বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

উড়োজাহাজ কাহিনি

তানভীর আহমেদ

উড়োজাহাজ কাহিনি

ছিনতাইকারীর কাণ্ড

১৯৮৫ সালে এক ছিনতাইকারী এক মগ বিয়ারের জন্য নরওয়ের বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি ছিনতাই করেছিল

 

এত বড় বিমান কীভাবে উড়ে

বাতাসের চাপকে কাজে লাগিয়ে বিমান সহজেই ভেসে থাকতে পারে। বিমানের ডিজাইনেই ওড়ার কৌশল লুকিয়ে থাকে। বিমানের পাখা ও মূল বডির নিচের দিক সমান হলেও ওপরের দিকে উঁচু থাকে। বিমান সামনের দিকে এগোতে চাইলে ডানার নিচের দিকে উচ্চচাপ তৈরি হয়। এই চাপ কাজে লাগিয়ে বিমানের ওজন ও মধ্যাকর্ষণ শক্তি দুটোকে এড়িয়ে বিমান বাতাসে ভাসতে শুরু করে। বিমানের ইঞ্জিন বিমানকে নিয়ন্ত্রণ করে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়।

 

দুই ভাই  বানালেন প্রথম বিমান

জার্মান ইঞ্জিনিয়ার অটো লিলিয়েনথাল কয়েক বছর ধরে উড়ন্ত যান নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ১৮৯৬ সালে লিলিয়েনথালের আকস্মিক মৃত্যুর পর আমেরিকান অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট দুই ভাই লিলিয়েনথালের তৈরি উড়ন্ত যানের নকশা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর ত্র“টিগুলো খুঁজে বের করেন। শেষ পর্যন্ত দুই ভাইয়ের দীর্ঘ এক বছরের সাধনায় তৈরি হয় বিশাল গ্লাইডার বা উড়ন্ত যান। এরপর দুই ভাই তৈরি করলেন দুই পাখাবিশিষ্ট ছোট বিমান। এ বিমানের সামনে ও পেছনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটা ছোট যন্ত্র সংযোজন করা হলো। পরবর্তীতে তাদের উদ্ভাবিত বিমানের কলাকৌশলে কিছু পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়। কয়েক মাসের চেষ্টায় বানান বিমানে ব্যবহারের উপযুক্ত ইঞ্জিন। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯০৩ সালের এক শীতের সকালে উড়ল তাদের বিমান। প্রথম বিমান উড়ল বাতাসে।

 

পাইলটদের আন্তর্জাতিক ভাষা

ইংরেজি

সব দেশেরই নিজস্ব ভাষা আছে। বিমানের ভাষা ইংরেজি। ২০০৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অ্যাসোসিয়েশন ইংরেজিকে পাইলটদের আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে বিবেচনা করে। যে কারণে প্রত্যেক পাইলটকেই আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে হলে তার পূর্বশর্ত ইংরেজি ভাষা জানা।

 

বিমানে তিন রুমের বাড়ি

বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফার্স্টক্লাস কেবিন রয়েছে ইতিহাদ এয়ারলাইনসে। এই কেবিনে রয়েছে তিন রুমের বাড়ি। সাড়ে ৬ ফুটের ডাবল বেডের বিছানা, সামনে ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি শোবার ঘরে। রয়েছে বিলাসবহুল গোসলখানা। ড্রইংরুমে সোফা সেট। ব্যক্তিগত বারে মিলবে পছন্দমতো পানীয়। ফাইভ স্টার হোটেলের মতো খাবারের মেন্যু মিলবে এই কেবিনে। দুবাই থেকে নিউইয়র্ক যেতে খরচ করতে হবে মাত্র ৩২ লাখ টাকা। যদি টিকিট মিলে তো। কারণ টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি থাকে সব সময়ই।

 

৩০০ ফুট দীর্ঘ বিমান

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান তৈরির চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা শুরু করে হাইব্রিড এয়ার ভেহিক্যালস লিমিটেড (এইচএভি)। এয়ারবাস এ-৩৮০-কে পেছনে ফেলে যাত্রীবাহী বিমানের রাজত্ব নিজের করে নিতেই এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া। বিমানটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি তার জ্বালানি ট্যাংক একবার ফুল বা পরিপূর্ণ করার পরে একটানা তিন সপ্তাহ ধরে আকাশে উড়তে সক্ষম।

কত রকম

বিমান

আর ঠিক এই কারণে সবাই বেশ উৎসাহিত। কারণ এখনো এমন অনেক বিমান আছে যেগুলোর শুধু ফুয়েল ট্যাংক লোড দেওয়ার জন্য যাত্রাবিরতি দিতে হতো। এ বিমানটি তৈরি করতে খরচ হবে প্রায় ৬০০ কোটি পাউন্ড। শুরুর দিকে পরিকল্পনা রয়েছে এটি মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে। উড়োজাহাজটি তুলনামূলক কম কার্বন নিঃসরণ করবে, একবার জ্বালানি নিয়েই কয়েক দিন উড়তে পারবে এবং সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, এটি বিমানবন্দর ছাড়াই যেখানে প্রয়োজন সেখানেই হেলিকপ্টারের মতো অবতরণ করতে পারবে। এটি আকাশে সেরা প্রযুক্তির উদাহরণ হতে পারে।

আকাশের দানব

আকাশের দানব বলেই মানছেন সবাই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিমানের নাম ‘এয়ারল্যান্ডার-১০’। সম্প্রতি এ বিমান আকাশে উড়ে উড়োজাহাজের ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। প্রায় ৮৫ বছরের সাধনার পর উড়োজাহাজ ইঞ্জিনিয়ারদের মুখে হাসি ফোটায় এয়ারল্যান্ডার-১০। ৯২ মিটার দীর্ঘ এয়ারল্যান্ডার-১০ তৈরি করে হাইব্রিড এয়ার ভেহিক্যালস (এইচএভি) কর্তৃপক্ষ। ১৩ লাখ ঘনফুট হিলিয়ামে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারবে এটি। যাত্রী ছাড়া দুই সপ্তাহ এবং যাত্রীসহ পাঁচ দিন আকাশে উড়তে পারবে এ যান। ভবিষ্যতে বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবহার করা যাবে এয়ারল্যান্ডার-১০।

 

৬০০ টনের বিমান

অ্যানটোনোভ ২২৫ ম্রিয়া বিমানের ওজন ৬০০ টন। পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বিমান এটি। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে এটির নকশা করা হয়। দানব আকৃতির এই বিমান উড়াতে ৬টি টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। ৬৪০ টন ওজন নিয়ে এই বিমান আকাশে উড়ে ছিল। বিশ্বের বড় পাখাওয়ালা বিমানের তালিকায়ও এটি শীর্ষে।

 

দ্বিতল বিমান

এয়ারবাস এ-৩৮০। এটি একটি দ্বিতল বিমান। দোতলা বিমান একসময় মানুষকে চমকে দেওয়া বিমানের প্রতিচ্ছবি ছিল। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে। ২০০৪ সালের দিকে এটি মানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয় তার অতিকায় রূপ নিয়ে। যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের উদ্দেশ্যে ব্যবহƒত এই বিমান আকাশে মানুষের রাজত্বের নতুন মাত্রা যোগ করে। ১০ বছরের ব্যবধানে আকাশে আরও বড়, দানবাকৃতির উড়োজাহাজ জায়গা করে নিলেও এই এয়ারবাসের গুরুত্ব একেবারেই ভিন্ন মাত্রায় রয়েছে। ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করে তৈরি এই বিমানটিতে রয়েছে চারটি ইঞ্জিন। এটি বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান। আকাশে মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থায় সর্বাধুনিক সংযোজনের পাশাপাশি অল্প সময়ে, অধিক সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিমানটির নকশা প্রণয়ন করা হয়েছিল।

 

অদ্ভুত যত তথ্য

বিমানে উঠতে ভয় পান ৮০% মানুষ

শুধু আমেরিকায় ২০ লাখ মানুষ ভয়ে বিমানে চড়েন না। বিমানে উঠলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুভয় পান অন্তত ৮০ শতাংশ মানুষ। তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বাহন হলেও বিমান নিয়ে মানুষের ভয় মূলত আকাশে ভেসে থাকার। বিমানে চড়ার ভয়ে কাবু বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, বিমানের কিছু হলে বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তারা এটা মিলিয়ে দেখেন না, আসলে মারাত্মক যে কোনো দুর্ঘটনাতে প্রাণহানির ভয় থাকে। সেটা বিমান হোক বা অন্য কোনো যানবাহন হোক।

 

ভারতে বিমান আবিষ্কার!

রাইট ভাইয়েরা বিমান আবিষ্কার করেছিলেন ১৯০৩ সালে। কিন্তু তারও আগে শিবকর তালপাড়ে উড়তে পারে এমন যান তৈরি করেছিলেন। যদিও সেটার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। ভারতের এক বিজ্ঞান সম্মেলনে একজন গবেষক দাবি করেছেন, ভারতের এক ঋষি নাকি ৭ হাজার বছর আগেই বিমান আবিষ্কার করেছিলেন! সে যাই হোক, শিবকর তালপাড়েকে নিয়ে বলিউডে তৈরি হয়েছে ‘হাওয়াইজাদা’ সিনেমাটি। অভিনয় করেছেন আয়ুষ্মান খুরানা।

 

ইঞ্জিন বন্ধ হলেও উড়তে পারে ৫ ঘণ্টা

বিমানে সাধারণত দুটি করে ইঞ্জিন থাকে। একটি নষ্ট হয়ে গেলে অন্যটি অটোমেটিক চালু হয়ে যায়। যদি দুটি ইঞ্জিনই নষ্ট হয়ে যায়, তখন? ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও কিছু বিমান আরও ৫ ঘণ্টা আকাশে ভেসে থাকতে পারে। ইঞ্জিন বন্ধ থাকা অবস্থাতে বিমান কৌশলে মাটিতে নামানো যায়। যদিও এতে ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি। ইটিওপিএস বা একটি ইঞ্জিন ব্যবহার করে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান ৩৩০ মিনিট উড়তে পারার সার্টিফিকেট পেয়েছে। এ ধরনের বিমান একটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও নিরাপদে মাটিতে নেমে আসতে পারে।

 

ব্ল্যাকবক্স আসলে কমলা রঙের

বিমান দুর্ঘটনা হলে সবার আগে খোঁজ চলে ব্ল্যাকবক্সের। ব্ল্যাকবক্স নাম হলেও এই বক্সটি আসলে উজ্জ্বল কমলা রঙের। উজ্জ্বল কমলা রঙের তাপনিরোধী কোটিং থাকায় বক্সটি সহজেই নজরে পড়ে। দুর্ঘটনার পর যেন এটি সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় সে কারণেই এই রং ব্যবহার করা হয়। ব্ল্যাকবক্সে বিমানের উড়ান পথের সব তথ্য জমা থাকে। পাইলট কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে কী কথা বলছেন, বিমানটি কোন পথ ধরে উড়ছিল, আবহাওয়ার পরিস্থিতিসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো এই বক্সে জমা থাকে।

 

সবচেয়ে দ্রুত  যে বিমান

ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫২৯ কিলোমিটার গতিতে ছুটে লকহিড এসআর ৭১ ব্ল্যাক বার্ড বিমানটি। এর মালিক যুক্তরাষ্ট্র।

 

উ ড়ো জা হা জে র   বি ব র্ত ন

 

 

 

বিমানে আলো কমানোর কারণ

বিমান উড্ডয়নের পর পরই আলো কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অনেকেই অবাক হন। এটি যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের নিরাপত্তার জন্যই করা হয়। আলো কম থাকায় যাত্রী ও কেবিন ক্রুদের চোখ অন্ধকারে দেখার জন্য সহনীয় হয়ে ওঠে। কোনো দুর্ঘটনা হলে অন্ধকারে ডুবে যেতে হতে পারে। হোক তা বিমানের ভিতর কিংবা দুর্ঘটনার পর কোনো স্থানে। সে সময় হুট করে অন্ধকারে পড়ে চোখ ভালো দেখতে পাবে না, এতে করে জীবনের ঝুঁকিও বেড়ে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর