রবিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

কুখ্যাত পুলিশ অফিসার

জনগণকে রক্ষা করার ব্রত নিয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত হন পুলিশ অফিসাররা। কিন্তু সেই পুলিশই যদি জড়িয়ে পড়েন একের পর এক অপরাধে তখন নিরাপত্তার জন্য কোথায় আশ্রয় পাবে মানুষ! সিরিয়াল কিলার থেকে শুরু করে মাফিয়া ডন তথা সমাজের এমন কোনো অপরাধ নেই যাতে জড়িয়ে পড়েননি পুলিশ বাহিনীর অফিসাররা। আর একজন পুলিশ যখন অপরাধ করেন তাকে ধরে ফেলাও সহজ হয় না। কিন্তু সব কিছুরই একটা শেষ থাকে। অপরাধে জড়িয়ে পড়া কুখ্যাত পুলিশ অফিসারদের নিয়েই আজকের রকমারি...

সাইফ ইমন

কুখ্যাত পুলিশ অফিসার

ঘুষ খেয়ে নিন্দার মুখে শেরিফ

লি বাকা

পুরো নাম লিরয় ডেভিড লি বাকা। ১৯৪২ সালে জন্ম নেওয়া এই শেরিফ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ক্যালিফর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসের সাবেক এই শেরিফের ওপর অভিযোগ গুরুতর। তার আগে বলে নেই তার শেরিফ হয়ে ওঠার গল্পটা। লস অ্যাঞ্জেলেসের ৩০তম শেরিফ হিসেবে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার আগে শেরিফ ছিলেন শারম্যান ব্লক। ব্যালট ইলেকশনের আগের দিন তিন অফিস কক্ষে নিহত হয়েছিলেন। এর পরই শেরিফ হিসেবে দায়িত্বে আসেন লিরয় ডেভিড লি বাকা। তিনি দ্বিতীয়বার শপথ নেন ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিনি চতুর্থবারের মতো শপথ নেন ২০১০ সালে। কিন্তু তিনি সমালোচনার শিকার হন দুর্নীতির জন্য। তার আন্ডারে তিনি বহু লোক নিয়োগ দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তার প্রতি এমনকি ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছেন বলেও অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। এফবিআইয়ের তদন্তে তিনি বাধা দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হয়। সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি ছিল তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের কান্ট্রি জেল থেকে অনেক বন্দীকে জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের মে মাসে তাকে তিন বছরের জেল দেওয়া হয়। তবে আপিল করে বর্তমানে তিনি মুক্ত আছেন।

 

মাফিয়া ডনের রক্তবীজ

লুইস এপোলিটো

১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করা লুইস এপোলিটো জয়েন করেছিলেন নিউইয়র্ক পুলিশে। জনগণের সেবক হওয়ার মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে শপথ করেছিলেন দেশ এবং দেশের মানুষের কল্যাণে সারা জীবন কাজ করে যাওয়ার। সবকিছু এগোচ্ছিল সেভাবেই। কিন্তু মূল ঘটনা হলো এই লুইস জন্ম নিয়েছিলেন একটি মাফিয়া পরিবারে। পরিবার থেকেই অপরাধের প্রথম পাঠ সম্পন্ন করে লুইস। গেমবিনো ক্রাইম ফ্যামিলি নামে এই পরিবার নিউইয়র্কে কুখ্যাত আগে থেকেই। পরিকল্পিতভাবেই পুলিশে জয়েন করানো হয়েছিল। পুলিশে জয়েন করেই নিজ পরিবারের পক্ষে কাজ শুরু করে লুইস। এই মাফিয়া পরিবারের একজনও তখন পুলিশ ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছিলেন। পরিবারের এই দুজন মিলে গড়ে তোলেন অপরাধ সাম্রাজ্য। অবাধে মাদক কেনাবেচা, হত্যা সবই চলতে থাকে। আর পুলিশ ইনভেস্টিগেশনে নিজের পরিবারকে কৌশলে বাঁচিয়ে দিতেন এই লুইস। তার বিরুদ্ধে চার্জও আনা হয়েছিল। সে সময় পত্রিকার হেডলাইনও হয়েছিলেন এই অফিসার। ১৯৯২ সালে এই সাবেক পুলিশ অফিসার একটি বই লিখেন। যার নাম দেওয়া হয়েছিল মাফিা কপ : দ্য স্টোরি অফ অ্যান অনেস্ট কপ হোজ ফ্যামিলি।

 

নারী লোলুপতায় কাতর

স্টুয়ার্ট ওয়াংনার

পুলিশের পোশাক ব্যবহার করে বহু নারীকে নিজের কামনার শিকার করেছেন এই পুলিশ অফিসার। নারী ছিল তার কাছে ভোগ্যপণ্যের মতো। মানুষিকভাবে বিকৃত রুচির এই অফিসার নানা কায়দা করে তার টার্গেটকে ফাঁসিয়ে দিতেন। এমনকি যারা তার কাছে সাহায্য চাইতে আসতেন পুলিশ অফিসার হওয়ার কারণে তাদেরও ছাড় দিতেন না স্টুয়ার্ট ওয়াংনার। নানাভাবে নারীদের ধর্ষণ করেছেন তিনি। একবার এক বিধবা এসেছিলেন তার প্রতি অন্যায়ের বিচার চাইতে। সেই নারীকে আশ্বাস দিয়ে এই নরপিশাচ নানা সময় ধর্ষণ করেছিলেন। স্কুলের বাচ্চা মেয়ে থেকে শুরু করে চল্লিশোর্ধ নারী কেউই রক্ষা পেত না। ধর্ষণ করার পরেও নানাভাবে হুমকি দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করতেন তিনি। কিন্তু সবকিছুরই একটা শেষ আছে। এই নরপশুর বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাকে মিথ্যা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে ফাঁসিয়ে দিতেন স্টুয়ার্ট। একবার এমনি একটি কেসে সবার নজরে আসে প্রথম। পুলিশ ডিপার্টমেন্ট প্রথমে স্বীকার করতে না চাইলেও সব সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তাকে আইনের আওতায় আনা হয়। সব অপরাধ স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে এবং ভিকটিমরা মুখ খুলতে না চাওয়ায় খুব বেশি শাস্তি পাননি স্টুয়ার্ট ওয়াংনার। 

 

বন্ধুকে খুন করে শুরু

টেরি হেইডেন

সুইডিশ সিরিয়াল কিলার টরি হেইডেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে চুরি করে অপরাধ জগতে পা রাখেন। ওটস চুরি করে অপরাধ জীবন শুরু করার এমন নজির হয়তো আর কোথাও পাওয়া যাবে না। স্থানীয় একটি দোকানে শুধু ওটস চুরি করেই খ্যান্ত হননি। ধরা পড়ার ভয়ে দোকানে আগুন ধরিয়ে দেন। পুলিশও কোনো রকম ক্লু না পাওয়ায় সে যাত্রায় হেইডেন বেঁচে যান। এর ঠিক আট বছর পর ১৯৫১ সালে অত্র শহরের পুলিশ অফিসার হিসেবে হেইডেনকে নিযুক্ত করার জন্য একটি মিছিল বের করে তার মতোই কয়েকজন তরুণ। মিছিল শেষ করে হেইডেন তার বন্ধুকে খুন করে খুনির খাতায় নাম ওঠায়। পোকার (জুয়া) খেলতে গিয়ে বন্ধু জন অ্যালান নিলসনকে খুন করেন। এবারও আগেরবারের মতো তথ্য-প্রমাণ মুছে দিতে আগুন ধরিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, ওই হত্যাকান্ডের তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনিই নিযুক্ত হন। হত্যাকান্ডের তথ্যের অগ্রগতি জানিয়ে জাতীয় টেলিভিশনে নিজেই সাক্ষাৎকার দেন। এর এক বছর পর হেইডেন তার বান্ধবী উলা অস্টবার্গকে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করায় খুন করেন। উলা তখন তার মায়ের সঙ্গে বেডরুমে ঘুমিয়ে ছিলেন। কুড়াল দিয়ে আঘাত করে দুজনকেই মেরে ফেলে হেইডেন। এরপর বাড়ির সব দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেন তিনি। এর আগে রাগী হেইডেনের খুনের উন্মাদনার শিকার হন বাবা-মাও। নিজ বাড়িতে বাবা-মা দুজনকেই খুন করে তথ্য ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার জন্য আগুন ধরিয়ে দেন। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের পর পালিয়ে যান হেইডেন। স্থানীয় পুলিশের ততক্ষণে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, সব কটি হত্যাকান্ডের পেছনে হেইডেনেরই হাত ছিল। স্থানীয়রা ম্যানহান্ট নামে এক কর্মসূচি করে দ্রুত হেইডেনকে ধরার পরিকল্পনা করে। তার কিছুদিন পর পাশের লেকের রাস্তায় হেইডেনের গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় মেলে। তাতে একটা নোটে লেখা ছিল, ‘অন্য অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব বুঝতেই নিজে খুন করে। আর বাবা-মাকেও নিজ হাতে মেরে ফেলেছে, যাতে তার অপরাধে ভবিষ্যতে তাদের ভুগতে না হয়।’ পুলিশ লেকের পানি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।

 

ধর্ষণ করে হত্যা

জন ক্রিস্টি

পুলিশ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরুর কথা ছিল না জন ক্রিস্টির। চুরি, রাহাজানি আর সহিংসতাই ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। এই অপরাধগুলোর জন্য তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও ঝুলছিল কয়েকটি। এমনকি তিনি কিছুদিনের জন্য তাকে জেলের ঘানিও টানতে হয়েছে। কিন্তু তিনি এসব পাত্তা না দিয়ে যুদ্ধের সময়ের সুযোগকে কাজে লাগান। তখন সরকার রিজার্ভ পুলিশ নিয়োগ দিচ্ছিল। সে সুযোগে ক্রিস্টিও পুলিশে যোগ দেন। এখানে তার দায়িত্ব ছিল খুবই দক্ষতার এবং বিশ্বাসযোগ্যতার। কিন্তু তিনি তা দেখাতে পারেননি কখনই। এর পরই খুনি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ক্রিস্টির। চাকরি জীবন শুরু করেই রুথ ফুয়েরেস্ট নামের এক যৌনকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ক্রিস্টি। এক রাতে রুথকে খুন করে তার বাড়ির বাগানেই দাফন করে দেন। এতে নারীদের খুন করার প্রতি তার এক ধরনের নেশার উদ্রেক ঘটে। যার ফলে পরবর্তী শিকার হন প্রতিবেশী মুরিয়েল এডি। ক্রিস্টির অবশ্য একটি ভালো গুণও ছিল। তিনি ডাক্তারি নিয়ে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ফলে মুরিয়েলকে সহজেই পটিয়ে ফেলেন। চিকিৎসা করার নাম করে মুরিয়েলের ইনহেলারে কার্বন মনোক্সাইড ঢুকিয়ে দেন ক্রিস্টি। বেহুঁশ মুরিয়েলকে ধর্ষণ করে হত্যার পর রুথের পাশেই দাফন করে দেন। একই লালসার শিকার হন আরেক প্রতিবেশী বেরিল ইভান্স। বেরিল এবং তার স্বামী টিমোথি চাচ্ছিলেন তাদের অনাগত সন্তানের ভ্রƒণ নষ্ট করে দিতে। এখানেও ক্রিস্টি ডাক্তারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বেরিলকে ধর্ষণ করে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলেন। বেরিলেরও শেষ ঠিকানা হয় একই বাগানে। সে যাত্রায় বেরিলের বোকা স্বামীকে হাবিজাবি বলে বোঝান। এরপর থেকেই ক্রিস্টির যৌন লালসার শিকার হন আরও তিনজন পতিতা। তাদেরও আগের তিনজনের মতোই ভাগ্য বরণ করে নিতে হয়। একের পর এক খুন করে ক্রিস্টি বার বার পার পেয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ক্রিস্টি তার নিজের স্ত্রীকেও খুন করেন। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় তাদের মৃতদেহগুলো লুকিয়ে রাখে তিনি। পরে লন্ডন থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৯৫৩ সালে আদালত এই সিরিয়াল কিলারের মৃত্যুদ- কার্যকর করে।

 

নেশায় বুঁদ হয়ে চাকরি হারান

ম্যাকডোনাল্ড

আমেরিকান ম্যাকডোনাল্ডের জীবনটা অপরাধ দিয়ে শুরু হয়নি। একজন এডুকেটর এবং ইন্টারপ্রেনার হিসেবে জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে নানা রকম অপরাধে জড়িয়ে পড়েন জর্জিয়া পুলিশের সাবেক এই অফিসার। তিনি পিসফুল নানা স্ট্রিট পয়েন্ট চালু করেছিলেন। যেখানে পুলিশের কর্মকান্ড রেকর্ড করা হতো। সুনামের সঙ্গে কাজ শুরু করলেও এই পুলিশ অফিসার নেশার কারণে নিজের চাকরি টিকিয়ে রাখতে পারেননি। ফলে নানা অপরাধেও জড়িয়ে যান তিনি। তিনি নারীদের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলিং করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ ডিউটিরত অবস্থায় কোনোভাবেই মদ জাতীয় কোনো কিছু পান করা যাবে না বলে আইন রয়েছে পুলিশদের জন্য। তিনি স্পষ্টতই আইনের কোনো তোয়াক্কা করতেন না। সারা বেলা তার অ্যালকোহল না হলে চলত না। এমনকি পুলিশের পোশাক পরে অন ডিউটি থাকা অবস্থাতেও তিনি নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। নিজের ইচ্ছা মতো ক্ষমতার অপব্যবহার করা, আগ্রাসী মনোভাব ইত্যাদি নানা অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

 

কোকেন ব্যবসায়ী

রে লোপেজ

১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া রে লোপেজ লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ডিপার্টমেন্টে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। শুরুতে সুনামের সঙ্গে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তিনি অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছিলেন। ছোটখাটো নানান অপরাধ দিয়ে শুরু হলেও তিনি জড়িয়ে যান বড় অপরাধের সঙ্গে। এভাবেই তিনি চাকরি করে যাচ্ছিলেন। ক্ষমতার দাপট ব্যবহার করে হাতিয়ে নিতে শুরু করেন অর্থ। এভাবে বিশাল প্রতিপত্তির মালিক বনে যায় এই পুলিশ অফিসার। কিন্তু একদিন তাকেও ধরা পড়তে হয়। অপরাধ করতে করতে একটা সময় রে লোপেজ সব বাধা ভেঙে ফেলেছিলেন। অবশেষে এলএপিডি রেমপার্ট স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েন। থলের খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করে এর পরেই একের পর এক। লস অ্যাঞ্জেলেসে কোকেন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন এই পুলিশ অফিসার। মাদক সংগ্রহ করতেন এবং উঠতি বয়সের তরুণদের কাজে লাগাতেন এই অফিসার। একদিন তার গ্রুপের এক মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লে সব বলে দেন তিনি। কিন্তু রে লোপেজ সব অস্বীকার করেন। কিন্তু বেশি দিন নিজেকে বাঁচাতে পারেননি। ইনভেস্টিগেশনে বেরিয়ে আসে সব সত্য।

 

দুর্নীতির অভিযোগে কমিশনার

জ্যাকি সেলেবি

পুরো নাম জ্যাকব সেলো সেলেবি। ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া সাউথ আফ্রিকার সাবেক এই পুলিশ কমিশনারের বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ। ফলে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে নানা খবর। আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেস ইয়ুথলিগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। এমন কি তিনি ইন্টারপোলের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসর নিয়েছিলেন। এরপরই তার নানা রকম দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হতে থাকে। সাবেক এই কমিশনারের ওপর অভিযোগ গুরুতর। তার আন্ডারে তিনি বহু লোক নিয়োগ দিয়েছেন। স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছেন বলেও অনেক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাতীয় নানা ইস্যু নিয়েও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০১০ সালের আগস্ট মাসে তাকে ১৫ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। তখন গোটা বিশ্বের গণমাধ্যম তাকে নিয়ে সরব হয়ে উঠেছিল। আদালতে এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তবে তিনি প্যারোলে মুক্তি পান অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ২০১২ সালে। 

 

২২ জন নারী হত্যাকারী

মিখাইল পোপকভ

মিখাউল পোপকভ এক আতঙ্কের নাম। ছোটবেলা থেকেই নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বড় হন মিখাইল। তার মায়ের প্রতি ছিল অনেক ঘৃণা। তার মা তার ওপর অনেক অত্যাচার করতেন বলে জানা যায়। সেই থেকে বড় হওয়ার পর নারীদের প্রতি অত্যাচারী হয়ে ওঠেন মিখাইল পোপকভ। পুলিশ ডিপার্টমেন্টে জয়েন করে তিনি তার অদম্য কলুষিত ইচ্ছা পূরণ করতে শুরুর করেন একের পর এক নারী খুন করার মধ্য দিয়ে। প্রথমে তিনি তার টার্গেট নির্বাচন করতেন। পুলিশের পরিচয় দিয়ে আস্থা অর্জন করে হত্যাকান্ডে লিপ্ত হতেন তিনি। অনেক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে তোলেন মিখাইল কোভ। তারপর নিজের ফাঁদে ফেলেন। নিজের মায়ের সঙ্গে চেহারায় মিল আছে এমন নারী দেখলেই তার মাথায় রক্ত চড়ে যেত। তারপর প্ল্যান করতেন তিনি। টার্গেটের ঠিকানা জোগাড় করে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে প্রথমে করতেন প্রেমের সম্পর্ক। এভাবেই ভিকটিমের কাছাকাছি হতেন তিনি। ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তার অত্যাচারী মায়ের সঙ্গে চেহারায় মিল আছে এমন সব নারীকে টার্গেট করতেন মিখাইল। স্ক্রু ড্রাইভার, কুড়াল কিংবা ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন তিনি ভিকটিমের ওপর। ছিন্নভিন্ন লাশগুলোকে ধর্ষণ করে ফেলে দিয়ে আসতেন রাশিয়ার আঙ্গারস্ক জঙ্গলে। অন্তত ২২ জন নারীকে হত্যা করেছেন মিখাইল। তবে অনেকের দাবি সংখ্যাটি ৩০ এরও বেশি হতে পারে। হত্যার নৃশংসতায় বাধ্য হয়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে মিখাইলকে ‘ওয়ারউলফ নামে আখ্যা দেয় সাংবাদিকরা। সেই ঘটনায় শহরব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। প্রায় দুই দশক ধরে নিজের পরিচয় লুকিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন তিনি একটার পর একটা। পুলিশের চাকরি করায় তাকে কেউ সন্দেহও করত না। একবার তার এক শিকার কোনো মতে প্রাণে বেঁচে গিয়ে তাকে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। ২০১২ সালে বাধ্যতামূলকভাবে সব পুলিশ অফিসারের ডিএনএ পরীক্ষা করা হলে ধরা পড়ে যান মিখাইল। যৌনরোগে আক্রান্ত হয়ে নপুংসক হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু পুলিশি তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হলে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

 

ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার

ক্রিস্টোফার জর্ডান

ক্রিস্টোফার ভালো পুলিশ অফিসার হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করলেও এক সময় হয়ে ওঠেন ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার। অবশ্য এর জন্য নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ক্রিস্টোফার। তার এই সিরিয়াল কিলার জীবনের সূচনা হয় তিনি পুলিশ বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে। ঘটনা হলো- এক আসামিকে গ্রেফতারের সময় অপর একজন পুলিশ অফিসারকে অহেতুকভাবে জোরাজুরি করায় তাকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ক্রিস্টোফারের মতে, তার সঙ্গে ঘোরতর অন্যায় করা হয়েছিল। তবে এই কারণে তিনি সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠবেন এটা ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া সেই অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে মাঠে নামেন ক্রিস্টোফার। সেই সঙ্গে হয়ে ওঠেন কুখ্যাত এই সিরিয়াল কিলার। ক্রিস্টোফারের হাতে খুন হওয়া প্রথম দুই ব্যক্তির নাম মনিকা কোয়ান এবং কিথ লরেন্স। তাদের বেশ কিছুদিন ফলো করেন প্রথমে। এভাবে ফলো করার মধ্য দিয়ে সুযোগ খুঁজতে থাকেন ক্রিস্টোফার। এক সময় সুযোগ পেয়েও যান। একদম কাছ থেকে গুলি করে মেরে ফেলা হয় তাদের। দুজনের কেউই ক্রিস্টোফারের পরিচিত ছিল না। কিন্তু মনিকার বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। এই জন্যই খেসারত দিতে হয় মেয়েকে। ভয়ঙ্কর এই খুনি তার ইশতেহার ছাপায় ফেসবুকে। কাকে কাকে খুন করা হবে তার তালিকা প্রকাশ করে। এরপর কয়েক দিন এলোপাতাড়ি হত্যাযজ্ঞ চালান তিনি, তাতে চারজন নিহত হন এবং দুজন মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনার পর টনক নড়ে পুলিশ বাহিনীর। পুলিশ কর্তৃপক্ষ আবারও তার বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনা করে দেখবে বলে জানায়। গণমাধ্যমে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ক্রিস্টোফারকে দলে ফিরে পেতে প্রস্তুত তারা। এর মধ্যে ক্রিস্টোফারকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা এবং ম্যানহান্টের ব্যবস্থা করে তারা। কিন্তু সহজেই বুঝে ফেলেন এটা একটা ফাঁদ। তাই এই ফাঁদে পা দেন না ক্রিস্টোফার। উল্টো অফিসার মাইকেল ক্রেইন এবং তার সহকর্মীকে খুন করে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন ক্রিস্টোফার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর