শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাক্তার যখন সিরিয়াল কিলার

তানিয়া তুষ্টি

ডাক্তার যখন সিরিয়াল কিলার

সুস্থ থাকার প্রয়াশ থাকে সবার। কিন্তু দেহযন্ত্র কি আর আপনার কথা শোনে? মাঝে মাঝেই সে বিগড়ে যায়। আর তখনই নির্ভরতা চলে যায় বিজ্ঞ ডাক্তারের ওপর। তাদের নির্দেশনা আর ব্যবস্থাপত্র হয়ে যায় আপনার বিশ্বাস-আস্থার নিরাপদ স্থল। কিন্তু এই বিশ্বাস আর আস্থা পুঁজি করে কখনো কখনো কোনো ডাক্তার হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলারদের একজন। একের পর এক রোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়ে হার মানান গল্প-উপন্যাসকে। বিশ্বের এমন কিছু সিরিয়াল কিলার ডাক্তার নিয়ে আজকের রকমারি আয়োজন।

 

হ্যারল্ড ফ্রেডরিক শিপম্যান

রোগীর শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে ডায়ামরফিন ঢুকিয়ে খুন করা ছিল শিপম্যানের নেশা।

 

পেশা মানবতার সেবা হলেও ভয়ানক এক হত্যাকারী ছিলেন ডাক্তার হ্যারল্ড শিপম্যান। ১৯৪৬ সালের ১৫ জানুয়ারি নটিংহামের এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্ম এই হ্যারল্ডের। যুদ্ধবিধ্বস্ত শ্রমজীবী বাবার সামান্য আয়, অভাবের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত মা ভেরা ভেট্রনকে দেখেছেন ব্যথা কমানোর জন্য প্রতিদিন মরফিন ইনজেকশন নিতে। ১৭ বছর বয়সে হারিয়ে ফেলেন মাকে। তবে প্রতিকূলতার মাঝেও পড়াশোনা ও খেলাধুলায় শিপম্যান ছিল এগিয়ে। ১৯৭০ সালে লিডস্ থেকে ডাক্তারি পাস করে ইয়র্কশায়ারে পোর্টফ্রেট জেনারেল ইনফরমারিতে কাজ শুরু করেন। আশির দশকের শুরুতে হাইড শহরে ডাক্তারি চেম্বার দিয়ে জাঁকিয়ে বসেন হ্যারল্ড। নাম-ডাক, প্রভাব প্রতিপত্তিও হয়েছিল বেশ। কিন্তু ছেলেবেলার কষ্টগুলো তাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করত। মনের গহিনে অপরাধমূলক প্রবৃত্তির অঙ্কুরটি দিন দিন বিস্তার লাভ করতে থাকে। এর মাঝেই নিয়মিত রোগী দেখা চলে। তবে আগত রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল তুলনামূলক বেশি। সবকিছুই হতে থাকে অত্যন্ত সন্তর্পণে, কোনো প্রমাণ ছাড়াই। কিন্তু একদিন তো ধরা খেতেই হয়। ২০০০ সালের ৩১ জানুয়ারি ১৫ জনকে হত্যা এবং ক্যাথলিন গ্রান্ডির উইল জাল করার দায়ে জুরি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে। আদালত শিপম্যানকে পনেরোটি খুনের দায়ে আজীবন কারাদ-ে দ-িত করে। হ্যারল্ডের অধীনে থেকে মারা যাওয়া ১৫টি লাশের শরীরের ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, সবার শরীরে অতি মাত্রায় ডায়ামরফিন রয়েছে। রোগীর শরীরে অতিরিক্ত ডায়ামরফিন ঢুকিয়ে খুন করা ছিল শিপম্যানের নেশা। পরে মেডিকেল রিপোর্ট জাল করে নানা ধরনের অসুখের কারণ দেখিয়ে তাদের ডেথ সার্টিফিকেট দিতেন। তার সাজা ১৫ খুনের হলেও সে সময়কার আরও অনেক খুনেরই কিনারা করা যায়নি। জেলখানায় থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালের ১৩ জানুয়ারি শিপম্যান আত্মহত্যা করেন।

 

এইচ এইচ হোমস

মৃতদেহ অ্যাসিডে গলিয়ে, তাদের কঙ্কাল বিভিন্ন মেডিকেল স্কুলে বিক্রি করেছেন হোমস।

 

যেমন তুখোড় তেমন অমায়িক। শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের ডাক্তার এইচ এইচ হোমস। পাড়ার ফার্মেসির ওপর তিনতলা বিশাল এক ভবনে থাকতেন তিনি। নিজ হাতে গড়া ভবনের বাহ্যিক দৃশ্য নয়নজুড়ানো, কিন্তু ভিতরে তার মৃত্যুপুরী। এটি ‘বিস্ট অফ শিকাগো’ নামে পরিচিত এই সিরিয়াল কিলারের অস্ত্র। আটক হওয়ার পর হোমস ২৮ জনকে হত্যা করার কথা শিকার করলেও ধারণা করা হয় তার শিকারের সংখ্যা ২০০ জনেরও বেশি। হোমস মূলত দুইভাবে তার শিকারদের ফাঁদে ফেলতেন। প্রথমত, কলাম্বিয়ান এক্সপোজিশন উপলক্ষে আগত পর্যটকদের কামরা ভাড়া দিয়ে। দ্বিতীয়ত, খবরের কাগজে চাকরি অথবা বিয়ের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নারীদের আকৃষ্ট করতেন। নিখোঁজ নারীদের আত্মীয়-স্বজন কেউ এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সুবক্তা হোমস তাদের খুব সহজেই নানাবিধ অজুহাত দেখিয়ে ধোঁকা দিতে পেরেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে, সেই নিখোঁজ হওয়া মানুষদের তখন নৃশংসভাবে দালানের সেলারে হত্যা করা হচ্ছে। তারপর তাদের মৃতদেহ অ্যাসিডে গলিয়ে, তাদের কঙ্কাল বিভিন্ন মেডিকেল স্কুলে বিক্রি করেছেন হোমস। হোমসের হাত থেকে রেহাই পায়নি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বেঞ্জামিন পিটেজেল, রেহাই পায়নি পিটেজেলের নাবালক পাঁচ সন্তানও। ১৮৯৪ সালে ভুয়া বীমা ব্যবসার জন্য হোমস দুইবার আটক হন। এ সময়ে ফিলাডেলফিয়ার গোয়েন্দা ফ্র্যাংক পি গেয়ারের তদন্তে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে হোমসের রোমহর্ষক অপরাধের কথা।

এইচ এইচ হোমসের আসল নাম হারমান ওয়েবস্টার মাজেট। ১৮৬০ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত তুখোড় ছিলেন তিনি। সার্জারিতে আকর্ষণ থাকায় চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে লেখাপড়া করেন ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানে। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি লাশ চুরি করে তা ভুয়া ইন্স্যুরেন্স দাবির জন্য ব্যবহার করতেন। কথিত আছে, তিনি এ মরদেহের ওপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন। নিজ স্ত্রী এবং সন্তানকে পরিত্যাগ করে ১৮৮৫ সালে মাজেট পাড়ি জমান শিকাগোতে, নাম পাল্টে রাখেন হেনরি এইচ হোমস। নতুন পরিচয়ে হোমস আসেন এঙ্গেলউডে, পেশায় তিনি চিকিৎসক, উদ্যোক্তা এবং পরবর্তীতে নৃশংস এক খুনি।

 

সন্তোষ পাল

উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করে ওই ছয়জনকে হত্যা করেন ‘সিরিয়াল কিলার’

 

ভারতে মহারাষ্ট্রের সিরিয়াল কিলার ডাক্তার সন্তোষ পাল। তিনি মিস্টার ডেথ নামেও পরিচিত। ডাক্তারের মতো মহৎ পেশায় থেকেও ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য একে একে খুন করেছেন পেশাদার খুনির মতো। ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ছয়জনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু সবগুলো খুন হয়েছে খুব গোপনভাবে। আর তাই খুনের ঘটনাগুলো সব সময় অধরাই থেকে গেছে। কিন্তু শেষ খুনের বেলায় ডাক্তার ধরা পড়েন পুলিশের জালে। ২০১৬ সালের আগস্টে এক স্বাস্থ্যসেবাকর্মী অপহরণ ও খুনের অভিযোগে ডাক্তার সন্তোষ পালকে গ্রেফতার করা হয়। তখন পর্যন্ত কেউ জানত না এই ডাক্তারের হাতে আগে আরও অনেকেই খুন হয়েছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ৪২ বছর বয়সী ওই ডাক্তার স্বীকার করেন, তিনি কেবল ওই এক নারীকেই খুন করেননি, আরও চার নারী এবং এক পুরুষকে হত্যা করেছেন। ডাক্তার হওয়ার কারণে এই খুনগুলো তার জন্য সহজ হয়। উচ্চমাত্রার বিষাক্ত ওষুধ প্রয়োগ করে ওই ছয়জনকে হত্যা করেন ‘সিরিয়াল কিলার’ সন্তোষ পাল। আর হত্যার পর ওই ছয়জনের মরদেহ তিনি নিজের খামারবাড়িতে পুঁতে ফেলেন। এই হত্যাকা-গুলো ২০০৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়। এসব হত্যাকা- ঘটানোর কারণ হিসেবে আবিষ্কার হয়েছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ও দেনা-পাওনাসংক্রান্ত বিবাদ। আর এসবের জেরে নিজের ডাক্তারি বিদ্যা কাজে লাগিয়ে খুনগুলো সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করে তদন্তকারীরা। ডা. সন্তোষ পালের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তার খামারবাড়ি থেকে চারটি দেহাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই ডাক্তারের সঙ্গে এসব হত্যাকা-ে এক নার্সও যুক্ত থাকতেন। পুলিশের অভিযোগ ছিল তার বাড়ির অদূরের পুকুর ও ঝোপঝাড় থেকে আরও কয়েকটি লাশ উদ্ধার হয়েছে সমসাময়িক সময়ে। এই খুনগুলো ডাক্তার সন্তোষ পাল করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেন তারা।

 

আরনফিন নেসেট

পেশি শিথিল করার ওষুধ স্যাক্সামেথোনিয়াম ক্লোরাইড ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছিলেন।

 

২২টি হত্যাকা-ের পাশাপাশি একাধিক হত্যাচেষ্টা, নথি জালিয়াতি এবং আত্মসাতের অভিযোগে আটক করা হয় নরওয়ের প্রাক্তন নার্স, নার্সিং  হোম ম্যানেজার আরনফিন নেসেটকে। অভিযোগ ছিল নেসেট ১৩৮ জনকে হত্যা করেছেন। ১৯৮৩ সালে তিনি ২২ রোগীকে বিষপ্রয়োগে দোষী সাব্যস্ত হন। ১৯৮১ সালে সিরি-ট্রেন্ডেলাগের অর্কডালের নার্সিং হোমে নেসেট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনায় তিনি বন্দী হন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আরনফিন নেসেট প্রাথমিকভাবে ২৭ জন রোগী হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন। তিনি পেশি শিথিল করার ওষুধ স্যাক্সামেথোনিয়াম ক্লোরাইড ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেছিলেন তাদের। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে স্যাক্সামেথোনিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত ২২টি লাশের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় নেসেটকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একে একে তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ আসে। তিনি হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন আরও অনেকের ওপর। পরবর্তী সময়ে বিচারের রায়ে কিছু মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন এবং কিছু মামলায় খালাস পান। তবে তাকে ২১ বছরের কারাদ-ে দ-িত করা হয়েছিল কৃত অপরাধের জন্য। নরওয়ের আইনের অধীনে এটি ছিল সর্বাধিক মেয়াদে সাজা। আর তাই এই সময়ে তাকে ১০ বছর প্রতিরোধমূলক আটকে রাখা হয়। পরে তবে ভালো আচরণের জন্য ৬ বছর তদারকির পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি একটি অজ্ঞাত স্থানে বাস করেন বলে জানা যায়। তার বিচারের প্রধান প্রসিকিউটর ওলাফ জ্যাকেলন নেসেটকে একজন উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, যিনি জীবন ও মৃত্যুর ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন।

 

লিন্ডা হ্যাজার্ড

উপবাস করতে গিয়ে রোগীরা যখন দুর্বল হয়ে পড়ত তখন তাদের চেক জাল করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন

 

আমেরিকান সিরিয়াল কিলার ডাক্তার লিন্ডা বারফিল্ড হ্যাজার্ড। উপবাসের প্রচারের জন্য খ্যাতি পেয়েছিলেন। এক সময় মানুষ হত্যার মতো নিকৃষ্ট কাজেও জড়ান। খুনের দায়ে লিন্ডা হ্যাজার্ড ওয়াশিংটনে কারাবরণ করেছিলেন। ১৮৬৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর মিনেসোটার কার্ভার কাউন্টিতে জন্ম নেওয়া লিন্ডা ১৯৩৮ সালের ২৪ জুন অনশন চালানোর সময় মারা যান। ওয়াশিংটনের যে শহরে লিন্ডা বসবার করতেন তার নাম ওলাল্লা। উপবাসের স্পেশালিস্ট লিন্ডার প্রয়োগকৃত মেথড শুধু অভাবনীয় ছিল না, তা আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে সবার কাছে। তিনি প্রচার করেন সব রোগের মূল লুকিয়ে থাকে খাবারের মধ্যে। তাই সুস্বাস্থ্যের আশায় অনেকে তার কাছে আসতেন। আর এই সুযোগে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিতেন লিন্ডা। নরওয়েজিয়ান অভিবাসী ডেইজি মউড হাগলুন্ড হিজার্ডের তত্ত্বাবধানে ৫০ দিন উপোস করার পরে ১৯০৮ সালে মারা যান। হ্যাজার্ডের কাছে করুণভাবে মৃত্যুবরণ করে আরও দুই বোন ক্লেয়ার এবং ডরোথিয়া উইলিয়ামসন। ১৯১১ সালের ১৫ আগস্ট ক্লেয়ার উইলিয়ামসনের হত্যার অভিযোগে লিন্ডা হ্যাজার্ডকে গ্রেফতার করে কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক হত্যার অভিযোগ জমা পড়ে যায়। বিচারের সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষ্য দেন, উপবাসের মধ্য দিয়ে চিকিৎসার সময় ক্লেয়ার ব্যথায় কান্নাকাটি করছিলেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে যন্ত্রণা সহ্য করার পর তিনি মারা যান। উপবাস করতে গিয়ে রোগীরা যখন দুর্বল হয়ে পড়ত তখন তাদের চেক জাল করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন লিন্ডা। তারপর মৃতদেহগুলোকে গোপন স্থানে সরিয়ে নিত। এতে করে অন্যরা সেগুলো দেখতে পেতেন না।

 

নিলস হোগেল

প্রায় ১৫ বছর ধরে খুব গোপনে মানুষ খুনের মতো নিষ্ঠুর কাজটি করে আসছিল নিলস হোগেল। জার্মানির ওল্ডেনবার্গ শহরের একটি হাসপাতালে তিনি স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তার মরণঘাতী এমন খেলার শিকার হয়েছেন ৩০০ এর বেশি জন। শুধু ২০০০-০৫ সালেই হোগেলের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০০ রোগী। হিরো হওয়ার জন্য প্রথমে রোগীদের ভুল ওষুধ খাইয়ে আরও অসুস্থ করতেন। তারপর তাদের সুস্থ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার এই অভিনব চিকিৎসায় মারা পড়তেন রোগীরা। হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পর এক রোগীর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটতে থাকে। কর্তৃপক্ষ এসব মৃত্যুর কোনো কারণ খুঁজে পেত না। তবে প্রতিটি মৃত্যুর ক্ষেত্রেই রোগীর আশপাশে দেখা গেছে হোগেলকে। এদিকে রহস্যজনক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় না পেরে হোগেলকে হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো প্রমাণ না থাকায় হোগেলের রিলিজ লেটারে প্রশংসা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে অন্য একটি হাসপাতালে সহজেই চাকরি জুটিয়ে নেয় হোগেল। নতুন কর্মস্থলে হোগেলের যোগদানের কিছুদিন পর ওই হাসপাতালেও শুরু হয় রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা। প্রায় ১০ বছর চেষ্টা করেও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি জার্মানির গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা। অবশেষে জেরার মুখে হোগেল নিজেই তার অপরাধ স্বীকার করেন। ৪৩টি খুনের কথা নিজেই স্বীকার করেন তিনি। এ ছাড়াও ৫২টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায় থাকতেও পারে বলে মনে করেন তিনি। তবে ৫টি মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার কোনো হাত নেই বলে জানিয়েছে এই কুখ্যাত খুনি। দেশটির গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্তত ৯০টি মৃত্যুর সঙ্গে হোগেলের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে হোগেলকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদ- দিয়েছে দেশটির আদালত।

 

চার্লস এডমন্ড কুলেন

একজন আমেরিকান সিরিয়াল কিলার চার্লস এডমন্ড কুলেন। নিউজার্সির নার্স হিসেবে ১৬ বছরের কর্মজীবনে মোট চল্লিশজন রোগীকে হত্যা করেছেন। পরবর্তীতে পুলিশ, মনোবিজ্ঞানী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট হয়, কুলেন প্রায় ৪০০ মৃত্যুর জন্য দায়ী যা তাকে ইতিহাসে অধিক সংখ্যক খুনের দায়ী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কুলেনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী প্রথম হত্যা তিনি সেন্ট বার্নাবাসে করেন একজন রোগীকে অতিরিক্ত ডোজ ওষুধ দিয়ে। এ ছাড়াও তিনি সেখানে আরও বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর কারণ ছিলেন। কুলেন নিজেকে মৃত্যুর দেবদূত হিসেবে দাবি করেন। তার মতে, রোগীর কষ্ট কমানো এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তিনি এ রকম করেছেন। এ ছাড়াও কুলেনের অধিকাংশ ভিকটিমই ছিল বৃদ্ধ বয়সী। তার ভাষ্য মতে, অতিরিক্ত কিছুদিনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তিনি এ কাজ করেছেন। যাদের খুন করেছেন সবার নাম মনে রাখতে না পারলেও চার্লস তাদের হত্যার বিবরণ মনে রাখতে পারতেন। এমনকি খুনগুলো কোনো অন্যায় হতে পারে- এমন বোধই তার মধ্যে নেই। ১৯৯২ সালের জানুয়ারিতে কুলিন সেন্ট বার্নাবাস ছেড়ে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেন। একাধিক রোগীর মৃত্যুর অধিকাংশ তথ্যই কুলেনকে ইশারা করে। এক মাস পর ফিলিপ্সবার্গ হসপিটালে যোগ দেয় কুলেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত বিতর্ক সত্ত্বেও নার্স সংকটের কারণে তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ পান। কুলেনের বর্ণনা অনুযায়ী তার শৈশব ছিল দুঃখজনক। তার বোনদের বন্ধুরা এবং সহপাঠীদের মাধ্যমে তিনি ক্রমাগত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৯ বছর বয়স থেকে বহুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ১৯৬০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার নিউজার্সিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ২০০৬ সালে আদালত তাকে ১৮টি যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি দেয়।

সর্বশেষ খবর