রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর যত রেল দুর্ঘটনা

সাইফ ইমন

ভয়ঙ্কর যত রেল দুর্ঘটনা

সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগে বিপ্লব নিয়ে এসেছে রেল ব্যবস্থা। নিরাপদ রেলভ্রমণ সবার কাম্য হলেও প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। কয়েক দিন আগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়েও নানা সময়ে ঘটেছে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রেল দুর্ঘটনা। ২০০৪ সালের  সুনামিতে শ্রীলঙ্কায় ‘কুইন সি’ রেল দুর্ঘটনায় প্রায় দুই হাজার মানুষ মারা যায়। এখন পর্যন্ত এটিই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী রেল দুর্ঘটনা।  ইতিহাসের মর্মান্তিক কয়েকটি রেল দুর্ঘটনা নিয়ে আজকের রকমারি-

 

ভালভানো [ইতালি],

মৃতের সংখ্যা : ৫০০

ভালভানো রেল দুর্ঘটনা ইতালির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। ১৯৪৪ সালের ২-৩ মার্চ ঘটে এই দুর্ঘটনা। তাই একে ভালভানো রেল দুর্ঘটনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই দুর্ঘটনায় ৫০০ মানুষ নিহত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনযাত্রীদের উদ্ধার করতে বিলম্ব হওয়ায় কার্বন মনোঅক্সাইডের প্রভাবে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়। ট্রেন দুর্ঘটনার ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বিহারের ট্রেন দুর্ঘটনা [ভারত]

মৃতের সংখ্যা : ৮০০

১৯৮১ সালে বিহারের রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০০ মানুষ নিহত হয়। প্রায় এক হাজার যাত্রী নিয়ে বিহারের বাঘমতি নদীতে পড়ে যায় একটি ট্রেন। ট্রেনটি যখন সেতুর কাছে এসেছিল ঠিক সেই মুহূর্তে একটি গরু  রেললাইন পার হচ্ছিল। গরুটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গেলে রেলের নিয়ন্ত্রণ হারায় চালক। ৮০০-এর অধিক যাত্রী নিহত হয়েছিল এ দুর্ঘটনায়। দিনটি ছিল ১৯৮১ সালের ৬ জুন। ট্রেনটি ছুটে চলছিল ৪০০ কিলোমিটার গতিতে। বৃষ্টি ও দমকা হাওয়াও ছিল। চালক চেয়েছিলেন গরুটিকে বাঁচাতে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুরো ট্রেনটিই রেললাইন থেকে নিচে পড়ে যায়।

সিউরেয়া [রোমানিয়া]

মৃতের সংখ্যা : ৬০০

১৯১৭ সালে সিউরেয়া রেল দুর্ঘটনায় নিহত হয় প্রায় ৬০০ মানুষ।  রোমানিয়ার সিউরেয়া স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকায় একটি ট্রেনে আগুন ধরে যায়। এতে অন্তত ৬০০ যাত্রী নিহত হন। তখন চলছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ট্রেনের যাত্রী ১০০০ জনের সবাই ছিল বিশ্বযুদ্ধে আহত সৈনিক। ট্রেনের ব্রেক ঠিক সময়ে কাজ না করায় চালক নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি। ফলে একটি বগির ওপর আরেকটি বগি উঠে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এমনভাবে ট্রেনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেখান থেকে নিহতদের বের করাও সম্ভব হয়নি পুরোপুরি। অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে নিহতদের মধ্যে যাদের উদ্ধার করা গেছে তাদের ঠিক মতো শনাক্তই করা যায়নি। কারও হাত, কারও পা, কারও মাথা কিংবা কারও দেহ পুরোটাই খ-িত হয়ে যায়।

উফা [রাশিয়া]

মৃতের সংখ্যা : ৫৭৫

রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা বলা হয় উফা রেল দুর্ঘটনাকে। নিহত হয় প্রায় ৫৭৫ জন। উফা শহরে ঘটনার দিন দুই দিক থেকে দুটি ট্রেন একে অপরকে অতিক্রম করে যাচ্ছিল। দুটি ট্রেনের যাত্রী ছিল প্রায় ১৫০০। ট্রেন লাইনের নিচ দিয়ে চলে গিয়েছিল একটি লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস পাইপলাইন। হঠাৎ গ্যাসের লাইনটি লিক হয়ে গেলে ঘটে যায় সর্বনাশ।  মুহূর্তেই লেগে যায় আগুন। আর সেই আগুন এক ট্রেন থেকে আরেক ট্রেনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূর থেকেও সেই গ্যাসের বিস্ফোরণ দেখা গিয়েছিল। প্রাণ হারায় শত শত লোক।

সেইন্ট-মিশেল-ডি-মারিয়েনে [ফ্রান্স]

মৃতের সংখ্যা : ৭০০

প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছিল সেইন্ট-মিশেল-ডি-মারিয়েনে রেল দুর্ঘটনায়। ফ্রান্সে ১৯১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ঘটে দুর্ঘটনাটি। প্রচ- গতির কারণে আল্পস পর্বতের পাশ দিয়ে যাওয়া ফ্রান্সের সৈন্যবাহী একটি ট্রেনের ব্রেকে আগুন ধরে যায়। ধারণা করা হয় এ দুর্ঘটনায় যাত্রীদের সবাই নিহত হয়। ঘটনার দিন রাতে অন্তত হাজারখানিক সৈন্য নিয়ে ফ্রান্সে যাচ্ছিল একটি ট্রেন। প্রথম বিশ^যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই সৈন্যরা দীর্ঘদিন লড়াই করে বাড়ি ফিরছিল। বছর শেষের টানা ১৫ দিনের ছুটি কাটাতে যাচ্ছিল তারা। বাড়ি ফেরা আর হয়নি তাদের। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সৈন্যরা বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল। বিপুল সংখ্যক সৈন্যের জন্য পর্যাপ্ত ইঞ্জিন ছিল না। ফলে দুটি ট্রেনের বগি একটি ইঞ্জিনের সঙ্গেই জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। মন্ট ক্যানিস টানেল পাড়ি দিয়ে ট্রেনটি যখন মডেন স্টেশনে পৌঁছায় তখন এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় আরও দুটি বগি। সব মিলিয়ে ট্রেনের বগির সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯টি। ট্রেনটির পরবর্তী গন্তব্য চেম্বারি স্টেশন যেখানে অপেক্ষা করেছিল সৈন্যদের পরিবারের সদস্যরা। ১৯ বগিতে ট্রেনটি প্রায় সাড়ে তিন শ মিটার দীর্ঘ হয়।

লৌহনির্মিত চেসিসের ওপর কাঠের অবকাঠামোযুক্ত বগিগুলো আর ৯৮২ জন যাত্রীসহ ট্রেনটির সম্মিলিত ওজন হয়েছিল ৫২৬ টন। 

ঘটনার দিন রাত সোয়া ১১টায় মডেন স্টেশন ছাড়ে ট্রেনটি। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ট্রেনের গতি বাড়িয়ে দিয়েছিল চালক। প্রতি ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল ট্রেনটি যা ৫০০ টন ওজনের বেশি ট্রেনটির জন্য ছিল অস্বাভাবিক। যেখানে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারিত ছিল মাত্র ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ফলে একটি লৌহনির্মিত সেতু পাড়ি দেওয়ার সময় ট্রেনের বগিগুলো লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। সৈন্যদের সঙ্গে পুড়ে যেতে শুরু করে বাড়ি ফেরার স্বপ্ন। বগিগুলো একটির ওপর অন্যটি গিয়ে আছড়ে পড়তে শুরু করে। সামরিক সরঞ্জাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। বিস্ময়কর ব্যাপার হলোÑ ট্রেনটির চালক দুর্ঘটনার কিছুই টের পায়নি। দু-একটি বগি নিয়ে তিনি দিব্যি সেইন্ট জিন ডি মারিয়ান স্টেশনে গিয়ে থামেন। এরই মধ্যে মারা গিয়েছিল ৭০০ জন সৈন্য। ট্রেন দুর্ঘটনার ইতিহাসে অন্যতম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবেই পরিচিত ‘সেইন্ট মিশেল-ডি-মারিয়েনে রেল দুর্ঘটনা’।

গুয়াদালাজারা [মেক্সিকো]

মৃতের সংখ্যা : ৬০০

১৯১৫ সালের ২২ জানুয়ারি মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা নামক জায়গায় ঘটে এই দুর্ঘটনা। আর এতে নিহত হয় অন্তত ৬০০ মানুষ। ব্রেক ফেল থেকেই ঘটেছিল এই দুর্ঘটনা। অনেকে ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়েও পড়েছিল। এতে হতাহতের পরিমাণ আরও বেড়ে গিয়েছিল। মেক্সিকোর প্যাসিফিক উপকূলের কলিমা নামক জায়গা থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর কিছুদূর গিয়েই ট্রেনটি ব্রেক ফেল করে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রেনটি পতিত হয় একটি গভীর খাদে। অনেকেই চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপিয়েও পড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। তবে এই দুর্ঘটনায় বেঁচে গিয়েছিল প্রায় ৩০০ মানুষ। মেক্সিকোতে তখন চলছে মেক্সিকান বিপ্লব। প্রেসিডেন্ট ভ্যানেশিয়ানো কারানজার আদেশে তার পরিবারের সবাই গুয়াদালাজারা ত্যাগ করতে ট্রেনে উঠেছিল। পরিবারের  লোকজনসহ সৈন্যসামন্ত নিয়ে রওনা দিয়েছিল ট্রেনটি। দুর্ঘটনায় রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল ট্রেনটি।

কুইন সি [শ্রীলঙ্কা]

মৃতের সংখ্যা : ২০০০

কুইন সি রেল দুর্ঘটনা ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনা। প্রায় ২০০০ মানুষ নিহত হয় এই দুর্ঘটনায়। ২০০৪ সালের সুনামির দিনে প্রায় হাজার খানিক যাত্রী নিয়ে সমুদ্র থেকে মাত্র ২১৭ গজ দূরে অবস্থান করছিল একটি ট্রেন। সুনামির প্রথম ঢেউটি আসার সময়ে স্টেশনের আরও অনেক যাত্রী ট্রেনটিকে নিরাপদ ভেবে আশ্রয় নেয়। ‘কুইন সি’ হলো সেই দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী ট্রেনটির নাম। ঘটনার দিন সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে কলম্বো থেকে ছেড়েছিল ‘কুইন সি’।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেনটি যখন গলের কাছাকাছি হিক্কাডুয়া শহরের পেরালিয়া নামে এক এলাকায় পৌঁছায় তখন সুনামি এসে আঘাত হানে। সুনামির ঢেউ এবং জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে কাগজের মতো ভেসে গিয়েছিল ‘কুইন সি’। প্রায় ২০০০ জন যাত্রী নিয়ে সুনামির জোয়ারে ডুবে যায় ‘কুইন সি’। অবশ্য নিহত মানুষের সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। 

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস [ভারত]

মৃতের সংখ্যা : ১৪১

জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাটি ২০১০ সালের ২৮ মে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘটে। দুর্ঘটনায় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিতে একটি চলন্ত মালগাড়ির ধাক্কা লাগায় মোট ১৪১ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। অন্তর্ঘাত না বোমা বিস্ফোরণের ফলে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রাজ্য পুলিশ প্রধান দাবি করেন যে, নকশালপন্থি মাওবাদীরা রেলওয়ে ট্র্যাক থেকে ৪৬ সেন্টিমিটার অংশ সরিয়ে নেয়। স্থানীয় সময় রাত দেড়টা নাগাদ ১৩টি কোচবিশিষ্ট একটি দূরপাল্লার যাত্রীবাহী ট্রেন এই কেটে নেওয়া ট্র্যাকে লাইনচ্যুত হলে দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি হাওড়া থেকে মুম্বাই যাচ্ছিল। লাইনচ্যুত ট্রেনটিতে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ী।

আওয়াশ [ইথিওপিয়া]

মৃতের সংখ্যা : ৪২৮

আওয়াশ রেল দুর্ঘটনা আরও একটি মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার নাম। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার আওয়াশ শহরের কাছে ১৯৮৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটে। আফ্রিকার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহতম দুর্ঘটনা হিসেবে পরিচিত। আওয়াশ গিরিখাদের পাশ দিয়ে ছুটে যাওয়া ট্রেনটির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ৪২৮ জন নিহত হয়।

আল আয়াত [মিসর]

মৃতের সংখ্যা : ৪০০

আল আয়াত দুর্ঘটনা মিসরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্রেন দুর্ঘটনা। ২০০২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কায়রো থেকে লুক্সরগামী একটি ট্রেনের একটি বগিতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে ট্রেনের সর্বত্র। এ ঘটনায় ট্রেনটির সাতটি বগি পুড়ে যায়। আহত হয় শত শত মানুষ আর নিহত হয় ৪০০ মানুষ। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল এসে দেখতে পায় শত শত পুড়ে যাওয়া মানুষ। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়া হয়। নিহতদের মধ্যে শিশুরাও ছিল। 

টরে ডেল বিয়েরজু [স্পেন]

মৃতের সংখ্যা : ৫০০

টরে ডেল বিয়েরজু রেল দুর্ঘটনা ১৯৪৪ সালের ৩ জানুয়ারির ঘটনা। স্পেনের টরে ডেল বিয়েরজু নামের অখ্যাত গ্রামটি হঠাৎ করেই হয়ে ওঠে পুরো দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই গ্রামেই অবস্থিত ২০ নম্বর টানেলে একটি মেইল ট্রেন প্রবেশ করে ঘটনার দিন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে কয়লাবাহী আরেকটি ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আগুন ধরে যায় মুহূর্তেই। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ট্রেন দুটি। ধারণা করা হয়, ২০০ থেকে ৫০০-এর অধিক মানুষ নিহত হয় এই দুর্ঘটনায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর