বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুন্দরীদের খুনি

তানিয়া তুষ্টি

সুন্দরীদের খুনি

ক্রিস্টোফার ওয়াইল্ডার

অস্ট্রেলিয়ান বংশো ভূত আমেরিকান নাগরিক সিরিয়াল কিলার ক্রিস্টোফার বার্নার্ড ওয়াইল্ডার। তাকে দ্য বিউটি কুইন কিলার নামে ডাকা হতো। সে কমপক্ষে ১২ জন নারীকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে এবং ৮ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। তার এ হত্যাযজ্ঞ ১৯৮৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে চলে টানা ছয় সপ্তাহ। ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ওকলাহোমা, কলোরাডো, নেভাডা এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় চলে ক্রিস্টোফারের হাতে খুনের ঘটনা। এর আগে ১৯৮৩ সালে সে ফ্লোরিডায় ১০ এবং ১২ বছর বয়সী দুটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল বলেও মনে করা হয়। ১৯৮০ সালের ১৩ এপ্রিল ম্যাসাচুসেটস বেভারিতে ১৭ বছর বয়সী কার্লা হেন্ডরিকে আক্রমণ করে কিন্তু তিনি ক্রিস্টোফারের হাত থেকে পালাতে সক্ষম হন। ওয়াইল্ডারের হাতে প্রথম খুন হন রোজারিও গঞ্জালেজ নামের এক নারী। ধারণা করা হয় এ খুনটি হয়েছিল ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪ সালে। এর কিছুদিন পর ৫ মার্চ, ওয়াইল্ডারের প্রাক্তন বান্ধবী মিস ফ্লোরিডার ফাইনালিস্ট এলিজাবেথ কেনিয়ান নিখোঁজ হন। নিখোঁজ কেনিয়ানের বাবা-মা মেয়ের অনুসন্ধানের জন্য এক প্রাইভেট তদন্তকারীর সাহায্য নেন। পরে পুলিশ রোজারিও ও কেনিয়ানের নিখোঁজের সঙ্গে ওয়াইল্ডারের সম্পৃক্ততা পান। এরপর একে একে আরও কিছু হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় তার হাতে। তবে শেষমেষ ধরা পড়তে হয় সুন্দরী অভিনেত্রী ও মডেল ট্যামি লায়ন লেপার্টকে খুন করার পর। ট্যামি এতটাই সুন্দর ছিলেন যে অন্তত ৩০০টি ছোট-বড় বিভিন্ন বিউটি কনটেস্টে অংশগ্রহণ নিয়েও প্রতিবার প্রথম হয়েছেন। যদিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্রিস্টোফার অভিনেত্রীকে খুনের ঘটনা স্বীকার করেনি। তবু ক্রিস্টোফারের বিরুদ্ধে থাকা অন্যান্য অপরাধের সাজা হিসেবে ১৯৮৪ সালে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

 

রিচার্ড রামিরেজ

রিকার্ডো লেয়ভা মুনোজ রামিরেজ, সংক্ষেপে রিচার্ড রামিরেজ ছিল একজন মার্কিন সিরিয়াল খুনি, ধর্ষক, ডাকাত এবং শয়তানের উপাসক। ১৯৮৪ সালের জুন থেকে ১৯৮৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত বহুল আলোচিত অপরাধগুলো লস অ্যাঞ্জেলস ও সান ফ্রান্সিসকোর অধিবাসীদের আতঙ্কিত করে রেখেছিল। গ্রেফতার হওয়ার আগে রিচার্ড রামিরেজকে গণমাধ্যম ‘নাইট স্টকার’ নাম দিয়েছিল। এসব অপরাধ সংঘটিত করতে রামিরেজ ব্যবহার করত হ্যান্ডগান, ছুরি ও হাতুড়িসহ বিভিন্ন হাতিয়ার। শয়তানের এ উপাসক কখনোই নিজের অপরাধের জন্য অনুতাপ করেনি। কিন্তু বিচারে রামিরেজের নিকৃষ্ট অপরাধের সাজা হিসেবে ১৩টি মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কারাগারে থাকাকালে রামিরেজ শারীরিক অসুস্থতার জেরে মৃত্যুবরণ করে। ১৯৮৫ সালের ১৪ মে রামিরেজ মন্টেরে পার্কে ৬৬ বছর বয়স্ক বিল ডোইয়ের বাড়িতে প্রবেশ করে। আচমকা বিলের মুখে গুলি করে ৫৬ বছর বয়স্ক স্ত্রী লিলিয়ান ডোইয়ের ঘরে প্রবেশ করে। তারপর লিলিয়ানকে ধর্ষণ করে মূল্যবান জিনিস নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা দুজনই মারা যান। ঠিক একইভাবে ১৯৮৫ সালের ৩০ মে রামিরেজ বারব্যাঙ্কে ৪২ বছর বয়স্ক ক্যারল কিলে নামক এক নারীর বাড়িতে প্রবেশ করে। বন্দুকের নলের মুখে সে ক্যারল ও তার ১১ বছর বয়সী ছেলের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালায়। একই বছর ২০ জুলাই সোমকিদ কোভানান্থ ও ৮ আগস্ট সাকিনা অ্যাবোওয়াথকে ধর্ষণ করে। রিচার্ডের এ অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেলে একসময় ধরা পড়ে পুলিশের জালে।

 

নরম্যান কলিন্স

১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নরম্যান কলিন্সকে নিয়ে বেশ আলোচনা চলে। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে কোনো নারীকে হত্যা করার পর মৃতদেহকে বিকৃতকরণের মতো জঘন্য কাজ করাই ছিল তার নেশা। আনুমানিক সাতজন নারী তার হাতে খুন হয়েছিলেন। এ কারণে একসময় সে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে ‘ইপসিলান্তি রিপার’ নামে। ১৯৬৭ সালের ৭ আগস্ট খুঁজে পাওয়া যায় ১৯ বছর বয়সী মেরি ফ্লেসজারের গলিত মৃতদেহ। তিনি ছিলেন কলিন্সের প্রথম শিকার। মেয়েটিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক মাসের মাঝে আরও তিন নারীর বিকৃত মৃতদেহ খুঁজে পেলে নড়েচড়ে বসে পুরো পুলিশ বিভাগই। তারাও বুঝতে পারছিল না এমন ধূর্ত একজন সিরিয়াল কিলারকে কী করে ধরা যায়। কলিন্সের সাত শিকারের প্রত্যেকের গায়েই নির্যাতনের ছাপ ছিল স্পষ্ট। ধারণা করা হয়, হত্যার আগে সবার ওপরই শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে নরম্যান। খুন করার পর মৃতদেহগুলো কবর দিত বহু দূরে। কলিন্সের শেষ শিকারের নাম ছিল কারেন সু বেইনম্যান। তার মৃতদেহ খুঁজে পেলেও সেই খবর আর জনসমক্ষে প্রকাশ করেনি পুলিশ। কিন্তু বহু বুদ্ধি খাটিয়েও কলিন্সকে ধরতে পারেনি পুলিশ। একবার এক ছুটির পর বাড়িতে ফিরে কলিন্সের আঙ্কেল দেখতে পেলেন বেজমেন্টে রক্তের দাগ। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে এ ব্যাপারে জানান তিনি। পরীক্ষা করে দেখা যায়, এ রক্ত বেইনম্যানের। এরপরেই সব রহস্যের জট খুলে যায়। কলিন্সের পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় পুলিশের কাছে, সে ধরাও পড়ে। বিচারে তাকে প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

 

জোডিয়াক কিলার

১৯৬০-৭০ এর দশকজুড়ে জোডিয়াক কিলার নামটি নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে রেখেছিল। এই সময়কালে জোডিয়াকের দাবি অনুসারে, সে মোট ৩৭ জন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিল। যদিও সংবাদপত্র এবং তদন্তকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ৭ খুনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে। ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর খুন করে হাইস্কুল পড়ুয়া ১৭ বছরের ছেলে ডেভিড আর্থার ফ্যারাডে আর ১৬ বছরের মেয়ে বেটি লু জেনসেনকে। সেদিন তারা প্রথম ডেটিংয়ে যায়। ডেভিড তার প্রেমিকার বাবা-মাকে কথা দিয়ে এসেছিল যে, রাত ১১টার মাঝেই তাদের মেয়েকে সে বাসায় পৌঁছে দেবে। কিন্তু তাদের আর বাসায় ফেরা হয়নি। অপ্রত্যাশিতভাবে তাদের দুজনকে গুলি করে হত্যা করে জোডিয়াক কিলার। ১৯৬৯ সালের ৪ জুলাই ডারলিন ফেরিন ও মাইকেল ম্যাজাউ নামের আরেক প্রেমিক যুগলকে গুলি করে হত্যা করে এ কিলার। ঘটনার ৪৫ মিনিট পরেই ভ্যালেহো পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে টেলিফোন করে তথ্য জানায় খুনি নিজেই। কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গুলিবিদ্ধ দেহ দুটি ছাড়া আর কাউকেই খুঁজে পাইনি। এ খুনি এতটাই মাইন্ড গেম খেলতে পছন্দ করত যে, একের পর এক চিঠি দিয়ে নিজের কুকর্মের কথা জানাত পুলিশকে। কিন্তু তার হদিস বের করতে গিয়ে শুধুই ঘাম ঝরাতে হয়েছে তৎকালীন সেই পুলিশ বাহিনীকে। ব্রায়ান হার্টনেল এবং সেসেলিয়া শেপার্ড নামের আরেক জুটিকেও হত্যা করে জোডিয়াক। তার টার্গেটই যেন ছিল প্রেমিক যুগল। কিন্তু ধুর্ত এ খুনিকেও একদিন পুলিশের হাতে ধরা দিতে হয়।

 

জোয়েল রিফকিন

টানা চার বছর ধরে নিউইয়র্ক শহরে একের পর এক পতিতার বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু মেয়েগুলো অন্ধকার জগতের হওয়ায় তাদের খুন নিয়ে কারও যেন মাথাব্যথা ছিল না। এ সুযোগে খুনিও নিজের বিকৃত লিপ্সা মিটিয়ে চলেছে আপনমনে। ঘটনার শেষদিকে এসে খুনি নিজেই যেন ধরা দিল পুলিশের হাতে। একদিন লাইসেন্সবিহীন একটি মাজদা ট্রাককে যেতে দেখে সন্দেহ হয় এক ট্রাফিক পুলিশের। তাকে থামার ইশারা দিলেও ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি চালিয়ে যায়। কিন্তু অল্প দূরে গিয়েই একটি খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খায় গাড়িটি। ট্রাফিক পুলিশও ধরে ফেলে ড্রাইভারকে। কিন্তু তাদের চোখ চড়কগাছ হয় ট্রাকের ভিতরে নজর দিতেই। সেখানে দেখতে পায় ২২ বছর বয়সী টিফানী ব্রেসিয়ানীর অর্ধগলিত মৃতদেহ! সময়টা ছিল ১৯৯৩ সালের ২৮ জুন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে জোয়েল রিফকিন নামের এ ব্যক্তি আসলে বড় এক সিরিয়াল কিলার। সে এর আগেও এভাবে মোট সতেরোজনকে খুন করেছিল। ব্রেসিয়ানী ছিল তার হাতে খুন হওয়া সতেরোতম নারী। জোয়েল প্রথমে গাড়িতে কোনো পতিতাকে তুলে নিত। অর্থের বিনিময়ে তার সঙ্গে মিলিত হতো। এরপরই হাত-পা বেঁধে খুন করে বসত সেই মেয়েটিকে। আটক হওয়ার পর তার বাড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স, অলঙ্কার, অন্তর্বাস এবং তার হাতে নিহত নারীদের দেহের নানা অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। ঘরের চালায় রক্তমাখা একটি ঠেলাগাড়ি এবং মানুষের মাংস লাগা একটি করাতের সন্ধানও পায় তারা। বিচারে ২০৩ বছরের সাজা হয় রিফকিনের।

 

স্যামুয়েল লিটল

খুনের মতো একটি জঘন্য কাজের সঙ্গে মানুষের মনে শিল্পচর্চার অভিলাস জাগতে পারে তা স্যামুয়েল লিটলকে দেখলে জানা যাবে। খুনের পর সে রং-তুলিতে শিকারের ছবি আঁকত। তাদের মুখে পেনসিল দিয়ে অজস্র দাগ কেটে দিত। খুন হওয়া প্রত্যেকের চোখের রং, চুলের স্টাইল এবং কোথায় তাদের খুন করেছিল তাও পুঙ্খানুপুঙ্খ জানিয়েছে। শিকার হিসেবে লম্বা গলার নারীদের প্রতিই আকৃষ্ট হতো লিটল। ১৯৭০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টেক্সাস এবং সংলগ্ন অঞ্চলে ৬০ জনেরও বেশি নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে লিটল নিজেই। খুন করা হতো শ্বাসরোধ করে বা বেধড়ক মারধর করে। খুন হওয়া বেশিরভাগ নারীই ছিলেন যৌনকর্মী বা মাদকাসক্ত। তাই তাদের হত্যা নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া হয়নি। অপরদিকে হত্যাগুলোকে বেশিরভাগই পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা অতিরিক্ত মাদক সেবনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে দিত পুলিশ। আদতে ওহাইওর বাসিন্দা লিটলের বিরুদ্ধে প্রথমে ১৯৭০-২০০৫ সালের মধ্যে পাঁচজন নারীকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। ২০১২ সালে কেন্টাকির ভবঘুরে আবাস থেকে তাকে গ্রেফতারের পর ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রত্যর্পণ করে আনা হয়। শেষে তিন জনকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে তাকে দন্ডিত করেছিল আদালত।

 

আন্দ্রে রোমানোচিভ

জীবিতাবস্থায় মেয়েদের জিহ্বা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলা, জননাঙ্গ কেটে নেওয়া এবং পেট চিরে ফেলার মাধ্যমে আন্দ্রে তার ভিক্টিমদের ওপর নির্যাতন চালাত

 

ভয়াবহ রোস্তভ রিপারখ্যাত সোভিয়েত সিরিয়াল কিলার আন্দ্রেই রোমানোভিচ চিকাতিলো। ১৯৭৮-৯০ পর্যন্ত এক যুগ ধরে বিস্তৃত ছিল তার সিরিয়াল কিলিংয়ের সময়কাল। এ সময় রেকর্ডসংখ্যক ৫২ জন তার হাতে প্রাণ হারান। এ ৫২ জনের মাঝে ২১ জন বাচ্চা ছেলে, ১৪ জন বাচ্চা মেয়ে এবং ১৭ জন ছিল প্রাপ্তবয়স্ক নারী। এদের প্রত্যেকের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালিয়ে খুন করা হতো। আন্দ্রে রোমানোচিভের যখন  বিচারকার্য চলছিল তখন তার নিজের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে নৃশংসতার নানা দিক।  আন্দ্রে জানায়, জীবিতাবস্থায় মেয়েদের জিহ্বা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলা, জননাঙ্গ কেটে নেওয়া এবং পেট চিরে ফেলার মাধ্যমে আন্দ্রে তার ভিক্টিমদের ওপর নির্যাতন চালাত। প্রতিটি খুনের পর নির্ধারিত ছিল, খুন করার পর মৃতদেহ থেকে চোখ কেটে নেওয়া কিংবা দেহ কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করা ও চিরে ফেলা। খুন হওয়া ব্যক্তির চোখে খুনির প্রতি শেষ মুহূর্তে যে ঘৃণা, আতঙ্ক ও অনুনয় থাকত, তা তাকে এক অন্যরকম আনন্দ দিত বলে জানিয়েছিল আন্দ্রে।

 

ড্যানিয়েল হ্যারল্ড

অল্প কয়েক দিনের ভিতরেই পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর খুন করে ড্যানিয়েল হ্যারল্ড রোলিং নামের এক সিরিয়াল কিলার। ঘটনাগুলো প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আতঙ্কিত বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সাধারণ জনগণ নিজেদের নিরাপত্তায় বন্দুক, তালা ও মুগুর কিনে আনে। হ্যারল্ডের খুন শুরু হয় সনিয়া লার্সন ও ক্রিস্টিনা পাওয়েল নামক দুই কলেজপড়ুয়া তরুণীকে দিয়ে। এক রাতে তারা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ছিটকিনি ভেঙে ভিতরে ঢোকে রোলিং। প্রথমেই ছুরিকাঘাতে লার্সনকে খুন করে পরে পাওয়েলকে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে। পরে তাকেও খুন করে পালিয়ে যায় রোলিং। পরের রাতে ক্রিস্টা হয়ট নামে আঠারো বছর বয়সী এক তরুণীকে খুন করে সে। তার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দেহটিও একেবারে দ্বিখন্ডিত করে চিরে ফেলেছিল। দুই দিন পর ম্যানি টাবোডা নামে এক তরুণ এবং ট্রেসি পলস নামে এক তরুণীকে খুন করে সে। পলসের ভাগ্য ঠিক আগের নারীদের মতোই হয়েছিল। এরপরই গেইনেসভিল ছেড়ে পালিয়ে যায় রোলিং। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে আসা অন্যান্য অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাকে। তখনো পুলিশ জানত না যে, রোলিংই গেইনেসভিলের সেই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার। অবশেষে ১৯৯৩ সালের শুরুর দিকে নিজের অতীতের সব কীর্তিকলাপ রোলিং নিজেই স্বীকার করে নেয়। পরবর্তীতে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে লুইজিয়ানায় এক পরিবারের তিন সদস্যকেও সে-ই খুন করেছিল। ২০০৬ সালের ২৫ অক্টোবর রোলিংয়ের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

 

কামরুজ্জামান সরকার

ব্র্যান্ডেড পোশাক, শৌখিন অনুষঙ্গ ব্যবহারকারী ও স্বল্পভাষী হিসেবে পরিচিত ছিলেন কামরুজ্জামান সরকার। এ বেশভুষার আড়ালে লুকিয়ে ছিল একজন দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার। শুধু খুনের নেশায় সে রীতিমতো নিখুঁত ছক কষে একের পর নারীকে হত্যা করেছে। তার টার্গেটে থাকত একা ঘরে থাকা নিরীহ নারীরা। তার পর তাদের সঙ্গে একটি ছলনার সম্পর্ক তৈরি করে শেষমেষ নৃশংসভাবে হত্যা করত। পুলিশের দাবি, মোট ১২ জনকে আক্রমণ করে কামরুজ্জামান। কিন্তু সবাইকে মারতে সক্ষম হয়নি সে। ৬ জনকে খুন করতে পারলেও বাকি ৬ জন বেঁচে যান। আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে ওই সিরিয়াল কিলার। তবে তার হদিস পেতে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয় ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশকে। বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমায় তিনটি খুন হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে খুন করার পর তার সর্বস্ব নিয়ে চম্পট দেয় খুনি। পুলিশের দাবি, খুনের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল একই লোকের কাজ। পরে আহত নারীদের বর্ণনা, স্কেচ ও সিসিটিভি ফুটেজ থেকেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তারপরেই জেলাজুড়ে তল্লাশি শুরু করে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। আর তাতেই আসে সাফল্য। একসময় দেবীপুরে একই ধরনের কাজ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের জালে হাতেনাতে ধরা পড়ে সিরিয়াল কিলার কামরুজ্জামান সরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর