বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পাশের বাড়ির মেয়ে মমতা

তানভীর আহমেদ

পাশের বাড়ির মেয়ে মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। ভারতের একজন প্রভাবশালী ও বাগ্মী রাজনীতিবিদ।

তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী তিনি। দলের অনুসারীদের কাছে ‘দিদি’ নামেই পরিচিত। সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে রাজনীতির মাঠে নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন অসাধারণ নেত্রী। রাজপথে অগ্নিমূর্তি, দিদির জনপ্রিয়তা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, গোটা ভারতে ছড়িয়েছে। ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের মানুষের কাছেও আলোচিত। উচিত কথা, বেফাঁস কথা যাই-ই বলেন না কেন, নড়েচড়ে বসে মিডিয়া। সারা বছরই আলোচনা-সমালোচনার মধ্যমণি তিনি। পাশের বাড়ির মেয়ে বললে ভুল হবে না মোটেও...

 

রাজপথ কাঁপানো নেত্রী

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বাগ্মী রাজনীতিবিদ। তিনি তার অনুগামীদের প্রিয় ‘দিদি’। মমতা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা-সভানেত্রী। ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে তিনি দুবার রেল, একবার কয়লা এবং একবার মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব, ক্রীড়া, নারী ও শিশুকল্যাণ বিভাগের মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। রাজপথ কাঁপানো রাজনীতিবিদ হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। শক্ত কথা বলেন বলে বিরোধী দলের নেতাদের কাছেও তার আরেকটি পরিচিতি রয়েছে। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন সময় আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। পুলিশের রক্তচক্ষুকে পরোয়া না করে সাধারণ জনগণের কাছে ছুটে গিয়ে, তৃণমূলে নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের কাছে ছুটে গিয়ে তিনি যেমন প্রশংসিত ও আলোচিত হয়েছেন তেমনি কখনো সমালোচনারও জম্ম দিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে হাতাহাতি করে, কখনো মিডিয়াকে একহাত দেখিয়ে। দলীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাকে।

রাজনৈতিক মাঠে এ ধরনের খেলা সময়ে সময়ে তার ক্যারিয়ারে বারবার এসেছে। মুখোমুখি হয়েছেন কঠিন সময়ের। তবে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে প্রতিবারই উৎরে গেছেন। পরিষ্কার ভাবমূর্তি, দক্ষ বক্তা ও আপসহীন রাজনীতি করার জন্য বিরোধী মনোভাবাপন্ন মানুষের কাছে ১৯৯২-এর দ্বিতীয়ার্ধ নাগাদ তার জনপ্রিয়তা শিখরে পৌঁছেছিল। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে তিনিই যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। মমতাকে দৃঢ় মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রাজনৈতিক নেত্রী বলেই চেনে সবাই। তবে তার উত্থানের গল্পটিও চমকপ্রদ। তার জš§ ১৯৫৫ সালের ৫ জানুয়ারি। কলকাতার কালীঘাটের এক সাধারণ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তিনি। তার বাবার নাম প্রমীলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। অন্যদিকে মা গায়ত্রী দেবী ছিলেন গৃহবধূ। কলকাতার শ্রীশিক্ষায়তন কলেজ থেকে বিএড ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে পড়াশোনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর কলকাতার যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজ অব ল থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। যে কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাকে কিছু দিন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে হয়।

তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ছাত্রাবস্থাতেই। ১৯৭০ সালে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। অল্প বয়সে রাজনীতিতে শুধু নাম লিখিয়েই নয়, রাজনৈতিক কার্যাবলিতেও তিনি নাম কুড়ান। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কংগ্রেসের (আই) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা কেন্দ্র থেকে কমিউনিস্ট নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদদের অন্যতম। এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে আলোচিত চমক। একই সঙ্গে পাকাপোক্ত করেন নিজের অবস্থানকে। এ সময় তিনি নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকও মনোনীত হয়েছিলেন। এরই মাঝে মোড় ঘুরে যায়। ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসবিরোধী হাওয়ায় তিনি তার কেন্দ্র থেকে পরাজিত হন। কিন্তু ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হয়ে নিজেকে ফের জানান দেন। ১৯৯১ সালে নরসিমা রাও মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানবসম্পদ উন্নয়ন, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রণালয়েরর মন্ত্রী মনোনীত হলেও খেলাধুলার প্রতি সরকারি ঔদাসিন্যের প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে তিনি তার দলের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এম)-কে সহায়তা করার অভিযোগ আনেন। নিজেকে দলের একমাত্র প্রতিবাদী কণ্ঠ বলে উল্লেখ করে তিনি এক ‘পরিচ্ছন্ন কংগ্রেস’-এর দাবি জানান। পরবর্তীতে তার যাত্রা তৃণমূল কংগ্রেসে। তার দলের বহু নেতা তার সব কাজে বিরোধিতা করা এবং যে কোনো কারণেই হোক, শাসক দলের একেবারেই বিরোধিতা না করার সংকল্প তাকে বাধ্য করে ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। ১৯৯৭ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সালে সমাজবাদী পার্টি সাংসদ দারোগা প্রসাদ সরোজ ‘মহিলা সংরক্ষণ বিলের’ বিরোধিতায় লোকসভার ওয়েলে নেমে গেলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জামার কলার ধরে টানতে টানতে তাকে ওয়েলের বাইরে বের করে দেন। এ ঘটনায় প্রবল বিতর্কের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। ১৯৯৯ সালে মমতা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে শামিল হন। এ জোট সরকার গঠন করলে তিনি রেলমন্ত্রী মনোনীত হন। ২০০১ সালের প্রথম দিকে রাজনৈতিক মতবিরোধের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনডিএর সঙ্গে সম্পর্ক সাময়িকভাবে ছিন্ন করেন। অবশ্য ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি আবার এনডিএ-তে ফিরে আসেন এবং কয়লা ও খনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৫ সালে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের শিল্পনীতির বিরোধিতা করেন মমতা। এ নিয়ে মাঠ উত্তাল হয়ে পড়ে। মমতা ও তার সমর্থকরা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পুলিশের মুখোমুখি হন। সে বছরই তীব্র রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েন মমতা। ২০০৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস বড়সড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। পরের বছর সিংগুরে টাটার ন্যানো প্রকল্পের বিরুদ্ধে একটি জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে তাকে বাধা দেওয়া হয়। মমতা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিধানসভাতেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে তিনি ১২ ঘণ্টা বাংলা বন্ধ (হরতাল) ঘোষণা করেন। তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়করা বিধানসভায় ভাঙচুর চালান, পথ অবরোধ করেন এবং অনেক জায়গায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগও করা হয়। নন্দীগ্রামের ঘটনাটি এ সময়ে সবচেয়ে আলোচিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে একটি কেমিক্যাল হাব স্থাপন করতে কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় উত্তেজনা দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রী জমি অধিগ্রহণের নোটিশটি বাতিল ঘোষণা করেন। কৃষকদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ কৃষকদের ছয় মাসব্যাপী অবরোধ তুলতে পুলিশ তাদের ওপর গুলি করলে চৌদ্দজনের মৃত্যু ঘটে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে লেখা চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিআই(এম)-এর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ আনেন। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নন্দীগ্রামের কেমিক্যাল হাব প্রকল্পটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়। কিন্তু কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে মমতা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ভালো ফল করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বার রেলমন্ত্রী হন। কূটনীতির চেয়ে বেশি তিনি আবেগের বশেই কাজ করেন বলে তার সমালোচনা করেন অনেকে। আবার এই একই কারণে তিনি সাধারণ মানুষের ‘দিদি’ হয়ে তাদের কাছে এখনো জনপ্রিয় নেত্রী। রাজনীতির পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কবিতা লেখেন, ছবিও আঁকেন।

 

রাজনৈতিক টাইম লাইন

 

অন্য রকম মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। তার এ গুণের কথা অজানা নয় কারো। রাজপথে যখন হাঁটতে শুরু করেন তখন তাল খুঁজে পান না তার দেহরক্ষীরা। না হেঁটে, না গন্তব্যে। রাস্তার দুপাশের মানুষদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, বয়স্ক মহিলাকে জড়িয়ে ধরছেন। তার সহজাত এ মানবিক গুণ সাধারণ মানুষকে দারুণ আকৃষ্ট করে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভীষণ সচেতন। এমনিতেই তিনি প্রচুর হাঁটেন। বাড়িতে প্রতিদিন নিয়ম করে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার ট্রেডমিলে হাঁটেন।

 

দিদির পোশাক চর্চা

জাতীয় রাজনীতিতে দিদির পোশাকও চর্চার বিষয়। মমতার পোশাক একেবারেই সাদামাটা। সরু পাড়ের সুতির শাড়ি ও পায়ে সাদা হাওয়াই চটি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাড়ি ধনেখালির তাঁত। ওই শাড়ি ছাড়া তিনি অন্য কোনো শাড়ি  পরেন না। অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপনেই অভ্যস্ত তিনি। একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও কালীঘাটের টালির চালের একতলা বাড়িটি ছেড়ে যাননি। বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিতে এক হাঁটু জল টপকে বাড়ি ঢুকতে হয়। যা দেখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। মমতার সাধারণ জীবনযাপনের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন বাজপেয়ী।

করেছেন একাধিক চাকরি

রাজনীতিতে আসার আগে একাধিক চাকরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনেকেই জানেন না, স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছেন। অভাবের সংসার চালাতে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রাইভেট টিউটর, এমনকি সরকারি দুগ্ধ কেন্দ্রে সেলসগার্লের কাজও করেছেন তিনি।

রাজনীতি ছাড়া সাহিত্যচর্চাও করেন মমতা। অবসর সময়ে বই লেখেন। উপন্যাস, গল্প, কবিতা। এ ছাড়া তিনি ভালো আঁকেনও। চটজলদি কবিতা লেখার প্রতিভা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের স্লে­াগান, কথা সব ততক্ষণাৎ বলেন। আগে থেকে ঠিক করে রাখেন না। গ্রাম বাংলার শিল্প ও সাহিত্য মমতার খুবই প্রিয়। কাউকে উপহার দিলে, গ্রাম বাংলার হস্তশিল্পই উপহার দেন।

মমতার রাজনৈতিক গাইড

রাজ্যের বহু প্রবীণ নেতা, যারা একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাইড ছিলেন, তারা এখন অনেকেই মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বলা হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সেই সুব্রত মুখোপাধ্যায় মমতা সরকারের মন্ত্রী।

 

সারদা কেলেঙ্কারি

২০১৩ সালের শুরুর দিকে সারদা কেলেঙ্কারির খবরে পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া সরগরম হয়ে ওঠে। তারপর যতই দিন গড়িয়েছে এ কেলেঙ্কারির উত্তাপ বেড়েছেই। এমনকি এ অর্থ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটিও। যদিও তিনি বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিরোধী দলের চক্রান্ত বলে দাবি করেছেন। তবে অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে আদালতে নিজের দলের নেতা ও এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন কুনাল ঘোষের বিস্ফোরক বক্তব্যে। হাজার কোটি রুপির সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সংকটে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারের আওতায় আসেন মমতার তৃণমূলের অভিযুক্ত নেতা। তৃণমূলের বরখাস্ত হওয়া সাংসদ কুনাল কলকাতার সিবিআই আদালতে হাজিরা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘সারদা মিডিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধা যদি সবচেয়ে বেশি কেউ পেয়ে থাকেন, তার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ তার আগে বিচারকের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সরাসরিই এ দাবি তোলেন। শুধু তাই নয়, তিনি সারদাপ্রধান সুদীপ্ত সেনের মুখোমুখি করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুরোধ করেন আদালতে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এত বড় আকারের দুর্নীতির অভিযোগ বিস্মিত করে অনেককে। কারণ মমতাকে ‘সততার প্রতীক’ হিসেবেই জানেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ। তবে এ অভিযোগ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন মমতা। স্বভাবসুলভ স্পষ্ট কথাই বলেন তিনি।

মমতা উল্টো অভিযোগ করেন, সংবাদমাধ্যমগুলো তার এবং তার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার শুরু করেছে। নিজ দলের দুর্নীতিপরায়ন ও সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত নেতাদের সম্পর্কে বলেন, দলের ভিতর ‘পচা আম’ থাকলে তাদের বাদ দেওয়া হবে।

সারদা কেলেঙ্কারির খবর আসে পশ্চিমবঙ্গের তারা নিউজ, তারা মিউজিক ও সাউথ এশিয়া টেলিভিশন বন্ধ হয়ে গেলে। এর মালিক প্রতিষ্ঠান সারদা গ্রুপের কেলেঙ্কারির খবর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। এ গ্র“পের এমএলএম কোম্পানি ‘সারদা সম্পদ’ অল্প সময়ে বেশি লাভের লোভ দেখিয়ে বেআইনিভাবে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি রুপি হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

 

এক নজরে

নাম :  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম তারিখ  : ৫ জুন ১৯৫৫

জন্মস্থান  : কলকাতা

রাজনৈতিক দলের নাম  : সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস

শিক্ষা  : স্নাতকোত্তর

পেশা  :  রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী

পিতা  : প্রমীলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়

মা  :  গায়ত্রী দেবী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর