রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মহাকাশে যত ব্যর্থ অভিযান

সাইফ ইমন

মহাকাশে যত ব্যর্থ অভিযান

মহাকাশে অভিযানের দীর্ঘ পরিক্রমায় একের পর এক নানা দুঃসাহসিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো। এ গবেষণার অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ সাফল্য এলেও মহাকাশে অভিযান চালাতে গিয়ে বারবারই জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। সম্প্রতি ভারতের বহুল আলোচিত চন্দ্রাভিযানটি ব্যর্থ হওয়ার পর চারদিকে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু চন্দ্রাভিযান কিংবা মহাকাশে এমন ব্যর্থ অভিযান এবারই প্রথম নয়। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মহাকাশ অভিযানে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পরিমাণই বেশি। ব্যর্থতার পথ ধরেই আসে চূড়ান্ত সাফল্য। ব্যর্থ মহাকাশ অভিযানের কিছু ঘটনা নিয়েই আজকের রকমারি-

 

ভারতের ব্যর্থ চন্দ্রাভিযান

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ভারতের প্রধান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। সমসাময়িক অন্যান্য মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সঙ্গে বাজেটের দিক দিয়ে ইসরোর আকাশ-পাতাল তফাৎ। কিন্তু এত কম বাজেট সত্ত্বেও তাদের সাফল্য সবার জন্যই ঈর্ষণীয়। সম্প্রতি তারা তাদের চন্দ্রাভিযানের দ্বিতীয় প্রকল্প চন্দ্রযান-২ পরিচালনা করেছে। এর আগে ২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ প্রকল্পের মাধ্যমে চঁাঁদে প্রথম ছাপ রেখেছিল ভারত। কিন্তু চন্দ্রযান-২ এর অভিযানের স্বপ্ন মূল লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। চাঁদের একেবারে কাছে গিয়ে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে চন্দ্রযান বিক্রমের। বহুল প্রতিক্ষিত এ চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল গত ২২ জুলাই। চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের দৃশ্য কোটি কোটি ভারতীয় টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করেন। চাঁদে নামতে গিয়ে ২ দশমিক ১ কিলোমিটার আগেই ভারতের এ মহাকাশযানের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ-কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পর একে সে দেশের মহাকাশ অভিযানের ব্যর্থতা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের মাটিতে নামার অল্প কিছু আগে চন্দ্রযান-২ এর অবতরণকারী যান বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার অর্থ এ নয় যে পুরো অভিযানটি ব্যর্থ হয়েছে। কলকাতার বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামের সাবেক প্রধান ও মহাকাশবিদ ড. বি পি দুয়ারি গণমাধ্যমকে বলেন, চাঁদ প্রদক্ষিণকারী চন্দ্রযান-২ এখনো চাঁদকে ঘিরে ঘুরছে। এ যানটি উড়ে যাওয়ার সময় একসময় জানাতে পারবে যে বিক্রমের ভাগ্যে আসলে কী ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ‘এখন বিক্রমের অবস্থা কী, কিংবা কী ঘটেছে, সেটা এই মুহূর্তে কেউই বলতে পারছেন না। কারণ তার সঙ্গে কোনোরকম বেতার যোগাযোগ আর করা যায়নি। হয়তো যানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার যেসব অন-বোর্ড যন্ত্রপাতি আছে, কম্পিউটার আছে ন্ডেন্ডেসগুলো হয়তো ঠিকমতো কাজ করেনি বলেই আর যোগযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ খুঁজতে ইসরোর বিজ্ঞানীরা চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। ইসরোর প্রধান কে. সিভান জানান, বিক্রমের নামার সময় যেসব ডেটা পাওয়া গেছে যেগুলো এখন বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। মহাকাশযান চন্দ্রযান-২ এর রয়েছে তিনটি ভাগ। একটি অরবিটার, অবতরণযান বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। প্রজ্ঞান হচ্ছে ছয়-চাকার একটি রোবটচালিত গাড়ি। এর লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা। এর আগে ভারত চন্দ্রযান-১ নামে একটি রকেট পাঠিয়েছিল যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা আশা করছিলেন চন্দ্রযান-২ তাদের সেই আবিষ্কারকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু সূর্যের কাছ থেকে আড়াল থাকে বলে সেখানে তাপমাত্রা কম, এবং সেখানে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এ সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেল। এর আগে চন্দ্রযান-২ গত ২০ অগাস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। গত শনিবার ভারতীয় সময় রাত ১টায় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে এটি অবতরণ শুরু করে। এ সময় ভারতজুড়ে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল মানুষজনের মধ্যে। ইতিহাসে ভারতীয় এ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা অনেক সাফল্যই অর্জন করেছে। এটি বিশ্বের অগ্রণী মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলোর অন্যতম। কিছুদিন আগে একটি রকেট থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছে তারা।

২০০৮ সালে চন্দ্রযান-১ প্রকল্পের মাধ্যমে চাঁদে প্রথম ছাপ রেখেছিল ভারত। কিন্তু চন্দ্রযান-২ এর অভিযানের স্বপ্ন মূল লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। চাঁদের একেবারে কাছে গিয়ে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে চন্দ্রযান বিক্রমের।

গত ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইসরোর চঝখঠ-ঈ৩৭ রকেটটি একবার উড্ডয়নে ১০৪টি স্যাটেলাইটকে পৌঁছে দিয়েছে মহাশূন্যে। এরপর সাফল্যমন্ডিত ২০১৮ সাল পেরিয়ে এ বছর চন্দ্রযান-২ নিয়ে নতুন মিশন শুরু করেছিল ইসরো। চন্দ্রযান-২ এর সাফল্য উপোভোগ করছিল কোটি কোটি ভারতীয়। ইসরোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের কাচের দেয়ালের ওপারে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২.১ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকার সময় মহাকাশযানের সঙ্গে ইসরোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বেতার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হার্ড ব্রেকিং সামলে ফাইন ব্রেকিং পর্ব শুরু হতেই ছন্দপতন ধরা পড়ে ইসরোর দফতরের জায়ান্ট স্ক্রিনে। থেমে যায় ল্যান্ডার বিক্রমের ক্রমবর্ধমান গতি। সম্পূর্ণ ঘটনাটি ইসরো টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং এবং কমান্ড নেটওয়ার্ক কেন্দ্রের পর্দায় দেখা যাচ্ছিল, বিক্রম তার নির্ধারিত পথ থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয় প্রথমে। তারপরে যোগাযোগটি হরিয়ে যায়। আর কোনোভবেই যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আর এতেই ব্যর্থতার মুখে পড়েছে ভারতের দ্বিতীয় এ চন্দ্রাভিযান। স্তব্ধ হয়ে যান ইসরোর বিজ্ঞানীরা। অবতরণের ব্যর্থতার সম্ভাব্য কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা সম্ভব হয়নি। তবে ঘটনার একদিন পর ইসরোপ্রধান জানিয়েছেন, আমরা চাঁদের পৃষ্ঠে বিক্রম ল্যান্ডারের অবস্থান খুঁজে পেয়েছি, ল্যান্ডারের একটি থার্মাল ইমেজ সংগ্রহ করেছে অরবিটার। তবে এখনো পর্যন্ত ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আমরা যোগাযোগের চেষ্টা করছি। খুব দ্রুতই যোগাযোগ করা যাবে।

 

চাঁদে যত ব্যর্থ অভিযান

● Pioneer 0

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ১৭ আগস্ট, ১৯৫৮

চাঁদে অভিযান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পদক্ষেপ ছিল এটি। কিন্তু উৎক্ষেপণের মাত্র ৭৭ সেকেন্ড পরেই রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

● Luna 1958A

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পরপরই মহাকাশযান বহনকারী রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

● Pioneer 1

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ১১ অক্টোবর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পরেই রকেটটি তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে পৃথক হতে ব্যর্থ হয়, ফলে মহাকাশযানটি চান্দ্র মিশন পরিচালনায় সক্ষম হয়নি।

 

● Luna 1958B

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ১২ অক্টোবর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পরপরই মহাকাশযান বহনকারী রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

● Pioneer 2

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ৮ নভেম্বর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের দ্বিতীয় ধাপে রকেটটি প্রজ্বলনে ব্যর্থ হওয়ায় মহাকাশযানটি চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে পারেনি এবং পৃথিবীতে ফিরে আসে।

 

● Luna 1958C

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ৪ ডিসেম্বর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পরে প্রথম ধাপেই রকেটটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

 

● Pioneer 3

চঁাঁদের তথ্য সংগ্রহে ব্যর্থ মহাকাশ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৮

উৎক্ষেপণের পর প্রথম ধাপেই রকেটটি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মহাকাশযানটি বিধ্বস্ত হয়।

 

● Ranger 2

পৃথিবীর কক্ষপথ পরীক্ষাকারী যান, ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ১৮ নভেম্বর, ১৯৬১

উৎক্ষেপণের দুই দিন পরেই মহাকাশযানটি পৃথিবীর বায়ুম-লে পুড়ে যায়।

 

● Ranger 3

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ২৬ জানুয়ারি, ১৯৬২

চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগে চাঁদের খুব কাছ থেকে ছবি তোলার জন্য এর নকশা করা হয়েছিল। কিন্তু এটি ব্যর্থ হয়।

 

● Ranger 5

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ১৮ অক্টোবর, ১৯৬২

উৎক্ষেপণের কিছু পরেই এর একটি সোলার সেল নষ্ট হয়ে যায়।

 

● Sputnik 25

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ৪ জানুয়ারি, ১৯৬৩

সফল উৎক্ষেপণের পরেও এটি পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয় এবং একদিন পরে পৃথিবীর বায়ুম-লে প্রবেশের সময় পুড়ে যায়

 

●Luna 4

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ২ এপ্রিল, ১৯৬৩,

সোভিয়েত রাশিয়ার দ্বিতীয় প্রজন্মের চান্দ্র অভিযানের প্রথম মিশন ছিল এটি। ধারণা করা হয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সিস্টেমের সমস্যার কারণে চাঁদ থেকে ৮,৪০০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়।

 

●Luna 5

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ৯ মে, ১৯৬৫

চাঁদে অবতরণ : ১২ মে, ১৯৬৫

এ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠে হালকাভাবে অবতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটি চাঁদের Sea of Clouds এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।

 

● Luna 6

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ৮ জুন, ১৯৬৫

এটি চাঁদের কক্ষপথ ছেড়ে বাইরে চলে যায়।

 

 

● Luna 7

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ৪ অক্টোবর, ১৯৬৫

চাঁদে অবতরণ : ৭ অক্টোবর, ১৯৬৫। চাঁদের Ocean of Storms এলাকায় এটি বিধ্বস্ত হয়।

 

● Luna 8

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ৩ ডিসেম্বর, ১৯৬৫

চাঁদে অবতরণ : ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৫

চাঁদের Ocean of Storms এলাকায় এটি বিধ্বস্ত হয়।

 

● Surveyor 2

চাঁদে অবতরণ ব্যর্থ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র)

উৎক্ষেপণ : ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬

চাঁদে আঘাত হানে : ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৬

চাঁদে নামার আগে মুহূর্তে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়।

 

● Luna 1969A

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরেই রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

●  Zond 1S-1

চাঁদের কক্ষপথে পরিচালিত ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯, উৎক্ষেপণের কিছু সময় পরেই রকেটটি বিস্ফোরিত হয়।

 

● Luna 1969B

চাঁদের নমুনা সংগ্রহে পরিচালিত ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ১৫ এপ্রিল, ১৯৬৯

রকেটটি উৎক্ষেপণ প্যাডে থাকা অবস্থাতেই বিস্ফোরিত হয়।

 

● Luna 18

চাঁদে অবতরণে ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছে : ৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

চাঁদের কক্ষপথে ৫৪ বার প্রদক্ষিণ শেষে এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়।

 

●  Luna 23

চাঁদের নমুনা সংগ্রহে পরিচালিত ব্যর্থ মিশন (সোভিয়েত ইউনিয়ন)

উৎক্ষেপণ : ২৮ অক্টোবর, ১৯৭৪

৬ নভেম্বর, ১৯৭৪-এ চাঁদে অবতরণের সময় এটি বিকল হয়ে যায়, তাই কোনো প্রকার নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

 

স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার

স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার দুর্ঘটনাটি মহাকাশে ব্যর্থ অভিযানগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাবা হয়ে থাকে। এ মহাকাশযানটির দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ জানুয়ারি। সেদিন উড্ডয়েনের পর মাত্র ৭৩ সেকেন্ডের মাথায় যান্ত্রিক সমস্যার কারণে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এর আরোহী সাতজন মহাকাশচারী মারা যান। মহাকাশযানটির ধ্বংসাবশেষ পতিত হয় আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে। দুর্ঘটনটি ঘটে উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক সময় সকাল ১১টা ৩৯ মিনিট, বিকাল ৪টা ৩৯ মিনিট (ইউটিসি)।

 

 

বিগল ২

ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো ‘বিগল-২’ মহাকাশযানটির মঙ্গলে পৌঁছানোর কথা ছিল ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর। শেষবারের মতো মহাকাশযানটির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় ২০০৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। এরপর বিগল-২ যানটির সঙ্গে পৃথিবীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ২০০৩ সালে এটি মঙ্গল গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছায় কিন্তু বিপত্তি বাধে এরপরই। বিগল-২ কখনো পৃথিবীতে কোনো বার্তা পাঠায়নি। ২০১৫ সালে নাসার মার্স রিকনাইসান্স অরবিট ারের তোলা বিগল-২ এর ছবি থেকে ধারণা করা হয় এর একটি সোলার প্যানেলে ত্রুটির ফলে এর কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।

 

 

ফোবোস-গ্রান্ট

ফোবোস-গ্রান্ট মানুষের আরেকটি ব্যর্থ মহাকাশ অভিযানের নাম।

রাশিয়া থেকে পরিচালিত হয়েছিল এ মহাকাশ অভিযান মঙ্গলের উদ্দেশে। এ মিশনটি একটু বেশি উচ্চাভিলাষী ছিল। কারণ এটি মঙ্গলের একটি চাঁদে অবতরণ করার কথা ছিল। যেখান থেকে পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরত আসার কথা ছিল। ফোবোস-গ্রান্টের মঙ্গলে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩৪৫ কিলোমিটার উচ্চতায় উঠতে পেরেছিল ফোবোস-গ্রান্ট। এটি সফল হলে পৃথিবীর চাঁদ ছাড়া মহাকাশের অন্য যে কোনো অংশের পাথরের নমুনা পাওয়ার ঘটনা ঘটত প্রথমবারের মতো।

 

শিয়াপারেলি

ইউরোপিয়ান মহাকাশ সংস্থার পাঠানো শিয়াপারেলি মিশন হলো আরও একটি ব্যর্থ মহাকাশ অভিযানের নাম। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর প্যারাসুট এবং থ্রাস্টারের মিশ্রণে অপেক্ষাকৃত জটিল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মঙ্গলপৃষ্ঠে একটি প্রোব অবতরণ করানোর চেষ্টা করেছিল মহাকাশ সংস্থাটি। তবে তাদের পরিকল্পনা কার্যকর হয়নি। ২৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা নভোযানটি ৫০ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করার পর প্যারাসুট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ঘণ্টায় ৫৪০ কিলোমিটার গতিবেগে মঙ্গলপৃষ্ঠে পতিত হয় মহাকাশযানটি। ইউরোপিয়ান মহাকাশ গবেষণা সংস্থার লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে আগামী চার পাঁচ বছরের মধ্যে একটি ছয় চাকার রোভার পাঠানো। আর তার আগে অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যেই ইউরোপের এ শিয়াপারেলি মিশন শুরু করেছিল তারা। সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছিল। কন্ট্রোল রুমে ছিল উল্লাসও। কারণ সাত মাস যাত্রা করে ৫০ কোটি কিলোমিটার অতিক্রম করে যানটি ঢুকে পড়েছিল মঙ্গলের কক্ষপথেও। কিন্তু বিপত্তি ঘটল চূড়ান্ত সময়ে এসে। শিয়াপারেলি ঠিক যেভাবে অবতরণ করবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সেরকম হয়নি।  টেলিমেট্রি তথ্য থেকে জানা যায় শিয়াপারেলি যখন ওপর থেকে মঙ্গলের পৃষ্ঠের দিকে নেমে আসছিল তখন এর গতি কমিয়ে দিয়ে তাকে স্থিতাবস্থায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়াগুলো ঠিকমতো কাজ করেনি। ফলে ব্যর্থ হয়ে যায় মিশনটি। 

 

স্পেসক্রাফট স্পুটনিক ২

পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম পরিভ্রমণ করেছিল রাশিয়ার একটি বেওয়ারিশ মাদি কুকুর। তার নাম রাখা হয়েছিল লাইকা। খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল লাইকা। আদুরে চেহারার পাশাপাশি তার বুদ্ধিমত্তা নিয়েও সবাই খুব মুগ্ধ ছিল। তার চোখের রং ছিল কালো। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসের ৩ তারিখ লাইকাকে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। চারবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছিল কুকুরটি। এ সময় প্রচুর তাপ ঊৎপন্ন হতে থাকে স্পেসক্রাফট স্পুটনিক-২ এ। ১০ ঘণ্টা পর প্রচ- তাপে লাইকা অসুস্থ হয়ে যায়। কারণ মহাকাশ যানের ভিতর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যথেষ্ট নিরাপদ ছিল না। আবার বলা হয় যান্ত্রিক দুর্বলতাও একটা কারণ ছিল। সুতরাং মহাকাশে লাইকা কার্যত গরমে সেদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার পর সে তা সহ্য করতে পারেনি। অত্যাধিক চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে উৎক্ষপণের ১০ ঘণ্টার মধ্যেই লাইকা মারা গিয়েছিল। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোনো যান্ত্রিক সমস্যা হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ মহাকাশ অভিযানের কয়েক দশক পর লাইকা মৃত্যু প্রকৃত কারণ মানুষ জানতে পেরেছিল। লাইকার এ ভ্রমণ থেকেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষিপ্ত মহাকাশযানে ওজনহীন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীর পক্ষে  বেঁচে থাকা সম্ভব। তাই লাইকা মারা গেলেও তার মাধ্যমেই মনুষ্যবাহী নভোযান প্রকল্প শুরু হয়েছিল।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর