বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অবশেষে বাগদাদি অধ্যায়ের অবসান

তানভীর আহমেদ

অবশেষে বাগদাদি অধ্যায়ের অবসান

তার মাথার দাম ঘোষিত হয়েছিল ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তার নেতৃত্বেই পশ্চিম সিরিয়া  থেকে পূর্ব ইরাক পর্যন্ত ৩৪ হাজার বর্গমাইল এলাকা দখল করে আইএস। এক সময়ের মেধাবী কোরআনের শিক্ষক বাগদাদি  আফগানিস্তানে গিয়ে নেন জিহাদি প্রশিক্ষণ। লাদেনের মৃত্যুর পর শুরু হয় তার জঙ্গি সাম্রাজ্যের শাহেনশাহী...

 

আত্মঘাতী হয়েছিলেন

যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ৩৫ বার বাগদাদিকে হত্যার দাবি করেছে। প্রতিবারই ছিল কথার কথা। অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ শক্তভাবেই দাবি করলেন, ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে আইএস প্রধানের। হোয়াইট হাউস থেকে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কিন অভিযান চলাকালীন বিপদ বুঝে আত্মঘাতী জ্যাকেট পরে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে এই জঙ্গি নেতা। এই ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছিল মার্কিন সেনারা। পরীক্ষার রিপোর্টে বাগদাদির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান ট্রাম্প।

ট্রাম্পের উচ্ছ্বাস

বাগদাদিকে হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে উল্লাস হয়েছে তা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানে বাগদাদির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে গিয়ে আবারও কথার বোমা ফাটিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোজাসাপ্টা বলে বসলেন, কুকুর ও কাপুরুষের মতো মৃত্যু হয়েছে বাগদাদির। এ ছাড়াও তিনি বলেছেন, বাগদাদি ছিল এক দুর্বল ও হতাশ ব্যক্তি। এখন তার বিদায় হয়েছে।

 

ইরান ও রাশিয়ার উপহাস

আইএস প্রধান বাগদাদিকে হত্যার দাবি যুক্তরাষ্ট্র কতবার করেছে তা গণনা করতে হিমশিম খেতে হয়। প্রতিবারই হত্যার ঘোষণা তারপর, সমর্থিত সূত্রের দুর্বলতা বলে পাশ কাটিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। কখনই তা প্রমাণ করতে পারেনি। বাগদাদিকে হত্যার ঘোষণা ২০১৪ সালেও করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বছর বছর তাকে হত্যার দাবি করলেও তার প্রমাণ তাদের হাতে কখনই ছিল না। উল্টো নতুন ডেরায় আইএস প্রধানকে খুঁজে পেতে স্পেশাল ফোর্স মরিয়া ছিল। ২০১৭ সালের মে মাসের শেষ দিকে সিরিয়ার রাক্কা শহরে রুশ বিমান হানায় ইসলামিক স্টেট প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির মৃত্যু হয় বলে বহু আগেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়ের তরফে দাবি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারিতে বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৭ সালের মে মাসে একটি বিমান হামলায় আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি আহত হন। বাগদাদির গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাগদাদিকে অগণিতবার হত্যার ঘোষণাতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে উপহাস করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে ইরানের তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ আজহারি জোহরমি এক টুইটবার্তায় বলেন, এটা কোনো বড় কাজ নয়।

 

কে এই বাগদাদি

ছিলেন বাগদাদের এক মসজিদের ইমাম

আইএস প্রধান বাগদাদি। এই পরিচয়ের বাইরে তাকে নিয়ে খুব বেশি কিছু জানে না সাধারণ মানুষ। আবু বকর আল বাগদাদির আসল পরিচয় নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ধারণা করা হয়, ১৯৭১ সালে ইরাকের সামারার কাছে একটি সুন্নি পরিবারে তার জন্ম। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কোরআনিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই তিনি মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। সে সময় সাধারণ মানুষকে কোরআন শিক্ষা দিতেন বলেও ধারণা করা হয়। পাশাপাশি দারুণ ফুটবল খেলতেন। স্থানীয় ফুটবল তারকাও হয়ে ওঠেন একসময়। বাগদাদের এক মসজিদের ইমামতি করেছেন তিনি। তার এক চাচার হাত ধরেই তিনি ইরাকে মুসলিম ব্রাদারহুড আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। অন্য জীবন শুরু হয় তার। ২০০০ সাল নাগাদ সালাফি জিহাদিদের সঙ্গে যোগ দেন বাগদাদি। এরপর আফগানিস্তানে জিহাদি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনী যখন ফের ইরাকে অভিযান শুরু করে তখন জঙ্গি রূপে দেখা মেলে বাগদাদিকে। ২০০৪ সালে তাকে প্রথম এবং শেষবারের জন্য গ্রেফতার করেছিল মার্কিন বাহিনী। জেলে প্রায় ১০ মাস কাটান তখন। জেলে খুব কম কথা বলতেন। বেশিরভাগ সময়েই ধর্মীয় চর্চা চালিয়ে যেতেন তিনি। জেলের ভিতর তিনি জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরির দারুণ সুযোগ পেয়ে যান। বিভিন্ন বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ঘটে। বুক্কা ক্যাম্প থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ইরাকের আল কায়েদাগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাগদাদি। পরে অবশ্য তিনি আল কায়েদাকে ভেঙে আইএস গড়ে তুলেছিলেন। বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে এক জায়গায় আনার ক্ষমতা, ধর্মীয় পড়াশোনা সব কিছু মিলিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী নেতা। ২০১০ সালের এপ্রিলে বাগদাদিকে নতুন আমির ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন নেভি সিলের অপারেশনে নিহত হন আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। তারপর আল কায়েদার দায়িত্ব নেন আয়মান আল জাওয়াহিরি। অন্যদিকে ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় তখন দখলদারি  আইএসের। আল নুসরা নামে আরেকটি জঙ্গি সংগঠন সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই দলের সঙ্গে যোগ দেন বাগদাদি। আল কায়েদার সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে আইএসের। এটা অবশ্য বাগদাদির জন্য ভালোই হয়। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে ইরাকের মসুল দখল করে নেয় আইএস। এই সময়েই নিজেকে ‘খলিফা’ হিসেবে ঘোষণা করেন বাগদাদি। শুরু থেকেই একের পর এক নৃশংসতার নজির তৈরি করেছে আইএস। এলাকা দখলের পর, গণহত্যা, নির্মমভাবে অত্যাচারের কোনো নিদর্শনই বাদ রাখেনি তারা। ব্যাংক, তেলের খনিসহ বহু সরকারি সম্পত্তিও দখল করে নেয় তারা। বাগদাদির নেতৃত্বেই গোটা দুনিয়ায় নানা প্রান্তে একের পর এক হত্যাকান্ড, হামলায় আইএস সৃষ্টি করে আতঙ্ক।

 

এক ঘণ্টার অপারেশন

বাড়ির ভিতরে বাগদাদিকে না পেয়ে বোকা বনে যান মার্কিন সেনারা। এবার তারা ছেড়ে দেন সঙ্গে থাকা প্রশিক্ষিত কুকুরটিকে...

ওয়ার রুমে পৌঁছেই সবুজ সিগন্যাল দিলেন ট্রাম্প। ডেল্টা ফোর্সের সদস্যরা প্রস্তুত। বাগদাদির সঙ্গে এক দল জঙ্গিও আছে। তাই কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না- এ কথা নিশ্চিত। সেনাকর্তার সবুজ সংকেত পেয়ে রবিবার ভোর রাতে পশ্চিম ইরাকের আল আসাদ বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেন। আটটি হেলিকপ্টার ছিল তাদের। তার মধ্যে ছিল মার্কিন সিএইচ-৪৭ কপ্টারও। এ অভিযানের সময় সিরিয়া ও রুশ আকাশসীমার ওপর দিয়ে যেতে হয়েছে মার্কিন  হেলিকপ্টারগুলোকে। বাগদাদি যে বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন রাতের বেলায় মার্কিন স্পেশাল ফোর্স সেখানে ওই অভিযান চালায়। হেলিকপ্টার থেকেই প্রায় ৩০ মিনিট গুলি ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মার্কিন সেনারা। এরপর লাফিয়ে নেমে আরও কয়েক হাজার গুলি ছুড়ে তারা। আমেরিকান কমান্ডোরা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। দরজা দিয়ে না ঢুকে দেয়াল ভেঙে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন। বাড়ির ভিতরে ছিল এক সুড়ঙ্গ। বাগদাদি অবস্থা বেগতিক দেখে সেই সুড়ঙ্গ ধরে লুকানোর চেষ্টা করেন। কারণ আর কিছুই নয়, তার সঙ্গে রয়েছে তার তিন সন্তান। বাড়ির ভিতরে বাগদাদিকে না পেয়ে বোকা বনে যান মার্কিন সেনারা। এবার তারা ছেড়ে দেন সঙ্গে থাকা প্রশিক্ষিত কুকুরটিকে। কুকুরই খুঁজে দেয় সুড়ঙ্গ। সময় ফুরিয়ে আসছে বুঝতে বাকি থাকে না বাগদাদির। আইএস  নেতা তার শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক ফাটিয়ে দেন। বিস্ফোরণে সুড়ঙ্গটি তার শরীরের ওপর ধসে পড়ে। বাগদাদির শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সঙ্গে থাকা তার তিন শিশু সন্তানও নিহত হন সেসময়। গোলাগুলিতে আইএসের আরও কিছু নেতাও নিহত হন। ছিন্নভিন্ন শরীরের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিয়ে আসে মার্কিন সেনারা। কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সও এই অভিযানে যোগ দিয়েছিল।

 

মার্কিন সেনাদের অভিযান লাইভ দেখেছেন ট্রাম্প

আইএস প্রধান বাগদাদিকে ধরতে গত পাঁচ বছর ধরে ছুটছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তার খোঁজ পেতে বড় অঙ্কের পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। গত ৫ বছর ধরে নানা জায়গায় হামলা চালিয়ে বাগদাদিকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। আইএস বিরোধী অভিযানে রাশিয়া যোগ হলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে আইএস। একের পর এক দখলকৃত শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করে তারা। যুক্তরাষ্ট্র তিন বছর আইএস নির্মূলের সেনা অভিযান চালিয়ে যা করতে পারেনি রাশিয়া তা করে দেখায় মাত্র তিন মাসে। আইএস নির্মূলে তাই বাগদাদিকে হত্যা ও গ্রেফতারে যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই মাঝে মার্কিন নাগরিক অপহরণ, হত্যার ঘটনায় বাগদাদি হয়ে ওঠেন মোস্ট ওয়ান্টেড। কিন্তু কিছুতেই বাগদাদির হদিস মিলছিল না যুক্তরাষ্ট্রের। দীর্ঘ চেষ্টার পর অবশেষে সাফল্য পেলেন তারা। বেশ কয়েকদিন ধরেই তার গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলেন মার্কিন  গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার গভীর রাত। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের হাতে তথ্য পৌঁছাল, বাগদাদি এখন সিরিয়ার ইদলিবের বারিশা এলাকায়। সঙ্গে রয়েছে তার পরিবারও। সূর্য ওঠার আগেই প্রস্তুত হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স। শুক্রবার দিন পেরিয়ে রাত। ডোনাল্ড ট্রাম্প তখন মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাই জারেদ কুশনেরের দশম বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রয়েছেন। পরদিন শনিবার সকালে উঠে ভার্জিনিয়ায় গলফ মাঠে গেলেন খেলতে। ভাবটা এমন তিনি কিছু জানেন না। গলফ খেলে বিকালে পৌঁছলেন ওয়ার রুমে। ট্রাম্প যখন ওয়ার রুমে তখন যুক্তরাষ্ট্রের কেউই আঁচ করতে পারেননি কী হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ সেদিন মজে ছিল বেসবল ম্যাচে। ন্যাশনাল পার্কে ওয়াশিংটনের সঙ্গে হিউস্টনের টানটান বেসবল ম্যাচ ছিল সেদিন। ওয়াশিংটনবাসী যখন খেলা দেখছে মার্কিন ডেল্টা ফোর্সের সদস্যরা তখন হেলিকপ্টারে করে রওনা হয়েছে। বাড়ির কাছে পৌঁছেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ডেল্টা ফোর্সের সদস্যরা। মোট দুটি বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। অভিযানে একটা বাড়ি গুঁড়িয়ে যায়। মার্কিন বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক অস্ত্র ব্যবহার করে। বাগদাদি যখন সন্তানদের নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছেন, ওয়ার রুমে বসে সেই অভিযানের দৃশ্য লাইভ দেখছিলেন ট্রাম্প। তিনি দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ‘মনে হচ্ছিল যেন সিনেমা দেখছি।’ যে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ওই অভিযান চালিয়েছে আমেরিকা সেই প্রযুক্তির তারিফও করেন তিনি। গোটা অপারেশন শেষ হওয়ার পর অন্তত দুই ঘণ্টা বাগদাদির গোপন আস্তানায় তল্লাশি চালায় মার্কিন বাহিনী। বাগদাদির ওই আস্তানা থেকে কয়েক জন শিশুকেও উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বাহিনী ফিরে আসতেই তা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মার্কিন জেট বাহিনী বাগদাদির ওই গোপন ঘাঁটি লক্ষ করে ছয়টি রকেট বিস্ফোরণ ঘটায়। তাতে গোটা এলাকাই কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসীর ভাষায়, গুলির বৃষ্টি হয় ওখানে।

 

যে কুকুর খুঁজে দিল বাগদাদিকে

বাগদাদিকে হত্যার পর ট্রাম্পের উচ্ছ্বাস ফুটে ওঠে টুইটারেও। টেলিভিশনে বাগদাদিকে হত্যার ঘোষণার পরপরই ট্রাম্প টুইটারে একটি কুকুরের ছবি প্রকাশ করেন। সঙ্গে তিনি লিখেন, ‘কুকুরটির আসল পরিচয় গোপন রেখে জানাচ্ছি, এই অসাধারণ কুকুরটি আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে গ্রেফতার ও হত্যায় দুর্দান্ত ভূমিকা রেখেছে।’ পুরো ঘটনায় জানা যায়, হেলিকপ্টার থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরই বাগদাদি গোপন সুড়ঙ্গে লুকিয়ে পড়েন। তাকে খুঁজে পেতে এই কুকুরটি দারুণ ভূমিকা রাখে। কুকুরটির পিছু নিয়েই মার্কিন ডেল্টা ফোর্সের সেনারা বাগদাদিকে খুঁজে পায়। সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় পৌঁছে বাগদাদিকে আটকে ফেলে মার্কিন সেনারা। সেময় সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটান বাগদাদি। তিনি ও তার তিন সন্তানের দেহ এ সময় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বাগদাদিকে তাড়া করা কুকুরটিও খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিল তখন। যে কারণে কুকুরটি মারাত্মকভাবে আহত হয় বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া। ছবি প্রকাশের পরই কুকুরটি ভাইরাল হয়ে ওঠে।

 

সহযোগীই ফাঁসান বাগদাদিকে

২০১৮ সালে ইরাকি গোয়েন্দারা প্রথম একটি সূত্র পান। তুরস্কের কর্তৃপক্ষ বাগাদাদির সহযোগী ইসমায়েল আল ইথাবিকে গ্রেফতারের পর তাকে ইরাকের হাতে তুলে দিয়েছিল। এই ইথাবিই ইরাকি কর্মকর্তাদের জানান, শনাক্তকরণ এড়াতে বাগদাদি অনেক সময় শাকসবজি ভরা চলন্ত মিনিবাসে বসে তার কমান্ডারদের সঙ্গে কৌশল নিয়ে আলোচনায় বসতেন। ২০১৭ সালে আইএস ব্যাপক বিপর্যয়ের শিকার হলে ইথাবি তার সিরীয় স্ত্রীকে নিয়ে ইরাক থেকে সিরিয়ায় পালিয়ে যান। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি ইদলিবকে শনাক্ত করা হয়। তখন বাগদাদি তার পরিবার ও তিন ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ এ গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যাচ্ছিলেন। সিরিয়ায় থাকা গুপ্তচররা ইদলিবের বাজারে ইথাবিকে পেয়ে যায়। গুপ্তচররা ইথাবিকে অনুসরণ করে বাগদাদি যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তার খোঁজ পেয়ে যান। সব তথ্যই সিআইএ-এর কাছে পৌঁছায়। সিআইএ স্যাটেলাইট ও ড্রোন ব্যবহার করে পাঁচ মাস ধরে ওই এলাকার ওপর নজরদারি করে বাগদাদির অবস্থান নিশ্চিত করে।

 

যে নারীর কারণে মরতে হলো বাগদাদিকে

বাগদাদিকে হত্যার সামরিক অপারেশনের নাম ছিল কায়লা মুয়েলার। কে এই কায়লা মুয়েলার? এই মার্কিন নারীর ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছিল বাগদাদি। কায়লা মুয়েলার ছিলেন এক দাতব্যকর্মী।

২৬ বছর বয়সী কায়লা মুয়েলার ২০১২ সালে সিরীয় শরণার্থীদের জন্য কাজ করতে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে এসেছিলেন। ২০১৩ সালে সিরিয়ার আলেপ্পোতে এসে তিনি নিখোঁজ হন। তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করেছিল পশ্চিমা মিডিয়া। প্রায় ১ বছর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালে বাবা-মাকে পাঠানো এক চিঠিতে মুয়েলারের কথা জানা যায়। সেই চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তোমরা কান্নাজড়িত যেসব চিঠি আমাকে পাঠিয়েছ, সেগুলোর কথা চিন্তা করে আমি  কেবল চিঠিই লিখতে পারি। আমি জানি,  তোমরা তীব্রভাবে আমাকে ফিরে পেতে চাও। আমি সে জন্য চেষ্টা করছি।’ ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিশ্চিত করেন যে, মুয়েলার নিহত হয়েছেন।  পেন্টাগন দাবি করছিল, আইএস তাকে হত্যা করেছে। বাগদাদি নিজেই মুয়েলারকে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছিলেন কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা।  কায়লাকে হত্যার প্রতিশোধ নিতেই বাগদাদির পিছু নেয় মার্কিন গোয়েন্দারা।

সর্বশেষ খবর