রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বসেরা ধনীদের সাধারণ জীবন

সাইফ ইমন

বিশ্বসেরা ধনীদের সাধারণ জীবন

বিশ্বসেরা ধনীদের নিয়ে মানুষের মনে নানা কৌতূহল। তারা বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ নিশ্চয় বিলাসবহুল জীবনযাপনে ব্যয় করেন। অথচ বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্বসেরা ধনকুবেরদের অনেকে টাকার কুমির হলেও খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন। শুনলে অবাক হবেন তাদের ব্যবহৃত গাড়ি-বাড়ি এমনকি হাতের সেলফোনটি পর্যন্ত অতি সাধারণ। আর এমনই কিছু মানুষকে নিয়ে আজকের রকমারি-

 

 

থাকেন সাধারণ অ্যাপার্টমেন্টে

কার্লোস স্লিম

৫৪.৪ বিলিয়ন ডলার

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কার্লোস স্লিমের সম্পদের পরিমাণ ৫৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই টেলিকম ব্যবসায়ী হোটেল ব্যবসা ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা দিয়ে তার ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যক্তিজীবনে ছয় সন্তানের জনক কার্লোস।

৭৪ বছর বয়সেও দক্ষ হাতে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। অথচ খুবই সাধারণ জীবনযাপন করেন তিনি। বিশাল রিয়েল এস্টেট ব্যবসার কর্ণধার হলেও তিনি বাস করেন অতি সাধারণ একটি অ্যাপার্টমেন্টে। তার জীবনযাপনও সাধারণ। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েও এমন সাধারণ থাকার উদাহরণ তিনি।

 

সাধারণ পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন

জং কুইংহাউ

২০.৮ বিলিয়ন ডলার

চীনের অন্যতম ধনী হিসেবে খ্যাত জং কুইংহাউ। অতি সাধারণ জীবন-যাপন তার। পোশাকও ব্যবহার করেন আর ১০টা সাধারণ মানষের মতো। তিনি বলেন, ‘মানুষ বলতে পারবে না তুমি ১ হাজার টাকার কাপড় পরেছ নাকি ১০০ টাকার। তাহলে তাদের জন্য খরচ করে কী লাভ?’

জীবনের চলার সব পথেই সব সময় টাকাকে অনেক বেশি হিসাব করে খরচ করে এসেছেন হুয়াংজহাউ ওয়াহাহা গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠাতা। বিনিময়ে পেয়েছেন চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হওয়ার সম্মান। বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০.৮ বিলিয়ন।

 

দুপুরের খাবার খান কর্মচারীদের সঙ্গে

আমানসিও ওর্তেগা

৭৭.৪ বিলিয়ন ডলার

ব্যবসায়ী হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান সফলদের কাতারে দাঁড়ানো আমানসিও ওর্তেগা। বিশ্বখ্যাত জারা ফ্যাশন হাউসের মালিক পৃথিবীর এই অন্যতম ধনী মানুষটি। প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছেন তিনি। তবে সেটা নিজের অর্থ-সম্পদের পরিমাণেই। মানুষ হিসেবে ঠিক তেমনটাই রয়ে গেছেন যেমনটা তিনি ছিলেন ৪০ বছর আগেও। খাবার খেতে গেলে এখনো নিজের কর্মীদের পাশে বসতেই ভালোবাসেন ওর্তেগা। প্রতিদিন দুপুরের খাবার কর্মীদের সঙ্গে নিয়েই খান আমানসিও ওর্তেগা। চলতে-ফিরতে পছন্দ করেন আগের মতোই  সাধারণ জীবন।

 

ব্যবহার করেন সাধারণ মোবাইল সেট

ওয়ারেন বাফেট

৮৯.২ বিলিয়ন ডলার

বিলিয়নিয়ার ওয়ারেন বাফেট এড়িয়ে চলেন সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি। যেমন- মোবাইল, ইন্টারনেট। অতিরিক্ত কর দেওয়ায় মোটেই পক্ষপাতী নন তিনি। আর তাই জিনিসপত্র কিনে রাখেন হিসাব করে। একজন মানুষ ঠিক কতটা সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারেন তা ওয়ারেন বাফেটকে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। বিশ্বের এই অন্যতম ধনী আর বৃহত্তম লগ্নিকারক মানুষটি একেবারেই বদলাননি। ১৯৫৮ সালে নেবের ওমাহায় মাত্র ৩১ হাজার ৫০০ ডলারের কেনা একটি বাড়িতে এখনো বাস করেন তিনি।

 

নিজের না আছে বাড়ি, না আছে গাড়ি

চাক ফিনি

১.৫ মিলিয়ন ডলার

এই আইরিশ আমেরিকানের না জানা অনেক সম্পদ রয়েছে বলে জানা যায়। নিজের সম্পদের হিসাব অনেকটা আড়ালেই রাখতে চান চাক ফিনি। আর তার চেয়েও আড়ালে রাখেন সেগুলোর ব্যয়ের পরিমাণ। তবে প্রতি বছরই একের পর এক দান করে আসছেন এই মানুষটি। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের জন্য, সেখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন আর পড়াশোনার সুব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত দুই হাতে খরচ করে যাচ্ছেন ফিনি। ৮৬ বছর বয়স্ক ফিনির না আছে নিজের কোনো বাড়ি, না আছে কোনো গাড়ি। আর ১০টা মানুষের মতোই প্রতিদিন গণপরিবহনে ঠেলাঠেলি করে উঠে অভ্যস্ত।

 

একেবারে সাধারণ তিনি

হুয়াঙ গুয়াঙগিউ

১.৭ বিলিয়ন ডলার

গোম ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানের হুয়াঙ গুয়াঙগিউ। বিলিয়নিয়ার হলেও খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন হুয়াঙ। ঘুষ, প্রতারণাসহ আরও অনেক কিছুর অভিযোগে একদিন ধরা পড়তে হয় হুয়াঙকে। নিজের ক্ষমতা হারিয়ে তিনি জেলে কাটান ১৪ বছর। টাকার বিনিময়ে বাইরে চলে আসতে পারলেও এখনো আরও ১০টা সাধারণ মানুষ কিংবা তাদের চেয়েও নীচু জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হুয়াঙ। কোথাও জাঁকজমক নেই তার। যদিও তিনি ১.৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক।

 

সস্তায় টিভি কিনতে মার্ক জুকারবার্গ দম্পতি

মার্ক জুকারবার্গ

(৭৭.৫ বিলিয়ন ডলার)

গায়ে ধূসর একটা গেঞ্জি আর মাথায় খুব সাধারণ হুডিই পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ কোটিপতি ফেসবুকের জনক মার্ক জুকারবার্গের পছন্দ। কত পোশাকই না কিনতে পারেন মার্ক। বিশেষ করে তার মোট সম্পদের পরিমাণ যখন ৭৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু না! কোনো দামি পোশাকে নয়, সাধারণ টি-শার্ট আর জিন্সেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। সেই সঙ্গে সবার মনকে জয় করে নিতে পারার মতো কোটি টাকা দামের হাসি! আর তাই এখনো পালো আল্টোর ভাড়া বাড়িতেই বাস করেন তিনি। সম্প্রতি তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে কস্টকোতে কেনাকাটা করতে যান। এ সময় তার সঙ্গে স্ত্রী প্রিসিলাও ছিলেন। সেখান থেকে তোলা এক ছবিতে দেখা যায়, দোকানে টিভির দিকে তাকিয়ে জুকারবার্গ। এ ধরনের ছোটখাটো কেনাকাটার  ক্ষেত্রে নিজের সহকারীকে পাঠান বিলিয়নিয়াররা। তবে জুকারবার্গ  সে রকম লোক নন। স্ত্রীকে নিয়ে আর ১০ জন সাধারণ মানুষের মতো নিজেই ঢুকে পড়েন দোকানে। জুকারবার্গ ও প্রিসিলা ছাড়ে পণ্য বিক্রির দোকান রস ড্রেস ফর লেস নামের একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে কেনাকাটা করেছেন। এ ধরনের দোকানে মধ্যবিত্তরা যান। জুকারবার্গ ও প্রিসিলাকে  মিতব্যয়ী হিসেবেই দেখা যায়। ২০১২ সালের মে মাসে বিয়ের আগে রোমে তাদের ম্যাকডোনাল্ডসে একসঙ্গে খেতে  দেখা গিয়েছিল। আর মার্ক জুকারবার্গের সিলিকন ভ্যালির বাড়িটি অনন্য। বাড়িটি তার আসন্ন মেনলো পার্ক ক্যাম্পাস অফিস থেকে মাত্র ১০ মিনিট ড্রাইভ দূরত্বে। বাড়িটি কেনার আগ পর্যন্ত একই এলাকায় জুকারবার্গ বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। স্যান মারকিউরি নিউজের মতে, বাড়িটি তিনি ক্রয় করেছেন ৭ মিলিয়ন ডলারে। বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল ১৯০৩ সালে।

সর্বশেষ খবর