শিরোনাম
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুনিয়া কাঁপানো সেই ছবিগুলো

রণক ইকরাম

দুনিয়া কাঁপানো সেই ছবিগুলো

স্থিরচিত্র বা আলোকচিত্রের কাজ হচ্ছে মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দী করা। বর্তমান লাইভ ভিডিওর যুগে স্থিরচিত্র খানিকটা আবেদন হারালেও এর অপরিহার্যতা কমেনি কোনো মতেই। আর একটা সময় ছিল যখন ভিডিও দূরে থাকুক ছবি তোলার ক্যামেরাই ছিল দু®প্রাপ্য। সেই সময়ের একেকটি আলোকচিত্র যেন একেকটি ইতিহাস। একজন আলোকচিত্রী নিজের দক্ষতায় একটি মুহূর্তকে ফ্রেমের মধ্যে জীবন্ত করে তোলেন। এর কোনোটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ওঠে, আবার কোনোটি সৌন্দর্য কিংবা স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে ধারণ করা দুনিয়া কাঁপানো কিছু ছবির গল্প নিয়েই আজকের রকমারি।

 

 

সানচেজের সেই চাহনি

এই ছবিটি প্রকৃতির নির্মমতার ভয়াবহতম সাক্ষী। ছবিটি ১৯৮৫ সালের। সে বছর ১৩ নভেম্বর কলম্বিয়াতে আরমেরো নামে ছোট গ্রামের পাশেই নেভাদো দেল রুইজ নামক আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। আর আগ্নেয়গিরির লাভা নদীর পানি, বরফ সবকিছুর সঙ্গে মিশে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়। চারদিকে সৃষ্টি হয় ভূমিধস। ফলে আরমেরোসহ আশপাশের ১৩টি গ্রামের প্রায় ২৩ হাজার মানুষের নির্মম মৃত্যু ঘটে এই অগ্ন্যুৎপাতে। ওপরের ছবিটি ভয়াবহতম সেই অগ্ন্যুৎপাতেরই একটি স্থিরচিত্র। ছবির এই মেয়েটির নাম অমায়রা সানচেজ। ১৩ বছর বয়সী মেয়েটি একটি বিধ্বস্ত ভবনের নিচে আটকা পড়ে। আর আস্তে আস্তে আগ্নেয়গিরির লাভা তাকে ঘিরে ফেলে। উদ্ধারকর্মীরা সানচেজকে উদ্ধারের নানা চেষ্টা করে। এভাবে টানা ৬০ ঘণ্টা চলে লড়াই। আস্তে আস্তে সবাই আশা হারাতে থাকে। সানচেজের চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে তখন সব আশা শেষ। ফ্র্যাঙ্ক ফমিয়ার এই ছবিটি তুলেছেন। টানা ৬০ ঘণ্টা আটকে থাকার পর ১৬ নভেম্বর ১৯৮৫ সানচেজ মারা যায়।

 

আগুন থেকে বাঁচতে...

২২ জুলাই ১৯৭৫। যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনের মার্লবোরো স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ছবির দুটি চরিত্র হচ্ছে ১৯ বছর বয়সী ডায়না এবং তার পালিত কন্যা দুই বছর বয়সী টায়রা। আগুন লাগার পর তারা সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়ার আশায় ফায়ার ব্রিগেডের মইয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। তখন চারদিকে প্রচন্ড ধোয়াচ্ছন্ন। আগুনের লেলিহান শিখা ছড়ানো গোটা ভবন। এদিক-ওদিক থেকে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের এটা ওটা ছুটে আসছে। এর মধ্যেই ফায়ার ব্রিগেডের মই তাদের কাছাকাছি চলে আসে। কিন্তু তারা সেখানে পা রাখতেই ভেঙে পড়ে সেই মই। তারপর তারা দুজন পাঁচতলা ভবন থেকে নিচে পড়ে যান। আর এই দুর্ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী ডায়না মারা গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় টায়রা।

 

শকুনের খাদ্য!

১৯৯৩ সালের এই ছবিটি আপনাকে ভাবাবে। একটা জ্যান্ত বাচ্চার দিকে শকুন এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন তাকে খেয়ে ফেলবে। বিশ্ববিখ্যাত ও প্রবল সমালোচিত এ ছবিটি ১৯৯৩ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আলোকচিত্রী কেভিন কার্টারের তোলা এ ছবিটি ১৯৯৪ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেয়। ছবিটি মূলত সুদানের দুর্ভিক্ষের সময় তোলা। এতে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষে খেতে না পেয়ে জীর্ণ-শীর্ণ একটি শিশু মাটিতে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছে, আর খুব কাছেই একটি শকুন বসে আছে। যেন কখন শিশুটি মারা যাবে এবং শিশুটিকে খেয়ে ফেলতে পারবে তারই অপেক্ষা। ছবিটি ভয়াবহ বিতর্ক তৈরি করে। কথা ওঠে যে, ছবি তুলে শিশুটিকে বাঁচানোর কোনো চেষ্টা কেভিন করেছিলেন কি না? কেভিনের নিজেরও মনে হতে শুরু করে যে, তিনি হয়তো চাইলে শিশুটিকে বাঁচাতে পারতেন। তীব্র মানসিক যন্ত্রণা থেকে ১৯৯৪ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। যদিও শিশুটি সে সময় মারা যায়নি, আরও বেশ কিছুদিন বেঁচে ছিল। নিয়ং কং নামের ছবির শিশুটি মারা যায় ২০০৭ সালে।

 

৯/১১-এর ধুলা

এই ছবিটিও আমেরিকার ভয়াবহতম সন্ত্রাসী হামলা ৯/১১-এর সাক্ষী। ডানের ছবিটি মার্সি বর্ডারের। নিজের কাজের জন্য অভিজাত পোশাক আর অলঙ্কারে সজ্জিত ভদ্র মহিলার এই ছবিটি তখন সারা বিশ্বে দারুণ সাড়া জাগিয়েছিল। তবে সেটি তার সাজসজ্জা কিংবা অলঙ্কারের কারণে নয়। ছবিটিতে তাকে এমন দেখানোর কারণ হলো ধুলায় তার শরীর ঢেকে গেছে। ধুলায় তার শরীর ঢেকে যাওয়ার কারণ ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্বের নিষ্ঠুরতম সন্ত্রাসী হামলা। টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সেখানে ছিলেন মার্সি বর্ডার। এই ছবির কারণে ৯/১১-এর পর থেকে সবাই ‘ডাস্ট লেডি’ নামেই সবাই তাকে চিনত। ওই হামলার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় পাকস্থলীতে ক্যান্সার হয়েছিল। ক্যান্সারে ভুগে ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট ৪২ বছর বয়সে মারা যান তিনি। পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পরও সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতার প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে তার ছবিটি রয়ে যাবে ঠিকই।

 

নির্ভীক মানুষ

১৯৮৯ সালের ৫ জুন তিয়েনআনমেন  স্কোয়ারের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে দমন করতে যখন চীনা সেনাবাহিনী হামলা চালায় তখন ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন একজন। সাদা শার্ট পরিহিত সেই লোকটি নির্ভয়ে ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। চারদিকে পরিবেশ এত বেশি উত্তপ্ত ছিল যে, তখন এমন সাহস কারও করার কথা ছিল না। সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী উদাহরণ তৈরি করেন এই লোকটি। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বেশ কয়েকটি ট্যাংককে কিছুক্ষণ থামিয়েও রেখেছিলেন তিনি। পাশেই ছিলেন আলোকচিত্রী জেফ উইডেনার। তিনি সেই মুহূর্তটিকে ক্যামেরায় বন্দী করেন। ছবিটি তোলার  ঠিক পরপরই অকুতোভয় ব্যক্তিটিকে সেখান থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর কেটে গেছে অসংখ্য দিন। এই ছবিটি তখন সারা বিশ্বে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখনো পৃথিবীর আলোচিত ছবিগুলোর তালিকা করলে এই ছবিটি অনায়াসে সেখানে ঢুকে পড়বে। কিন্তু নির্ভীক সেই মানুষটির পরিচয় এখনো জানতে পারেনি বিশ্ব।

 

সবুজ চোখের মেয়েটি

আফগান গার্ল শিরোনামে শরবত গুলার ওই ছবিটি তোলা হয় ১৯৮৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি পেশোয়ারের এক শরণার্থী শিবিরের কাছ থেকে ১২ বছরের শরবত গুলার ছবিটি তোলেন। গুলা সে সময় শরণার্থীদের একটি স্কুলে পড়তেন। আফগানিস্তান তখন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে। পুরো পরিবারকে হারিয়ে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় মিলেছিল মেয়েটির। আর সেই মেয়েরই একটি সাধারণ ছবি তুলে নিয়ে আসেন ম্যাককারি। কিন্তু এই সাধারণ ছবিই যে অসাধারণ হয়ে উঠবে তা তিনি টের পান পরবর্তীতে। ১৯৮৫ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক প্রচ্ছদ ছবির মর্যাদা দেয় ছবিটিকে। শরবত গুলা নামের মেয়েটি তা জানতেনই না। ২০০২ সালে তাকে খুঁজে পায় সংবাদমাধ্যম। শরবত গুলা তখন জানতে পারেন তার ১২ বছর বয়সের কোনো ছবির জগদ্বিখ্যাত হওয়ার কাহিনি।

 

জন এফ কেনেডির মৃত্যু

আমেরিকার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর ডালাসে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। পরপর ৩টি গুলি করা হয় তাকে। ঘাতক হল লি হারভে অসওয়াল্ড। তাকে ধরাও হয়। কিন্তু কয়েক দিন পরই ঘাতককে আদালত প্রাঙ্গণে সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। ধারণা করা হয়, এটাও আমেরিকার নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চ পর্যায়ের লোকদের কাজ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার ছবিটিও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। কেনেডি তখন গাড়িতে। হঠাৎ আততায়ীর গুলি। মাথায় লেগেছিল গুলি। আব্রাহাম জ্যাপারডার তুলেছিলেন এই ছবিটি। আর কোনো ক্যামেরায় ধরা পড়েনি মুহূর্তেরও খন্ডাংশের সেই দৃশ্য। সেই ঘটনার সাক্ষী সবাই বলেছেন, তারা ৩টি নয় বরং ৪টি গুলির শব্দ শুনেছিলেন এবং যে গুলিটিতে প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হয়- সেটি এসেছিল অন্য জায়গা থেকে। তবে এই রহস্য এখনো রহস্যই থেকে গেছে।

 

ভূপালের গ্যাস ট্র্যাজেডি

১৯৮৪ সালের দোসরা থেকে তেসরা ডিসেম্বরের রাত্রে ভারতের মধ্য প্রদেশ রাজ্যের ভূপাল শহরে ইউনিয়ন কার্বাইড ইন্ডিয়া লিমিটেডের কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে হাজার-হাজার মানুষ হতাহত হন। এটি ছিল বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা। কীটনাশক তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটলে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানাইড গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ জন মানুষ আহত হন, নিহত হন প্রায় ১৫ হাজারের মতো মানুষ। ফটোসাংবাদিক পাবলো বার্থোলোমিউ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ ছবিটি তারই তোলা যা দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটিকে মাটিতে সমাহিত করার আগমুহূর্তে তোলা হয়।

মার্কিন ইউনিয়ন কার্বাইড করপোরেশনের ভারতীয় শাখা ইউসিল দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত কারখানায় সেভিন নামধারী কীটনাশকটি উৎপাদন করা হতো যে প্রক্রিয়ায়, তাতে মাঝপথে মিথাইল আইসো-সায়ানেট বা এমআইসি নামক অতিশয় বিষাক্ত গ্যাসটি উৎপন্ন হয়। দুর্ঘটনার রাতে একটি এমআইসি ট্যাঙ্কে পানি ঢুকে গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস এবং অপরাপর কমবেশি বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নির্গত হয়ে কারখানার কাছের বস্তিগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিষাক্ত গ্যাসের প্রকোপে পড়েন পাঁচ থেকে সাত লাখের বেশি মানুষ।

 

মোহাম্মদ আলী

এই ছবিটি বক্সিং কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলীর একটি বিখ্যাত ছবি। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী নিল লেইফারের তোলা এই ছবিটি একজন কিংবদন্তি বক্সারের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ও অ্যাকশনকে তুলে ধরেছে। একেবারে ঠিক সময়ে ক্লিক করা এই ছবিটিই বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া ছবি হয়ে ওঠে। তবে ভাগ্যও সহায় ছিল তার। একজন সিনিয়র আলোকচিত্রীর কারণেই আগের জায়গা ছেড়ে রিংয়ের এই পাশটাতে বসতে হয় লেইফারকে। সেই সময় মাত্র ২২ বছর বয়সী লেইফার ছাড়াও স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের অনেক প্রবীণ আলোকচিত্রী ছিলেন সেই ম্যাচটিতে। তার মধ্যে হার্ব শার্ফম্যান অনেক ভালো ছবি তুললেও লেইফারের এই একটি ছবির কাছেই হার মানেন। মজার বিষয় হচ্ছে, লেইফারের তোলা ছবিতে মোহাম্মদ আলীর পায়ের ফাঁক দিয়ে হার্ব শার্ফম্যানকেও দেখা যাচ্ছিল।

 

হ্যান্ড অব গড

এই ছবিটি তালিকায় থাকা দ্বিতীয় স্পোর্টস ছবি। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’ -এর কল্যাণে। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেই হয়েছিল আলোচিত সেই কান্ড। ম্যারাডোনার নিজের হাত দিয়ে দেওয়া গোলেই ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেবার বিশ্বকাপটাও ঘরে তুলেছিল তারা। তাই পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম সেরা আলোচিত ছবি এটি। সেই ম্যারাডোনা অবশ্য কখনই এ নিয়ে নিজের কোনো অনুতাপ প্রকাশ করেননি। তিনি সব সময়ই এটাকে খেলার অংশ বলে এসেছেন। ম্যারাডানার ভাষায়- ‘আমি সবাইকে বলতে চাই যে, ১৯৯০ বিশ্বকাপেও কিন্তু আমি হাত দিয়ে বল বাঁচিয়েছিলাম। গোল লাইনের ওপর থেকে বলটি সরিয়ে দেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি ছিল। আমরা ভাগ্যবান ছিলাম যে, রেফারি সেটা দেখেনি। তখন হয়তো প্রযুক্তি ব্যবহার সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু এখন ব্যাপারটা ভিন্ন।’

 

দ্য ফলিং ম্যান

এই ছবিটি সারা বিশ্বে দ্য ফলিং ম্যান নামে পরিচিত। বার্তা সংস্থা এপির ফটোগ্রাফার রিচার্ড ড্রিউর তোলা ছবিটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম প্রতীকী ছবি হয়ে আছে।

৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলায় বিধ্বস্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার। পুরো ভবনে আগুন ধরে যায়। এরপর চারদিকে ধোঁয়া। বাঁচার কোনো পথ নেই। তখন অনেকেই জীবন বাঁচানোর জন্য ভবনের অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ে। ফলিং ম্যান তাদেরই একজন। পরে নাম-পরিচয় জানা না গেলেও লোকটি এভাবে লাফিয়ে পড়েও জীবন বাঁচাতে পারেননি। ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা ৪১ মিনিটে নর্থ টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়া এই মানুষটির ছবি তোলেন ড্রিউ। ৯/১১ হামলায় প্রায়  তিন হাজার মানুষের মৃত্যু এখনো পৃথিবীকে কাঁদায়।

 

সালভাদর দালির বিখ্যাত ছবি

সালভাদর দালি পৃথিবীবিখ্যাত স্প্যানিশ পরাবাস্তববাদী চিত্রকর। তিনি স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলের ফিগুয়েরেসে জন্মেছিলেন। তবে এই ছবিটি দালির আঁকা কোনো ছবি নয়। তবে এই ছবির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন দালি। ছবিটির কেন্দ্রে ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি। হেলসম্যান ছিলেন দালির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ১৯৪৮ সালে দুই বন্ধুর সাক্ষাতে একটি ছবির আইডিয়া আসে হেলসম্যানের। প্রথমে তুলতে না চাইলেও পরে বন্ধুর অনুরোধে রাজি হয়ে যান দালি। ছবিটি তুলতে ফিলিপ হেলসম্যানের লেগেছিল ২৮টি শট ও ছয় ঘণ্টা। তিনটি বিড়াল, পানি ও চেয়ারের সমন্বয়ে হেলসম্যান তুলেছিলেন তার স্বপ্নের ছবিটি। আর ২৮ বারের চেষ্টায় নিজের সেই স্বপ্নের ছবিটি পান বিখ্যাত এই আলোকচিত্রী। সালভাদর দালির পেইন্টিংয়ের মতোই এই ছবিটি সারা বিশ্বে বিখ্যাত।

 

বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যা

এই ছবিটি ১৯৭৬ সালের। ছবিটি সারা বিশ্বে থাইল্যান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় গণহত্যার ছবি হিসেবে পরিচিত। থাইল্যান্ডের নির্বাসিত স্বৈরশাসক ফিল্ড মার্শাল থামম কিটিকাচর্নের দেশে ফিরে আসার কথা শুনে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো থাইল্যান্ড। থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। ছাত্র আন্দোলন যখন আস্তে আস্তে তীব্র আকার ধারণ করতে শুরু করে তখনই তাদের দমন করার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর গণহত্যা চালানো হয় ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। বহু ছাত্রকে গুলি করে, পিটিয়ে বা আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। সে রকমই একটি ঘটনার ছবি তুলেছেন নিল ইউলেভিচ, যা ১৯৭৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করে।

সর্বশেষ খবর