রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শীর্ষ ধনকুবেরদের আগের পেশা

আবদুল কাদের

শীর্ষ ধনকুবেরদের আগের পেশা

আমরা সবাই বিশ্বসেরা ধনকুবেরদের নাম ও কীভাবে তারা ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এবং বর্তমান এই অবস্থানে এসেছেন তা জানি।  এমনকি আমরা নিজেরাও তাদের অনুসরণ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। তবে আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, এই সফল ব্যক্তিরা প্রথম কীভাবে তাদের কাজ শুরু করেছিলেন? বিশ্বসেরা ধনকুবেরদের প্রথম পেশা নিয়েই আজকের রকমারি।

 

জেফ বেজোস

গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদ করে আলোচনায় ছিলেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। এই বিশাল আঘাত আসার পরও তিনি বর্তমান বিশ্বের সেরা ধনী। কিন্তু জানেন কি! অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করার আগে জেফ বেজোস বই থেকে শুরু করে সংবাদপত্রসহ অনেক কিছু বিক্রয়  করেছিলেন। বিক্রয়ের ধারণাকে অনলাইন কেনাকাটায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছিলেন তিনি। এর আগে তিনি ১৬ বছর বয়সে মায়ামির একটি ফাস্টফুড চেইনেও কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ম্যাকডোনাল্ডস-এর গ্রিলের পেছনের বার্গার ফিপের কাজ করেছিলেন। বিশ্বসেরা এই ধনী তার দেওয়া অনুপ্রেরণীয় বক্তব্যে প্রায়ই বলে থাকেন, অভিজ্ঞতাই তার সবচেয়ে বড় মূলধন। নানা পেশায় কাজ করায় তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারী হয়েছিল। পণ্য বা সেবার কোনো প্রকার ক্ষতি না করে দ্রুত বিক্রেতার কাছ থেকে গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্ভাবন করেছিলেন জেফ বেজোস। ২০১০ সালে তিনি ছিলেন বিশ্বের ৪৩তম শীর্ষ ধনী। বর্তমানে তার সম্পদ ১০৯ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

 

বিল গেটস

মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকে কে না চেনেন! তথ্যপ্রযুক্তির সেরা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল আর মাইক্রোসফটের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্যিই দেখার মতো। আর তা দেখে হয়তো বিল গেটস নিজেই মুচকি হাসেন! হার্ভার্ডের এই ড্রপ-আউট অল্প বয়সেই কারিগরির কাজে বেশ আগ্রহী ছিলেন। জানেন কি বিশ্বসেরা এই ধনকুবেরের প্রথম পেশা কী ছিল? বিল গেটস প্রথমে একটি হাই স্কুলের টিআরডব্লিউ-এর একজন সিনিয়র কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি বিশ্বসেরা ধনকুবেরদের মধ্যে অন্যতম কম্পিউটার গুরু হওয়ার কারণেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছিলেন। ২০০৮ সালে স্ত্রী মেলন্ডা গেটসের সঙ্গে মানবসেবায় মনোযোগী হওয়ায় মাইক্রোসফটের কাজ থেকে সরে এসেছিলেন। এরপর বিল গেটস বিশ্ব ধনীদের তালিকায় পিছিয়ে পড়েন। তবে ভুললে চলবে না, এই বিল গেটস টানা দেড় দশক বিশ্বের শীর্ষ ধনীর আসনে ছিলেন। বিল অ্যান্ড মেলন্ডা ফাউন্ডেশন শিক্ষায় উন্নতি, ক্ষুধা ও দরিদ্রতার বিরুদ্ধে লড়াই এবং ভ্যাকসিন তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে। তার সম্পদের পরিমাণ ১০৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।

 

ওয়ারেন বাফেট

যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট ‘ওরাকল অব ওমাহা’ নামে পরিচিত। শুধু তাই নয়, তিনি সর্বকালের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী হিসেবেও সর্বাধিক পরিচিত। বার্কশায়ার হ্যাথওয়ে, বীমা কোম্পানি জিকো, ব্যাটারি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডুরসেল এবং ডেইরি কুইন-এর মতো ৬০টিরও বেশি সংস্থার মালিক তিনি। মার্কিন কংগ্রেসপুত্র মাত্র ১১ বয়সে জীবনে প্রথম শেয়ার কিনেছিলেন। ১৩ বছর বয়সে প্রতিদিনের পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিলেন! অল্প বয়সে তিনি ট্যাক্স জমা দিয়েছিলেন। তখন তিনি ছিলেন একজন উদীয়মান ব্যবসায়ী। কিশোর বয়সে তিনি পিনবল মেশিনের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই ব্যবসার সুযোগগুলো খুঁজতেন। যখন কলেজ পাস করেন তখন তিনি তার ব্যবসায় থেকে ১০ হাজার ডলার লাভ করেন। সেই ছেলেটি আজকের দিনে তরুণ এবং আদর্শ ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। আর এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই যে, আজকের দিনে অনেকে আর্থিক পরামর্শের জন্য ওয়ারেন বাফেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন। বর্তমানে তার সম্পদমূল্য ৮৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

 

বার্নার্ড আর্নল্ট

ফ্রান্সের কোম্পানি এলভিএমএইচের (লুইস ভুটন) চেয়ারম্যান ও সিইও হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত বার্নার্র্ড আর্নল্ট। কোম্পানিটি বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল পণ্য সংস্থা। বিশ্বসেরা এই ব্যবসায়ীর জীবনের প্রথম কাজ ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯৭১ সালে তিনি তার বাবার নির্মাণ সংস্থা ফেরেট-সাভিনিলের কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে রিয়েল এস্টেটে স্থানান্তরিত করেছিলেন। বিশ্বসেরা ধনী বার্নার্ড আর্নল্ট অনুপ্রেরণীয় বক্তব্যে বলেছিলেন, আমি যখন আমার প্রথম কাজ ইঞ্জিনিয়ারিং করছিলাম, তখন আমি যা পছন্দ করতাম তা হলো স্থপতিদের সঙ্গে কাজ করা। বিল্ডিংগুলোর সৃজনশীল দিকটি এসেছিল স্থপতিদের আইডিয়া থেকে, যা ছিল ইঞ্জিনিয়ারদের সাফল্য। ১৯৮৪ সালে একটি টেক্সটাইল গ্রুপের মালিক হয়ে প্রথমবারের মতো অভিজাত পণ্যের বাজারে পা রেখেছিলেন এই ব্যবসায়ী। পরবর্তীতে চার বছর পর ক্রিশ্চিয়ান ডিওর বাদে ওই গ্রুপের বাকি সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে এলভিএমএইচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন বার্নার্র্ড আর্নল্ট। বর্তমানে তিনি ১০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মালিক।

 

মার্ক জুকারবার্গ

ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। বিশ্বের মানুষকে ভার্চুয়ালি এক সুতোয় গেঁথেছেন তিনি। হার্ভার্ড ইউনির্ভাসিটি থেকে তার উত্থান, এটা সবারই জানা। আর এখানেই বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফেসবুক। কিন্তু অনেকেই জানেন না ফেসবুক প্রতিষ্ঠার আগে তিনি কী করতেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে কম্পিউটারের প্রতি তার ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। তখন তিনি ‘জুকনেট’ নামের একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন যা আটারি বেসিককে বার্তা প্রেরণ করতে ব্যবহার করা হয়েছিল। তার বাবা প্রোগ্রামটি তার ডেন্টাল ক্লিনিকে ব্যবহার করেছিলেন। তখন থেকেই শখে সফটওয়্যার লেখা শুরু করেছিলেন। হার্ভার্ডে আসার আগে মার্ক জুকারবার্গ  স্ন্যাপস নামের একটি মিউজিক প্লেয়ার তৈরি করেছিলেন; যা দেখতে কিছুটা প্যান্ডোরা বা স্পটিফাইয়ের মতো। সে সময় সফটওয়্যারটির জন্য তাকে এক মিলিয়ন ডলার অফার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি নগদ অর্থ নেননি। পরিবর্তে এটি সাধারণের ব্যবহারের জন্য বিনামূল্যে করে দিয়েছিলেন। অল্প বয়সী সিইওদের তালিকায়ও তিনি বর্তমান বিশ্বের বিস্ময়! বর্তমানে তার সম্পদমূল্য ৭২ বিলিয়ন ডলার।

 

অ্যামানসিও ওর্তেগা

স্পেনের ‘ইনডিটেক্স’ ফ্যাশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান অ্যামানসিও ওর্তেগা। দরিদ্রতার কারণে তাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল। মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্থানীয় একটি দোকানের সহকারী হিসেবে জীবনে প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন। গালা নামে পরিচিত সেই দোকান থেকে তিনি হাত দিয়ে কাপড় তৈরি করতে শিখেছিলেন। কিশোর বয়সেই কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন অ্যামানসিও ওর্তেগা। অল্প বয়স থেকে তার মাথায় ছিল দারুণ সব ব্যবসায়িক আইডিয়া। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তিনি ক্রেতার আকাক্সক্ষা বোঝা এবং কীভাবে তাদের চাহিদা মেটাবেন সেসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন। পরবর্তীকালে রীতিমতো ফ্যাশন বিপ্লব ঘটিয়েছেন এই স্প্যানিশ ধনকুবের। ফ্যাশন হাউসকে ঘিরে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন সবাই তাকে গুরু মানেন। ২০১১ সালে তিনি বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন গ্রুপ ইনডিটেক্সের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তার মালিকানায় রয়েছে বিলাসবহুল ভবনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি প্রায় ৭৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের মালিক।

 

স্টিভ বালমার

স্টিভ বালমার, মাইক্রোসফটের সাবেক সিইও এবং শীর্ষ ধনকুবেরদের একজন। কিন্তু আপনি জানেন কি, সেরা এই ধনকুবেরের জীবনের প্রথম পেশা কী ছিল? শুনতে অ™ভুত শোনালেও সেরা এই ধনী ব্যক্তি এক সময় ডেজার্ট তৈরির মেশিন তৈরি এবং সেগুলো বিক্রি করার কাজ করেছিলেন। তখন স্টিভ বালমার হার্ভার্ড থেকে স্নাতক শেষ করার পর, একটি কারখানায় প্রক্টর হিসেবে চাকরি নিয়েছিলেন। সেখানে তিনি কোল্ডস্নাপ ফ্রিজার ডেজার্ট নামের একটি ডিভাইস তৈরি এবং বিক্রি করতে সহায়তা করেছিলেন। এরপর তিনি ময়েস্ট ‘এন’ স্ন্যাক্স কেক-এর প্রচার করতেও সহায়তা করেছিলেন। যদিও এই কাজগুলোকে কেবল একজন বিক্রয়কর্মীর কাজ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ২০০৭ সালে এক সম্মেলনে তিনি তার ডেজার্ট তৈরির মেশিন সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন। মিষ্টান্ন তৈরিতে এমন বিপ্লবের কথা এর আগে কেউ কখনো ভাবেনি। মাইক্রোসফটের কাজ শুরু করার পর প্রতিযোগিতার বাজারে এটি সেভাবে এগোয়নি। বর্তমানে সম্পদের পরিমাণ ৫৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।

 

ল্যারি পেইজ

ল্যারি পেইজ, যুক্তরাষ্ট্রের একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। ইন্টারনেট কোম্পানি গুগল ও অ্যালফাবেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ। তিনি সের্গেই ব্রিনের সঙ্গে গুগল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার বাবাও ছিলেন একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। সেই সুবাদে মাত্র ৬ বছর বয়সেই তার মনে কম্পিউটার শিক্ষার আগ্রহ জন্মে। তাদের বাড়িতে থাকা কম্পিউটার এবং প্রযুক্তিগত ম্যাগাজিনগুলো তাকে বেশ মুগ্ধ করত। পারিবারিক সূত্র ধরেই কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকতেন। অল্প বয়স থেকেই ইন্টারনেট নিয়ে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটবিষয়ক গবেষণাই ছিল তার প্রথম কাজ। পরবর্তীকালে তিনি গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের প্রধান নির্বাহীর কাজ করেছিলেন। পেইজের অধীনে থাকাবস্থায় অ্যালফাবেট বড় আকারের উন্নয়ন সাধন করেছিল। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বিশ্বের ১২তম ধনী ব্যক্তি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৬১ বিলিয়ন ডলার।

 

জ্যাক মা

জ্যাক মা, চীনের সফল ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী। চীনের বাজারে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার হাত ধরেই। কিন্তু এই সফল ব্যবসায়ীই এক সময় দ্বারে দ্বারে হোঁচট খেয়েছিলেন। প্রায় ৩০টির বেশি কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিয়ে কোনো চাকরি পাননি। প্রথমবার যখন কেএফসিতে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন, সে সময় তার চাকরি না হওয়ায় তিনি নিজের চেহারাকে দুষলেন।  তার মতে, চীনা মান অনুসারে তাকে কুৎসিত বলে মনে করা হতো। পরবর্তীতে মাসে ১২-১৫ ডলার বেতনে স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন। ৩১ বছর বয়সে জ্যাক মা প্রথম কম্পিউটার দেখেছিলেন। তখন তিনি ইংরেজি অনুবাদক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেবারই প্রথম জেনেছিলেন ইন্টারনেট সম্পর্কে। আর জানার পর ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিনে তার প্রথম লেখা ছিল বিয়ার। পরবর্তীকালে এই জ্যাক মা-ই তৈরি করেন আলিবাবা ডটকম। তিনি আলিবাবার সিইও পদ ছেড়ে চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে তার মোট সম্পদ ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ খবর