বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্বের জনপ্রিয় ধনী ক্রীড়াবিদ

বিশ্বের জনপ্রিয় ধনী ক্রীড়াবিদ

বিশ্বের সেরা ক্রীড়াবিদদের নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। খেলোয়াড়ি জীবনের পাশাপাশি তাদের ব্যক্তিজীবন নিয়েও ভক্তদের প্রচুর আগ্রহ। প্রতিবছর কার কত আয় তা নিয়ে সরব থাকে বিশ্ব মিডিয়া। গোটা বিশ্বে জনপ্রিয় ধনী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে আজকের এই রকমারি। লিখেছেন-  সাইফ ইমন

 

রজার ফেদেরার

রজার ফেদেরারের জন্ম ১৯৮১ সালের ৮ আগস্ট। এই সুইস পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় ইতিহাসের সবচেয়ে সফল টেনিস খেলোয়াড়দের অন্যতম। তিনি বর্তমানে এটিপি র‌্যাংকিং অনুযায়ী বিশ্বের ২ নম্বর খেলোয়াড়। অনেক টেনিস কিংবদন্তি, টেনিস সমালোচক এমনকি রজার ফেদেরারের সমসাময়িক খেলোয়াড়সহ অনেকেই মনে করেন তিনি সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়। তিনি ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের শেষভাগ পর্যন্ত টানা ২৩৭ সপ্তাহ বিশ্বের ১ নম্বর খেলোয়াড় ছিলেন। এর আগে এমন রেকর্ড আর হয়নি। ২০০৪ সালে ফেদেরার ম্যাট্স উইলান্ডারের পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একই বছরে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব দেখান।

 

লিওনেল মেসি

বিশ্বের অন্যতম সেরা ধনী খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসি। এ বছর তার আয়ের পরিমাণ ১২৭ মিলিয়ন ডলার। মেসির পুরো নাম লিওনেল আন্দ্রেস লিও। তার জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন। এই আর্জেন্টাইন স্পেনের সর্বোচ্চ স্তরের পেশাদার ফুটবল লিগ ‘লা লিগা’তে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে একজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। তিনি বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল এবং বার্সেলোনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মেসিকে বর্তমান সময়ের সেরা এবং সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে গণ্য করে থাকেন অনেকেই। তিনি পাঁচবার ব্যালন ডি অর জয় করেছেন।

 

সেরেনা উইলিয়ামস

সেরেনা উইলিয়ামস হলেন আমেরিকান পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। ধনী নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে তিনি সবার শীর্ষে। সেরেনা সর্বমোট ২৫টি গ্র্যান্ড স্ল­্যাম জিতেছেন। যার মধ্যে ১২টি একক, ১১টি মহিলা দ্বৈত, ২টি মিশ্র দ্বৈত। এ ছাড়া তিনি মহিলা দ্বৈতে ২ বার অলিম্পিক স্বর্ণপদক লাভ করেছেন। বর্তমানে সক্রিয় যে কোনো মহিলা খেলোয়াড়ের চেয়ে তিনি বেশি সংখ্যক গ্র্যান্ড স্ল­্যাম জিতেছেন এবং টেনিস ইতিহাসে যে কোনো মহিলা খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি প্রাইজমানি অর্জন করেছেন। সেরেনার বড় বোন সাবেক বিশ্বসেরা টেনিস খেলোয়াড় ভেনাস উইলিয়ামস। সেরেনা ৩ বার ডব্লির বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন।

 

টাইগার উডস

বিশ্বসেরা গলফার টাইগার উডস। অনেকেই ভেবেছিলেন বয়সের কারণে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে তার। একটা সময় উডস নিজেই বলেছিলেন তাকে দিয়ে আর হয়তো হবে না। কিন্তু সর্বকালের সেরা গলফার ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার উঠে এসেছেন। আবারও একটা শিরোপা জিতলেন এলড্রিক টন্ট উডস; ওরফে টাইগার উডস। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবার একটা পিজিএ ট্যুর জিতলেন টাইগার উডস। আটলান্টার ইস্ট লেক গলফ কোর্সে জিতে নিলেন তিনি ক্যারিয়ারের ৮০তম শিরোপা। সেই সঙ্গে প্রমাণ করেছেন তিনিই সেরা। কোনো কিছুই মানুষকে শেষ করে দিতে পারে না। আরও একবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বিশ্বের সেরা এই ধনী গলফার।

 

ক্রিস গেইল

ক্রিস্টোফার হেনরি ওরফে ক্রিস গেইল। বিধ্বংসী এই ব্যাটসম্যান ক্রিকেট বিশ্ব মাতিয়েছেন। সেই সঙ্গে নানা বিশ্বের নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে অংশ নিয়ে অনেক অর্থকড়িও কামিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৭৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ক্রিস গেইল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ও মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত তিনি। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্রিস গেইল। তিনি ওরচেস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব, ওয়েস্টার্ন ওয়ারিয়র্স, বরিশাল বার্নার্স এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের পক্ষ নিয়ে খেলেছেন। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলছেন। বিগ ব্যাশ লিগে গেইল সিডনি থান্ডার দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে জামাইকা দলে খেলছেন। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বরিশাল বার্নার্স দলের অন্যতম ক্রিকেটার। এ বছর অবসরে যাচ্ছেন বলে খবর আসে মিডিয়ায়।

 

বিরাট কোহলি

২০০৮ সালে কুয়ালালামপুরে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। তখনই বোঝা গিয়েছিল বছর ১৯-এর এই ছেলেটি আগামী দিনে বড় তারকা হতে যাচ্ছেন। এরপর তো ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য হয়ে গেলেন। বিরাট কোহলি এমনই এক ক্রিকেটার দিনের পর দিন যার বাজারমূল্য শুধু বেড়েই চলেছে। ২০১৩ সালেই এক জরিপে উঠে এসেছে লুইস হ্যামিল্টনের পর সেরা বাজারমূল্যের অ্যাথলেট বিরাট কোহলি। এই জরিপে তিনি তখন পেছনে ফেলেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি কিংবা উসাইন বোল্টের মতো বিশ্বতারকাদেরও। বিরাট এখনো খেলেই যাচ্ছেন আর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ মিলিয়ন ডলার। বার্ষিক পারিশ্রমিক ৩.১ মিলিয়ন ডলার। ভারতীয় রুপিতে যার পরিমাণ প্রায় ৩০৫ কোটি ৪৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭০০। প্রতি মিনিটে কোহলির আয় দাঁড়াচ্ছে ৫ হাজার ৮১১ রুপি।

 

ক্যানেলো আলভারেজ

ক্যানেলো আলভারেজ খুব কম বয়সেই দুর্দান্ত করেছেন।  ক্রীড়াজগতের ইতিহাসে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছেন তিনি। মিডলওয়েইট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার ক্যানেলো আলভারেজ। স্ট্রিমিং সার্ভিস ড্যাজনের সঙ্গে ৩৬৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছেন এ অ্যাথলিট। যা তাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি অ্যাথলেটে পরিণত করেছে। আলভারেজের সঙ্গে আগামী ৫ বছরের জন্য এ আর্থিক চুক্তি করেছে ড্যাজন। এ ৫ বছরে অন্তত ১১টি বক্সিং ম্যাচে অংশ নেবে ক্যানেলো আলভারেজ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বক্সিং ম্যাচগুলোর স্বত্ব কিনে নিয়েছে ড্যাজন। যার ধারাবাহিকতায় তারা ক্যানেলোর সঙ্গে এ চুক্তি করেছে। গত ডিসেম্বরে ক্যানেলো তার চুক্তির কার্যক্রম শুরু করেন।          

 

ফ্লয়েড মেওয়েদার

ফ্লয়েড মেওয়েদার বিখ্যাত মার্কিন বক্সার। তিনি পেশাদার হিসেবে এখনো অপরাজিত এবং পাঁচটি ভিন্ন ওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তিনি ১১ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং ৪ বার লিনিয়াল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মেওয়েদার দুইবারের রিং ম্যাগাজিনের ‘ফাইটার অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছেন। জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর অর্থকড়িও কামিয়েছেন। তিনি ‘বক্সিং রাইটার অ্যাসোসিয়েশন অফ অ্যামেরিকা’র দুইবারের নির্বাচিত ‘ফাইটার অফ দ্য ইয়ার’। সেরা যোদ্ধা ইএসপিওয়াই পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৭, ২০১২, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে। স্পাইক টিভি মেওয়েদারকে সর্বকালের সেরা বক্সার ঘোষণা করেছে।

 

এলিস পেরি

প্রথম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ক্রিকেট এবং ফুটবল দুই বিশ্বকাপ খেলেন এলিস পেরি। বর্তমানে এলিস পেরি ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটে বেশি মনোযোগী বলেই মনে হচ্ছে। সাম্প্রতিক ব্যাটিং পারফরমেন্স সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। অনন্য এই এলিস পেরি প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন তার খেলোয়াড়ি পারফরমেন্সের জন্য। যেসব মেয়ে খেলাধুলা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের বড় আইডল এখন এলিস পেরি। নারী ক্রিকেটের সফলতার অগ্রদূত ফ্লিন্টের সম্মানার্থে আইসিসি বর্ষসেরা নারী ক্রিকেটারের উদ্বোধনী পুরস্কারটি জিতে নেন এই অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ডের এমি স্যাটার্থওয়েট ও ভারতের হারমানপ্রিত কৌরকে টপকে পেরি বর্ষসেরা ক্রিকেটারের এ পুরস্কার জেতেন তিনি।

 

ম্যাথিও ফ্লামিনি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফুটবলারদের নামের তালিকায় অনায়াসে উঠে আসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, মেসি, নেইমার, ইব্রাহিমোভিচ এবং রুনিদের নাম। কিন্তু আরেকজন আছেন, তিনি ম্যাথিও ফ্লামিনি। তিনি শুধু একজন ফুটবলারই নন তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। গেতাফের হয়ে এখনো ফুটবল খেলছেন তিনি। ফুটবলের পাশাপাশি একজন সফল উদ্যোক্তাও তিনি। একমাত্র বিলিওনিয়ার খেলোয়াড় বিশ্বের। যার সম্পদের আনুমানিক মূল্য রোনালদো কিংবা ব্যাকহামের থেকেও ঢের বেশি। ম্যাথিও ফ্লামিনি খেলেছেন আর্সেনাল, এসি মিলান, অলিম্পিক মার্সেই, ক্রিস্টাল প্যালেসের মতো ক্লাবে। জিএফ বায়োকেমিক্যালস নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ফ্লামিনি ২০০৮ সালে।

সর্বশেষ খবর