বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভয়ঙ্কর ড্রোন এমকিউ-নাইন রিপার

সোলাইমানি হত্যায় ব্যবহৃত হয় এই ড্রোন, এর বর্তমান দাম ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার

সাইফ ইমন

ভয়ঙ্কর ড্রোন এমকিউ-নাইন রিপার

গত ৩ জানুয়ারি ভোর রাতে বাগদাদের বিমানবন্দরে জেনারেল কাসেম  সোলাইমানির গাড়িবহর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে বহুবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকবারই প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। তবে শুক্রবার যখন বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন মার্কিন ড্রোন বিমানের নিখুঁত হামলায় নিহত হন জেনারেল সোলাইমানি। হান্টার কিলার হিসেবে পরিচিত ইউএস এমকিউ-নাইন রিপার ড্রোন থেকে  লেজার-গাইডেড অস্ত্র দিয়ে জেনারেল সোলাইমানিকে বহনকারী গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় জেনারেল সোলাইমানি ছাড়াও ইরাকি মিলিশিয়া হাশদ আশ-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত হন। হোয়াইট হাউস জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নির্দেশে’ ওই বিমান হামলা চালানো হয়েছে। হামলার পর আমেরিকার একটি পতাকা দিয়ে টুইট করেন ট্রাম্প। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্র বা সিনিয়র ডেমোক্র্যাট নেতাদের কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে ওই হামলার নির্দেশ দেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ওই অঞ্চলে থাকা মার্কিনিদের হত্যায়  সোলাইমানি ‘সক্রিয়ভাবে পরিকল্পনা’ করছেন এমন ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ যুক্তরাষ্ট্র এমন সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে তোলপাড় বিশ্বরাজনীতি থেকে অর্থনীতিতে। এরই মধ্য বেড়েছে তেলের দাম, পড়েছে অর্থের মূল্য। সর্বসাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে মার্কিন বৈরিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। যার ফলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা মধ্যপ্রাচ্য এগিয়ে যাচ্ছে যুদ্ধের দিকে। কেউ কেউ তো একধাপ এগিয়ে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ ইঙ্গিতও দিয়ে  রেখেছেন। তবে এতকিছুর পর এখন একটি প্রশ্ন- কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকার পরও কীভাবে সোলাইমানির গাড়িটি খুঁজে পেল যুক্তরাষ্ট্র। আর কীভাবে হামলা চালানো হলো। এর উত্তর মিলেছে  ডেইলি মেইলসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।  সোলাইমানির গাড়িতে হামলা চালানো হয় অত্যাধুনিক মার্কিন ড্রোন ‘এমকিউ-নাইন রিপার’ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সোলাইমানিসহ ১০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে পাঁচজন ইরানের ও পাঁচজন ইরাকের। ইরাকের পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন আবু মাহদি আল-মুহান্দিস (খাতিব হেজবুল্লাহ গ্রুপের কমান্ডার)। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়া দুটি গাড়ির একটিতে ছিলেন কাসেম সোলাইমানি। মার্কিন ড্রোনের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে একটি গাড়িতে ঘটে প্রবল বিস্ফোরণ। মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় কাসেম সোলাইমানির। ঘটনার দিন ভোর রাতে তাদের গাড়িবহর বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর পরই চারটি মিসাইল গাড়ি দুটিতে আঘাত হানে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় একটি বড় ধরনের বিস্ফোরণে গাড়ি দুটি তৎক্ষণাৎ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পরে জেনারেল সোলাইমানির হাতের আংটি দেখে তাকে শনাক্ত করা হয়। স্থানীয় মিলিশিয়া কমান্ডার আবু মুনতাথের আল-হুসেইনি বলেন, জেনারেল সোলাইমানি ও আল-মুহান্দিসকে বহনকারী গাড়িতে দুটি মিসাইল আঘাত করে। সোলাইমানির গাড়িতে ২৩০ কিলোমিটার দূর থেকে হামলা চালানো হয়। দ্বিতীয় গাড়িতে একটি মিসাইল আঘাত করে। কাতারে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড হেডকোয়ার্টার  থেকে পাঠানো একটি মনুষ্যবিহীন এমকিউ-নাইন ‘হান্টার-কিলার’ ড্রোন থেকে ওই হামলা চালানো হয়। ঘণ্টায় ২৩০ মাইল গতিতে আঘাত হানে হান্টার কিলার ড্রোন। আকাশ থেকে মার্কিন ড্রোন ‘এমকিউ-নাইন রিপার’ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ঘটে প্রবল বিস্ফোরণ। ভয়ঙ্কর শক্তিশালী এই মার্কিন ড্রোন ‘এমকিউ-নাইন রিপার’। এটিতে একবার জ্বালানি ভরলে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে যে কোনো জায়গায় হামলা চালানো যায়। চালকবিহীন এই ‘এমকিউ-নাইন রিপার’ ড্রোন। ড্রোনটিতে আছে অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড ক্যামেরা। এই ক্যামেরায় রাতের বেলায়ও যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি পরিষ্কার পাঠিয়ে দেওয়া যায় দূরের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে বসে থাকা চালকের মনিটরে। এই রিপারটির দাম ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

দূরপাল্লার ড্রোনটির পাখার প্রসারতার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ মিটার। কাসেম সোলাইমানিকে বহন করা গাড়িবহর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার আগে প্রায় ১০ মিনিট ড্রোনটি দৃশ্যমান ছিল। এ ধরনের ড্রোনগুলো ‘কিলার ড্রোন’ হিসেবে পরিচিত যা এক ধরনের মনুষ্যবিহীন আকাশযান। এগুলোতে কোনো চালকের প্রয়োজন হয় না। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের  গোপন তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার জন্যও কাজ করে এটি। মনুষ্যবিহীন ড্রোন যুদ্ধবিমানগুলোতে সংবেদনশীল যন্ত্র ও ক্যামেরা থাকে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে গৃহীত ভিডিওচিত্র ভূমি থেকে বিমান নিয়ন্ত্রণকারী অপারেটরের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। আকাশসীমায় গুপ্তচরবৃত্তি চালানো, নিজ  দেশের আকাশসীমা পাহারা দেওয়া, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, শত্রুদের  বেতার ও রাডার সিস্টেমে ব্যাঘাত ঘটানো, আড়ি পেতে তথ্য জোগাড় করা থেকে শুরু করে মিসাইল হামলা-  প্রয়োজনে আরও ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে এই ড্রোন। এসব বিমান পাইলটবিহীন হওয়ায় যুদ্ধে পাইলটের মৃত্যুঝুঁকি থাকে না, তাই যে কোনো পরিস্থিতিতে এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করা যায়।

 

►  মার্কিন ড্রোন ‘এমকিউ-নাইন রিপার’-এ একবার জ্বালানি ভরলে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত হামলা চলতে পারে।

► চালকবিহীন ‘এমকিউ-নাইন রিপার’ ড্রোনটির সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৪৮২ কিলোমিটার পর্যন্ত।

► ড্রোনটিতে আছে অত্যাধুনিক ইনফ্রারেড ক্যামেরা। এই ক্যামেরায় রাতের বেলায়ও যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি পরিষ্কার পাঠিয়ে  দেওয়া যায় দূরের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে বসে থাকা চালকের মনিটরে।

► দূরপাল্লার ড্রোনটির পাখার প্রসারতার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ মিটার।

► সোলাইমানির গাড়িতে ২৩০ কিলোমিটার দূর  থেকে হামলা চালানো হয়।

► কাসেম সোলাইমানিকে বহন করা গাড়িবহর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার আগে প্রায় ১০ মিনিট ড্রোনটি দৃশ্যমান ছিল।

সর্বশেষ খবর