শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
যুক্তরাষ্ট্র বনাম ইরান

কার কত সামরকি শক্তি

রণক ইকরাম

ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ইরান যেমন প্রতিশোধের কথা বলছে, তেমনি ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের। দুই দেশের মধ্যে বিরাজ করছে উত্তেজনা। অনেকেরই প্রশ্ন যদি যুদ্ধ হয় তাহলে ইরানের বিপক্ষে কতটা সফল হবে যুক্তরাষ্ট্র? বিশ্বে সামরিক শক্তিতে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। জলে, স্থলে, আকাশে মার্কিনিদের টেক্কা দিতে পারার মতো সক্ষমতা এখন পর্যন্ত কোনো দেশেরই নেই। তবে প্রতিপক্ষ যখন ইরান তখন হিসাব-নিকাশ অনেকাংশেই পাল্টে যায়। নিজ দেশ থেকে বহুদূরে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মোকাবিলা কঠিনই হওয়ার কথা। অন্যদিকে, সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। দুটি দেশের সামরিক শক্তি ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আজকের রকমারি।

 

যুদ্ধ কি অত্যাসন্ন?

গত দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কাছে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিলেন ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। ইরানের অভিজাত কুদস ফোর্সের প্রধান এই জেনারেল ইরাক,

সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবাননসহ বেশ কয়েকটি দেশের বিপ্লবী সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে একত্রিত করেন। তিনিই ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ফ্যাক্টর করে তোলেন। তার হাত ধরেই প্রায় ২২ বছরে কুদস ফোর্স হয়ে ওঠে সেরা। তার নেতৃত্বে একের পর এক হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে বেশ বেকায়দায়ই পড়েছিল। হিজবুল্লাহ, হামাসকে নব জাগরণ দিয়েছিলেন তিনি। আড়ালে কলকাঠি নেড়ে ইরাকের মিলিশিয়া বাহিনীকে শিখিয়েছেন কীভাবে মার্কিন সেনাদের ঠেকাতে হয়। এমন পরিস্থিতিতেই ইরানের এই শীর্ষ জেনারেলকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে তাকে হত্যার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংকট আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে বলে ধারণা

করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। ইরান তাদের শীর্ষ জেনারেলকে হত্যার প্রতিশোধে এরপরই  ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহতের দাবি করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র তা স্বীকার করেনি। তবে ইসরায়েলে ২২৪ মার্কিন সেনা চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। ইরানি হামলায় মার্কিন ঘাঁটির রাডার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। এ ছাড়াও বাগদাদের গ্রিনজোনেও

মার্কিন দূতাবাসের কাছে একাধিকবার রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার পর ইরান প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও সুর নরম হয়েছে। তিনিও জানিয়েছেন ইরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ চান না। নিঃশর্ত শান্তি আলোচনার প্রস্তাবও দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। ব্রিটেন উল্টো যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশে-বিদেশে চাপে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার নির্বাচনও আসন্ন। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দুই দেশই নিজ নিজ সামরিক হামলার পক্ষে সাফাই গেয়েছে। সব মিলিয়ে বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা আপাতত নেই মধ্যপ্রাচ্যে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনা ইরান ফিরিয়ে দিয়েছে। তাতে স্পষ্ট হলো মধ্যপ্রাচ্যে লড়াই দীর্ঘায়িত হবে। ইরান সমর্থিত বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলো ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশের সেনাদের বিতাড়িত করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে।

 

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি অন্য সব দিক থেকে যেমন এগিয়ে তেমনি বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাদের সামরিক ঘাঁটি। ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হাজারো সৈন্য আর সামরিক ঘাঁটি। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক কত সৈন্য রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক থাকলেও গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে ছয় হাজারের বেশি সেনা রয়েছে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি। কুয়েতে বেশ কটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১৩ হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে। সিরিয়াতেও রয়েছে মার্কিন ঘাঁটি। গত অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে। যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তের ঠিক কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের

সমর্থিত বাহিনী। ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জর্ডানের। কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থান এটি। দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে। সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনা সদস্য রয়েছে। বাহরাইনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি। বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে। ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালির কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ। বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঁচ হাজার, কাতারে ১৩ হাজার ও তুরস্কে আড়াই হাজার মার্কিন সেনা নিযুক্ত আছে।

 

ইরান যেখানে ব্যতিক্রম

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র। তাই কাগজে কলমে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। ইরানিরা জানে প্রথাগত যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে কখনই হারাতে পারবে না তারা। অস্ত্রশস্ত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রীতিমতো নগণ্য। তাই বলে ইরান একেবারে পিছিয়ে থাকবে এমন নয়Ñ তারাও অনেক দিক থেকে এগিয়ে। সরাসরি যুদ্ধে জিততে চাওয়া প্রতিপক্ষের চেয়ে গেরিলা ধাঁচের লড়াইয়ে শহীদ হতে পারঙ্গম শত্রু অনেক বেশি হুমকিস্বরূপ। তাই এসব কারণে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অনেক

বড় হুমকি। কয়েক দশক ধরে ইরান সেভাবেই যুদ্ধসম্পদ ও সমরকৌশল বিন্যস্ত করেছে। কাসেম সোলাইমানি তার বাহিনী দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ইরানের সামরিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলেন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর সেই কার্যক্রম কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু ইরানের দাবি জীবিত কাসেম সোলাইমানির চেয়ে মৃত কাসেম সোলাইমানি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ইরানিরা কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তা জানা গেছে সিরিয়া যুদ্ধের সময়। কেবল বন্ধুদেশ সিরিয়াকে রক্ষার যুদ্ধে গত নয় বছরে ইরানের আড়াই হাজার যোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন। যাদের মধ্যে আছেন তাদের শ্রেষ্ঠ জেনারেলদের অন্তত ১০ জন। আহতের সংখ্যা এর প্রায় পাঁচ গুণ। দেশের বাইরে যুদ্ধের বহু ময়দানে এভাবে ইরান তার সেরা জনবল ব্যয় করে যাচ্ছে রাজনৈতিক ও আদর্শিক স্বার্থে। দেশ, ধর্ম ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য আত্মত্যাগ ইরানি সংস্কৃতির বড় স্তম্ভ। এই সংস্কৃতির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে তাদের যোদ্ধামন। প্রথাগত সমরবিদদের জন্য তাই ইরান দুর্বোধ্য। আবার অপ্রথাগত যুদ্ধবিদ্যার জন্য ইরান বিস্ময়কর।

 

যুক্তরাষ্ট্র

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক পরাশক্তি মানা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। জলে, স্থলে, আকাশে মার্কিনিদের টেক্কা দিতে পারার মতো সক্ষমতা এখন পর্যন্ত কোনো দেশেরই নেই। এর কারণও আছে। মার্কিনিরা তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশাল এক বাজেট রাখে, যার পরিমাণ ৭১৬ বিলিয়ন ডলার। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সবই আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সামরিক শক্তি।

 

ইরান

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণের তালিকা অনুযায়ী সামরিক শক্তিতে ইরানের অবস্থান ১৪তম। তবে মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির অবস্থান খুবই শক্ত। আর ক্ষেপণাস্ত্রের দিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ইরান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোকে একহাত নেওয়ার ক্ষমতা আছে ইরানের। ইরানের ডিফেন্স বাজেট ৬৩০ কোটি ডলার। যা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় একেবারেই নগণ্য। এক নজরে দেখে  নেওয়া যাক দেশটির বর্তমান সামরিক শক্তি।

 

সেনাবাহিনী

মার্কিন সেনাবাহিনীতে সক্রিয় সেনা সদস্যের সংখ্যা ১২ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ জন। এ ছাড়া সংরক্ষিত রয়েছে আরও ৮ লাখ ৬০ হাজার জন। সেনাবাহিনীতে ট্যাঙ্ক রয়েছে ৬ হাজার ৩৯৩টি।  সাঁজোয়া যানের (আর্মড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা ৩৯ হাজার ২২৩টি। সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কামান রয়েছে ৩ হাজার ২৬৯টি। পাশাপাশি ৯৫০টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও ১ হাজার ১৯৭টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে।

 

সেনাবাহিনী

ইরানের বর্তমান সক্রিয় সেনা সদস্য ৫ লাখ ২৩ হাজার। এ ছাড়া সংরক্ষিত সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার জন। দেশটির ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৪টি। সাঁজোয়া যানের (আর্মড ফাইটিং ভেহিকল) সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৫টি। সেনাসদস্যের ব্যবহারের জন্য কামান (টোয়েড আর্টিলারি) রয়েছে ২ হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি ৫৭০টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি) ও ১ হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান (রকেট আর্টিলারি) রয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় শক্তি গেরিলা কায়দা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী বিশ্বের এক নম্বর বিমানবাহিনী

বিমানবাহিনী

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ক্ষমতা বিশ্বে প্রথম স্থানে। দেশটির বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩০৪টি। এর মধ্যে রয়েছে-ফাইটার বিমান ২ হাজার ৩৬২টি, অ্যাটাক বিমান ২ হাজার ৮৩১টি, হেলিকপ্টার ৫ হাজার ৭৬০টি ও অ্যাটাক  হেলিকপ্টার রয়েছে ৯৭১টি। যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সেরা স্টেলথ ফাইটার (রাডারে ধরা না পড়ে আক্রমণ করতে সক্ষম) এফ-২২ ও এফ ৩৬। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও পরিবহনের জন্য উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির।

ইরানি বিমানবাহিনীর একটি যান

বিমানবাহিনী

ইরানের বিমানবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী থেকে অনেক পিছিয়ে। বিমানবাহিনীর মোট আকাশযানের সংখ্যা ৫০৯টি। এর মধ্যে রয়েছেÑ ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪টি ও পরিবহনের জন্য ৯৮টি উড়োজাহাজ রয়েছে বাহিনীটির। ইরানের হাতে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোনো স্টেলথ ফাইটার বিমান নেই। তবে এর বাইরে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তির গোপন আকাশযানের গুজব রয়েছে।

 

নৌবাহিনী

ইরানের নৌবাহিনীকে তুলনামূলকভাবে দুর্বলই বলা চলে। তাদের নৌবাহিনীতে এখন পর্যন্ত যোগ হয়নি কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। বাহিনীটিতে ফ্রিগেট রয়েছে ছয়টি, করভেট রয়েছে তিনটি এবং সাবমেরিন রয়েছে ৩৪টি। নেই কোনো ডেস্ট্রয়ার। তবে ইরানের ৮৮টি প্যাট্রলবোট ও তিনটি মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে।

 

নৌবাহিনী

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীও অন্যান্য বাহিনীর মতো সমৃদ্ধ। নৌবাহিনীতে মোট যানের সংখ্যা ৪১৫টি। এর মধ্যে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ২৪টি, ফ্রিগেট ২২টি, ডেস্ট্রয়ার ৬৮টি, করভেট ১৫টি ও সাবমেরিন রয়েছে ৬৮টি। এ ছাড়া প্যাট্রল বোট ১৩টি ও মাইন ওয়্যাফেয়ার রয়েছে ১১টি।

 

ক্ষেপণাস্ত্র

ইরানের সামরিক শক্তির অন্যতম চাবিকাঠি হিসেবে ধরা হয় দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে। এবার পরাক্রমশালী যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটিতে হামলার মাধ্যমে নিজেদের সেই শক্তির জানান দেয় ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড়; বিশেষ করে স্বল্প পাল্লা আর মাঝারি পাল্লার। এসব ক্ষেপণাস্ত্র অনেক ক্ষেত্রেই সৌদি আরব ও উপসাগরীয় এলাকার অনেক ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে সক্ষম। পেন্টাগনের দাবি, গত কয়েক বছর ধরেই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে ইরান। ইরানের কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ৩০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে সক্ষম সাহাব-১, ৫০০ মাইল দূরের লক্ষ্যে হামলা চালাতে সক্ষম সাহাব-২, ৭৫০ মাইল যাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কিয়াম-১, ৩০০ থেকে ৫০০ কিমি যেতে সক্ষম ফাতেহ-১১০। এ ছাড়া রয়েছে সাহাব-৩। যেটি পাড়ি দিতে পারে ২ হাজার কিলোমিটার। এই দূরত্বে রয়েছে রাশিয়া, চীন, মিসর ও ভারতের মতো দেশ।

ক্ষেপণাস্ত্র

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তিতে শীর্ষে থাকায় তৃতীয় মহাযুদ্ধ লেগে গেলে কতটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে তা কল্পনার অতীত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাতেই রয়েছে ভয়ঙ্কর সব ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের চেয়ে এগিয়ে কেবল রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ইউজিএম-১৩৩ ট্রাইডেন্ট-২। এই ক্ষেপণাস্ত্র ১১ হাজার ৫০০ কিমি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম। চীনের দীর্ঘতম ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে পাল্লা কম হলেও, মার্কিন অস্ত্রাগারে মজুদ বিভিন্ন ধরনের  ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম  ক্ষেপণাস্ত্র শক্তিধর রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র  থেকে আত্মরক্ষার প্রযুক্তি গড়ে তুলতে বিপুল অর্থ খরচ করেছে। আকাশজুড়ে তারা একটি উপগ্রহ ব্যবস্থা তৈরি করেছেÑ যাতে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় কোনো ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হলেই তারা তা টের পেয়ে যাবে। এ রকম কোনো ক্ষেপণাস্ত্রকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করে দেওয়ার ব্যবস্থাও এখন সক্রিয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর