বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
Forbes এর দৃষ্টিতে

দশক সেরা ধনী

সাইফ ইমন

দশক সেরা ধনী

২০১০-১৯ দশকে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের  বেশির ভাগই আরও অনেক বেশি ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন। ২০১০ সালের তুলনায় যাদের ধনসম্পদের মূল্যমান অন্ততপক্ষে ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বেড়েছে। ঘুরেফিরে মুখগুলো পরিচিতই। বড় কোনো পরিবর্তন নেই। প্রযুক্তিবিদরাই এই তালিকায় শেষ ১০ বছর যাবৎ এগিয়ে। এই শেষ দশকে শীর্ষ ধনকুবেরদের একটি তালিকা তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ফোর্বস। তা নিয়েই আজকের রকমারি...

 

জেফ বেজোস

আমাজন সাম্রাজ্যের অধিপতি জেফ বেজোস। ২০১০ সালে তিনি ছিলেন বিশ্বের ৪৩তম শীর্ষ ধনী। আর বর্তমানে তিনি ১০৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক। গত ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৯৭ দশমিক ৪ ডলার।  পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট আমাজন নয়, বলা হচ্ছে, অনলাইনের সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস আমাজন ডটকমের কথা। আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। আমাজন ডটকমের ১৭% শেয়ার এখন তার নামে। আমাজন বিশ্বের এক নম্বর প্রতিষ্ঠান যেটি সবচেয়ে দ্রুত ১০০ বিলিয়ন বিক্রির রেকর্ড গড়েছে। ১৯৯৪ সালে অনলাইনে বই বিক্রির সাধারণ আইডিয়া নিয়ে জেফ বেজোস যাত্রা শুরু করেছিলেন। অনলাইনে কেনাকাটার সেই ধারণা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে আমাজন ডটকম রীতিমতো গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। বেতন, বোনাস, শেয়ার ও অন্যান্য খাত থেকে বছরে তার আয় হয় ১৬ লাখ ৮১ হাজার ডলার। দীর্ঘ সময় সাহসী উদ্যোক্তার মতোই প্রতিষ্ঠানটিকে টেনে নিয়ে যান জেফ। একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান তৈরির চেয়ে একটি দীর্ঘস্থায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেই মনোযোগী ছিলেন এই উদ্যোক্তা। বিশ্বকে সেটাই করে দেখিয়েছেন তিনি।

 

বার্নার্ড আর্নল্ট

ফ্রান্সভিত্তিক বিলাসপণ্যের কোম্পানি এলভিএমএইচের চেয়ারম্যান ও সিইও বার্নার্ড আর্নল্ট। গত বছর প্রথমবারের মতো সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোয় সেরা ধনীদের তালিকায় তিনে উঠে আসেন ৭০ বছর বয়সী আর্নল্ট। বর্তমানে ১০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক। ২০১০ সালে তার ধনসম্পদের নিট মূল্য ছিল ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এক দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৮০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। প্যারিসভিত্তিক এলভিএমএইচ কোম্পানির অর্ধেকের বেশি শেয়ার তার হাতে। পাশাপাশি, বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস ক্রিশ্চিয়ান ডিওরের ৯৭ শতাংশ মালিকানাও তার। ১৯৮৪ সালে একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মালিক হয়ে প্রথমবারের মতো অভিজাত পণ্যের বাজারে পা রাখেন এ ব্যবসায়ী। চার বছর পর ক্রিশ্চিয়ান ডিওর বাদে ওই গ্রুপের বাকি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে এলভিএমএইচের নিয়ন্ত্রণ নেন আর্নল্ট। শুধু টাকা-পয়সাই নয়, বার্নার্ড আর্নল্টের সংগ্রহে আছে ডেমিয়েন হার্স্ট, মারিজিও ক্যাটেলান, অ্যান্ডি ওয়ারহোল, পাবলো পিকাসোর মতো চিত্রকরদের বিখ্যাত সব চিত্রকর্মসহ অনেক মহামূল্যবান জিনিস।

 

ওয়ারেন বাফেট

যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। গত ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে ৪১ দশমিক ৮ বিলিয়ন। বর্তমানে তার নিট সম্পদমূল্য ৮৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। তাকে বিংশ শতকের সবচেয়ে সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি মাল্টি-বিলিয়ন ডলার কনগ্লোমারেট ‘বার্কশায়ার হ্যাথাও’-এর মালিক এবং চেয়ারম্যান। তিনি তার সম্পদের ৯৯ ভাগ জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য দান করবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। তিনি জীবনে প্রথম শেয়ার কিনেছিলেন মাত্র ১১ বছর বয়সে। ছোটবেলায় তিনি প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে পেপার বিলি করতেন।

 

 

 

মার্ক জুকারবাগ

ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের বর্তমানে সম্পদমূল্য ৭২ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৬৮ বিলিয়ন ডলার। ২০০৪ সালে ফেসবুকের যখন যাত্রা তখন মার্ক জুকারবার্গের বয়স ১৯। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। কিন্তু ফেসবুক তাকে বানিয়ে দিয়েছে বিলিয়নিয়ার। অল্প বয়সী সিইওদের তালিকাতেও তিনি এক বিস্ময়। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সাত বিলিয়ন জনসংখ্যার পৃথিবীতে এখন ফেসবুক ব্যবহারকারী অন্তত দুই বিলিয়ন। গোটা বিশ্ব ফেসবুকে আক্রান্ত। সামাজিকভাবে তো বটেই, ব্যবসায়িকভাবেও ফেসবুকের গুরুত্ব বাড়ছে। অনলাইন বিজ্ঞাপন প্রদানের জন্য ফেসবুক এখন বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সোনার খনি। বিয়ের পর মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুকের ৯৯ শতাংশ শেয়ার দান করে দিয়েছেন। সম্প্রতি হার্ভার্ড থেকে ডিগ্রি নিয়ে ড্রপআউটের তকমা ঝেড়ে ফেলেছেন। প্রতি বছর ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ নতুন একটা চ্যালেঞ্জের কথা জানান। ২০২০ সালের চ্যালেঞ্জ হিসেবে জুকারবার্গ জানিয়েছেন তিনি সামাজিক যোগাযোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করবেন।

 

বিল গেটস

বাবা-মা চেয়েছিলেন বিল গেটস আইনজীবী হোক। কিন্তু বিল গেটস সারা দিন পড়ে থাকতেন কম্পিউটার নিয়ে। স্কুলেই প্রোগ্রামিংয়ে হাতেখড়ি তার। নিজে নিজেই লিখে ফেলেন গেমিং প্রোগ্রামিং। স্কুল থেকে বহিষ্কার হন নীতিবিরুদ্ধ অপারেটিং সিস্টেম চালানোর জন্য। উল্টো হার্ভার্ডে এসে প্রোগ্রামিংয়ে আরও মনোযোগী হন তিনি। স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরে ১৫৯০ পেয়েও পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। বন্ধু পল অ্যালেনকে নিয়ে গড়ে তোলেন মাইক্রোসফট। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এনে বদলে দিলেন পুরো কম্পিউটার জগৎ। মাইক্রোসফট হয়ে উঠল বিশ্বের শীর্ষ টেক কোম্পানির একটি। সেই সাফল্যেই এলো হাজার হাজার কোটি টাকা। একসময় টানা প্রায় দেড় দশক বিশ্বের শীর্ষ ধনীর আসনে ছিলেন এই মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। বর্তমানে ১০৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক। ২০১০ সালে তার সম্পদের নিট মূল্য ছিল ৫৩ বিলিয়ন ডলার। বিগত দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। বিলগেটস দানশীল হিসেবে খুবই খ্যাত। তিনি তার সম্পত্তির বেশিরভাগই দান করে দিয়েছেন। তবু সম্পদ বাড়ছেই।

 

স্টিভ বালমার

মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও স্টিভ বালমারের বর্তমান সম্পদ মূল্য ৫৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১০ সালে ছিল ১৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১১ তে চারদিকে মোবাইলযন্ত্রের বাজারের যখন রমরমা অবস্থা সে সময় মাইক্রোসফটের এ ব্যাপারে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের সমালোচনার মুখে পড়েন স্টিভ বালমার। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, মোবাইলযন্ত্র উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অ্যাপল ও গুগল যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেভাবে এগোয়নি মাইক্রোসফট। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মাইক্রোসফট ছেড়ে দেন।

 

 

 

অ্যামানসিও ওর্তেগা

স্পেনের ইনডিটেক্স ফ্যাশন গ্রুপের (চেইনশপ জারার মূল কোম্পানি) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান অ্যামানসিও ওর্তেগা। এখন বয়স ৮০ বছর। থাকেন স্পেনের লা করুনায়। ২০১০ সালে ছিলেন ২৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক। বর্তমানে তার সম্পদের নিট মূল্য ৭৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। বিগত দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। ফ্যাশন হাউসকে ঘিরে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন সবাই অ্যামানসিও ওর্তেগাকে গুরু মানেন। কারণ রীতিমতো ফ্যাশন বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই স্প্যানিশ ধনকুবের। ২০১১ সালে তিনি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস ইন্ডিট্যাক্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি স্পেনের জারা ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার। বর্তমানে ফ্যাশনের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে পা দিচ্ছেন তিনি। তার মালিকানায় রয়েছে এপিক হোটেল, একটি ৫৪তলার বিলাসবহুল ভবনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ওর্তেগার বাবা ছিলেন রেল কর্মচারী। তাই এক শহরে বেশিদিন থাকা হতো না। ১৯৭২ সালে ওর্তেগা প্রথম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। চালু করেন একটি ফ্যাশন হাউস। এই  ‘জারা’ ব্র্যান্ড নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে।

 

লরি পেইজ

লরি পেইজ একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং ইন্টারনেট উদ্যোক্তা। তিনি পেইজ-র‌্যাংকের উদ্ভাবক, যা গুগলের সার্চ র‌্যাংকিং এলগরিদম হিসেবে বেশি পরিচিত। ২০০৪ সালে মার্কনি পুরস্কার পান। তিনি সের্গেই ব্রিনের সঙ্গে গুগল প্রতিষ্ঠিত করেন। পেইজ হলেন গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেনের প্রধান নির্বাহী অফিসার। গুগলের সিইও হিসেবে ২০০১ সালের আগস্ট মাসে পদত্যাগ করার পর এরিক এমারসনের পক্ষে তিনি ২০১১ সালের এপ্রিলে আবার একই পদে আসীন হন। তিনি ২০১৫ সালের জুলাই মাসে অ্যালফাবেটের সিইও হওয়ার জন্য আবারও পদত্যাগের ঘোষণা দেন যার অধীনে গুগলের সম্পদগুলো পুনর্সজ্জিত করা হবে। পেইজের অধীনে থাকাবস্থায় অ্যালফাবেট বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে বড় আকারের উন্নয়ন সাধন করতে ইচ্ছুক। অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত তিনি বিশ্বের ১২তম ধনী ব্যক্তি। তখন তার ব্যক্তিগত সম্পদ আনুমানিক ইউএস ৪৭ বিলিয়ন। ২০১০ সালে ল্যারি পেইজ ছিলেন ১৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক, যা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৬১ বিলিয়ন। ১০ বছরে বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।

 

সের্গেই ব্রিন

সের্গেই ব্রিন ১৯৭৩ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোতে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাইকেল ব্রিন ও মাতার নাম ইউজেনিয়া ব্রিন। মাইকেল ব্রিন ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ও ইউজেনিয়া ব্রিন নাসার গোডার্ড খেয়াযান নিক্ষেপণ কেন্দ্রের গবেষক। ব্রিন ছয় বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হন। ২০১০ সালে ইন্টারনেট কোম্পানি অ্যালফাবেট ও গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিনের সম্পদের নিট মূল্য ছিল ১৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন, যা বেড়ে ২০১৯ সালে হয়েছে ৫৮ দশমিক ৮০ বিলিয়ন।

 

 

 

 

জ্যাক মা

চীনের সেরা ধনী জ্যাক মা। চীনের বাজারে ই-কমার্সের যাত্রা তার হাত ধরেই। তৈরি করেন আলিবাবা ডটকম। আলিবাবা ডটকম তার অর্থসমুদ্রে জোয়ার এনে দেয়। ২০১০ সালে তার সম্পদমূল্য ছিল মাত্র ১ দশমিক ২ বিলিয়ন, যা বর্তমানে ৪২ বিলিয়ন। তাকে বিশ্বের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা হিসেবে দেখা হয়। ২০১৬ সালে আলিবাবা ডটকমের প্রায় ৪৬৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেন তিনি। আগামী ২০ বছরের পরিকল্পনায় জ্যাক মা অন্তত ১০০ মিলিয়ন মানুষের চাকরির সুযোগ তৈরি করতে যাচ্ছেন। আলিবাবা ডটকমের সিইও পদ ছেড়ে এখন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর