শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কে কীভাবে টাকা উড়ায়

তানভীর আহমেদ

কে কীভাবে টাকা উড়ায়

এক সন্ধ্যা প্রেম-বিলাসে ৪০ কোটি

প্রেমে নাকি মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। তাই বলে পছন্দের মানুষটির সঙ্গে প্রেম-বিলাসে এক সন্ধ্যা সময় কাটাতে যদি খরচ হয় ৪০ কোটি টাকার বেশি, তাহলে একটু বেশি বেশি হয়ে গেল মনে হচ্ছে। আমাদের কাছে একটু বেশি শোনালেও হলিউডের তুমুল জনপ্রিয় সুন্দরী মডেল ও অভিনেত্রী কিম কার্দেশিয়ানের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে ৪০ কোটি টাকা ঢেলে দিতে একটুও কার্পণ্য বোধ করেননি রিচার্ড লাগনার। অস্ট্রেলিয়ান এ বিলিয়নিয়ারের আজব বাতিক রয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায় একজন সেলিব্রেটির সঙ্গে একটু নাস্তা করা, নাচ-গান না করলে তার চলেই না। তাই বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা সেলিব্রেটিদের দাওয়াত করে আনেন তিনি। সে তালিকায় বহু সুপারস্টার এলেও কিম কার্দেশিয়ান আসার খবরটা চাউর হয় বেশি। কারণ কিম আমন্ত্রণ পাওয়ার পরই জানিয়ে দেন এ ধরনের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাকে কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা দিতে হবে, না হলে তার আশা ছাড়তে হবে। এ কথা শুনে পিছিয়ে থাকার লোক নন রিচার্ড। সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। কিম কার্দেশিয়ান তার  অনুষ্ঠানে এলেন। ভালোবাসার কথাও শুনলেন। একসঙ্গে নাস্তা করলেন। ক্যামেরাম্যানদের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ালেন। সবকিছু হলো শুধু নাচটা হলো না। কিম কার্দেশিয়ান সাফ জানিয়ে দিলেন এ হওয়ার নয়। এক সন্ধ্যা প্রেম-বিলাসে ৪০ কোটি টাকা খরচ করে রিচার্ড বললেন, নাচ হলো না। সময়টা বিরক্তিকর কেটেছে।

 

১২৫ কোটি টাকার নাম

খ্যাতি কে না চায়। নাম কামানোর বহু উপায় রয়েছে। আর সেই নাম পৃথিবীর বুকে খোদাই করে রাখার কথা ভাববার আগে পকেটে থাকা চাই ১২৫ কোটি টাকা। কিন্তু এ টাকাও খুব বেশি নয় অনেকের জন্য। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ও নগদ অর্থ যাদের রয়েছে তাদেরই একজন দুবাইয়ের শেখ হামাদ বিন হামদান আল নাইয়ান। প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এক দ্বীপজুড়ে খোদাই করেছেন নিজের নাম। এ খবর বিশ্বের প্রথম সারির সব মিডিয়াতেই এসেছে গুরুত্ব সহকারে। গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই, কারণ তার নাম এতটাই সুবিশাল যে সেটি চাঁদ থেকেও স্পষ্ট দেখা যায়। তার উদ্দেশ্য সফল এ কারণেই। দ্বীপজুড়ে এ নামের দৈর্ঘ্য ২ মাইল পর্যন্ত। ৬৩ বছর বয়সী এ ধনকুবের নিজের নাম পৃথিবীর বাইরে থেকেও স্পষ্ট দেখতে চান- এ অভিপ্রায় জানানোর পর বিশ্বের নামিদামি আর্কিটেক্ট ও ডিজাইনারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা বহু নকশা করার পর এ দ্বীপটি বেছে নেন এবং তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর গুগল আর্থ ব্যবহার করে ও চাঁদ থেকেও নামটি স্পষ্ট দেখা যায়। তবে এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে তার নামটি অস্পষ্ট করে রাখা হয়।

 

একবেলা খাবারেই ৪০ লাখ

মধ্যবিত্ত জীবনে খাবার খেতে গিয়ে আগপিছ কত কিছু ভেবে নিতে হয়। তার চেয়েও যাদের টাকা টান তারা একটু দামি কিছু খেতে চাইলে দশবার মানিব্যাগের দিকে তাকিয়ে তারপর রেস্টুরেন্টে খেতে বসেন। কিন্তু একটু দামি হোটেলে যারা খাবার খান তাদের সে চিন্তা না করলেও চলে, যদি ব্যাংকে সহস্র কোটি টাকা থাকে। রাশিয়ান ব্যবসায়ী সহস্র কোটিপতি রোমান আব্রাহিমভিচ রেস্টুরেন্টে খেতে বসে কী চিন্তা করেন তা জানতে চাইবেন অনেকেই। ম্যানহাটনের এক রেস্টুরেন্টে অল্প কিছুক্ষণের জন্য বসেছিলেন। উদ্দেশ সামান্য নাস্তা করা। রেস্টুরেন্টে বসে তিনি খাবার অর্ডার করা শুরু করলেন আর রেস্টুরেন্ট বেয়ারাদের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল। যা চাইলেন তাই এনে টেবিলে হাজির করল তারা। খাবার শেষে ছোট্ট বিলের কাগজটি হাতে নিয়ে কোনো ভাবান্তর হলো না রোমান আব্রাহিমভিচের। প্রায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি বিল হয়েছিল তার। পুরো টাকা শোধ করে বেরিয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু বিলের কাগজটি আর গোপন রইল না। মিডিয়াকর্মীদের বদৌলতে পৃথিবীর মানুষ জানল এ লোকের এক বেলা খেতে কত টাকা লাগে।

 

৫০০ কোটি টাকার বিয়ে

বিয়ের উৎসব আয়োজনে কম-বেশি সবাই খরচ করে থাকেন। তবে সেই খরচের পরিমাণ যদি হয় ৫০০ কোটি টাকার বেশি, তবে নিশ্চয়ই বিস্মিত হতে হয়। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে এমনই বিশাল খরচ করেন ভারতীয় ধনকুবের লক্ষ্মী মিত্তাল তার মেয়ের বিয়েতে। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের ধনী পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ভারতের স্টিল ব্যবসায়ী লক্ষ্মী মিত্তাল পরিবার। এ পরিবারের বিয়ে মানেই জাঁকজমক আর বর্ণাঢ্য আয়োজনের সমাহার। ২০০৪ সালে লক্ষ্মী মিত্তালের কন্যা ভানিশার বিয়ের সময় প্যারিসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন কাইলি মিনোগ। রাতে ভাড়া করা হয় পুরো আইফেল টাওয়ার। আইফেল টাওয়ার থেকে আতশবাজি ছোড়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেন তিনি। এ ছাড়া মাত্র ১ হাজার অতিথির খাবারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সতেজ খাদ্যপণ্য নিজস্ব বিমানে সেখানে পৌঁছানো হয়। শুধু খাবারই ছিল কয়েকশ কোটি টাকার। অনুষ্ঠানের জন্য পুরো ফ্রান্সের বিখ্যাত ভার্সেলিস প্রাসাদটি ভাড়া নেন তিনি। বিয়ের জন্য সোনালি রং বাছাই করার কারণে পুরো প্রাসাদ ও আসবাব মুড়ে দেওয়া হয় সোনালি রঙে। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার হয় খাটি স্বর্ণ।

 

অবকাশ যাপনে ৪০০ কোটি

মাইক্রোসফটের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সিমোনি অবকাশ যাপনের জন্য পৃথিবীর বাইরে থেকে ঘুরে আসাটাকেই শ্রেয় মনে করেন। ছুটি কাটাতে মহাকাশ ভ্রমণে তার ব্যয় ধরা হয় ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু এ টাকা তার জন্য খুব বেশি কিছু ছিল না।

অ্যাডভেঞ্জার ও উত্তেজনাপ্রিয় এ মানুষটি ছুটি কাটাতে মহাকাশ বেছে নিয়েছিলেন এ কারণেই। পৃথিবীর বাইরে দাঁড়িয়ে পৃথিবীকে একনজর দেখা ও তারার মেলা দেখার ইচ্ছা তার রয়েছে। আর সেটা পূরণ করতেই এ মহাকাশ যাত্রার প্রস্তুতি। ভ্রমণের জন্য মহাকাশ যে সহস্র কোটিপতির পছন্দের জায়গা হয়ে উঠছে, সেটাই প্রমাণ মিলল এখান থেকে। বিভিন্ন ভ্রমণ কোম্পানি সেই থেকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ নিয়ে। ২০০১ সালে রাশিয়ান নভোচারীদের পর শুধু বেড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক স্পেস টার্মিনালে কেউ যায়নি। মাইক্রোসফটের ওয়ার্ড ও এক্সেলের দেখভাল করা এ সফটওয়্যার নির্মাতা মহাকাশ ভ্রমণের জন্য সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার চুক্তিতে যাওয়ার পর থেকে একজন দক্ষ নভোচারী হওয়ার জন্য অনুশীলন করেন এবং দ্বিতীয়বারের মতো মহাকাশ থেকে ঘুরে আসেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর