বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শৈশবেই খ্যাতির শীর্ষে

সাইফ ইমন

শৈশবেই খ্যাতির শীর্ষে

শুধু মেধার জোরে দুই বছর বয়সেই শিখে ফেলেছে একাধিক ভাষা, স্টেজে টানা গান গেয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কেউবা সাত বছর বয়সেই সফলভাবে রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার করেছে। কেউবা আবার কৈশোরেই হয়ে গেছে বিলিয়নিয়ার। এককথায় শৈশবেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। হার মানিয়েছে বয়সকেও।

মেধা ও মনন দিয়ে শৈশবেই বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে, এমন কয়েকজনের গল্প নিয়ে আজকের রকমারি- 

 

কনিষ্ঠ গ্র্যাজুয়েট

কেভিন কার্নি  [যুক্তরাষ্ট্র]

কৈশোরেই বিলিয়নিয়ার বনে যাওয়ার গল্পটি মাইকেল কেভিন কার্নির। হঠাৎ বিলিয়নিয়ার হওয়া এই বালক আরও আগে থেকেই আলোচিত মেধার জন্য। কারণ কার্নি ছয় বছর বয়সে স্কুল আর ১০ বছর বয়সে কলেজের পড়াশোনা শেষ করে। শিক্ষকতা পেশায় আসে ১৭ বছর বয়সে। তার উপস্থিত বুদ্ধি ও আইকিউ ভীষণ সমৃদ্ধ বলে সবাই মেনে নিয়েছেন। টিভি গেম শোতে তার পর্বটি হু ওয়ান্টস টু বি মিলিয়নিয়ার শোর অন্যতম সেরা পর্ব হিসেবে ভোট দিয়েছে লাখো- কোটি দর্শক। টিভি শোতে যখন একের পর এক সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছিল কার্নি। সবাই হতবাক হয়ে শুধু তাকিয়ে ছিল- কী করে এই কিশোর মাথা খাটিয়ে উত্তরগুলো বের করে আনছে। কার্নি এই বিশ্বের কনিষ্ঠ গ্র্যাজুয়েট। ২০০৮ সালে টেলিভিশন গেম শো হু ওয়ান্টস টু বি মিলিয়নিয়ার জিতে নিয়ে সবার আলোচনায় আসে এই বিস্ময় বালক। টিভি গেম শো থেকে ১০ লাখ ডলার জেতার পর তার মেধার প্রশংসা সারা দুনিয়াতেই চলতে থাকে। 

 

সাত বছর বয়সী সার্জন

জাসওয়াল [ভারত]

চিকিৎসাবিজ্ঞানে যুগে যুগে অনেক বিস্ময় এসেছে কিন্তু আতিক জাসওয়াল সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। মাত্র সাত বছর বয়সী জাসওয়াল মানবদেহে অস্ত্রোপচার করে সফলতা পেয়েছে। জাসওয়াল যে মেধাবী তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। বয়স যখন মাত্র ১০ মাস তখনই কথা বলতে শিখে ফেলে সে। সবাই তখনই বুঝে গিয়েছিল যে, এই শিশু আর দশজনের চেয়ে একটু আলাদা। ছোট বয়সেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রতি তুমুল আগ্রহী হয়ে ওঠে জাসওয়াল। নিজের সহজাত প্রবৃত্তি থেকেই নিজে বিজ্ঞান আর অ্যানাটমি পড়তে শুরু করে। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে সার্জনদের সঙ্গে থেকে অপারেশন দেখার ইচ্ছা পোষণ করে। সুযোগ পেয়েও যায়। সেই সঙ্গে শুরু হয়ে যায় তার হাতে-কলমে সার্জন হয়ে ওঠার শিক্ষা। সুযোগ কাজে লাগাতে থাকে সে। এরই মধ্যে বড় রকমের সুযোগ চলে আসে জাসওয়ালের কাছে। দরিদ্র এক প্রতিবেশী তার মেয়েকে নিয়ে এসেছিল ছোট্ট একটা অপারেশন করে দেওয়ার জন্য। তখনো হাতে-কলমে অপারেশন করা শুরু করেনি জাসওয়াল। শত অনুরোধের পর এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে জাসওয়াল অপারেশন করতে রাজি হয়। রোগীর মা মূলত অর্থাভাবে প্রফেশনাল সার্জন দিয়ে অপারেশন করাতে পারছিলেন না। জাসওয়ালের বাবা-মা শুরুর দিকে বারণ করলেও পরে রাজি হয়ে যায়। অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় জাসওয়াল এবং সফলভাবে অস্ত্রোপচার শেষ করে তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে।

 

আট বছর বয়সেই নাসায়

কিম ইয়ং [কোরিয়া]

কিম উন ইয়ং মাত্র আট বছর বয়সেই নাসায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে পুরো বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। মেধা ও মননে তিনি সবার চেয়ে আলাদা তার প্রমাণ করেছিল খুব ছোট বয়সেই। ১৯৬২ সালের ৮ মার্চ কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া এই বালক পৃথিবীর বিস্ময় বালকদের একজন। ভাষাবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল কিম। এক মাসেরও কম সময়ে যে কোনো ভাষা শিখে ফেলার যোগ্যতা আছে কিমের। বৈচিত্র্যময় এই মেধাসম্পন্ন কিম নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা করে চিনিয়েছিল। বিস্ময়করভাবে সত্যি যে, কিম মাত্র দুই বছর বয়সে কোরিয়ান ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি, জার্মান, জাপানি ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে। অল্প সময়ের মধ্যেই এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় কথা বলতে পারত। যে কোনো ভাষা অস্বাভাবিক কম সময়ে শিখে ফেলার এই অভূতপূর্ব মেধার পুরস্কারস্বরূপ ইউনিভার্সিটিতে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণও পেয়ে যায়। গণিতেও সমানভাবে সাফল্য পেতে শুরু করে কিম। ইন্ট্রেগাল ক্যালকুলাসগুলোর সমাধান দিয়ে ইউনিভার্সিটির বাঘা বাঘা প্রফেসরদেরও তাক লাগিয়ে দেয় এই বালক। মেধাবী এই বালক আট বছর বয়সে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পৃথিবীর সেরা গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান নাসায় ডাক পায়।

 

ছাত্রাবস্থায় শিক্ষকতার প্রস্তাব

অ্যারন ক্রিপকে [যুক্তরাষ্ট্র]

ছাত্র থাকা অবস্থাতেই শিক্ষকতা করার সুযোগ পেয়েছিল অ্যারন ক্রিপকে। এই বিষ্ময়কর মেধাবী বালকের জন্ম ১৯৪০ সালের ১৩ নভেম্বর। ক্রিপকে গণিত, যুক্তিবিজ্ঞান, ভাষা ও অধিবিদ্যায় পারদর্শী। দার্শনিক হিসেবেও তার সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে সব জায়গায়। একজন লজিশিয়ান হিসেবে হাইস্কুলে পড়াকালীনই ওই হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার প্রস্তাব পেয়ে যায়। কিন্তু মায়ের অমত ছিল। তাই শিক্ষকতার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল সে। শৈশবেই তার মেধার অস্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ থেকে তার সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা তাকে সমীহ করে চলত। স্কুল আর ইউনিভার্সিটিতে পড়া শেষ করে  সে মেধা খাটায় তার প্রিয় বিষয়গুলোতে। পৃথিবীর সেরা দার্শনিকদের তালিকায় সে যেমন আছে, তেমনি সমসাময়িক বিশ্বে যুক্তিবিজ্ঞান আর বিশেষায়িত প্রকরণ লজিকগুলো তার সেরা কাজ বলে সর্বজনবিদিত। তাই তো আজও তার যুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বিকশিত হচ্ছে। পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ই যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে অ্যারন ক্রিপকে।  

 

ম্যাথমেটিক্স জিনিয়াস

জর্জ স্মিথ [যুক্তরাষ্ট্র]

গণিতে চমক দেখিয়েছে অনেকেই। বিশ্বে রয়েছে অনেক বড় বড় গণিতবিদ। কিন্তু মাত্র ১৪ মাস বয়সেই গণিতবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দুনিয়ার তামাম গণিতবিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জর্জ স্মিথ। অপেক্ষাকৃত জটিল গণিতের সমস্যা সমাধান করে দিতে পারত ১৪ মাস বয়সেই। মেধাবী এই শিশুর মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা যায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। শিশুদের জন্য শান্তিপূর্ণ একটি পৃথিবী- স্বপ্নের স্লে­াগান নিয়ে এগিয়ে চলছে জর্জ স্মিথ। মূলত ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যাডভোকেট প্রতিষ্ঠানের কারণেই বিশ্ববাসী আজ তাকে চেনে। এই অস্বাভাবিক মেধাবী বালক শিশুদের নিয়ে নানামুখী কাজ করে। শিশু অধিকার রক্ষা, শিশুদের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে ছুটে যায় সে। প্রতিষ্ঠা করে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যাডভোকেট। শিশুদের নিয়ে কাজ করার পরিসর তার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়।

 

তিন বছর বয়সে স্টেজে একটানা দুই ঘণ্টা গান

ক্লিওপেট্রা  [রোমানিয়া]

শিল্পী ক্লিওপেট্রা স্টারানের নামের সঙ্গে অনেকেই হয়তো পরিচিত।  ২০০৬ সালে তিন বছর বয়সে একক অ্যালবাম বের হওয়ার পর দুনিয়াজুড়ে ক্লিওপেট্রাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। কণ্ঠে গান নিয়েই যেন জন্মেছিল সে। এর পেছনে তার বাবা-মার সরাসরি হাত ছিল না। মাত্র তিন বছর বয়সে স্টেজে একটানা দুই ঘণ্টা গান গাওয়ার রেকর্ড গড়ে ক্লিওপেট্রা। উপস্থিত দর্শক বিশ্বাসই করতে পারছিল না এত ছোট বাচ্চা মেয়ে এভাবে একের পর এক গান গেয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো ঘণ্টা দুই পার হওয়ার পর যখন সে থামে তখন করতালির স্রোতে চাউর হয় চারদিক। প্রথম অ্যালবাম বের হওয়ার আগেই তুমুল আলোচিত হয়ে যায় সে। তার আসন্ন অ্যালবামের খোঁজে মিডিয়া তোড়জোড় শুরু করে। তার প্রথম একক অ্যালবামটি এখন পর্যন্ত কোনো শিশুশিল্পীর সবচেয়ে ব্যবসাসফল অ্যালবাম হিসেবে ধরা হয়।

 

দুই বছরের বিস্ময় বালিকা

ইলিটা  [অস্ট্রেলিয়া]

ক্লিওপেট্রার মতো আরও একজন বিস্ময় বালিকা রয়েছে, তার নাম ইলিটা। সে অবশ্য গান করে না। কিন্তু ইলিটাকে সব সময়ের সেরা শিশু পেইন্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার পেইন্টিংগুলোর বিষয়বস্তু মূলত অ্যাবস্ট্রাক্ট সাবজেক্ট। হাঁটার আগেই পেইন্টিং শিখে ফেলেছিল ইলিটা। রং, তুলি নিয়ে কাগজে আঁচড় কাটতে দেখে তার বাবা আর্ট পেপার নিয়ে আসেন। শৈল্পিক ভাবনামিশ্রিত পেইন্টিংগুলো দেখে সে অল্প কয়েক দিনেই বুঝতে পারেন আসলে আর্ট ও পেইন্টিং নিয়ে ইলিটার আঁকিবুঁকি মোটেই উদ্দেশ্যহীন বা নামমাত্র কিছু নয়। তার আঁকা ছবিগুলোর পেছনে গভীর অর্থ আছে। তাই পেইন্টিংগুলো একত্রে জড়ো করতে থাকেন বাবা-মা। বয়স মাত্র দুই বছর হতে না হতেই অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্টের একটি পুরো গ্যালারিই ছিল ইলিটার। মাত্র চার বছর বয়সে ২০১১ সালে আমেরিকার নিউইয়র্কে তার প্রথম একক পেইন্টিং প্রদর্শনী হয়। এর পরই চারিদিকে হইচই পড়ে যায় ইলিটাকে নিয়ে। তার অভাবনীয় পেইন্টিং জ্ঞান বোদ্ধাদেরও অবাক করে দেয়। পেইন্টিংগুলোতে রং ও বিষয়বস্তুর সম্মিলন সত্যিই বিস্ময়করভাবে এককথায় অসাধারণ ছিল। প্রদর্শনীতে দর্শক যথেষ্ট মুগ্ধ হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অবাক হয়ে দেখে, তার বয়স  মাত্র দুই বছর। তার পেইন্টিংগুলো নিলামে তোলা হলে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। নিউইয়র্কের সেই একক প্রদর্শনীতে আনা মোট ২৪টি পেইন্টিং বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সাড়ে ৪ হাজার ডলার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল ইলিটার পেইন্টিং।

 

মিস্টার পকেট বিলিয়ার্ডস

উইলি  [যুক্তরাষ্ট্র]

শৈশবে ঘরে আলু আর ঘর ঝাড়–র লাঠি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিলিয়ার্ড খেলার প্র্যাকটিস করতে করতে সবচেয়ে কম বয়সে বিলিয়ার্ড খেলোয়াড় বনে যায় উইলি। তবে উইলি কখনই প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানো বা জয়ের জন্য খেলত না। বরং বাজি জেতার জন্য খেলত সে। ১৯১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করে উইলি মোসকনি। বিলিয়ার্ড খেলায় অপ্রতিরোধ্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সে খুব ছোট বয়সেই। ‘মিস্টার পকেট বিলিয়ার্ডস’ নামে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে সে।  ১৫ বার ওয়ার্ল্ড স্টেইট পুল চ্যাম্পিয়ানশিপ জিতে নিয়েছে উইলি। এই খেলায় তার নৈপুণ্য সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।

উইলির সঙ্গে বাঘা বাঘা পুল খেলোয়াড়ও পারত না। বাজিতে কেউ তাকে কখনো হারাতে পারেনি। এই খেলাই এখন তাকে নিয়ে গেছে বিস্ময় বালকদের কাতারে। শৈশবের দিনগুলোতে খেলার নেশা ছিল প্রচ-। বিলিয়ার্ড খেলার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে চলে যেত বন্ধুদের সঙ্গে। বিলিয়ার্ড খেলায় অনেক নতুন ট্রিকস আবিষ্কার করতে থাকে উইলি। নিজের কৌশলের দিক থেকেও সে সবার চেয়ে সেরা। একেক দিন একেক রকম ‘পকেটশট’ অনুশীলন করতে গিয়ে টের পেয়ে যায়- খেলায় জেতার রহস্য কী। তার টানা জয়ের পেছনে মানসিক শক্তির চেয়ে দক্ষতা বেশি- এমন কথা অনেকে বলে বেড়ালেও সে নিজের মানসিক শক্তির ওপরই বিশ্বাস রেখেছিল সব সময়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর