক ৬৬৪ বিলিয়ন ইউরো। ওই সময়  কোম্পানিটির পরিচালন আয় ছিল দশমিক ৩৮৪ বিলিয়ন ইউরো। আর নিট আয় ছিল চার দশমিক এক বিলিয়ন ইউরো। এছাড়া ওই সময় কোম্পানিটির মোট সম্পদ ছিল ৫৭ দশমিক ছয় বিলিয়ন ইউরো এবং মোট ইকুইটি ছিল ২৫ দশমিক আট বিলিয়ন ইউরো। ফ্রান্সের প্যারিসে এলভিএমএইচের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বার্নার্ড আরনল্ট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যান্টোনিও ব্যালোনি। ২০১৫ সালের হিসাবে কোম্পানিটিতে এক লাখ ২০ হাজার কর্মী কাজ করছেন।

 

উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য

- ১৯৭১ সালে পড়াশোনা শেষে বার্নার্ড আরনল্ট পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। কিছুদিন পরই কোম্পানির কনস্ট্রাকশন ডিপার্টমেন্ট বিক্রি করে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা শুরু করতে তার বাবাকে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর  সেই প্রজেক্টের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন। বাবার মৃত্যুর পর ১৯৭৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হন।

- ‘বাসসাক’ টেক্সটাইল ফার্মের মালিক ক্রিশ্চিয়ান ডাইওর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর ফ্রেঞ্চ সরকার কারও হাতে ফার্মটি তুলে দিতে চান। বার্নার্ড আরনল্ট ১৯৮৪ সালে ফার্মটি কিনে অনেক শেয়ার আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি করে দেন। শুধু ক্রিশ্চিয়ান ডায়োর ব্র্যান্ড নামটি তার মালিকানাধীন রাখেন, যা এখনকার সময়ের নামি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

- ১৯৮১ সালে ফ্রেঞ্চ সোশালিস্ট গভর্নমেন্ট সম্পদশালীদের সম্পদের ওপর উচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স নির্ধারণ করে। তখন আরনল্ট দেখলেন কোম্পানির লোকসান হতে পারে। তাই  কোম্পানিকে বাঁচানোর জন্যে ৩ বছরের জন্য ফ্লোরিডায় ব্যবসা মাইগ্রেট করেন। যখন সরকার তাদের পলিসিতে পরিবর্তন আনে তখন তিনি ফিরে আসেন।

- বার্নার্ড নিজের বডি ফিটনেসের গোপন রহস্য হিসেবে টেনিস খেলাকে প্রাধান্য দেন। বার্নার্ড রজার ফেদেরারের একজন বড় ভক্ত। ফ্রান্সে কোনো টেনিস গেমস ওপেনিং তিনি মিস করেন না এবং তার প্রিয় খেলোয়াড়ের খেলা দেখতেও কখনো বাদ দেন না।

- আরনল্ট চিত্রশিল্পের অনেক কদর করেন। এমন কি তিনি বড় বড় অনেক শিল্পীর আর্ট এক্সিবিশন প্রোমোট করেছেন। তার মধ্যে ‘গ্র্যান্ড মন্ডে দি এন্ডি ওয়ারহোল’ এবং ‘পিকাসো এট লেস মেইত্রেস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইয়ং চিত্রশিল্পীদের প্রোমোট করার জন্য ‘এলভিএমএইচ অ্যাওয়ার্ড’- এর আয়োজন করেন। বিখ্যাত এবং শৌখিন এই বিজনেজ ম্যাগনেট একজন দক্ষ পিয়ানোবাদকও বটে।

 

 

তালিকায় তারা প্রথম ও তৃতীয়

জেফ বেজোস

বিশ্বের শীর্ষ ধনীর স্থান দখল করে রেখেছেন ই-কমার্স কোম্পানি অ্যামাজন শপ.কম-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং ওয়াশিংটন পোস্টের বর্তমান মালিক জেফ বেজোস। জুলাই ২০১৯ সালে ফোর্বসের তথ্যমতে বর্তমানে তার সম্পত্তির পরিমাণ ১২৫ বিলিয়ন ডলার। ঝুঁকি নিয়ে সফল হওয়ার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন জেফ বেজোস। ই-কমার্সের পথিকৃৎ জেফ বেজোসের জন্ম ১২ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে। তিনি পড়াশোনা করেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব প্রিন্সটনে কম্পিউটার সাইন্স ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। ১৯৯০ সালে ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম ‘ডি ই শ’-এর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু ৪ বছর পরই তিনি এই লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে অ্যামাজন প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন। প্রথমে তার গ্যারেজে অল্প কয়েকজন কর্মী নিয়ে নতুন কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরির কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তারা দুই বেডরুমের একটি অ্যাপার্টমেন্টে কাজ শুরু করেন। তারপর ধীরে ধীরে একটি পরীক্ষামূলক ওয়েবসাইট চালু করেন। পত্র-পত্রিকায় কোনোরকম বিজ্ঞাপন দেওয়া ছাড়াই প্রথম ৩০ দিনেই অ্যামাজন আমেরিকাসহ আরও ৪৫টি দেশে বই বিক্রি করে। দুই মাসের মধ্যেই অ্যামাজনের সাপ্তাহিক বিক্রির পরিমাণ ২০ হাজার ডলারে পৌঁছয়। ১৯৯৭ সালে অ্যামাজন বেটা টেস্টিং শেষ করে পাকাপাকিভাবে ব্যবসা শুরু করে। ১৯৯৮ সালে বেজোস বইয়ের পাশাপাশি সিডি ও ভিডিও টেপ বিক্রি শুরু করলেন। তারপর বড় বড় খুচরা বিক্রি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তির মধ্যদিয়ে একে একে পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, খেলনা ও অন্যান্য পণ্যও যোগ হলো। ২০১৩ সালে বেজোস ২৫ কোটি মার্কিন ডলারে পৃথিবীর অন্যতম সেরা একটি পত্রিকা, ওয়াশিংটন পোস্ট কিনে নেন।

 

বিল গেটস

১৯৯৫ থেকে ২০০৭ এবং ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান সফটওয়্যার নির্মাতা এবং সাবেক সিইও বিল গেটস। একাধারে এত বছর ধরে বিশ্বের শীর্ষ ধনী থাকা এই ব্যক্তি বর্তমানে অবস্থান করছেন তৃতীয় স্থানে। জুলাই ২০১৯ সালে ফোর্বসের তথ্যমতে বিল  গেটসের সম্পদের পরিমাণ রয়েছে ১০৭ বিলিয়ন ডলার। ১৯৭৫ সালে বিল গেটস এবং পল এলেন একসঙ্গে ‘মাইক্রোসফট’ কোম্পানির প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিসি কোম্পানির মর্যাদা পায়। ১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১.০ সংস্করণ প্রকাশ করে। বর্তমানে উইন্ডোজ পৃথিবীর একটি বিখ্যাত কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম। ২০০৯-২০১৪ এর মধ্যে তার মোট সম্পত্তি ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকায় পৌঁছয়। ২০১৩ থেকে ২০১৪ এর মধ্যে তার মোট সম্পত্তিতে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যোগ হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাবে তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। ২০০০ সালে তিনি ‘বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদত্যাগ করেন। বিল গেটস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর। বাবা উইলিয়াম হেনরি পেশায় ছিলেন উকিল আর মা চাকরি করতেন ইউনাইটেড ওয়ে নামক একটি প্রতিষ্ঠানে। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল তিনি বড় হয়ে বাপের মতোই উকিল হবেন। কিন্তু স্কুলে পড়ার সময় কম্পিউটারের প্রতি তার আগ্রহ জন্মে। তখন প্রথম প্রোগ্রাম তৈরি করেন ‘টিক ট্যাক টো’ যা কম্পিউটারের বিরুদ্ধে গেম খেলার জন্য ব্যবহার করত।

সর্বশেষ খবর