শিরোনাম
শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা ইসলামী বিদ্যাপীঠ

আবদুল কাদের

বিশ্বসেরা ইসলামী বিদ্যাপীঠ

বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয় [সৌদি আরব]

বিশ্বসেরা ইসলামী বিদ্যাপীঠ বাদশাহ আবদুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৭ সালে (১৩৮৭ হিজরি) বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সৌদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সৌদির পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের উচ্চ শিক্ষার ভাবনা থেকেই বাদশাহ জেদ্দা শহরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাথমিকভাবে অর্থনীতি ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় কলা ও বিজ্ঞান অনুষদ। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যোগদান করে। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি সফলতা অর্জনের মাধ্যমে রাজ্যের সেরা বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়। ছেলে ও মেয়েদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি দুটি আলাদা ক্যাম্পাসে বিভক্ত। শিক্ষার্থীরা এখানে নিয়মিত পাঠ গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নানা আয়োজনে অংশ নিতে পারে। প্রতিষ্ঠানটিতে ১৩ গবেষণা কেন্দ্র ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য অনুষদ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অনেকগুলো একাডেমিক ব্যবস্থাপনা বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের কাছে বেশ প্রশংসিত।

 

আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় [মিসর]

বিশ্বের মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৩৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি মিসরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র দুটি অনুষদ (কলা ও আইন) নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। সে সময় এটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন তাহা হুসেন। ১৯৪১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রকৌশল অনুষদ যুক্ত হয়। বিজ্ঞান, বাণিজ্য, চিকিৎসা ও কৃষি; এই চারটি অতিরিক্ত অনুষদ নিয়ে ১৯৪২ সালে আলেকজান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৫২ সালের মিসরীয় বিপ্লবের আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ফারুক বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত ছিল। মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করার আগে এটি ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা হিসেবে কাজ করত। মিসরীয় বিপ্লবের পর এর নামকরণ করা হয়। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দারুণ সুনাম অর্জন করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এখানে প্রায় ৩০টি অনুষদ রয়েছে।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয় [আরব আমিরাত]

আরব আমিরাতের প্রথম এবং বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্ববিদ্যালয়। এটি আরব আমিরাতের আল আইনে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান যা ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিজনেস স্কুলকে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের  তৃতীয় সেরা বিজনেস স্কুল হিসেবে নামকরণ করা হয়। একাডেমিক গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি আরববিশ্বে দ্বিতীয় স্থান এবং মুসলিমবিশ্বের নবম স্থান অর্জন করে। টাইমস ম্যাগাজিনে বিশ্বসেরা বিদ্যাপীঠের তালিকায় প্রতিষ্ঠানটি ৮৭তম স্থান পায়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ব্যবসা ও অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রকৌশল, খাদ্য ও কৃষি, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান, আইটি, আইন, মেডিসিন ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদ নিয়ে গঠিত। এখানে শিক্ষার্থীদের যেভাবে শেখানো হয় তা আরব আমিরাতে তুলনাহীন। এখনো প্রতিষ্ঠানটি তাদের সফলতা অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত বর্ধমান মহাবিশ্বের সমাজে সফল উদাহরণ হিসেবে অবদান রাখছে।

 

আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় কায়রো [মিসর]

আমেরিকার মতো উচ্চশিক্ষা এবং আন্তর্জাতিকমানের বৃত্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯১৯ সালে মিসরের কায়রো শহরে বিশ্বসেরা বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত বিদ্যাপীঠটির শিক্ষা কার্যক্রম ইংরেজি ভাষায় পরিচালিত হয়। এটি মিসরের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি আর উচ্চ শিক্ষা বৃত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সুনাম গোটা বিশ্বে বছরের পর বছর প্রশংসিত। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শুরুর দিকে শুধু ছেলেদের পড়াশোনার সুযোগ ছিল। পরবর্তীতে ১৯২৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেয়েদের ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক এবং প্রভাষকদের অনেকেই আন্তর্জাতিকমানের শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, কূটনীতিক, লেখক এবং সাংবাদিক। যাদের অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিসরসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের নাগরিক। সেরা বিদ্যাপীঠটির ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। এখন অবধি বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৩ গবেষণা কেন্দ্র ও ২৫টি অনুষদ রয়েছে। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক ডিপ্লে­ামা কোর্সের সুযোগ পাচ্ছে।

 

কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় [মিসর]

কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় মিসরের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। ১৯০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমদিকে এটি মিসরীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ক্যাম্পাস মিসরের গিজায় অবস্থিত। পরবর্তীতে তা কায়রোয় স্থানান্তর করা হয়। ১৯২৫ সালের আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম নামকরণ করা হয় বাদশাহ ফুয়াদ-১ বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়টি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৫২ সালে মিসরীয় বিপ্লবের পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। উচ্চশিক্ষার দিক থেকে বিদ্যাপীঠটি বিশ্বে ৫০তম বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। এখন অবধি ৩ জন নোবেল বিজয়ী, বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপতি এবং অস্কার জয়ী অভিনেতা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের স্নাতক অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বিভিন্ন ইসলামী স্কুল থেকে এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কলা, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, ওষুধ, কৃষি এবং প্রত্নতত্ত্বসহ প্রায় ২৫টি অনুষদ রয়েছে।

 

বাদশাহ ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয় [সৌদি আরব]

বাদশাহ ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মর্যাদাপূর্ণ মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এর পুরো নাম কিং ফাহাদ পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস ইউনিভার্সিটি। ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এক বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৪ সালে পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। সে বছর মোট ৬৭ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে ১৯৭১ সালে চারজন প্রকৌশলী স্নাতক অর্জন, ১৯৭৫ সালে কলেজ অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস-এর নাম পরিবর্তন হয়ে পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস নামকরণের মতো কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের আকর্ষণে পরিণত হয়। সব শেষে ১৯৮৬ সালে আরবের সেরা উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি বাদশাহ ফাহাদ-এর নামে নামকরণ করা হয়। মূলত সৌদি আরবের বিস্তৃত তেল এবং খনিজ সম্পদের সঠিক ব্যবহার, ভবিষ্যৎ তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগতভাবে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

 

জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়  [জর্ডান]

আরব বিশ্ব তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যেরও সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আম্মানের জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬২ সালে।  বিশ্বসেরা ইসলামী বিদ্যাপীঠটি জর্ডানের রাজধানী শহর আম্মানে অবস্থিত। এটি দেশটির প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। ৫৭ বছর ধরে উচ্চ শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী ভর্তির গড় জর্ডানের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি। এখানে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা ৩ হাজার ৫০০টিরও বেশি বিভিন্ন কোর্স থেকে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার কোর্স বেছে নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৬৩টি স্নাতক এবং ১৩০টি আন্তর্জাতিকমানের কোর্স করার প্রস্তাবনা দিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ৩৭  হাজার শিক্ষার্থীর সার্বক্ষণিক শিক্ষা সহায়তার জন্য ১৪ হাজার অধ্যাপক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। যারা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি বিবিধ প্রশিক্ষণ বা কারিগরি শিক্ষায় সহায়তা করে থাকেন। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি জর্ডানের মোট ২০টি কলেজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে স্নাতক বা স্নাতক সমমানের নানা কোর্স ইত্যাদি সরবরাহ করে আসছে।

 

আল নাজাফ বিশ্ববিদ্যালয় [ফিলিস্তিন]

আল নাজাফ ১৯১৮ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়। বিশ্বসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ফিলিস্তিনের মিনা অঞ্চলের নাবলাসে অবস্থিত। এটি ফিলিস্তিনের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশটির বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯টি অনুষদে ৩০০ অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে ২২ হাজার শিক্ষার্থীকে স্নাতক বা স্নাতক সমমানের সনদপত্র প্রদান করা হয়। এখানকার অধ্যাপকগণ তাদের শিক্ষার্থীদের আরবি, হিব্রু, ইংরেজি, ফরাসি এবং স্প্যানিশ ভাষায় পাঠ দান করেন। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সেরা অধ্যাপকদের এখানে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকেও শিক্ষার্থীরা আল নাজাফে পড়াশোনা করতে আসেন। এখানে শিক্ষার্থীদের মেডিসিনের ওপরও স্নাতকোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাদের শিক্ষার্থীদের মাঝে ফিলিস্তিনের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। এটি সেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম, যা ফিলিস্তিনের শিক্ষা বিভাগের সেরা প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে।

সর্বশেষ খবর