রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবা

তানভীর আহমেদ

ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবা

ফিদেল কাস্ত্রো [জম্ম : ১৩ আগস্ট ১৯২৬ মৃত্যু : ২৫ নভেম্বর ২০১৬]

তাকে বলা হয় বিপ্লবের মহানায়ক। কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং কমিউনিস্ট নেতা, তিনি ফিদেল কাস্ত্রো। ১৯৫৩ সালে বাতিস্তা সরকার উৎখাতের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। এ জন্য তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৫৬ সালে চে গুয়েভারাকে সঙ্গে নিয়ে বাতিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে শুরু করেন গেরিলা যুদ্ধ। ১৯৫৯ সালে বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটলে তিনি কিউবার হাল ধরেন। এরপর ৫০ বছর কিউবা শাসন করেন তিনি। তার শাসনের সময় কিউবাকে তিনি দিয়েছেন প্রথম বিশ্বের সমতুল্য শিক্ষার হার, আর এক উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিউবানদের গড় আয়ু এবং শিশুমৃত্যুর অতি নিম্নহারও পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে তুলনীয়। ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবা নিয়ে আজকের রকমারি-

 

কিউবা বিপ্লব

কিউবার বিপ্লবী মহানায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। কিউবার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাতিস্তা ও কিউবার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে বিপ্লবের ময়দানে সক্রিয় হন কাস্ত্রো। অতর্কিত হামলায় বাতিস্তা সরকারকে শক্ত জবাব দিতে চেয়েছিলেন। তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল মেক্সিকো থেকে কিউবায় আক্রমণ চালানো। ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি ও তার বিপ্লবী সহযোগীরা কিউবার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাতিস্তার সেনাবাহিনীর আক্রমণে নাস্তানাবুদ হন। তার ৮২ জন সহচর মারা যান অথবা কারাবন্দী হন। শুরুর দিকেই তাকে কারাবন্দী করে বাতিস্তা সরকার। তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। দুই বছর পর মুক্তি পেয়ে তিনি মেক্সিকো চলে যান। এরপর কিউবার মানুষের মুক্তির জন্য গেরিলা যুদ্ধে নামেন কাস্ত্রো। সিয়েরা মস্ত্রা পর্বতমালায় বিদ্রোহীদের ছোট একটা অংশ পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়। সেখানে তারা ২৬ জুলাই আন্দোলনে গেরিলা এবং স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা পান। এরই মধ্যে চে গুয়েভারার সঙ্গে ফিদেল কাস্ত্রোর গেরিলা যুদ্ধে পরিকল্পনা আরও বিস্তৃতি পায়। যুদ্ধ চলাকালীন চে বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর অখণ্ড অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রো তাকে গ্রেনেড তৈরির কারখানা, রুটি বানানোর জন্য চুল্লি প্রস্তুত এবং নিরক্ষর সঙ্গীদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল তৈরির দায়িত্ব দেন। তাছাড়াও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, সামরিক প্রশিক্ষণের কর্মশালা আয়োজন এবং তথ্য সরবরাহের জন্য পত্রিকা প্রচার করার দায়িত্ব প্রদান করেন। বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তিন বছর পর চে গুয়েভারাকে ‘কাস্ত্রোর মস্তিষ্ক’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। সংগঠিত হয়ে কাস্ত্রোর বিপ্লবী বাহিনী গেরিলা যুদ্ধে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। আচমকা হামলায় বাতিস্তা সরকার পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। সিয়েরা পর্বতমালা, শহর পেরিয়ে তারা হাভানায় ঢুকে পড়লে বাতিস্তা সরকার পালিয়ে যায়। জয়ী হন কাস্ত্রো, জয় হয় বিপ্লবের।

 

কিউবার বিপ্ল­বী মহানায়ক

ফিদেল কাস্ত্রো বিংশ শতাব্দীর অন্যতম রাষ্ট্রনায়ক। যিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একাধারে প্রায় চার যুগ বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এক সময়কার বিপ্লবী কাস্ত্রো সুদীর্ঘকাল কিউবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর অসুস্থতার কারণে ২০০৮ সালের শুরুতে ছোটভাই রাউল কাস্ত্রোর কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন, কাস্ত্রো কিউবান বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্বতন একনায়ক রাষ্ট্রপতি ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে অপসারণ করেন এবং একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট কিউবার পূর্বাঞ্চলে স্পেনীয় বংশোদ্ভূত এক অভিবাসী পরিবারে কাস্ত্রোর জম্ম। তার বাবা ছিলেন ছোট্ট আখের খামারি। আর তাই তার শৈশব মোটেও সচ্ছল ছিল না। আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর হাভানায় আইনজীবী হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন তিনি। দরিদ্র মক্কেলদের পক্ষে লড়ে অল্প সময়ের মধ্যেই সুনাম এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। সেখান থেকেই সক্রিয় দলীয় রাজনীতি শুরু করেন। এরপর ১৯৪৭ সালে নবগঠিত কিউবান পিপলস পার্টিতে যোগ দেন কাস্ত্রো। রাজনীতিতে যোগ দিয়েই তুখোড় বক্তা কাস্ত্রো তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি প্রথমবারের মতো দলীয় কংগ্রেসের সদস্য প্রার্থী হন। নির্বাচনে পিপলস পার্টি যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই জাতীয় নির্বাচনের আগে জেনারেল বাতিস্তা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কিউবার ক্ষমতা দখল করেন। ফলে নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়। রাজনৈতিক সুবিধাবঞ্চিত কাস্ত্রো তাই হাতে তুলে নিলেন অস্ত্র। শুরু হলো বিপ্লবী কাস্ত্রোর নতুন জীবন।

১৯৫৩ সালে সশস্ত্র দল নিয়ে মনকাডা আর্মি ব্যারাকে হামলা করেন কাস্ত্রো। সংঘর্ষে কাস্ত্রোর দল পরাজিত হয়। সামরিক শাসক বাতিস্তার নির্দেশে কাস্ত্রোর ৮০ জন সহযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে বাস্তিতার হত্যার আদেশ থেকে বেঁচে বেসামরিক কারাগারে ঠাঁই পান কাস্ত্রো। কিন্তু কারাগারেও তাকে বিষ খাইয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব জনমতের কথা বিবেচনা করে কাস্ত্রোকে হত্যা না করে বিচারের মুখোমুখি করেন বাতিস্তা। মনকাডা হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ফিদেল যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার মধ্য দিয়ে কিউবার রাজনৈতিক সংকট এবং তার সমাধানের পথ নির্দেশ করেন তিনি। তার এ বক্তৃতা আলোড়ন তোলে গোটা কিউবায়, জননায়কে পরিণত হন ফিদেল। বিচারে তার ১৫ বছরের কারাদ- হলেও প্রবল জনমতের কাছে মাথা নত করে দুই বছরের মাথায় তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন বাতিস্তা।

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বিপ্লবী দল গড়ার লক্ষ্যে মেক্সিকোয় পাড়ি জমান কাস্ত্রো। সেখানে একটি গেরিলা দল গঠন এবং পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র জোগাড়ের পর চে গুয়েভারা, জুয়ান আলমেইডাসহ একটি বিপ্লবী দল নিয়ে ১৯৫৬ সালে কিউবায় ফিরে আসেন কাস্ত্রো। ১৯৫৩ সালের ২৬ জুলাই মনকাডায় সেই হামলার নামানুসারে ফিদেল কাস্ত্রোদের এই গেরিলা দল ‘জুলাই টোয়েন্টি সিক্স মুভমেন্ট’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে জেনারেল বাতিস্তা গেরিলা নিধন অভিযান আরও জোরদার করেন। গেরিলারা সিয়েরা মায়েস্ত্রা পর্বত ছেড়ে একের পর এক শহর দখল করতে থাকে। স্থানীয় জনতা গেরিলাদের অভ্যর্থনা জানায়। ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি বাতিস্তার প্রায় এক হাজার সেনা গেরিলাদের হাতে প্রাণ হারালে যুক্তরাষ্ট্র বিমান, বোমা, জাহাজ ও ট্যাংক পাঠিয়ে গেরিলাদের হটানোর চেষ্টা চালায়। কাস্ত্রোর সেনারা চারদিক থেকে রাজধানী হাভানাকে ঘিরে ধরতে শুরু করলে ১৯৫৯ সালের পয়লা জানুয়ারি কিউবা ছেড়ে পালান জেনারেল বাতিস্তা।

১৯৫৯ সালে দক্ষিণপন্থি স্বৈরাচারী শাসক ফুলগেনসিও বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ফিদেল কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনী। নতুন বিপ্লবী সরকারকে সর্বপ্রথম মান্যতা দিতে সেদিন যারা এগিয়ে এসেছিল, মার্কিন সরকার তাদের অন্যতম। কিন্তু মার্কিন মালিকদের জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়া এবং কোনো ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা না করেই বাতিস্তা সরকারের সমর্থকদের গুলি করে হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক দিন দিন অবনতির দিকে যায়। এ ছাড়াও মার্কিন গোয়েন্দা চক্রের বিরুদ্ধে কাস্ত্রোকে খুন করার বিভিন্ন প্রয়াসের অভিযোগ ওঠে। দুই দেশের তিক্ত সম্পর্ক নতুনমাত্রা পায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ফিদেল কাস্ত্রোর মৈত্রী  সম্পর্ককে ঘিরে, যার পরিণামে শীতল যুদ্ধ বিস্তৃত হয় পশ্চিম গোলার্ধেও।

২০০৮ সালের ফেব্র“য়ারিতে অসুস্থতার কারণে ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেন। ২০০৬ সালের জুলাইতে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ফিদেল কাস্ত্রো অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। ওই সময় তার জরুরিকালীন অস্ত্রোপচারের পর বেশ কিছুদিন জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে থেকে ফিদেল কাস্ত্রো কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও জনসম্মুখে তার উপস্থিতি ক্রমশ কমে আসতে থাকে। সাম্যবাদের স্বপ্নচারীদের নায়ক ফিদেল কাস্ত্রো। ৯০ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়। যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সমাজতান্ত্রিক কিউবা প্রতিষ্ঠাকারী ফিদেল সারা বিশ্বে সমাজতন্ত্রের আন্দোলনকারীদের  চোখে ছিলেন বীর।

 

সমৃদ্ধ কিউবা

কিউবা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। কিউবা আশপাশের অনেকগুলো ছোট দ্বীপের সঙ্গে মিলে কিউবা প্রজাতন্ত্র গঠন করেছে। হাভানা কিউবার রাজধানী। ক্যারিবীয় অঞ্চলের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র কিউবা। কিউবার মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৯ হাজার ৫০০ ডলার। বন্ধুবৎসল হিসেবে খ্যাতি রয়েছে কিউবানদের। কিউবা হাইতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকোর ইউকাতান উপদ্বীপ এবং জ্যামাইকার খুব কাছে অবস্থিত বলে ওইসব দেশ থেকে কিউবায় প্রচুর লোক যাওয়া-আসা করেন। এই যাতায়াতের ফলে কিউবাতে বহু ধরনের গোষ্ঠী ও সংস্কৃতির সহাবস্থান ঘটেছে। কৃষিতে সমৃদ্ধ কিউবা খুব কম কৃষিদ্রব্যই রপ্তানি করে। এর মধ্যে আছে চিনি, তামাক, লেবুজাতীয় ফল এবং বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত দ্রব্য। উর্বর ভূমি, অসংখ্য পোতাশ্রয় এবং খনিজের ভান্ডারের জন্য দেশটি বিশেষভাবে সমাদৃত। স্পেনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে কিউবার প্রতি বন্ধু হিসেবে হাত বাড়িয়ে দেয়। কিউবা ৪০০ বছর ধরে স্পেনের একটি উপনিবেশ ছিল।

 

ঈর্ষণীয় শিক্ষাহার-সুস্বাস্থ্য

কাস্ত্রো দেশ শাসনের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে মার্কসবাদের যে রূপটি প্রচলিত ছিল সেই মডেলটি গ্রহণ করেন। এর মাধ্যমে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি সুসংগঠিতভাবে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। তখন থেকে কিউবা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক নীতি মেনে শাসিত হয়ে আসছে। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে একদলবিশিষ্ট কিউবার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। সারাবিশ্বে যখন কমিউনিস্ট সরকারগুলো ধসে পড়ছে ঠিক তখন কমিউনিস্ট ব্যবস্থার বৃহত্তম শত্রু বলে পরিচিত আমেরিকার দোরগোড়াতেই সমাজতন্ত্রের ধারা প্রচলিত করেন কাস্ত্রো। কাস্ত্রো বিশ্ব-ইতিহাসের একটা সময়ের এক প্রতীকী চরিত্র। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ১৯৫৯ সালে কিউবার তখনকার শাসক বাস্তিতাকে উৎখাত করে কাস্ত্রো পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। পার করেছেন ১০ জন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের শাসনকাল। তার শাসনের সময় কিউবাকে তিনি দিয়েছেন প্রথম বিশ্বের সমতুল্য শিক্ষার হার, আর এক উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থা যা অনেক দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। কিউবানদের গড় আয়ু এবং শিশুমৃত্যুর অতি নিম্ন হারও পশ্চিম ইউরোপের সঙ্গে তুলনীয়।

 

৬৩৮ বার হত্যা চেষ্টা!

ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যা ও ক্ষমতাচ্যুতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বরাবরই অভিযুক্ত হয়েছে তার বিরুদ্ধে অপারেশন চালানোর জন্য। ৯০ বছরের জীবনে ফিদেল কাস্ত্রোকে ৬৩৮ বার হত্যার চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর চরেরা এই চেষ্টা চালায়। ১৯৬০ সালে সিআইএর পরিকল্পনাটা ছিল আমেরিকানদের দিয়ে ইউএসের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে হত্যা করা হবে। হত্যা পরিকল্পনার মূলে থাকবে, আমেরিকায় সন্ত্রাস আর খুনের একটা মারাত্মক ছকে বিস্তার করা এবং এই অস্থিরতার দায়ভার দেওয়া হবে কিউবার শক্তিমান ফিদেল কাস্ত্রোর ওপর। সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে পুরো বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিয়ে কিউবায় সামরিক হামলা এবং ফিদেল কাস্ত্রোর পতন নিশ্চিত করা। এ ভয়াবহ মাস্টারপ্ল­্যান শুধু জন এফ  কেনেডির সম্মতির অভাবে বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সিআইএর এই মাস্টারপ্ল­্যান গোপন থলে থেকে বেরিয়ে আসে। এ ছাড়াও উল্লে­খযোগ্য ছিল, ‘অপারেশন জ্যাপাটা’ নামে পরিচিত সিআইএ অপারেশনটিও। অপারেশন জ্যাপাটা যে শুধু সিআইএর জন্য একটি দুর্র্ধর্ষ অভিযান ছিল তা নয়, গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে সিআইএ কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে সেটার একটি চ্যালেঞ্জ সামনে এসে দাঁড়ায়। ১৯৬১ সালে কিউবায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ অত্যন্ত দক্ষ সিআইএ সেনা এই অপারেশনে অংশ নিয়েছিল। ফিদেল কাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সিআইএ এই গোয়েন্দা হামলার নীলনকশা করেছিল। বাইরে থেকে পরিকল্পনার সব ঠিক দেখালেও কিউবায় হামলা করতে নেমে পরিস্থিতি একেবারেই সিআইএর প্রতিকূলে চলে যায়। বোদ্ধারা বলেন, সেই অপারেশনের ক্ষয়ক্ষতি আজও পুষিয়ে উঠতে পারেনি তারা।

 

ছ বি তে   বি প্ল বী   জী ব ন

 

শৈশবে দুরন্ত ফিদেল। ছবিতে ১৯৪০ সালের এই তরুণ কিউবার সান্তিয়াগোর নুয়েস্তা সেনোরা দে ডোলোরেস স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ললিপপ মুখে।

১৯৫৩ সালে কিউবার প্রথম বিপ্লবের পর সান্তিয়াগো দে কিউবা ভাইভেক কারাগারে ফিদেল কাস্ত্রোকে পুলিশ এবং সামরিক কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন।

 

কিউবার স্বৈরশাসক বাতিস্তার বিরুদ্ধে জয়লাভের পর হাভানা শহরে ঢুকছেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো (ডানে) ও ক্যামিলো সিয়েনফগোস। ছবিটি ১৯৫৯ সালের ৮ জানুয়ারি তোলা।

 

 

১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় উত্তর ভিয়েতনাম সফর করেছিলেন। সেখানেই যুদ্ধের রাইফেল দেখছেন বিপ্লবী ফিদেল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর